Dreamy Media BD

ওটস এর উপকারিতা এবং অপকারীতা

Oats

কমবেশি সকলেই ওটস (Oats) বা  ওটমিল সম্পর্কে জানেন। এটি অত্যন্ত  উপকারী একটি  খাদ্যশস্য মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য। ওটস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায় । আপনি যদি ওটস গ্রহণ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যক্তি ভেদে ওটস  গ্রহণের মাত্রা সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আসুন জেনে যাক ওটস কি? ওটস এর উপকারিতা, অপকারিতা, ওটস গ্রহণের নিয়ম সম্পর্কে। 

ওটস কি

ধান, গম এবং যব জাতীয় একটি উদ্ভিদ শস্য হলো ওটস। এর ফলন খুব ভালো হয় ঠান্ডা আবহাওয়ায়। আগের মানুষ খুব একটা জানত না ওটস কি, তাই আগে ওটস গণ্য হত পশুদের খাদ্য বলেই।কিন্তু  বর্তমানে ওটস পরীক্ষা করে গবেষকরা জানিয়েছেন যে, এতে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।  যেমন  ফাইবার, কপার, প্রোটিন জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়া,  ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। এটা আমরা সকলে জানি যে এই ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য  কতটা উপকারী। এ পুষ্টি উপাদান গুলো মানুষের শরীরে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।  আর ওটমিল বলা হয় সেই খাদ্যকে যা ওটস থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে তৈরি করা হয়। ওটস দেখতে শারীরিক গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে  বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদা,  খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন। 

ওটস এর উপকারিতা

ওটস মূলত একটি  পুষ্টিকর খাবার। ওটস এর উপকারিতা অনেক  বিভিন্ন ভিটামিন মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ  যার শরীরে পুষ্টি যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। নিয়মিত ওটস গ্রহণের ফলে যে উপকারিতা গুলো পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে। 

১.কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে : কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ওটস। ওটসে থাকা ডায়াটরি ফাইবার রক্তে চর্বি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এছাড়াও ওটস এ থাকা উচ্চ মাত্রার বেটা গ্লুকোন রক্তে যে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে তা কমাতে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে। 

২.হার্ট সুস্থ রাখতে : গবেষণায় নির্ণয় করা হয়েছে যারা নিয়মিত ওটস খান  তাদের হৃদরোগ  হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে প্রায় ২৯ শতাংশ। কেননা ফ্রি রেডিক্যাল এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে ওটস এর উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে অনেকাংশে কমে যাই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। এছাড়াও হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে ওটস এ থাকা বেটা গ্লুকোন।

৩.উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে :ওটস একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যদি ওটস বা ওট মিলের খাদ্য থাকে তাহলে তা সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে উঠতে থাকা বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪.বেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : ওটস গ্রহণকারী  মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের তেমন একটা ঝুঁকে থাকে না। এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে কেননা এতে থাকা ফ্রাইটো নিউট্রিয়েন্টস লড়াই করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য হরমোন ও বেস্ট সম্পৃক্ত ক্যান্সারের কোষ কে ধ্বংস করতে সাহায্য করে করে। তাই প্রতিদিন পরিমাণ মতো ওটস গ্রহণ করা উচিত।

৫.কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে  : ওটস হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহযোগিতা করে থাকে। ওটসে থাকা বিদ্যমান উপাদান ফাইবার দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্যের এবং হজমের সমস্যা।এছাড়াও লিভারের জন্য ওটস বেশ উপকারী। সমস্যা থাকলে নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত  এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের এর সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

৬.ডায়াবেটিস ড মুক্ত রাখতে : সুগার ফ্রি ও লো ক্যালরি। মূলত এই জন্যই ওটস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। কারণ ওটস রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য কর। যার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে না । 

৭.ওজন কমাতে: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ওজন কমাতে নিয়মিত  ওটস খাওয়া প্রয়োজন কেননা ওটস ফাইবার ও প্রোটিন যুক্ত খাবার।  ওটস ফাইবার ও প্রোটিন যুক্ত খাবার হওয়ায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে থাকে। আর এর ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে।   

৮রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ভূমিকা অপরিসীম।  ওটস এ হয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

৯:মনকে প্রফুল্ল ও শান্ত রাখতে :মনকে শান্ত ও প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে উড়তে থাকা ম্যাগনেসিয়াম । নিয়মিত ওটস গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় আর সেরোটোনিন হরমোন ক্ষুধ,  ঘুম ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ফলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। 

১০:ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে : ওটস স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে তবে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ও।নিয়মিত ওটস গ্রহণের ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায় যেমন ব্রনের কালো দা,   শুষ্কতা, রুক্ষতা, ত্বকের এর চুলকান,  মেস্তা ইত্যাদি। এছাড়াও এটি ত্বকের পিএইচ  লেভেল স্বাভাবিক করে দেয় ফলে ত্বক লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। 

ওটস কি

ওজন কমাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম

ফাইবার সমৃদ্ধ  ওটস  ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী একটি খাবার। নানান রকম রেসিপি বানানো যায় প্রোটিন শর্করা  ও নানন খনিজে ভরপুর ওটস দিয়ে। যা গ্রহণের ফলে ক্ষুধা মিটার পাশাপাশি শরীরের পুষ্টি চাহিদাও  পূরণ হয়। আসো ওটস দিয়ে তৈরি খাবারের কথা এবং  খাবারের নিয়ম জেনে নেই যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

১.দুধ- ওটস : 

এটি এমন  একটি খাবার যা  সকালের নাস্তাই খেলে পেট ভরে থাকার পাশাপাশি শরীরের প্রচুর পরিমাণে শক্তি যোগায়। খাবারটি তৈরিতে যে যে উপকরণ প্রয়োজন :

  • এক কাপ ওটস 
  • এক কাপ দুধ 
  • এক টেবিল চামচ মধু 
  • এক চিমটি লবণ। 
  • ইচ্ছে অনুসারে দারচিনি গুড়া   

দুধ এবং ওটস ,লবণ দারচিনি গুড়া দিয়ে একটি ঘন   মিশ্রণ তৈরি করে ঠান্ডা করে নেওয়ার পরে মধু মিশিয়ে নিলেই এটি খাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। 

২.দই- ওটস : 

ওজন কমাতে কার্যকরী ওটস দিয়ে তৈরি এই খাবারটির মূলত তৈরির পর সারারাত রেখে সকালে খেতে হয়। খাবারটি তৈরি করতে যে উপকরণ গুলো প্রয়োজন : 

  • এক কাপ ওটস 
  • এক কাপ দই 
  • এক চিমটি লবণ 
  • এক টেবিল চামচ মধু 
  • পরিমাণ মতো দারচিনি গুড়া
  • বাদাম ও ড্রাই ফ্রুটস পছন্দ অনুযায়ী। 
  • ভ্যানিলা ক্রিম বা ফ্লেভার। 

বাদাম ও ড্রাইফ্রুটস ব্যতীত সকল উপকরণগুলো মিশিয়ে একটি নরম  মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।মিশ্রণটির সাথে বাদামও ফ্রাই ফ্রুটস  মিশিয়ে করে সারারাত ঢেকে রাখতে হবে। সকালে খাবারটি খাবার উপযোগী হবে তখন সকালের নাস্তা হিসেবে খাবার টিকে নিতে হবে। 

৩.দুধ -কলা -ওটস :

এই খাবারটি ও শরীরে শক্তি যোগানোর পাশাপাশি ওজন কমাতে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে। এ রেসিপিটি তৈরিতে তেমন সময় লাগে না। এই রেসিপিটিতে দুধের সাথে কলা থাকার কারণে  অনেক লম্বা সময় ধরে শরীরে শক্তি যোগাতে পারে। 

খাবারটি তৈরি করবেন যেভাবে :

  • এক কাপ ওটস 
  • এক কাপ দুধ।
  • এক চিমটি লবণ। 
  • এক টেবিল চামচ মধু। 
  • টুকরো টুকরো করে কাটা  একটি কলা  
  •  পিনাট বাটার এক টেবিল চামচ। 

 দুধ ও ওটস দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করতে হবে ঠান্ডা হওয়ার পরে তাতে কল,  মধু ওপিনাট বাটার মেশালেই এটি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। 

৪.ওটস- চা -স্মুদি: 

এছাড়াও চায়ের লিকার, অর্ধেকটা কলা এবং আধা কাপ ওটস দিয়ে ব্লিন্ডারে ব্লিন্ড করে করে পানীয় করে খেতে পারেন।

শিশুদের ওটস খাওয়ার কিছু নিয়ম :

  • অবশ্যই শিশুর বয়স ছয় মাসের ঊর্ধ্বে হতে হবে। 
  • শিশুর খাবার দুধ অথবা পর্যাপ্ত পানি মিশাতে হবে। 
  •  ওটস আস্ত রাখা যাবে না পেস্ট করে নিতে হবে। 
  • ভালো করে  সিদ্ধ করে নিতে হবে অন্তত 20 মিনিট। 
  • শিশুকে ওটস খাওয়ানোর আগে এটা নিশ্চিত হতে হবে যে শিশুর উঠছে অ্যালার্জি আছে কিনা। 
  • অতিরিক্ত ওটস খাওয়ানো যাবে না খাওয়াতে হবে অন্যান্য খাবারও। 
  • সঠিক পরিমাণ খাওয়ানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। 

ওটসের কিছু অপকারিতা লক্ষ্য করা যায় ক্ষেত্র বিশেষে যেমন :

  • ওটস ঠিকমতো রান্না করে খেতে  হবে  না ঠিক মত রান্না করে না খেলে খেলে পেটে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের ওটস রয়েছে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনি মিশ্রিত ওটস গ্রহণ করা ক্ষতিকর। 
  • অতিরিক্ত ওটস গ্রহণের  ফলে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে কেননা এটি উচ্চমাত্রার ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ । 

এছাড়াও ওটস অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ক্লান্তি, অতিরিক্ত ঘুম, চোখে ছানি পড়া, পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। 

শেষ কথা

উপরে ওটস সম্পর্কে বিস্তারিত  আলোচনা করা হয়েছে যা আপনাকে ওটস সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দিতে সক্ষম । ওটস  যেমন গ্রহণ করা অতীব জরুরি তেমনি অতিরিক্ত ওটস গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাও জরুরী। অতিরিক্ত  ওটস গ্রহণের ফলে মারাত্মক ক্ষতি  হতে পারে। 

আরো পড়ুন –

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents