Dreamy Media BD

ভুটানের দর্শনীয় স্থান সমূহ

ভুটানের দর্শনীয় স্থান সমূহ

‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’ নামে খ্যাত ভুটান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি অপরূপ স্থলদেশ। যেটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত।মাত্র ৪৬,৫০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ছোট্ট দেশটি আপনাকে আবিষ্ট করে ফেলবে তার  সৌন্দর্যের মোহাচ্ছন্নে।

ছবির মতো সুন্দর, স্থলবেষ্টিত এই দেশটির আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ। যার কারনে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ডাকা হয়। আরও একটি চমৎকার ব্যপার হলো যে- পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ নামে পরিচিতি লাভ করেছে এই ভুটান। শুধু তাই নয়, ভুটান প্রাণী এবং উদ্ভিদের অভয়ারণ্যও হয়ে উঠেছে। 

যার ফলশ্রুতিতে এখানে হাজার হাজার দূর্লভ প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদের দেখা মেলে। স্বভাবতই তুলনাহীন নৈসর্গিক এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ভান্ডার ভুটানের প্রায় ৭০% এলাকাই অরণ্যাবৃত। অর্থাৎ এ দেশটি যে ভ্রমন-প্রেমীদের আত্মার খোরাক হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তার প্রমান মেলে সারা বছর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে থাকা এর দর্শনীয় স্থানগুলোতে। এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে ভুটানের জনপ্রিয় সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর সম্পর্কে জানতে এবং সম্পূর্ণ ভ্রমনগাইড হিসেবে।

থিম্পু

সবুজে ঘেরা পাহাড়ের উপর মনোরম সুন্দর স্থানটি হলো ভুটানের রাজধানী থিম্পু (Thimphu)। যেটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭,৩৭৫ থেকে ৮,৬৮৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি শহর। একদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর শহর হিসেবে পরিচিত এই শহরের চারপাশের পাহাড়ি আঁকা বাঁকা রাস্তা ও ঠাণ্ডা হিমেল মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এক অদ্ভুত রকমের ভালো লাগা তৈরি করে বৈদেশিক পর্যটকদের মনে।

অন্যদিকে রংবেরঙ্গের বাড়িগুলো দেখলে মনে হয় যেন কোন শিল্পীর তুলিতে যত্ন করে আঁকা কোন এক রূপকথার  ছবির রাজ্যে চলে এলাম। আর তাই এমনই অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি টি দেখার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক পাড়ি জমায় এই শহরে। তাহলে আপনি কেনো নয়?

থিম্পুর দর্শনীয় স্থান

 বুদ্ধ দর্দেনমা স্ট্যাচু : পাহাড়ের উপর ৫১.৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট বিশাল একটি স্ট্যাচু যা তৈরি মূলত ব্রোঞ্জ দিয়ে আর সোনার প্রলেপ দিয়ে আবৃত। এই বুদ্ধ দৰ্দেনমা (Buddha Dordenma) স্ট্যাচুটি শহরের যে কোন জায়গা থেকেই দেখা যায় । আপনি থিম্পু শহরে গেলে এটি দেখেই আসতে পারেন।

ন্যাশনাল মেমোরিয়াল কর্টেন : ভুটানের রাজধানী থিম্পুর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি বড় বৌদ্ধ উপসনা কেন্দ্র হলো ন্যাশনাল মেমোরিয়াল কর্টেন (national memorial chorten)। খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো গুছানো একটি জায়গা এটি। এর এন্ট্রি ফি মাত্র ৩০০ টাকা (তবে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখালে ১৫০ টাকাতেই হয়ে যাবে)। ভুটানের ৩য় রাজা জিগমে দরজির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই মূলত এই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। ১৯৭৪ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। এখানে গেলে আপনি আরও অনেক সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং ও স্ট্যাচু দেখতে পাবেন। তাছাড়াও দেখতে পাবেন হাজার হাজার কবুতর।

সিটি ভিউ পয়েন্ট : আপনি যদি থিম্পু শহরের পুরো ভিউটা ঠিক মতো দেখতে চান, তাহলে চলে আসুন সিটি ভিউ পয়েন্টে। এখান থেকেই আপনি থিম্পু শহরটা পুরো ঠিকমতো দেখতে পারবেন। আরও একটি সুন্দর ব্যপার হলো এই সিটি ভিউ পয়েন্ট থেকেই সুন্দর, ছিমছাম গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ ভুটানের রাজা রানীর “কিংস প্যালেস” বা ডিচিনচোলিং প্যালেস চোখে পড়ে এখান থেকে। তাই ভুটানে এসে এখানে না আসাটা বোকামো হবে।

সিমতোখা ডিজং (Simtokha Dzong) : এখানে এলে আপনি দেখতে পাবেন রিগনে স্কুল অফ মোনাস্টিক স্টাডিস, ফ্রেশকো ও স্টেট কার্ভিং।

থিম্পু জং : এটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬১ সালে। এই সুন্দর মনোরম থিম্পু জং এ গেলে দেখা মিলবে দ্যা ন্যাশনাল এসেম্বলি। শুধু তাই নয়, ভুটানের রাজার থ্রোন রুম ও সরকারি নানা ডিপার্টমেন্ট ও দেখতে পাবেন এখানে।

ন্যাশনাল তাকিন সংরক্ষিত চিড়িয়াখানা : ছোট একটি চিড়িয়াখানা ন্যাশনাল তাকিন সংরক্ষিত চিড়িয়াখানা। এখানে আসলে দেখতে পাবেন ভুটানের জাতীয় পশু তাকিন। তবে এন্ট্রি ফি লাগবে ৩০০ রুপি মাত্র।

 তাসিছ ডিজং বা থিম্পু ডিজং : মূলত এই তাসিছ ডিজং বা থিম্পু ডিজং কে বলা হয় জেলা অফিস (district office)। এর মাঝেও একটি বৌদ্ধ উপাসনালয় আছে।

পার্লামেন্ট হাউস : তাসিছ ডিজং বা থিম্পু ডিজং- এর পাশেই আপনি সুন্দর এই পার্লামেন্ট হাউজের দেখা পাবেন। এটি অবিকল ছবির মতো সুন্দর মনেরম একটি ভবন। এটি সবুজের মাঝে লালচে খয়েরি রঙে গড়া এক সুন্দর স্থাপত্য শিল্প, যা সহজেই সবার নজর কাড়ে।

 এছাড়াও থিম্পুতে রয়েছে রাজপ্রাসাদ, থিম্পু ক্লক টাওয়ার, ফার্মারস মার্কেট, ন্যাশনাল লাইব্রেরি এবং বিবিএস টাওয়ার এর মতো দেখার কিছু অপরূপ সুন্দর জায়গা। যে স্থান গুলোতে গেলে আপনি সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরতে পারবেন। 

 থিম্পু অর্থাৎ ভুটান (Bhutan) ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবো সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস। আবহাওয়া ও ভুটানের প্রকৃতির সৌন্দর্যের সব দিক বিবেচনায় কিন্তু এই তিন মাস বেড়ানোর জন্যে ভাল সময়।

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
ভুটানের রাজধানী থিম্পু আপনি ভুটান যেতে পারেন বাসে করে অথবা রোলপথে অথবা বিমানে। 
Punakha
পুনাখা

পুনাখা(Punakha)

ভুটানের রাজধাণী শহর থিম্পু থেকে ৭২ কিমি দূরে অবস্থিত পুনাখা মূলত ভুটানের সুন্দর একটি শহর৷ ভুটানের সবচেয়ে উর্বর ভ্যালি হিসেবেই এটি বেশ পরিচিত। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভুটানের রাজধানী এবং সরকারের আসন ছিল এই পুনাখা, যখন রাজধানী থিম্পুতে সরানো হয়েছিল। বর্তমানে ভুটানের শীতকালীন রাজধানী নামে খ্যাত হলো পুনাখা। মূলত দোচুলা ভুটানিদের পূণ্য ভূমি।

এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন অসংখ্য ধর্মীয় নকশাখচিত ছোট ছোট ধর্মীয় পতাকায় দোচুলা একদম ছেয়ে আছে৷ আসলে দোচুলায় মূল আকর্ষণই হলো এখানকার বৌদ্ধমঠ। আকাশ পরিস্কার থাকলে ৩০৫০মিটার উঁচু এই পাস থেকে পুরো হিমালয়ান রেঞ্জ দেখা যায় বেশ পরিষ্কারভাবেই৷

পুনাখা এর বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

ফো ছু এবং মো ছু নদী এবং বিখ্যাত পুনাখা জং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ন্যাশনাল লাইব্রেরি, হ্যান্ডিক্রাফট এম্পেরিয়াম, পেন্টিং স্কুল এবং ট্র্যাডিশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটও আপনি চাইলে দেখে আসতে পারেন।

পুনাখা (Punakha) এর বড় আকর্ষণগুলোর একটি হলো রাফটিং। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘেরা পাহাড়ি নদীপথে চারপাশের চোখজুড়োনো ছবির মতো দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলা। তবে রাফটিং শুনলেই আমাদের যে অ্যাডভেঞ্চারের কথা মনে হয়, তেমন গা ছমছমে ব্যাপার কিন্তু আপনি এখানে পাবেন না। বছরের যে কোনও সময় আপনি ট্যুর দিতে পারেন ভুটানে৷ কোনো ভিসা লাগবে না। টিকিট কাটলেই হবে। তবে মার্চ থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সবচেয়ে ভাল সময়।

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
রাজধানী থিম্পু থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাহাড়, ঝর্ণা ও অপরূপ সৌন্দর্যের শহর পুানাখা। পুনাখা যাওয়ার জন্যে আপনাকে আলাদা করে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে পার্মিশন নিতে হবে। খুব সহজেই থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়া যায় ট্যাক্সি বা গাড়ি রিজার্ভ করে। ট্যাক্সিতে এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ২.৫০-৩ ঘন্টার মতো।

এছাড়াও বাসে করে যেতে পারেন। থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার জন্য দুই তিনটা বাস সার্ভিস চালু আছে যা প্রতিদিন দুপুরে পুনাখার উদ্দ্যেশে রওনা হয়। সেইক্ষেত্রে অবশ্য সময় আরও কম লাগে।।

পুনাখা যাওয়ার জন্যে আপনাকে আলাদা করে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে পার্মিশন নিতে হবে। খুব সহজেই থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়া যায় ট্যাক্সি বা গাড়ি রিজার্ভ করে। ট্যাক্সিতে এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ২.৫০-৩ ঘন্টার মতো। এছাড়াও বাসে করে যেতে পারেন। থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার জন্য দুই তিনটা বাস সার্ভিস চালু আছে যা প্রতিদিন দুপুরে পুনাখার উদ্দ্যেশে রওনা হয়। সেইক্ষেত্রে অবশ্য সময় আরও কম লাগে।

তবে গাইডরা আপনাকে বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে দেবেন কখন কী করতে হবে। আপনাকে শুধু সেটুকু মেনে চললেই হয়ে যাবে। আবার পিক সিজনে মাথাপিছু দু’হাজার টাকা খরচ হবে। নদীপথে ১৪ কিলোমিটার যাওয়ার পর স্থানীয় একটি হোটেলে পোশাক বদলের ভালো ব্যবস্থাও পাবেন। আপনি কিন্তু সকাল-সকাল পুনাখা পৌঁছে রাফটিং সেরে চলে যেতে পারেন পুনাখা জং এ। ঘুরে দেখতে বেশ ভালো একটা সময় লাগবে৷ আর তারপর দুপুরে ফার্টিলিটি টেম্পল ঘুরে চলে যেতে পারেন আশপাশের গ্রামে ৷ 

Phobjikha Valley
ফোবজিকা ভ্যালি

ফোবজিকা ভ্যালি(Phobjikha Valley)

ভ্রমন-প্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হলো ফোবজিকা ভ্যালি। যাকে গাংতে ভ্যালিও বলা চলে। ফোবজিকা ভ্যালি মূলত ইউ আকৃতির এমন একটি সংরক্ষিত জলাভূমি যা কিনা সেন্ট্রাল ভুটানের গাংতে অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই অবস্থিত। এটি একটি রামসার সাইট হিসেবেও পরিচিত।

গাংতে গুম্ফার একদম নীচে অবস্থিত এই ফোবজিকা ভ্যালি বিরল প্রজাতির পাখি ব্ল্যাক নেকড্ ক্রেনের শীতকালীন বাসস্থান। ভুটানীরা এই পাখিটিকে পবিত্র এবং সৌভাগ্যের প্রতীক বলে বিশ্বাস করেন৷ এই ভ্যালিতে হওয়া ছোট ছোট বাঁশ জাতীয় ঘাসের লোভেই প্রধানত প্রতিবছর অসংখ্য পাখি এখানে আসে।

আপনি জানলে অবাক হবেন যে- বহুবছর ধরে এই অঞ্চলে কোনো রকম বিদ্যুৎ পরিষেবাই ছিল না শুধুমাত্র পাখিদের কথা মাথায় রেখে৷ এখানে আসলে দেখতে পাবেন মূলত ভ্যালিতেই একটা ক্রেন সেন্টার রয়েছে যেখান থেকে গোটা ভ্যালিতে নজরদারি রাখা হয় এবং পাখিদের দেখাশোনা করা হয় নিয়মিতভাবে।

আবার কথিত আছে সেই সুদূর তিব্বত থেকে অক্টোবরের শেষে যখন এই পাখিগুলো ভ্যালিতে আসে, তখন গাংতে গুম্ফাকে তিনবার প্রদক্ষিন করে তবেই ভ্যালিতে নামে। আর ফেব্রুয়ারিতে ফেরার সময়ও তারা একইভাবে ফেরে৷

এই ভ্যালিতে মূলত গবাদি পশুদের শীতকালীন খাদ্য হিসাবে এক অন্য প্রজাতির মুলো ও ওলকপি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়৷ তবে আলুর চাষ বেশি হয়। এখানে আসলে আপনি দেখবেন ভ্যালি থেকে পাইন, ম্যাপেল, রডোড্রেনডন গাছে ঘেরা একটি সরু এবং সুন্দর রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাংতে গুম্ফার দিকে চলে গেছে। উপর থেকে ভ্যালির নয়নাভিরাম প্রকৃতির এক অসাধারণ দৃশ্য, যা হয়ত ভাষায় বর্ণনা করা প্রায় অসম্ভব৷

বৌদ্ধদের প্রাচীন স্কুলগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কুল হলো গাংতে গুম্ফা। প্রতিবছর ১২ নভেম্বর গুম্ফার চাতালে ব্ল্যাক নেকড্ ক্রেন নামে পরিচিত এক উৎসবের আয়োজন হয়, যা দেখতে দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ ভীড় জমায়। তবে থিম্পুর থেকে এখানে অনেক অনেক বেশি ঠান্ডা থাকে। আপনি যদি ভুটানের গ্রামীণ জীবন -যাপনের স্বাদ নিতে চান তাহলে ফোবজিকা ভ্যালি তার আদর্শ রূপ। অর্থাৎ একবারের জন্যে হলেও অবশ্যই আপনাকে এখানে আসতে হবে।

তিব্বতী কালো-গলা সারসের (Black-necked cranes) শীতকালীন চারণভূমির এই ফোরজিকা ভ্যালীতে ঘন সোনালী শান্তি নিঃশব্দে নেমে আসে যেনো আকাশের গা বেয়ে৷

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
ভুটানের রাজধানী শহর থিম্পু থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে ৩০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই ফোবজিকা ভ্যালি। যা পুনাখা থেকে ৮০ কিলোমিটার  উত্তরে। পুনাখা থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে স্বর্গীয় সুষমা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে পাইন, মেপল আর উইপিং উইলো দিয়ে ঘেরা ফোরজিকা ভ্যালি। পুনাখা থেকে ওয়াংডু হয়ে বুমথাং যাওয়ার পাকা সড়ক বরাবর প্রায় ৩ ঘন্টা যেতে হবে। তারপর ডানদিকের পাহাড়ে উঠে ২০ মিনিটের ড্রাইভ শেষে নেমে আসুন নরম ঘাসে ঢাকা এই চমৎকার মার্শল্যান্ডে।

 পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজ (Punakha Suspension Bridge)

ভূটানের সব থেকে বড় সাসপেনশন ব্রিজ হচ্ছে পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজ( Punakha Suspension Bridge)। ভুটানের পূর্বের রাজধানী পুনাখা শহরে অবস্থিত এই পুনাখা ব্রিজ। ব্রিজটি দেখতে যেমন খুবই সুন্দর, তেমনই এর নির্মাণশৈলীও বেশ চমৎকার। 

ভুটানের পুনাখা শহরের ফো চু নদীর উপর নির্মিত  এই পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজটি। পুনাখা জং থেকে মাত্র ২০ মিনিট হাঁটলেই এই ব্রিজের দেখা মেলে। এই ব্রিজটি বানানোর মূল কারন হলো মূলত পুনাখা শহরবাসীর শর্টকার্টে এবং আরও পুনাখা জং এ আসার সুবিধা করে দেওয়ার জন্য।

না বললেই নয়। এই পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজটি কিন্তু ভুটানের দীর্ঘতম সাসপেনশন ব্রিজ। এটি লম্বায় ৩৫০ মিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকেন এটি প্রায় ১২২৩ মিটার বা ৪০১২ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। ব্রিজটি খুব মজবুতির সাথে ভাল ভাবেই বানানো হয়েছে। যার ফলে হাঁটার সময় দুলুনি মোটেই টের পাওয়া যায় না। এর উপরের এবং নিচের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী খুবই চমৎকার। যা-ই বলুন না কেনো, এমন সুন্দর আর বড় সাসপেনশন ব্রিজ কিন্তু খুব কমই দেখা যায়।

 এই ব্রিজের উপর থেকে নিচের সব কিছু অনেক ছোট মনে হয়। ব্রিজ থেকে পুনাখার আসে পাশের দৃশ্য দেখতে খুবই চমৎকার। ফো চু নদীর পানিও অন্যরকম কালারফুল। এখানে অনেককেই নদীতে রাফটিং করতে দেখা যায়। হেঁটে হেঁটে ব্রিজের অপর প্রান্তে চলে গিয়ে দেখবেন অপর পাশে কিছু পরিবার থাকে। আপনি চাইলে তাদের সাথে কথাও বলতে পারেন। আবার এই পাশে একটি ডিপার্টমেন্টাল শপ রয়েছে। চাইলে কিছু কিনতেও পারেন। 

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
ভুটানের পুনাখা শহরের ফো চু নদীর উপর নির্মিত এই ব্রিজটি। পুনাখা শহর থেকে মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তা। পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজ দেখতে হলে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে ভুটানের রাজধানী থিম্পু শহরে। তারপর থিম্পু এসে পুনাখা যাবার পারমিশন নিতে হবে। কারন ভুটানের বিভিন্ন শহরে প্রবেশ করার জন্য আলাদা করে পারমিশন নিতে হয়। তারপর আপনি থিম্পু থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যাবেন পুনাখা শহর।
Wangdue Phodrang
ওয়াংদি ফোদরং

ওয়াংদি ফোদরং(Wangdue Phodrang)

ওয়াংদি ফোদরং ভুটানের একটি দারুণ সুন্দর পাহাড়ি জনপথ। এখানে এসে উপভোগ করতে পারবেন প্রায় ১৩০০ মিটার উচ্চতায় উপতক্যার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ওয়াংদিতাং চু নদী। মায়াময় পাহাড়ের ধাপে ধাপে দেখতে পাবেন জুম চাষ। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ওয়াংদি ফোদরং Dzong দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেনো Dzong টি নদীর উপর ঝুলে আছে৷ রাজা হাবদ্রুং গাওয়াং নামগিয়াল এই জং টি নির্মাণ করেন।

রাজার মমি টি কিন্তু আজও সংরক্ষিত আছে পুনাখা জং এর মধ্যে। তবে আপনি ওয়াংদিতাং চু নদীর সুন্দর ব্রীজের প্রবেশের মুখেই আপনার পারমিট দেখিয়ে নিবেন৷ ব্রীজ পেরিয়ে গ্রামে প্রবেশ করতেই আপনার চোখে পড়বে ওয়াংদি ফোদরং এর সুন্দর মায়াময় জনপথ। এছাড়া এখানকার পাথর আর বাঁশের তৈরি জিনিস পত্রের বেশ কিছু দোকানও দেখতে পাবেন। এসব দোকান এবং নদীর দুই ধারেই গড়ে উঠেছে মনোরম জনপথ৷

এই ১৩০০ মিটার একটি শ্বাসরুদ্ধকর উচ্চতায় অবস্থিত, ওয়াংদি ফোদরং হলো ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে পরাবাস্তব স্থানগুলির মধ্যে একটি। এটি একটি প্রকৃতির অস্পৃশ্য সৌন্দর্যের সাথে সংস্কৃতি কীভাবে প্রাণের সাথে মিলিত হয় এবং তাকে স্বাগত জানায়- তারই একটি মনোরম প্রদর্শন। ড্রাগন ল্যান্ডের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলাটিও কিন্তু খুব  শীঘ্রই ‘UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে তালিকাভুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এটি ভুটানে দেখার জন্য বিস্ময়কর জায়গাগুলির সন্ধানকারী দর্শকদের মধ্যে একটি অতুলনীয় খ্যাতি অর্জন করেছে।

 ওয়াংদি ফোদরং এর জং এ প্রবেশ করতে চাইলে আপনাকে পারমিট দেখাতে হবে। আর এই পারমিট আপনাকে ম্যানেজ করতে হবে থিম্পু থেকেই৷ এই সৌন্দর্যের লীলাময় জং এর ছাদ থেকে পুরো জনপথ এবং নদীর একটা দারুন ভিউ পাওয়া যায় যা আপনার মিস করা ঠিক হবে না কোন ভাবেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত নদী, উপতক্যা আর সবুজ পাহাড়ে ঘেরা ওয়াংদি ফোদরং এক কথায় অপূর্ব। তবে নদীর ধারে পার্বত্য গিরিশিরার উপর বহু প্রাচীন শহর ওয়াংদি ফোদরং কিন্তু  স্থানীয় মানুষের কাছে ওয়াংদি নামেই পরিচিত।

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
রাজধানী থিম্পু শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং পুনাখা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অল্পচেনা এই মায়ায় ঘেরা পাহাড়ি জনপদ ওয়াংদি ফোদরং। ওয়াংদি ফোদরং পুনাখা থেকে প্রায় কাছে হওয়ার দরুন ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন ওয়াংদি ফোদরং। আবার আপনি চাইলে থিম্পু থেকে ট্যাক্সি নিতে পারেন অথবা পুনাখা ভিজিট করার সময় ট্যাক্সি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।

 বুমথাং(Bumthang)

ভুটানের দর্শনীয় সেরা স্থানগুলোর একটি বুমথাং যেনো একটুকরো স্বর্গ। ‘বুম’ এর অর্থ হলো দেবতার বেদীতে জল রাখার পাত্র অর্থাৎ উপত্যকা। তাই বৌদ্ধধর্মালম্বীদের কাছে বুমথাং হচ্ছে অতি পবিত্র স্থান৷ এখানে ভুটানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন জং, মন্দির এবং মহল গুলো অবস্থিত। বুমথাং এ দেখতে পাবেন ওয়াংগডিচোলিং প্যালেস, জাম্বে লাখ্যাং মন্দির এবং সব থেকে বড় ভুটানিজ জাকার জং পাশাপাশি হাঁটলে দেখে নিতে পারবেন হট স্প্রিং এরিয়া৷ তবে এই এলাকায় ব্লু শিপ, মাস্ক ডিয়ার, হিমালয়ান ভাল্লুকও চোখে পড়তে পারে৷

বুমথাং এর দর্শনীয়স্থান সমূহ

জাম্বো লাখাঃ তিব্বতি রাজা সংসেন গাম্পো সপ্তম শতকে নির্মাণ করেন সুন্দর এই লাখাং।

জাকার জংঃ এই জংটি নির্মাণ করেন ওয়াংচুক নামে এক লামা ৷ শুধু বুমথাংয়ের নয়, এই জং টি সারা ভুটানের একটি দ্রষ্টব্যস্থান বলে পরিগণিত।

কুর্জ লাখাঃ ১৬৫২ সালে রিমপোচে নামক এক  তিব্বতি ধর্মগুরু এখানে তপস্যা করেছিলেন। প্রধানত তিনটি মন্দির নিয়ে এই লাখাংটি। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল এক বুদ্ধমূর্তি। আর তার পাশেই আছে একটি জলাশয়৷

তামশিং লাখাংঃ তামশিং লাখাং মূলত কুর্জ লাখাংয়ের কাছেই অবস্থিত। এই লাখাংটি ১৫০১ সালে তেরটন পেমা লিংপা নামে এক লামা তৈরি করেন। 

এগুলো ছাড়াও বুমথাং এ দেখতে পাবেন খুবই সুন্দর উড়ি ভ্যালি, দোচুলা পাস। সারা বছরই পর্যটকদের ভীর থাকে এসব জায়গায়। তবে যদি ভুটান ভ্রমনের সময় জানতে চান তাহলে বলবো ভুটান ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় মার্চ থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস৷

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
ভুটানের রাজধানী শহর থিম্পু থেকে ২৭০ কি.মি. দূরে আট হাজার (৮০০০) ফুট উঁচুতে অবস্থিত সুন্দর এই বুমথাং। রাজধানী শহর থিম্পু থেকে গাড়ি অথবা বাসে করেই পৌঁছনো যায় বুমথাংয়ে৷ তবে থিম্পু থেকে সরাসরি বুমথাং যেতে বেশ অনেকটা সময় লাগে আর তাছাড়া রাস্তাও কিন্তু খুব একটা ভালো নয়৷
Paro
পারো

পারো(Paro)

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভুটান সুখী মানুষের দেশ নামে খ্যাত। ভুটান (Bhutan) এর রাজধানী থিম্পু থেকে  মাত্র ৫১ কিলোমিটার দূরে নদীর কোল ঘেঁষে পারো উপত্যকায় গড়ে উঠেছে ‘পারো’ (Paro) নামের এক অপূর্ব সুন্দর শহর। সুন্দর এই শহরের সাথে কিন্তু জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস ও নানা রকম মজার গল্প কথা। 

এছাড়া এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও কিন্তু ভোলার মতো না। বিশেষ করে বসন্ত ঋতুতে পারোর রূপ হয়ে উঠে দর্শন সুখকর এবং অতুলনীয়।  যার কারনে ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য ভুটানের পারো হতেই পারে একটি সুখ স্মৃতিময় আনন্দ ভ্রমণের উপলক্ষ্য।

ভুটানিদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র একটি শহর হলো পারো। ফলশ্রুতিতে এখানে চলার পথে নানা বোদ্ধ উপাসানালয় আপনার চোখে পড়বে। এছাড়াও এখানে ঘুরতে এসে পারো শহরের সবখানেই আকাশ ছোঁয়া বিশাল সব পাহাড়ের দেখা মিলে। সত্যি বলতে পুরো শহরটাই কিন্তু দেখার মতো খুব বেশিই সুন্দর। তবুও কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য দেখারমত জায়গা গুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই।

রিনপুং জং : রিনপুং শব্দের অর্থ হলো ‘রত্নের স্তুপ’। মূলত এই রিনপুং জং হলো পারো শহরের সবচেয়ে বড় দুর্গ। এটি প্রধানত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার জায়গা। রিনপুং জং এ ঘুরতে এলে আপনি সারা পারো শহর অবলোকন করতে পারবেন। কেননা এখান থেকে পারো শহর দেখতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে। তাই এটা কিন্তু আপনার ভ্রমনের জন্যে খুব উপযুক্ত একটি স্থান হবে।

টা জং : টা জং মূলত রিণপুং জং এর পর-ই অবস্থান করে। রিনপুং জং এর পিছনে গড়ে উঠা টা জং আসলে একটি জাদুঘর। যদিও এই সুন্দর টা জং একসময় একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে এখন ঘুরতে এসে আপনি দেখতে পাবেন এখানে ভুটানের নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিভিন্ন চিত্রকর্ম রয়েছে। ভুটানের ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে পরিচয় ঘটবে। তাই ভ্রমনের জন্যে এটি কিন্তু বেশ ভালো একটি স্থান।

ন্যাশনাল মিউজিয়াম: ভুটানের এক সময়ের তাজিং দূর্গই হলো ভুটানের এখনকার ন্যাশনাল মিউজিয়াম। এখানে এসে ভুটানের  প্রাচীন ডাকটিকিট ও মুদ্রার দেখা পাবেন। খুবই সুন্দর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সবুজে ঘেরা এই স্থানটি আপনার ভ্রমনে আনন্দ দিবে।

ডুকগিয়াল জং : মূলত ন্যাশনাল মিউজিয়াম থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের সীমান্তে অবস্থিত এই ডুকগিয়াল জং। ডুকগিয়াল জং প্রধানত একটি তাজিং দুর্গের ধ্বংসাবশেষ।

 টাইগার্স নেস্ট বা টাইগার্স মনাস্ট্রি : পারো থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে পারো ভ্যালির একটি খাঁড়া পাহাড়ের চূড়ার উপর এই পারো টাইগার্স নেস্ট মন্দিরটি অবস্থিত। পারোর সবথেকে বড় আকর্ষন হলো এই টাইগার নেস্ট। টাইগার্স মনাষ্ট্রিতে হেঁটে যাওয়ার পথটাও কিন্তু বেশ সুন্দর। এখানে ট্যুরিস্টদের জন্যে একটি কফি শপও তৈরি করে দেওয়া আছে।

এদিকে স্থানীয় ভুটানিদের কাছে মন্দিরটি “তাক্তসাং/তাকসাং” নামেও পরিচিত। এছাড়া টাইগার্স নেস্টে কিন্তু ট্রেকিং করারও সুযোগ রয়েছে। সবুজে ঘেরা সুন্দর মনোরম এই মন্দিরটি ভ্রমন-প্রেমীদের আনন্দ জোগায় বলেই প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের পদধূলিতে মুখরিত হয়ে থাকে এর প্রাঙ্গন। চাইলে আপনিও চলে আসতে পারেন সুন্দর এই টাইগার্স নেস্ট বা টাইগারস মনাস্ট্রিটিতে।

কিছু মনাষ্ট্রি : এখানে গেলে আপনি দেখতে পবেন সুন্দর কিছু মনাষ্ট্রির প্রধান রুমে গুরু পদ্মসম্ভবের একটি বিশাল মূর্তি স্থাপিত আছে। এছাড়া এখানে দেখতে পাবেন কমলালেবুর বাগান।

পারো চু : চু শব্দের অর্থ হচ্ছে নদী। আর পারো চু হচ্ছে ভুটানের পারোর একমাত্র নদী। এ নদীর বিশেষত্বই হলো এর টলটলে স্বচ্ছ পানি, যা দেখলে আপনার মনটা শান্ত হয়ে যাবে। ভ্রমন-প্রেমীরা সকল ক্লান্তি ভুলে যায় এই নদীর তীরে এসে। অপরূপ সুন্দর প্রকৃতির সাথে স্বচ্ছ পানি আর নির্মল বাতাসের শান্তির পরিবেশ খুঁজে পাবেন এখানে এসেই।

আয়রন ব্রিজ : থিম্পুর মহাসড়কের পাশেই বয়ে যাওয়া পারো নদীর উপর অবস্থিত প্রাচীন একটি স্থাপনা হলো এই আয়রন ব্রিজ। কি সুন্দর একটি ছবির মতো দৃশ্য তৈরি করেছে! পারোতে ঘুরতে গিয়ে এই আয়রন ব্রিজটি অবশ্যই দেখে আসবেন। 

চোমো লহরি : চোমো লহরি মূলত ভুটানে অবস্থিত একটি পর্বত। সুন্দর এই সবুজে ঘেরা পর্বতটি ভুটান ও তিব্বতের বাসিন্দাদের কাছে “চোমো লহরি” একটি পবিত্ৰ পৰ্বত। তাই ভুটানে যাবেন অথচ এই পর্বতটি দেখবেন না- এমনটা যেনো না হয়।

সারা বছরই পারোর পরিবেশ মুখরিত হয়ে থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের পদ ধূলিতে। তাই আপনিও যেকোনো সময়ই যেতে পারেন। তবে বিশেষ করে অক্টোবর থেকে নভেম্বর এই সময়টা পারো-তে যাওয়ার জন্য ভালো। কেননা এই সময়টায় আকাশ পরিষ্কার ও আবহাওয়া ভালো থাকায় ভুটানের প্রকৃতি অনেক সুন্দর ভাবে পর্যটকদের চোখে ধরা পড়ে। আর এই সময় পারো ভ্রমণে গেলে ভুটানিদের নানান উৎসবের আমেজ পাবেন। তাই বলে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ভুটানে পর্যটকের সংখ্যা ও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়।

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
থিম্পু থেকে মোটামুটিভাবে  একঘন্টার দূরত্বে ৭,৫০০ ফুট উচ্চতায় পারো নদীর কোল ঘিরে অবস্থিত পারো উপত্যকা। ভুটানের রাজধানী শহর থিম্পু থেকে গাড়ি করেই যেতে পারবেন এই উপত্যকায়। সময় লাগবে মাত্র ১ ঘন্টায় মতো।

চেলে লা পাস 

চেলে লা পাস হচ্ছে ভুটান এর আরেকটি পরিচিত গিরিপথ৷ মূলত এ পথেই এক সময় তিব্বতের সাথে বাণিজ্য চলত। আবার এ পথেই তিব্বত ভুটানকে বেশ কয়েকবার আক্রমন করেছিলো। তবে ইদানিং এ পথেও পর্যটকদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সবুজে ঘেরা এই পিরিপথে যেতে হলে পারোতে অবস্থিত ভুটাের একমাত্র  এয়ারপোর্টকে পাশ কাটিয়ে একটি ঘন সবুজ পাইন এর অরণ্যঘেরা রাস্তা অতিক্রম করতে হয়।

প্রায় ২৩ কিলোমিটারের এই যাত্রা পথে দেখা মেলে নানান পাখি আর বন্যপ্রানের উপস্থিতি। যেনো নীল আকাশের নীচে এক ছবির মত আঁকা এক গিরিপথ যার নাম চেলে লা পাস। এখানে গেলে আপনি বুঝতে পারবেন,হিমালয়ের হিমেল বাতাসের স্পর্শ, সহস্র প্রেয়ার ফ্ল্যাগ আর আকাশপানে হিমালয়ের শৃঙ্গমুখ চেলে লা পাহাড়ের উপর থেকে ভুটানের ভিউটা এক কথায় অসাধারন।

পারো থেকে ‘হা’ যাওয়ার পথেই চেলে লা পাস যেটি কিনা ভুটানের উচ্চতম সড়কপথ। আসলে উচ্চতার কারণেই ঠান্ডা বেশি এখানে৷ প্রায় ১৩,০৮৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত চেলেলা পাস (Chele La Pass) থেকে দেখা নৈসর্গিক দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা কারো আছে বলে জানা নেই। সূর্য থাকলে এবং মেঘ না থাকলে মাউন্ট জোমোলহরি এখান থেকেই কিন্তু দেখা যায়৷ পারো উপত্যকা, নানা রং-এর ফুল, কমলালেবু আর আপেল বাগানে ঘেরা এই গিরিপথ।

চেলে লা পাসের সমস্ত রাস্তা জুড়েই কেবল সবুজ। ভূটানের সর্বোচ্চ গাড়ি চলাচলযোগ্য রাস্তা হলো এই চেলেনলা পাস (highest motorable pass)। মূলত রাস্তাটি সংযোগ ঘটিয়েছে পারো ভ্যালী ও হা ভ্যালীর। 

 ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন: পারো থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বে চেলে লা পাস ট্যাক্সি করেই যেতে পারবেন। 

ট্রাংসা

ভুটানের বেলকনি বলা যায় নয়নাভিরাম ট্রংসাকে। বেশ উঁচু একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত, ট্রংসা নামক শহরটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অত্যন্ত সুন্দর মনোরম দৃশ্যের জন্য পরিচিত। এর টপোলজির কারণেই কিন্তু ভুটানে দেখার এই সুন্দর সচিত্র স্থানটিকে বিনা দ্বিধায় ‘ভুটানের ব্যালকনি’ও বলা যায়! এখানে গেলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে- এই শহরের মোহনীয় আকর্ষণকে বিবর্ধিত করে, এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্যবাহী সাদা-ধোয়া ভবন এবং রঙিন গাছপালা এর পরিধি জুড়ে ছড়িয়ে আছে। 

এটির আশেপাশের মন জুড়ানো সুন্দর ও উপভোগ্য উপত্যকার মনোরম দৃশ্য এবং ঐন্দ্রজালিক পাহাড়ের ঝলক উপভোগ করার জন্য দর্শনার্থীরা প্রায়ই সারা বছর এই জায়গায় ভিড় করে। মজার ব্যপার হলো-এই অদ্ভুত শহরের অনেক আকর্ষণের মধ্যে ট্রংসা জং একটি উড়ন্ত ড্রাগনের মতো। যেটি কিনা একটি প্রধান আকর্ষণ হিসাবে কাজ করে। এখানে উল্লেখ করার জন্য বলা যায়, জংটি ১৬৪৮ সালে নির্মিত বলে অনুমান করা হয়!

আপনি যদি একজন ভ্রমন-প্রেমী মানুষ হোন এবং ভুটান গিয়ে থাকেন, তাহলে এই স্থানটি অবশ্যই দেখে আসবেন। এখানে ভ্রমণের সেরা সময় হিসেবে সারা বছরই বলা যায়। এখানে পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ গুলোর মধ্যে রশেছে-এংসা জং, তা জং,চোখোর রাপ্টসে জং, থ্রুপাং প্রাসাদ, ট্রংসা টাওয়ার।এছাড়াও চেন্দবজি চোরটেন,কুয়েঙ্গা রাবটেনও কিন্তু দেখে আসতে পারেন।

 ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন: রাজধানী শহর থিম্পু থেকে ১৮৬.২ কিমি দূরত্বে অবস্থিত ট্রংসায় আপনি ট্যাক্সি করে যেতে পারবেন। 

চোমোলহারি 

ভুটানের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলির মধ্যে একটি হলো চোমোলহারি। যা মূলত এর ট্রেকের জন্যই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। পারো থেকে শুরু হওয়া এই চোমোলহারি ট্রেক ভুটানের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং একটি ট্রেক। উচ্চতায় প্রায় ৫,০০০ মিটারের এই ট্র্যাকটি সত্যিই অ্যাডভেঞ্চার উত্সাহীদের জন্য বেশ রোমাঞ্চকর ব্যপার এবং এটি গড়ে ৭-১৫ দিনের মধ্যে চলে। আপনি যদি ছোট ট্রেক পছন্দ করেন, তাহলে বলাই বাহুল্য যে এটি আপনার জন্য আদর্শগুলির মধ্যে অন্যতম  একটি।

চোমোলহারি বা জোমোলহারি এখানকার বেশ সুপরিচিত পর্যটন স্পটগুলির মধ্যে একটি। আর আপনি যদি এখানে ভ্রমণের জন্য থাকেন, তবে আপনাকে অবশ্যই প্রথমে হা উপত্যকায় মানিয়ে নিতে হবে, তারপরে ট্রেক শুরু করুন।

এই পুরো উপত্যকাটি কিন্তু সত্যিই আপনাকে মঠ এবং ছোট গ্রামগুলির চোখ ধাঁধানো সৌন্দৰ্য প্ৰদান করবে। এখানে আপনি সুন্দর আলপাইন বন দেখতে পাবেন এবং দেশের সবচেয়ে সুন্দর অংশগুলি অনুভব করতে পারবেন। তবে ট্রেকের সময় বিবেচনায়,ভুটানে মার্চের শেষ থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ট্রেক করার উপযুক্ত সময় । সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরও ভালো সময় হতে পারে। যাইহোক, ট্রেকের জন্য আদর্শ সময় এপ্রিল থেকে শুরু ।

এর মূল আকর্ষণ হিসেবে বলা যায়- হিমবাহের হ্রদ, তুষার আচ্ছাদিত পাহাড় এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের অপূর্ব দৃশ্য চোখের জন্য একটি ট্রিট। অর্থাৎ ভুটানে এসে এই স্থানটি না দেখে ফিরবেনই না। এটির নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই। দিনের যেকোনো সময় চলে যেতে পারেন ট্রেকিং-এ। থাকার জায়গা হিয়েবে পেয়ে যাবেন-ভ্যালি ক্যাম্প, দেওয়াচেন হোটেল অ্যান্ড স্পা, ফুন্টশো ছোলিং লজের।

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
পুনাখা থেকে চোমলহারি অবস্থান প্রায় ১২০ কিলোমিটার বা ৭৫ মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে। থিম্পু বা পুনাখা থেকে নিজেই একটি ট্যাক্সি নিয়ে চমোলহারি ট্রেকের জন্যে চলে যেতে পারবেন।

যতিথাং টাকিন সংরক্ষণ জোন

থিম্পুর মতিথাং জেলায় অবস্থিত এই যতিথাং টাকিন সংরক্ষণ হচ্ছে টাকিনের বিখ্যাত প্রজাতির আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। তবে অনেক ভ্রমণকারীরা ভুটানে ভ্রমণের সময় এই চিড়িয়াখানা-রূপান্তরিত-সংরক্ষণকে সেরা টিপস হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। মজার ব্যপার হলো টাকিন একটি বিরল ধরণের প্রাণী এবং ছাগল প্রজাতির অধীনে পড়ে এবং তাদের প্রকৃত আবাস হল পূর্ব হিমালয়।

এই প্রাণীগুলি কিন্তু দেশের উচ্চ উচ্চতায় বাস করে। তবে এদেরকে উত্তর-পশ্চিম মায়ানমার, উত্তর-পশ্চিম ভারতেও পাওয়া যায়। মূল আকর্ষণগুলো হচ্ছে চমৎকার সব উদ্ভিদ ও প্রাণীরা।যেগুলো পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া বিরল। এখানে যাওয়ার সময় হচ্ছে: মঙ্গলবার থেকে রবিবার – সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা এবং সোমবার বন্ধ থাকে।

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
রাজধানী থিম্পুর মতিথাং জেলায় অবস্থিত। থিম্পু থেকে যতিথা সংরক্ষণে ট্যাক্সি নিয়ে যান ।
Jigme Darji National Park
জিগমে দরজি জাতীয় উদ্যান

জিগমে দরজি জাতীয় উদ্যান 

জিগমে দরজি ন্যাশনাল পার্ক হচ্ছে ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান এবং ভুটানে দেখার জন্য সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি। ১৩১৬ বর্গ কিমি বিস্তীর্ণ এলাকায় বিস্তৃত এই স্থানটি বন্যপ্রাণী উত্সাহীদের জন্য একটি দারুণ ট্রিট।

এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন বেঙ্গল টাইগার, স্নো লেপার্ড, হিমালয়ান ব্লু শিপ এবং কালো ভাল্লুকের মতো স্পট প্রাণী। আপনার ক্যামেরা আপনার হাতেই রাখবেন। কেননা এখানে আপনি আপনার লেন্সে ক্যাপচার করার জন্য অনেক সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ পাবেন । তাই ভুটান গেলে এই স্থানটি কিছুতেই মিস করা যাবে না।

লোকেশন ভ্রমনগাইড/কিভাবে যাবেন
রাজধানী থিম্পু থেকে ১২০.৪ কিমি দূরে অবস্থিত।  এই জাতীয় উদ্যানে যেতে থিম্পু থেকে ট্যাক্সি বা বাসে করেই যাওয়া যায় সহজেই। 

ঢাকা টু ভুটান যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে, বিমানে এবং রেলপথে ভুটান যাওয়া যায়। বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো:

 ♦ বাসে যাওয়ার বেলায় আপনি  ঢাকা থেকে নাবিল, মানিক পরিবহন, শ্যামলী, এস আর ও শাহ ফতেউল্লাহর বাস সার্ভিস পাবেন। ঢাকার কল্যাণপুর থেকে রাত ৯ টায় এবং আরামবাগ থেকে রাত ৮ টায় শ্যামলীর বাস ছাড়ে।

প্রথমে ঢাকা থেকে বুড়িমারি সীমান্তে পৌঁছে ইমিগ্রেশন অফিসে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে কাজ শেষ করে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন অফিসে যেতে হবে পায়ে হেঁটে। ওখানের কাজ শেষে আবার আপনি শ্যামলীর বাসে করে যেতে পারবেন জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে। আবার চাইলে ট্যাক্সিও নিতে পারবেন।

এখন, ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে সব ঠিকঠাক থাকলে এক্সিট সিল লাগিয়ে দিবে কোন ঝামেলা ছাড়াই। তারপরই ভুটানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিবেন। ( ফুন্টশোলিং-এ অবস্থিত ভুটান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আপনাকে on arrival ভিসা নিতে হবে। তবে এই ভিসা দিয়ে আপনি শুধু থিম্পু ও পারো তে ভ্রমণের অনুমতি পাবেন। অন্য কোথাও ভ্রমণের ক্ষেত্রে সেই পার্মিশন থিম্পু থেকেই নিতে পারবেন।)

ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পুর দূরত্ব ১৪৭.৩ কিলো। আর সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। আপনি ট্যাক্সি বা জীপে করে ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু যেতে পারেন। তবে নিজেরা গ্রুপ করে ট্যাক্সি বা জীপ নিয়ে থিম্পুতে গেলে আপনার পছন্দমত জায়গায় নেমে দেখতে ও ছবি তুলতেও পারবেন।

★ বিমান পথের বেলায় বেশ আরামেই ভুটান যাওয়া যায়। যেহেতু সার্কভুক্ত দেশ ভুটান, তাই আলাদা ভিসার কোন দরকার বিশেষ নেই। ঢাকা থেকে ভুটানের পারো তে ডুক এয়ার ও রয়্যাল ভুটান এয়ারলাইন্স চলাচল করে। পারোতেই মূলত ভুটানের একমাত্র বিমান বন্দর। তবে বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনার খরচ বাই রোডের চেয়েও বেশি হবে।

★রেলপথের বেলায়, প্রথমে আপনাকে ভারতের সীমান্ত ও শহর জয়গাঁও থেকে যেতে হবে নিউ জলপাইগুড়ির হাসিমারাতে। তারপর আপনি হাসিমারা থেকে খুব সহজেই ভুটানে যাওয়ার ট্রেন পেয়ে যাবেন।

 ♦️ট্রানজিট ভিসা : বাই রোডে ভুটানে যাওয়ার জন্য সবার প্রথমেই আপনার ভারতীয় ট্রানজিট ভিসার প্রয়োজন হবে। এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন ঢাকার গুলশান বা অন্য কোন শাখাতে। কিন্তু একটা ব্যপার খেয়াল রাখবেন,এক্ষপত্রে টিকেট আপনাকে আগেই করে রাখতে হবে। তার কারন ট্রানজিট ভিসার আবেদনের সাথেই আপনাকে ভুটানে যাবার টিকেট জমা দিতে হবে।

থিম্পু ভ্রমণ খরচের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ধারণা দিই: ৪-৫ জনের গ্রুপ করে ট্যাক্সিতে চ্যাংড়াবান্ধা থেকে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন যেতে খরচ লাগবপ ১৮০০-২০০০ রুপি। আবার মাইক্রোতে যেতে চাইলে, ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু যেতে খরচ পড়বে ২৫০০-২৮০০ রুপি।

তবে বাসে করেও ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু যাওয়া যায়, সেই ক্ষেত্রে খরচ পড়বে জনপ্রতি ২৪০ রুপি। সব মিলিয়ে ৪ দিন ৩ রাতের জন্য, এভাবে গ্রুপ করে গেলে জনপ্রতি খরচ পড়বে ১৭-১৯ হাজার টাকা। আর যদি শপিং করেন তাহলে আরও একটু বেশি খরচ পড়বে। সেটা হচ্ছে যার যার শপিং এর উপর নির্ভর করে।

ভুটান ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু টিপস 

১। ভুটানের পর্যটন মৌসুম হচ্ছে বসন্ত (মার্চ-মে) এবং শরৎকাল (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) বিশেষ করে মার্চ, এপ্রিল, অক্টোবর এবং নভেম্বর বিশেষ করে ব্যস্ত। আপনি যদি এই মাস গুলোর মধ্যে বেড়ানোর জন্য ভাবেন, তাহলে আপনার রিজার্ভেশন নিশ্চিত করার জন্য কমপক্ষে ২ মাস আগে ফ্লাইট টিকেট বুকিং করা ভাল। আবার আপনি যদি তুষারপাত উপভোগ করতে চান, তাহলে ডিসেম্বর – ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বেড়াতে যেতে পারেন। তবে যদি বাংলাদেশ থেকে আপনি বাইরোডে ভুটান যেতে চান, তবে কিছুদিন আগেই আপনাকে ভারতের ট্রানজিট ভিসা টি করে নিতে হবে।

২. বেশিরভাগ হোটেলে ওয়াইফাই আছে তবে সেগুলো অনেক দুর্বল। যার ফলে আপনার যদি আরও বেশি সংযোগের প্রয়োজন হয় তবে আপনি টাসি সেল বা বি-মোবাইল থেকে স্থানীয় সিম কার্ড কিনতে পারেন এবং প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে রিচার্জ করতে পারেন।

৩. ভুটানের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংখা। কিন্তু ভুটানের অধিকাংশ মানুষ ইংরেজিতে পারদর্শী কারন তাদের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজিতে। তাই যোগাযোগ করতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তাছাড়া অনেকেই হিন্দি ভাষায়ও কথা বলতে পারে।

৪. ভুটানের স্থানীয় মুদ্রাটির নাম হচ্ছে নগলট্রাম, যেটির পরিমাপ করা হয় মূলত ভারতীয় রুপির সাথে। বি:দ্র: এখন আর ৫০০ এবং ১০০০ সম মূল্যের ভারতীয় মুদ্রা ভুটানে গৃহীত হয়না।

৫. ভ্রমনের প্যাকেজগুলি প্রিপেইড হিসাবে থাকে। তবে আপনার নিজের ব্যক্তিগত ব্যয়ের জন্য শুধুমাত্র অর্থের প্রয়োজন হবে যেমন সুভেনির, টিপস (ড্রাইভার ও গাইডের জন্য) এবং পানীয়। তাই অতিরিক্ত অর্থ সাথে রাখবেন আপনার ব্যক্তিগত খরচের জন্য। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫০ ডলার সাথে রাখতে পারেন।

৬. ভুটানে গিয়ে এটিএম বুথ আপনি শুধুমাত্র প্রধান শহরেই পাবেন। তবে এটাও মনে রাখবেন, এটিএম কিন্তু সবসময় কাজ করবে না।  আর যদিও করে তবে তা সাধারণত শুধুমাত্র অল্প পরিমাণেই উইথড্র করতে সক্ষম হয়।

৭. আপনি ভুটানের বেশিরভাগ হস্তশিল্পের দোকানগুলিতে এবং হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে পারবেন।

৮. ভুটান বিশ্বের একমাত্র দেশ যে ধূমপান এবং তামাক বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে। যার ফলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষেধ। যদিও ভুটানে সম্পূর্ণভাবে ধূমপান নিষিদ্ধ না। যদি আপনাকে একান্তই ধূমপান করতেই হয়,তাহলে আপনার নিজের সিগারেট নিয়ে যাবেন এবং আপনার গাইডের থেকে এ ব্যপারে ডিটেইলস জেনে নিবেন।  

৯. ভুটানে মঙ্গলবার ‘শুকনো দিন’ জাতীয় দিবস হিসাবে বিবেচিত হয়। আর এইদিন অ্যালকোহল বিক্রয় নিষিদ্ধ।

১০. গরম কাপড় নিয়ে যাবেন। বিশেষ করে যদি আপনি নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ভ্রমণ করেন। তাহলে একটি সাধারণ টিপস হিসাবে, ভূটান ভ্রমণের সময় গরম কাপড় কিংবা জ্যাকেট সঙ্গে রাখুন। কান টুপি, মাফলার, হাত মৌজা এগুলোও সাথে রাখতে পারেন।

১১. আপনি চাইলে ফ্লাইট এবং ট্রিপের জন্য আপনার নিজস্ব কিছু বিনোদন রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটটি তে দেখার জন্য কিছু প্রিয় জিনিস সংরক্ষণ করতে পারেন কিংবা কিছু বই আনুন। তবে থিম্পু ও পারু ছাড়া নাইট লাইফ নেই বললেই চলে এবং বেশিরভাগ হোটেল মূল শহর থেকে দূরে অবস্থিত। আরেকটা কথা হলো- ভুটানের হোটেলে আপনি থাইল্যান্ড কিংবা মালয়শিয়ার হোটেল এর মতো জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ আশা করতে পারেন না।

১২. আপনি বেশিরভাগ দোকানের মধ্যে দরদাম করতে পারবেন। তবে ১০% ডিসকাউন্ট আশা করবেন না। বলতে গেলে, দোকানগুলির মধ্যে দামের পার্থক্য খুব বেশী হয় না। তবে শপিং এর জন্য পারু মোটামুটি সস্তা।

১৩. ভালো ব্যপার হলো-পশ্চিমা দেশগুলির মত রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলিতে টিপস দিতে হবে না। কেননা গাইডই আপনার পক্ষে টিপিং এর যত্ন নেবে। তবে আপনি আপনার গাইডকে টিপস করতে ভুলবেন না।

১৪. ভুটানের রাস্তাগুলোতে কিন্তু প্রচুর বাতাস থাকে, তাই আপনার যদি মোশন সিকনেস থাকে তবে ভুটানের ভেতরে ভ্রমণের সময় ব্যথানাশক বা ঠাণ্ডার বা অন্যান্য ঔষধ নিয়ে আসুন। তার সাথে সাথে আপনার প্রয়োজনীয় ঔষধ সাথে রাখুন।

১৫. সবসময় একটি মাল্টিপ্লাগ এবং একটি ইউনিভার্সাল অ্যাডাপ্টারের সাথে রাখবেন। কেননা অধিকাংশ হোটেল রুমে সীমিত বিদ্যুৎ প্লাগ আছে। সে জন্য  আপনার কাছে অনেকগুলি ডিভাইস থাকলে মাল্টিপ্লাগ এবং একটি ইউনিভার্সাল ভ্রমণ অ্যাডাপ্টার সাথে নিয়ে আসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

১৬. আরেকটা ব্যপার হলো-ডজং, মঠ, মন্দির বা অন্য কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছবি তোলার সময় আপনার নির্দেশিকাটি চেক করে দেখুন তা ছবি তুলতে অনুমোদন দেয় কিনা।( যেমন কিছু এলাকায় ছবি তোলা নিষেধ)

১৭. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন ধরুন ডজং, মঠ, মন্দির গুলোতে বেড়ানোর সময় শালীন পোশাক পড়ুন। এক্ষেত্রে লম্বা প্যান্ট, লম্বা হাতাওয়ালা শার্ট, মহিলাদের ক্ষেত্রে শালীন পোশাক পড়া বাঞ্ছনীয়।

১৮. ভুটানে খাবার নিয়ে বাংলাদেশিদের তেমন একটা সমস্যা হবে না। তাদের রান্নার ধরন প্রায় অনেকটাই আমাদের দেশের মতো। তারাও খাবারে ঝাল বেশি খায়। তবে আহামরি কিছু আশা করবেন না ভুটানে খাবারের বেলায়। তাদের খাবারে সচরাচর সকালে রুটি, ডিম, সবজি, জেলি থাকে। আর দুপুর এবং রাতের খাবারে ভাত, মাছ, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, সবজি, সালাদ থাকে। কিন্তু খাবার অপচয় করবেন না। কেননা খাবার অপচয় ব্যাপারটি তাঁরা ভালভাবে নেয় না।

১৯. টাইগার নেস্টে বেড়াতে গেলে সারাদিনের জন্যে সময় হাতে নিয়ে যাওয়া ভাল। হিসেব অনুযায়ী, পারু থেকে দূরত্ব ১০ কিমি এবং পৌছুতে ২০ মিনিটের মতো লাগে। আর গড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লাগে রাউন্ড হাইকিং করতে।  আবার আশ্রমে ঘুরে দেখতে ১ ঘণ্টা লাগে। সে জন্য সকাল ৮ টায় বের হয়ে বিকাল ৩ টায় হোটেলে ফিরতে পারবেন।

২০. মনে রাখবেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলবেন না। কেননা ভুটান অনেক বেশি পরিস্কার একটি দেশ। যত্রতত্র মুত্র ত্যাগ করা যাবে না। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

২১. পাসপোর্ট সাইজের কমপক্ষে ০২ কপি রঙ্গিন ছবি এ সময় সাথে রাখবেন।

২২. সকল ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র যেমন: টিকেট, হোটেল বুকিং এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।

২৩. অবশ্যই আপনার অরিজিনাল পাসপোর্ট সাথে আনতে হবে। আর পাসপোর্টের মেয়াদ ভ্রমণ শুরু হবার সময় থেকে কমপক্ষে ৭ মাস থাকতে হবে। অন্যথায় ভ্রমণ সংক্রান্ত কোন প্রকার জটিলতা তৈরি হলে কিন্তু  কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

২৪.খেয়াল করবেন, কাঁচি, নেইল কাটার, টুথ পেস্ট, বডি স্প্রে, শ্যাম্পু জাতীয় দ্রব্য হ্যান্ড ব্যাগে বহন করা যাবে না। এগুলো বড় লাগেজে বহন করবেন।

২৫.ভ্রমণ উপযোগী জুতা ইউজ করবেন। তবে ভাল মানের কেডস হলে সবচেয়ে ভাল হয়। কেননা দীর্ঘক্ষণ ভ্রমণে কেডস উপযোগী। তবে বেশি হিল ওয়ালা জুতা ব্যবহার না করাই ভাল ।

২৬. যেহেতু ভুটানে কোন মসজিদ নেই। তাই নামাজ আদায় করতে চাইলে অবশ্যই জায়নামাজ সাথে নিয়ে যাবেন।  

ইতিকথা :

কম খরচে দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকদের খুবই পছন্দের দেশ ভুটান (Bhutan)। এখানে দেখার মতো যেমন আছে অনেক স্থাপত্যশিল্প, তেমনি কিন্তু পাওয়া যায় রাফটিং করার যতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।যার কারনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে ভুটানের থিম্পু পুনাখা ও পারো শহরের পর্যটন স্থানগুলো দেখতে। সেই সাথে সার্কভুক্ত দেশ হওয়াতে বাংলাদেশীদের জন্য তো ভুটান ভ্রমণ আরও সুবিধাজনক।

আরো পড়ুন –

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents