Dreamy Media BD

রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থান

ভিন্নজগৎ

দৈনন্দিন জীবনে শত ব্যস্ততার ভীড়ে যখন আপনি হাঁপিয়ে যান, তখন নিজেকে কি একটু ছুটি দেয়ার  ইচ্ছা জাগে না? তখনই কিন্তু আপনার মনে হবে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসি। তাহলে রংপুর জেলা হবে আপনার জন্য সেই ছুটি কাটানোর সর্বোত্তম একটি স্থান। রংপুর জেলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন জনপদ।

রংপুর জেলার পটভূমি অনেক ঐতিহ্যময়। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে উপমহাদেশের ইংরেজরা নীলের চাষ করতে শুরু করে। এখানকার জমি উর্বর  হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে নীল চাষ করা হতো। স্থানীয়রা এটাকে ‘রঙ্গ’ নামে জানতো । সেখান থেকেই রঙ্গপুর তার থেকে আজকের এই রংপুর জেলা।

তিস্তা নদীর তীরে রংপুর জেলাটি অবস্থিত। রংপুর জেলা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। রংপুর জেলাটি বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রংপুর বিভাগের প্রধান সদর দপ্তর।৮টি উপজেলা নিয়ে রংপুর জেলাটি গঠিত।

অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য নদী নিয়ে রংপুর জেলাটি গঠিত, এরমধ্যে তিস্তা ,যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, করতোয়া, চিকলি ও আখিরা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রংপুর জেলাতে বৃহত্তর বঙ্গ প্লাবনভূমির অংশ মনে করা হয়। এখানে অনেক প্রজাতির উপজাতীয় আছে। উপজাতিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উড়াও, পাহাড়ী ,মুশহর, সাঁওতাল, পাহান ,তুরি ইত্যাদি।

রংপুর জেলাটি অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের জন্মগ্রহণের জন্যেও বিশেষভাবে পরিচিত। জেলাটি তামাকের জন্য বিখ্যাত। উল্লেখ্য এখানের উৎপাদিত তামাক দিয়ে সারাদেশের চাহিদা মেটানো হয়। এছাড়াও রংপুরে প্রচুর পরিমাণে ধান পাট আলু ও হাড়ি ভাঙ্গা আম উৎপাদিত হয়।শতরঞ্জি শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই জেলাটি।

‘সিদল ভর্তা’ রংপুরের একটি জনপ্রিয় খাবার যা কয়েক ধরনের শুটকির সঙ্গে নানা ধরনের মসলা মিশিয়ে বেটে তৈরি করা হয়। যদি অবসর সময়টা কাটানোর জন্য কোন নির্ধারিত স্থানে আপনি যেতে চান রংপুরই হতে পারে আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত স্থান। এই অনুচ্ছেদ থেকে আপনি জানতে পারবেন রংপুরের দর্শনীয় স্থান ও গাইডলাইন সম্পর্কে যা আপনাকে রংপুর দর্শনে আকর্ষিত করবে।

১. ভিন্নজগৎ

কালের চক্রে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বোধটুকু। যান্ত্রিক জীবনের নগর সভ্যতার কোলাহল আর ধোঁয়ার বিষাক্ত ছোবল আকাশ বাতাস ঢেকে ফেলছে। চারিদিকে  হাঁপিয়ে উঠছে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষগুলো। হারিয়ে ফেলছি আমরা আমাদের স্বাভাবিক সুস্থতা।

একটুখানি স্বস্তি ও তৃপ্তির প্রশান্তির ছায়া দেওয়ার প্রত্যাশায় উত্তর জনপদের আপনার সবচেয়ে আকর্ষণ করবে যে জায়গাটি তার নাম ভিন্নজগৎ। রংপুরের সবচেয়ে বড় বিনোদনমূলক ও বৃহত্তর পার্কটিই হচ্ছে ভিন্নজগৎ। ভিন্নজগৎ রংপুরের ভ্রমণ স্পট গুলোর মধ্যে একটি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ আপনাকে যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে ছুটি দেবে। এখানে রয়েছে আধুনিক বিশ্বের বিস্ময় এবং দেশের প্রথম প্লানেটোরিয়াম।

রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার গঞ্জিপুর নামক স্থানে এটির অবস্থান। ভিন্নজগৎ নামে পরিকল্পিত পিকনিক স্পট ও শিশু পার্ক টি সাজানো হয়েছে মনের মাধুরী দিয়ে যা নিজের চোখে না দেখলে আপনার বিশ্বাস হবে না।

টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশের পর আপনার মনে হবে এ যেনো ভিন্নজগৎ এর মধ্যে আরেকটি ভিন্নজগৎ। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ভিন্নজগতে দেখতে পাবেন পিকনিকের জন্য কটেজ, পাখিদের অভয়ারণ্য, শপিং মল, ৫০০ আসন বিশিষ্ট আধুনিক কনফারেন্স কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, রোবট জোন, স্কিল টেস্ট এবং সুইমিং পুলের ব্যবস্থা।

এখানে আরো রয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য শিশু কানন, মেরিগো রাউন্ড ফ্লায়িং হেলিকপ্টার জোন , নাগরদোলা, ক্যাঙ্গারু মুভিং মনোট্রেন, রেসিং হর্স, সি প্যারাডাইস, ডিয়ার পার্ক, পিকক গার্ডেন, বিশাল মাটির তৈরি হাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার , বরফের দেশ, জলতরঙ্গ ,আজব গুহা, শাপলা , থ্রিডি মুভি, বাম্পার কার,কৃত্রিম ঝর্ণা আরো অনেক কিছু।

বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভাষা সৈনিকদের জন্য নির্মিত ভাস্কর্য এবং বিশাল স্মৃতি নিদর্শন লেকে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ভিন্নজগতে রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র যা পর্যটকদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ও হারানো জিনিস খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

ভিন্নজগতের মধ্যে আপনি পাবেন ঘোড়ার গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ। যা আপনার রাজার রাজ্য পরিদর্শনের মতো মনে হবে। এবং পাবেন প্লেন আকৃতির গাড়ি যাতে চড়ে পুরো ভিন্নজগৎ আপনি ঘুরে দেখতে পারেন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এখানে কর্মরত রয়েছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্মচারী।

রংপুরের  এই ভিন্নজগতে আছে নয়নাভিরাম বৃহৎ লেক, দর্শনার্থীরা স্প্রিট বোটের সাহায্যে পুরো ভিন্নজগৎ ঘুরে দেখতে পারে। ভিন্নজগৎ ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটক কেন্দ্র। ‌শিক্ষামূলক ও ভ্রমণে ভিন্নজগৎ পর্যটক কেন্দ্র। শিক্ষামূলক  ভ্রমণে ছাত্রছাত্রী ও ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের জন্য ভিন্নমাত্রায় সজ্জিত একটি বিনোদন প্রতিষ্ঠান। 

লোকশিল্প জাদুঘর,স্পেনজার শীপ, বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অবিকল রুপে তৈরি করা হয়েছে তাজমহল, পিরামিড, চিড়িয়াখানা, চীনের প্রাচীর, মস্কোর ঘন্টা, সুন্দরবন ও আইফেল টাওয়ার।তাই আমরা বলতে পারি বিশ্ব দেখতে পারেন ভিন্নজগতে এসে।

মাছ আকৃতির মুখের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে , চীনের প্রাচীর বেয়ে যেতে হয় ঐতিহাসিক তাজমহলের দিকে এ যেনো এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণ। সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলেন সেই তাজমহল দিল্লিতে। সেই বিখ্যাত তাজমহলের আদলে ছোট আকারে তৈরি করা হয়েছে রংপুরের ভিন্নজগতে যা দেখার জন্য দর্শনার্থীরা ভিড় করে থাকে। ভিন্নজগতে সবচেয়ে নান্দনিক ও সুন্দর কারুকার্য খচিত তৈরি করা এ তাজমহল।

তাই আর দেরি না করে আজই বেরিয়ে পড়ুন নিজে অথবা প্রিয়জনকে নিয়ে। রংপুরের ভিন্নজগৎ এনে দিতে পারে আপনার মনে ভ্রমণের নতুন মাত্রা। আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ভিন্নজগৎ আপনার অনুভূতিতে ভিন্ন আমেজ তৈরি করবে ।

 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন
রংপুর শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পাগলা পীরে বিশাল এলাকা অর্থাৎ ১০০ বিঘা জমি নিয়ে এই থিম পার্কটি অবস্থিত। রংপুর থেকে বাসযোগে পাগলাপীর। পাগলাপীর থেকে সিএনজি যোগে রংপুর ভিন্ন জগতে যেতে পারেন। জনপ্রতি ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা। যদি রিজার্ভ করে যেতে চান ১০০ টাকা ভাড়া পড়বে।

ভিন্ন জগতে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০টাকা করে। পার্কের অন্যান্য রাইডে ভিন্ন ভিন্ন টিকিটের দাম। স্পটটিতে মাইক্রোবাস, অটোরিকশা এন্ট্রি ফি চার্ট আকারে দেওয়া আছে।

রংপুর থেকে সরাসরি ভিন্ন জগতে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রাইভেট কারের ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টা

চিকলির বিল
চিকলির বিল

২.চিকলির বিল

অনিন্দ্য সুন্দর চিকলির বিল। চিনতে ভুল করে না কোনো পাখি। একসময় শীত এলে চিকলির বিলে বসতো পাখির হাটবাজার। এদের কলকাকলি শুনতে ভীড় করতেন অনেক পর্যটকেরা নিতেন প্রাণ খুলে নির্মল বায়ুতে শ্বাস । চিকলির বিলে মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে প্রকৃতির ছিলনা কোনো কার্পণ্য। প্রকৃতি তার সৌন্দর্য প্রাণ খুলে ঢেলে  দিয়েছে পর্যটকদের মনের মাধুরীতে।

দূর- দূরান্ত কিম্বা কাছাকাছি সমস্ত ভ্রমণ প্রেমিকদের জন্য এখন আরো আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে এর চারিদিক। ২০১৮ সালে বেসরকারি উদ্যোগে

চিকলির বিলটিকে ঘিরে চিকলি ওয়াটার পার্কের কাজ শুরু হয়।এখনো ওয়াটার পার্কের ১০০% এর মধ্যে ৬০% কাজ হয়ে গেলেও ৪০% কাজ বাকি আছে । কিন্তু এরই মধ্যেই দর্শনার্থীদের আগমনের কমতি নেই। এই পার্কটি বাংলাদেশের প্রথম ভাসমান ওয়াটার পার্ক। প্রায় ১০০ একর আয়তন জুড়ে এই পার্কটি নির্মিত হচ্ছে।

আভিজাত্য এই পার্কটিতে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ে জল , জলাশয় এবং জলজ সবকিছুকে প্রাধান্য দিয়ে মূলত চিকলি ওয়াটার পার্কটি তৈরি হয়েছে। এখানে পানির ওপরেই ২০টি রাইড আছে। ওয়াটার জোন থেকে বের হয়ে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন সুন্দরভাবে গড়ে ওঠা ওয়াটার গার্ডেন। এখানে অসংখ্য গাছের সমাহার তৈরি করা হয়েছে পরিকল্পনা করে।

নয়নাভিরাম চিকলি ওয়াটার পার্কে বিশেষ আকর্ষণ হলো কৃত্রিম জলপ্রপাত। এর কাছে এসে দাঁড়াতেই এর রূপ সৌন্দর্য আর ঝরঝরা শব্দে সৃষ্টি হওয়া মন আবেশে আপ্লুত হয়ে যায়। কৃত্রিম জলপ্রপাতের পানির যেখানে পড়বে সেখানে তৈরি করা হয়েছে চার-পাঁচটি লেক। লেকের মধ্যে রয়েছে হাজার রকমের ছোট ছোট অনেক রঙিন মাছ যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে।

এখানে দর্শনার্থীদের সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরে রাখার জন্য আছে সেলফি জোন। পার্কটির সবকিছু সাজানো হয়েছে পরিকল্পিত এবং পরিকল্পনা মাফিক। যা দেখলে আপনার মন জুড়াবেই। সবখানে এতো নান্দনিকতার ছোঁয়ায় আপনার মনে হবে আপনি এক স্বপ্ন রাজ্যে এসে পড়েছেন। খোলামেলা পরিবেশ ও সবুজের সমারোহ আপনার মন ছুঁয়ে যাবে নিমিষেই।

চারপাশে সবুজ মাঝখানে পথ। পথের পাশে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের বসার জন্য রয়েছে রংবেরঙের বেঞ্চ। বিলের ওপর তৈরি করা হয়েছে খড়ের ছাউনিওয়ালা ঘর এখানে বসে বিলের বিশুদ্ধ বাতাস সেবন করে আপনার মন জুড়াতে পারেন। বিলের মধ্যে আছে বিশাল আকারের নাগরদোলা যাতে উঠলে আপনি পুরো রংপুর শহরকে দেখতে পাবেন।

 শিশুদের মনোরঞ্জন ও উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য নাগরদোলার পাশাপাশিই রয়েছে অনেকগুলো রাইড , যা শিশুদের জন্য সত্যিই আনন্দদায়ক। নাগরদোলার পশ্চিম দিকেই আছে গেমিং জোন। গেমসের মধ্যে আছে জেট স্কি’সহ নানা ওয়াটার রাইড, আর্টিফিশিয়াল ওয়াটার ফলস, টয় ট্রেন, মেরিগো রাউন্ড ইত্যাদি।

অযথা সময় নষ্ট না করে রংপুর ভ্রমণ করে চিকলি ওয়াটার পার্ক দর্শন করে নিজে এবং প্রিয়জনকে আনন্দ উপহার দিতে পারেন।

 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন
রংপুর মূল শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে হনুমান তলা এলাকায় চিকলি ওয়াটার পার্ক অবস্থিত। রংপুর শহরের একপ্রকার মাঝখানেই চিকলির বিলের অবস্থান। চিকলির বিল আসার পথ মূলত দুইটি। একটি সাগর পাড়ার দিয়ে, আরেকটি শহরের পুলিশ লাইনের সামনে দিয়ে হনুমান তলা বাজার পার হয়ে একটু সামনে হাতের বামে বিলের প্রবেশ পথ।

চিকলির বিলের যাওয়ার জন্য খুব সহজে রিকশা অথবা অটো পেয়ে যাবেন। পার্কটি সকাল ১০টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।পার্কটিতে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ত্রিশ টাকা করে। যানবাহন ভেদে বিভিন্ন মূল্যে গাড়ির পার্কিং করার ব্যবস্থা আছে।

 

রংপুর চিড়িয়াখানা
রংপুর চিড়িয়াখানা

৩.চিড়িয়াখানা

অবসর সময়ে বেড়াতে যেতে পারেন বিনোদন উদ্যান ও রংপুর চিড়িয়াখানাতে । এটা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানা। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা ও উদ্যান। রংপুর জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র এ চিড়িয়াখানাতে গেলে আপনার ক্লান্ত, বিপর্যস্ত ও বিষন্ন মনকে অতি সহজেই সতেজ অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারবেন। 

চিড়িয়াখানাটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পরবর্তীকালে ১৯৯২ সালে সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন বাচ্চাদের জন্য শিশু পার্ক, দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে রেস্তোরাঁ, কৃত্রিম হ্রদ এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও বৃক্ষ।

এই চিড়িয়াখানাতে সিংহ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, জল হস্তি, হায়েনা, গন্ডার, জলহস্তি, কচ্ছপ, ভাল্লুক, বানর, বেবুন, হরিণ, ময়না, টিয়া, ঈগল , ময়ূর, কাকাতুয়া, কবুতর ,বক, শকুন , সারস , ঘড়িয়াল, অজগর সাপ প্রভৃতি ২৬ প্রজাতির জীবজন্তু ও পাখপাখালী রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে এখানে বিভিন্ন বনজ, ফলজ এবং ঔষধি গাছের সমারহ।আর দর্শকদের মন কাড়ার মত রয়েছে নয়নাভিরাম লেক ।

বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানাটি দেখতে হলে অবশ্যই আপনাকে রংপুর জেলায় আসতে হবে। আপনার ক্লান্ত মনের একটু প্রশান্তি ও আপনার বাচ্চার বিনোদনের জন্য এই জায়গাটা বেছে নিতে পারেন।

 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন
চিড়িয়াখানাটি রংপুর পুলিশ লাইনের সামনে হনুমান তলা রাস্তা পূর্ব দিকে অবস্থিত। রংপুর শহর থেকে অটোরিকশা, সিএনজি, এবং ব্যাটারি চালিত ভ্যানে করে অতি সহজেই চিড়িয়াখানায় যেতে পারবেন।
তাজহাট জমিদার বাড়ি
তাজহাট জমিদার বাড়ি

৪.তাজহাট জমিদার বাড়ি

ভ্রমণেচ্ছুক বাঙালি অবসর সময়টা অকাজে বসে না থেকে ছুটে যেতে চায় নতুন কোনো গন্তব্যে। আমাদের বাংলাদেশে বেড়ানোর মতো বহু ভ্রমণ স্পট আছে তার মধ্যে রংপুরের তাজহাট রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়ি অন্যতম। ইতিহাসের পথ ধরে স্থাপত্যশৈলীর ইতিহাস জানার জন্য মন চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ি থেকে।

আসুন ঘুরে আসি কালের বিবর্তনে চাপা পড়া বর্ণাঢ্য ইতিকথার মুক্ত মানিকের খোঁজে । বাংলাদেশে প্রাচীন শাসনব্যবস্থায়ও প্রচলন ছিল “জমিদারীর”। বাংলাদেশের রংপুর জেলাতেও বেশ কিছু এলাকায় জমিদারের বংশ পরম্পরায় জমিদারী ছিল ।

তাজহাট,ককিনা,ডিমলা, পীরগঞ্জ, মন্থনা সহ বেশ কিছু এলাকা জুড়ে এদের জমিদারীত্ব ছিল। এবং এদের ছিল বিশাল বিশাল প্রাসাদ। এদের মধ্যে তাজহাট জমিদার বাড়ি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রংপুরে এটাকে সবাই তাজহাট রাজবাড়ী নামেই চেনে। বর্তমানে এই রাজবাড়ীটির একাংশ রংপুর জাদুঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।

তাজহাট জমিদার বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলে প্রথমে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে সুন্দর বাগান দেখে। শ্বেত পাথরে তৈরি করা সুন্দর একটা ফোয়ারা । তাজহাট জমিদার বাড়িটি দেখে মনে হবে যেনো ঢাকার আহসান মঞ্জিল টাকে তুলে এনে বসানো হয়েছে রংপুরের তাজহাটে। অবিকল একি ছাঁচে তৈরি যেনো তাজহাট জমিদার বাড়িটির সামনের অংশটা  হুবাহু একই আদলে তৈরি পার্থক্য শুধু একটাই জমিদার বাড়িটির প্রত্যেকটি সিঁড়ি মার্বেল পাথরে তৈরি।

বিশাল এই প্রাসাদটি পূর্ব দিক মুখী দোতলা বিশিষ্ট। প্রাসাদটির দৈর্ঘ্য ৭৬.২০ মিটার। ইতালি থেকে আগত মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি ১৫.২৪ মিটার প্রশস্ত ৩১টি কেন্দ্রীয় সিড়ি সরাসরি দোতালায় চলে গিয়েছে। বাড়ির পেছনে গুপ্ত সিঁড়িও আছে। প্রায় ২১০ ফুট প্রশস্ত বিশাল এই প্রাসাদটি চার তলা ভবনের সমান। প্রাসাদের সামনে রয়েছে বিশাল এক মাঠ। দুই পাশে রয়েছে দুটি পুকুর ও সারিসারি গাছের বাহার। প্রাসাদের নির্মাণশৈলী মুঘল আমলের নিদের্শনা বহন করে।

মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের  সময় সুদূর পাঞ্জাব থেকে শেখ বংশীয় মান্নালাল রায় রংপুরের মাহিগঞ্জে এসেছিলেন রত্ন খচিত  টুপি অর্থাৎ তাজ বিক্রি করতে।বিত্তের জোরে একসময় তাজহাটে তিনি জমিদারীত্ব লাভ করেন। তার উত্তর পুরুষ গিরিধারী লাল নিঃসন্তান দত্তক নিয়েছিলেন বাঙালি ছেলে গোবিন্দলালকে গোবিন্দলাল ও তার ছেলে গোপাললালের সময় এই জমিদারিত্ব স্বর্ণ শিখরে ওঠে।

জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন রায় বাহাদুর গোপাল রায়। রুচিবান ও অতিথি পরায়ণ জমিদার হিসেবে বেশ খ্যাতি ছিল তার।১৯১৭ সালে শুধুই বাড়ি নির্মাণ নয় উচ্চ শিক্ষিত ও আধুনিক মনের জমিদার গোপাললাল রায় রংপুরে শিল্প-সাহিত্য ও ক্রীড়া , সংস্কৃতির বিকাশে রেখেছেন দারুন অবদান। দুই তলা বিশিষ্ট প্রাসাদটির ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে গম্বুজাকৃতির একটি হাওয়াখানা। লোকমুখে শোনা যায় গোপাল লাল রায় গরমের সময় হাওয়া খেতে এই হাওয়াখানায় বিশ্রাম করতেন।

কারো কারো মতে এটা হাওয়াখানা নয় এটা একটা সেন্ট্রি পোস্ট জমিদারের পাইক পেয়াদারা এখান থেকে সবদিকে নজরদারি করত। বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী যেমন আকর্ষণীয় এই বাড়িটির নানা অংশের অলংকরণও তেমনি দারুন নজরকাড়া। সবখানে রুচি ও শিল্প যেনো হাত ধরাধরি করে যুগের পর যুগ আছে।

না মার্বেল সিঁড়িবে ওপরে উঠলেই দেখতে পাবেন জাদুঘর যেটা এই বাড়িটির একাংশে তৈরি করা হয়েছে। জাদুঘরে আছে বোন মরিয়ম কে লেখা বেগম রোকেয়ার চিঠি, এছাড়াও রয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফ, সম্রাট আওরঙ্গজেবের খুৎবা, বিখ্যাত কবি শেখ সাদীর ফরাসি কবিতা, পোড়া মাটির ফলকসহ অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন।

 সেই জমিদার আর জমিদারি আজ নেই কিন্তু সেই ঝলমলে অতীতের স্মারকচিহ্ন বুকে নিয়ে তাজহাটের জমিদার বাড়িটি এখনো শোনায় ইতিহাসের গল্পকথা। তাই বিলম্ব না করে রংপুর বেড়াতে এলে অবশ্যই একবার দর্শন করে আসবেন রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়িটি।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন
রংপুর শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে

দক্ষিণ পূর্ব দিকে মাহিগঞ্জে তাজহাট জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।

রংপুরের বাস টার্মিনাল থেকে রিক্সা, অটো বা ভ্যানে করে খুব সহজেই তাদের জমিদার বাড়িতে যাওয়া যায়। যানবাহনে করে গেলে জন প্রতি ২০ টাকা করে ভাড়া লাগে।

একটা নির্দিষ্ট প্রবেশ মূল্যর  মাধ্যমে জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়।মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় আছে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত এবং শীতকালে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি সোমবার অর্ধ দিবস বন্ধ থাকে। এখানে যানবাহন ভেদে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে একটা মূল্যের বিনিময়ে।

আলীবাবা থীম পার্ক
আলীবাবা থীম পার্ক

৫.আলীবাবা থীম পার্ক

আরব্য রজনীর উপন্যাসের আলীবাবা  চল্লিশ চোরের কথা আমরা কে না জানি। আলিবাবা নামে রংপুরের তিস্তা নদীর তীরে  একটি থিম পার্ক তৈরি করা হয়েছে‌, যেটি আলীবাবা থীম পার্ক নামে পরিচিত। থিম পার্কটি রংপুরের শেষ সীমানায় এবং গাইবান্ধার শুরুতে পড়বে।

বড় গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে প্রথমে যেটি চোখে পড়ে দেয়ালে অঙ্কিত বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর অংকন। যেখানে শোভা পাচ্ছে প্রথমে অঙ্কিত আছে আমাদের কলেমা, শহীদ মিনারের ছবি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় সংসদ ভবন, সাহাবী গাছ জর্ডানে, প্রাচীন আরব্য স্থাপনা, ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট, কাবা শরীফ, আল আকসা মসজিদ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, আহসান মঞ্জিল, মসজিদে নববী মদিনা শরীফ, ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান, চীনের মহাপ্রাচীর, ভারতের তাজমহল।

পাশে রয়েছে শুসজ্জিত আসন বিশিষ্ট রেস্তোরাঁ। এখানে টেবিল চেয়ার গুলো খুবই আকর্ষণীয়। গাছের আস্ত গুঁড়ি কেটে তৈরি করা হয়েছে এখানকার সুসজ্জিত টেবিলগুলো । সামনেই রয়েছে সুইমিং পুল টিকিট কেটে এখানে এক ঘন্টা গোসল করার সুযোগ আছে দর্শনার্থীদের জন্য। ছোট শিশু কিশোররা তো এখানে গেলে আসতেই চাইবে না তাদের জন্য গোসল করা এবং জাম্প দেওয়ার জন্য আছে সুব্যবস্থা।

এখানে এলে দেখতে পাবেন একটা সুন্দর পানির ঝরনা এবং ভেতরে রয়েছে আল্লাহর ৯৯ টা নাম খচিত একটা মুরালিপি যেটা কিছুটা পদ্ম ফুলের কলির মত দেখা যায়। আরেকটু এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন আল্লাহর নাম দিয়ে একটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আছে কোরআন শরীফ এবং আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করা একজোড়া হাত, বেশ কিছু গম্বুজ তৈরি করা আছে মসজিদের আদলে।

এখানে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে কিছু রাইডস এয়ারলাইন্স, সুপার চেয়ার, দোলনা, নাগরদোলা,টয়ট্রেন ইত্যাদি। পার্কটিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় গাছের আদলে তৈরি করা কুঁড়েঘর দোতলা বিশিষ্ট যেখানে দর্শনার্থীরা উঠে চারিদিকের সৌন্দর্য খুব সহজে উপভোগ করতে পারবেন। দেখা যায় তিস্তার বড় চর । 

রংপুর ভ্রমণ শেষ করার পর যদি আপনি আরেকটা উপযোগী ভ্রমণ স্পট পরিদর্শন করতে চান তাহলে রংপুরের শেষ এবং গাইবান্ধা শুরু এই মধ্যস্থানে আপনার জন্য আলিবাবা থিম পার্কটি হবে ভ্রমণের জন্য উপযোগী স্পট।

 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন
উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূর মীরগঞ্জ চৈতন্য বাজার ইমামগঞ্জ বাজার হয়ে সোজা উত্তর দিকে গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার সম্মিলিত স্থানে তিস্তা নদীর তীরে আলিবাবা থিম পার্কটি অবস্থিত। এটা রংপুর সদর থেকে ৩১.৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা তেমন নেই বললেই চলে। আপনি যদি নিজস্ব যানবাহন কিংবা রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন সবথেকে ভালো হয়।

আলিবাবা থিম পার্ক টি রংপুরের লাটশালা,তারাপুর, সুন্দরগঞ্জ এলাকাতে অবস্থিত। জন প্রতি টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা। এখানে টিকিটের বিনিময় গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে নির্দিষ্ট মূল্যের মাধ্যমে।

আনন্দ নগর
আনন্দ নগর

৬.আনন্দ নগর

রংপুরের মধ্যে আরো আরেকটি পিকনিক স্পট আছে যেটির নাম আনন্দ নগর পিকনিক স্পট। প্রথমে গেটে ঢুকলে দেখতে পাবেন বড় একটি পাখির ভাস্কর্য এবং তার নিচে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক ঘোড়ার পিঠে চড়ে স্যালুট জানাচ্ছে যেন সমস্ত দর্শনার্থীদের অব্যর্থনা জানাচ্ছে।এটি একটি বিনোদন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে দশনার্থীদের জন্য চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা।

বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা  যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান করার জন্য স্পটটি তৈরি করা হয়েছে।স্পটিতে গেলে আপনি নানান রকম মাটির তৈরি ভাস্কর্য দেখতে পাবেন এগুলো র অসাধারণ শৈল্পিকতার চোখ জুড়িয়ে যাবে। অনেক দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন পিকনিক স্পটটি উপভোগ করার জন্য। এখানে বসে থাকার জন্য আছে নিরিবিলি অনেক স্থান। এখানে ফাস্টফুড সহ সব ধরনের খাবার পাওয়া যাবে। আছে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক আচার।

শিশু-কিশোরদের জন্য এখানে আছে বিভিন্ন বিনোদন ব্যবস্থা। আছে অনেকগুলো রাইডস যেগুলোর মধ্যে হর্স রাইডস, প্লেন রাইডস, ঘূর্ণি, দোলনা এবং নাগরদোলা সহ বিভিন্ন আইটেম। এছাড়াও বাচ্চাদের জন্য খেলনা এবং চুড়ি ফিতার দোকানও আছে। এখানে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা আছে। এখানে আছে একটি সুদৃশ্য মসজিদ । আরো আছে প্যাডেল চালিত নৌকা।

এখানে আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে আজব গুহা। যার ভেতরে লেখা আছে জাদুঘর, গুহাটির মধ্যে  আলো-আঁধারিতে সাজিয়ে রাখা ছিল কিছু ভাস্কর্য। আদিম কালের মানুষের জীবন যাত্রা নিয়ে নির্মিত হয়েছে গুহার পরিবেশ, হরর সাউন্ড দিয়ে দর্শকদেরকে রোমাঞ্চিত করার ব্যবস্থা করা আছে।দূর দূরান্ত থেকে আসা দশনার্থীদের জন্য এখানে এসি ননএসি রেস্তোরাঁয় থাকার ব্যবস্থা  আছে। রংপুর শহর থেকে এটা অনেক কাছে রংপুর ভ্রমণে এলে আপনি অবশ্যই আনন্দনগর থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন
আনন্দ নগর পিকনিক স্পটটি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নে অবস্থিত। বগুড়া- রংপুর মহাসড়ক হতে পীরগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে সোজা পশ্চিমে খালাস পীরহাটের উত্তর দিকে হাসারপাড়া সড়কপথে বাসযোগে আসার সুব্যবস্থা রয়েছে।  

বাস থেকে নামার পর লালদীঘি থেকে ভ্যান বা অটোতে করে আনন্দনগরে নিয়ে আসবে। এখানকার প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা করে এবং প্রত্যেকটা রাইডসের ২০ টাকা করে টিকিট।

ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি
ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি

৭.ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি

রংপুর জেলার অন্তর্গত জমিদার বাড়ির গুলোর মধ্যে ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি একটা উল্লেখযোগ্য স্থান। এটা কুমারী জমিদার বাড়ি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এর পরতে পরতে মিশে আছে অনেক রোমাঞ্চকর কাহিনী। সে যুগে ইটাকুমারী জমিদার এলাকাটি পুরো ভারতবর্ষের মধ্যে উন্নত শিক্ষা ও সংস্কৃতিময় এলাকা ছিল বলে জানা যায়।

এই ঐতিহাসিক বাড়ি থেকেই শুরু হয় প্রজা বিদ্রোহের। ইটাকুমারী জমিদার এলাকাটি সেযুগে অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় নবদ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইটাকুমারীর রাজা রঘুনাথ চন্দ্র রায়। তখনকার সময় ইংরেজরা সাধারণ জনগণ ও কৃষকদের ওপর জুলুম করত। সে সময় যারা এর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে শিবচন্দ্র রায় , দেবী চৌধুরানী, নবাব নুরুল উদ্দিন বাকেরগং, ভবানী ঠাকুর, দর্জি নারায়ণ এদের নাম উঠে এসেছে। 

জমিদার রঘুনাথচন্দ্রের পুত্র ছিলেন শিবচন্দ্র রায়। শিবচন্দ্র ছিলেন মানব দরদী ও দয়ালু জমিদার। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যের অস্তমিত হয়নি, বাংলার শেষ নবাবেরই শুধু পরাজয় ঘটেনি বরং বাংলা বিহারে নেমে আসে চতুর্মুখী অত্যাচার নিপীড়ন আর নির্যাতনের ঘোর অমানিশা। 

১২ই আগস্ট ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে  মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানী লাভ করে। এরপর থেকেই সাধারণ জনগণ ও কৃষকের ওপরে নেমে আসে ঘোর কালো অন্ধকার রাত । রাজা, জমিদার,নর-নারী কিংবা শিশু-কিশোরী কেউ এর থেকে রেহাই পায়নি। মাত্রাতিরিক্তর রাজস্ব আদায়। রাজ্য শাসনের নামে জুলুম অত্যাচার ব্যভিচার বেড়েই চলেছিলো।

দেওয়ানি হস্তান্তরের পর ক্ষমতাশীল দেবী সিংহ ও তার সাগরেদ হররাম সিংহ খাজনা আদায়ের জন্য জমিদার, কৃষক, ব্যবসায়ী সবার উপরে নৃশংস অত্যাচার আরম্ভ করে। দেবী সিংহের নির্যাতনের বিরুদ্ধে এটা কুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায় প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এ খবর জানতে পেরে দেবী সিংহ ও তার সহকারি হররাম সিংহ তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে শিবচন্দ্রকে গ্রেফতার করে। রংপুরের পীরগঞ্জে দেবী সিংহের কুঠিতে অন্ধকার তাকে ঘরে আটকে রাখে।

অনেক টাকার বিনিময়ে শিব চন্দ্র রায়ের মুক্তি হয়। এরপর ইটা কুমারের মানুষ এবং উপজাতিরা তীরন্দাজ বাহিনী গঠন করে জমিদার শিবচন্দ্রের মহল পাহারা দিতে থাকে। জমিদার রঘুনাথ চন্দ্র রায়ের পুত্র শিবচন্দ্র রায় এই জমিদার বাড়ি থেকেই একই উপজেলার মন্থনা জমিদার বাড়ির জমিদার দেবী চৌধুরানী সাথে মিলে কৃষক প্রজা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

জমিদার শিবচন্দ্র রায় অন্যান্য জমিদারদেরকে নিয়ে একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করেন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন আশেপাশের সমস্ত জমিদার সহ জয়দূর্গা দেবী । শিব চন্দ্র রায় সবার সামনে ইংরেজদের অমানবিক অত্যাচারের কথা পেশ করে । সবার কাছে এর একটা বিহিত করার প্রস্তাব দেয় তার এ প্রস্তাবে অন্যান্য জমিদাররা তেমন কোন সাড়া দেয়নি এই ঘটনায় জয় দুর্গা দেবী রেগে যান এবং তখন জয় দুর্গা দেবী একটি জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। 

সেই ভাষণে ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত প্রজারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শুরু হয় এ অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ। পীরগাছার ফতেপুর, চাকলাদারসহ এই বিদ্রোহ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে পুরো দিনাজপুর ও ফরিদপুরের এলাকা জুড়ে। অপর একটি সংগঠন যুক্ত হন নুরুল উদ্দিন বাকের গংয়ের বাহিনী। বিদ্রোহের এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের দমন করতে ইংরেজ বাহিনী কোমর বেঁধে নামে।

এখানকার নাপাইচন্ডি  মেলা প্রাঙ্গণে ইংরেজ বাহিনীর মুখোমুখি হয় দেবী চৌধুরানী। এই অসম যুদ্ধে এক পর্যায়ে শহীদ হন কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম সংগঠক ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায় জমিদার সহ অসংখ্য অনুগামী শিষ্য। প্রজা বিদ্রোহের নেতা জমিদার শিবচন্দ্র রায় আজ তার জমিদারি নেই কিন্তু তার ইটাকুমারির জমিদার বাড়িটি আজও মাথা উঁচু করে ইতিহাসের ঐতিহ্য বহন করছে।

কালের বিবর্তনে বাড়িটি প্রায় ধ্বংসাবশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সম্মানিত জমিদারের বিদ্রোহী চেতনা আজও আমাদের আধুনিক প্রজন্মকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর স্পৃহা জাগায়।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন
রংপুর শহর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দামুর চাকলা বাজার। এখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে এটা কুমারী জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।  ইটাকুমারী জমিদার বাড়িটি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় অবস্থিত। 

ভ্যান , রিক্সা ও অটোতে করে রংপুর শহর থেকে খুব সহজেই ইটাকুমারী জমিদার বাড়িতে যাওয়া যায়।

পরিশেষে বলা যায়, ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি রংপুর জেলা। অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান নিয়ে রংপুরের মিলন মেলা। আর দেরি না করে এবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিন রংপুরে। পরিবার ও প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ঘুরে আসুন রংপুর জেলা থেকে আর উপভোগ করুন রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো, ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন –

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents