Dreamy Media BD

সাঁওতাল বিদ্রোহ – ইতিহাস ও ফলাফল

সাঁওতাল বিদ্রোহ

আজকে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ইতিহাসের এক বিখ্যাত বিদ্রোহ নিয়ে। যে বিদ্রোহের শুধুমাত্র দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে আধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধে নিজেদের অধিকার আদায় করেছিল সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরব। আরো আপনাদের সামনে তুলে ধরব নাচলের কৃষকদের বিদ্রোহ সম্পর্কে। এই বিদ্রোহের ফলাফল কি ছিল কি ঘটেছিল সব কিছু জানতে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবেন। মূল আলোচনা শুরু করছি 

ব্রিটিশ ভারতে সংঘটিত হওয়া একটি  ঔপনিবেশিক ও জমিদারদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হল সাঁওতাল বিদ্রোহ। সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ১৯ শতকে। এই বিদ্রোহটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিল সাঁওতালরা তার জন্য এই বিদ্রোহের নাম দেওয়া হয়েছে সাঁওতাল বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভগলপুর জেলায়। ব্রিটিশ শাসনের আমলে স্থানীয় মহাজন ও জমিদার এবং ইংরেজদের রাজস্ব ও কৃতি নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলে সাঁওতালরা। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিল চার জন মুরমু ভাই সিধু, কানু, ভৈরব ও চাঁদ।

সাঁওতাল বিদ্রোহ এর ইতিহাস

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে সিধুর মৃত্যুর পর তা শেষ হয়। সাঁওতালরা ছিল কৃষক। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ভাগে পূর্ব ভারতের কটক, ধলভূম, মানভূম, বরাভূম, পালামৌ, ছোটোনাগপুর, হাজারিবাগ, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও বীরভূম থেকে সাঁওতালরা রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশে ভাগলপুর ও বীরভূম অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করে। এই অঞ্চলের সাঁওতালি নাম হল দামিন-ই-কো (পাহাড়ের পাদদেশ)। এই অঞ্চলে ব্রিটিশ সরকার ভূমি বন্দোবস্ত করেছিল, আশপাশে জমিদারি বন্দোবস্ত ছিল, এখানে ছিল ইজারাদারি ব্যবস্থা।

বিদ্রোহের প্রাক্কালে ওই অঞ্চলে ১৪৭৩টি গ্রাম ছিল যেগুলিতে বাস করত ৮২,৭৯৫ জন সাঁওতাল। এখানকার খাজনা ছিল মাত্র দু’হাজার টাকা, বিদ্রোহের আগে এখানকার খাজনা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৪৩,৯১৮ টাকা, অর্থাৎ বাড়ানো হয়েছিল ২২ গুণ। এই অঞ্চল পরবর্তীকালে সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিত হয়। এখানকার পরিশ্রমী, সরল, নিরক্ষর সাঁওতালরা অরণ্য উচ্ছেদ করে চাষবাস বসিয়েছিল। বহুকাল পতিত থাকার জন্য এই অঞ্চলে প্রচুর শস্য ও ফল উৎপন্ন হত। এখানে বসতি গড়ে উঠলে এবং চাষবাস শুরু হলে বাঙালি ব্যবসায়ী, মহাজন, ইজারাদার, ঠিকাদার ইত্যাদি শ্রেণির লোকেরা এসে হাজির হয়। এদের সঙ্গে কামার, কুমোর, তাঁতি, ছুতোর, ডোম, মুচি ইত্যাদি নিম্নবর্গের মানুষজন পার্শ্ববর্তী বর্ধমান ও বীরভূম থেকে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে।

সরকার এই অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বারহাইতে প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং দিঘিতে থানা স্থাপন করেছিল। সাঁওতাল বিদ্রোহের ওপরে যাঁরা গবেষণা করেছেন। তাঁরা সকলে জনিয়েছেন যে এই বিদ্রোহের একটি প্রধান কারণ হল অর্থনৈতিক। সাঁওতাল কৃষক প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যে ফসল ফলাত মহাজনরা নানা কৌশলে তা আত্মসাৎ করে নিত। ‘যে মুহূর্তে কোনো সাঁওতাল জমিদার বা মহাজনের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিত, সেই মুহূর্ত হইতেই সেই হতভাগ্য সাঁওতাল জমিদার-মহাজনের শোষণ জালে আবদ্ধ হইয়া পড়িত। 

ঋণ নেবার সময় সাঁওতালদের চুক্তিতে ছাপ নেওয়া হত। এরপর তাদের দুধরনের শ্রম দিতে হতকামিয়াতি ও হারওয়াহি। ঋণ নিলে ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মহাজনের জমিতে তাকে কাজ করতে হত, আর দ্বিতীয় ব্যবস্থায় ঋণগ্রহীতাকে প্রয়োজনমতো শ্রম দিতে হত। বণিক ও মহাজনরা অশিক্ষিত সাঁওতালদের সরলতার সুযোগ নিত এবং ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করত। সাঁওতালরা এসব বিদেশি বণিক ও মহাজনদের বলত দিকু, এদের বেশিরভাগ ছিল বাঙালি ও উত্তর ভারতীয় ব্যবসাদার। কোনো পণ্য কেনার সময় তারা ভারী বাটখারা ব্যবহার করত, আবার পণ্য বিক্রির সময় তারা হালকা বাটখারার সাহায্য নিত। ঋণের দায়ে মহাজনরা সাঁওতালদের জমির ফসল, বলদ, মোষ এমনকি বাসনপত্রও জবরদস্তি করে কেড়ে নিয়ে যেত। অধ্যাপক কালীকিঙ্কর দত্ত জানিয়েছেন যে শস্য ব্যবসায়ীরা এই পণ্যের বেশিরভাগ বাংলাদেশে বিক্রি করে অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল অর্থ সম্পদের অধিকারী হয়ে বসেছিল।

ব্রিটিশ সরকার দামিন-ই-কোতে যে রাজস্বের বন্দোবস্ত করেছিল তা সাঁওতালদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সাঁওতালরা মনে করত জমির জন্য খাজনা দেওয়া হল নীতিবিরুদ্ধ কাজ। জমি মেপে খাজনা ধার্যের যে পদ্ধতি সরকার চালু করেছিল তা সাঁওতাল কৃষকরা বাতিল করেছিল। তারা বলদ বা মোষের সংখ্যা অনুযায়ী খাজনা দিত, এটাই ছিল তাদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা। এই প্রথা ভারতের অন্যত্র একেবারে অপ্রচলিত ছিল না। বলদ প্রতি এক আনা এবং মোষ প্রতি দু’আনা খাজনা দিতে তারা রাজি ছিল। জমিদার ও ইজারাদার নানা ছলছুতোয় তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করত। জমিদার, নায়েব, গোমস্তা, মহাজন, ব্যবসাদার, সাজোয়াল, পুলিশ, আমলা, নিম্ন আদালত সকলে সাঁওতালদের বিরোধিতায় নেমেছিল।

পুলিশ ও নিম্ন আদালতের কর্মচারীদের হস্তগত করে ব্যবসায়ী ও মহাজনরা সাঁওতালদের ওপর শোষণ চালাত। সরকারি প্রশাসন বা আদালত সব সময় শোষকের পক্ষ নিত। সাঁওতালরা ছিল ক্ষুব্ধ ও দিশাহারা, অন্যায় ও অত্যাচারের প্রতিকারের পথ তারা খুঁজে পায়নি। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তারা যখন ভাগনাডিহিতে সমবেত হয়েছিল তখনও তারা কলকাতায় গিয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করার কথা ভেবেছিল, বিদ্রোহের কথা ভাবেনি। ব্রিটিশ সরকার এই সময় রেলপথ স্থাপনের কাজ করে চলেছিল, সাঁওতাল পরগনা থেকে কুলি সংগ্রহ করা হত।

কুলিদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হত  না, তাদের গ্রাম থেকে হাঁস, মুরগি, পাঁঠা, জোর করে বিনা পয়সায় নিয়ে যাওয়া হত। সাঁওতাল রমণীদের বেইজ্জতি করা হত। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকায় এই সংবাদ বেরিয়েছিল : ‘রেলপথে যে সকল ইংরেজ কর্মচারী কাজ করিতেন তাহারা বিনামূল্যে সাঁওতাল অধিবাসীদের নিকট হইতে বলপূর্বক পাঁঠা, মুরগি প্রভৃতি কাড়িয়া লইতেন এবং সাঁওতালগণ প্রতিবাদ করিলে তাহাদের ওপর অত্যাচার করিতেন। দুইজন সাঁওতাল স্ত্রীলোকের ওপর পাশবিক অত্যাচার এবং একজন সাঁওতালকে হত্যা করাও হইয়াছিল।’

সাঁওতালরা মনে করত তারা এক সময় স্বাধীনভাবে বাস করত, মাঝিরা ছিল। তাদের স্থানীয় শাসক, কাউকে কর দিতে হত না। শুধু সর্দারদের বার্ষিক কিছু খাজনা দিলেই চলত। অনেকের মতে, সাঁওতাল চেতনায় এই স্বাধীনতার স্মৃতি তাদের স্বাধীন রাজ্য স্থাপনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই ভাগলপুর ও বীরভূমের দামিন-ই-কোর সাঁওতাল কৃষকরা অত্যাচারী মহেশ দারোগা ও তার সঙ্গীদের হত্যা করে বিদ্রোহ শুরু করেছিল। ভারতের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে এটি হল এক বড়ো ঘটনা। অধ্যাপক বিনয় চৌধুরি, রণজিৎ গুহ ও স্টিফেন ফুক্‌স (Fuchs) এই বিদ্রোহের ওপর ধর্ম ও মনোজগতের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বিশেষ ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।

কিনয় চৌধুরি মনে করেন শুধু অর্থনৈতিক কারণ দিয়ে সাঁওতাল বিদ্রোহের ব্যাখ্যা করা যায় না। রণজিৎ গুহ ও স্টিফেন ফুস সাঁওতাল ধর্মচেতনার সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন যে এই ধর্মচেতনার বিস্তার ছাড়া সাঁওতালদের হুল সম্ভব হত না। কিনয় চৌধুরি জানিয়েছেন এই বিদ্রোহে সাঁওতালদের মনোজগতের পরিবর্তন একটি সক্রিয় শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। বিদ্রোহের যৌথ সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রভুশ্রেণি সম্পর্কে কৃষকদের নিরুদ্ধ আক্রোশের ফল নয়, তাদের নানা বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা প্রতিরোধের সংকল্পকে প্রভাবিত করেছিল। সাঁওতালদের পুরাণ, ঐতিহ্য, মিথ ও সামাজিক ন্যায় সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা এই মানসিকতা গঠনে সহায়ক হয়।

স্টিফেন ফুস ধর্মকে কৃষকদের মধ্যে বৈপ্লবিক মানসিকতা গঠনের উৎস হিসেবে দেখেছেন। এ মানসিকতার এক বিশিষ্ট রূপ হল বিদ্রোহী কৃষকদের কর্মপ্রয়াসে এক গভীর বিশ্বাসের অনুপ্রেরণা। এ বিশ্বাস মতে, দিব্য শক্তি অনুপ্রাণিত এবং নির্দেশিত এক পরিত্রাতার নেতৃত্বে কৃষকেরা এক আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। সেখানে এক শ্রেণির ওপর অন্য শ্রেণির প্রভুত্ব থাকবে না, নতুন সমাজের বুনিয়াদ হবে সাম্য ও সৌভ্রাত্র। শোষণ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কৃষকের জয় অনিবার্য কারণ তা হল ঈশ্বরের অভিপ্রায়। কৃষকেরা শুধু নিজেদের সীমিত শক্তির ওপর নির্ভরশীল থাকবে না, দৈব শক্তির প্রভাবে প্রবল শত্রুকুলের পরাক্রম খর্ব করতে সক্ষম হবে।

বিদ্রোহী সাঁওতালদের মানসিকতা বুঝতে এই ব্যাখ্যা নিঃসন্দেহে সহায়ক হয়। কিন্তু সাঁওতাল বিদ্রোহে ধর্মের ভূমিকা বুঝতে এ ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়। ধর্মচেতনা নিরাবয়ব, বিমূর্ত কোনো ভাবনা নয়, নানা প্রতীক (সিম্বল), কল্প (মিথ) ও সুনির্দিষ্ট সহজবোধ্য বিশ্বাসকে ঘিরে এ চেতনা রূপলাভ করে, এর বিস্তার ঘটে। সিধু ও কানু এমন সব প্রতীক ও ভাষা ব্যবহার করেছিলেন যা সাঁওতালদের প্রতীক ও কল্পাশ্রয়ী ধর্মচেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

বিশেষ এক ঐতিহাসিক পরিমণ্ডলে বিকশিত এ চেতনার আঞ্চলিক রূপ ও স্বাতন্ত্র্য ছিল। সিধু ও কানুর ঘোষণায় কতকগুলি প্রতীক বার বার ব্যবহৃত হয়েছিল ‘অনবরত সাতদিন ধরে আকাশ থেকে অগ্নি বৃষ্টি ঝরবে, তাতে দুশমনেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে’। বিশ্বসৃষ্টির সাঁওতালি কল্পের সঙ্গে এর মিল আছে। বিদ্রোহ শুরু হবার কিছু আগে এবং ঠিক পরে গোটা সাঁওতাল অঞ্চল জুড়ে জনশ্রুতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। এই জনশ্রুতি ও গুজব বিদ্রোহের মানসিকতাকে বিপুলভাবে প্রসারিত করেছিল। সাঁওতালি লোকগাথা ও কল্পের নানারূপ এর মধ্যে পাওয়া যায়। সিধু ও কানুর ঘোষণা নির্দিষ্ট একটি বাণী মাত্র নয়, নানা অস্থিরতা, সংশয়, দ্বিধা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অস্পষ্ট শঙ্কা এসব কিছু সাঁওতাল সমাজে তীব্র অনুভবের এক পরিমণ্ডল তৈরি করেছিল। সাঁওতাল সমাজের কাছে বিপুল উদ্দীপনার মতো এসেছিল সিধু ও কানুর ঘোষণা।

প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থার ন্যায়পরায়ণতায় আস্থা সম্পূর্ণভাবে হারালে কৃষকেরা রাজনৈতিক ক্ষমতার আমূল পুনর্বিন্যাসের কথা ভাবে। সাঁওতালদের মানসিকতার পরিবর্তন স্থানীয় প্রশাসনকে বিস্মিত করেছিল। সরকারি এলাকা দামিন-ই-কো ও আশেপাশের জমিদারি এলাকায় তারা বসতি স্থাপন করেছিল। গোড়ার দিকে রাজস্বের ব্যাপারে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা পেলেও পরে রাজস্বের হার ও পরিমাণ বেড়েছিল। সাঁওতালরা মনে করত জমির পরিমাণের ওপর রাজস্ব ধার্য হওয়া উচিত নয়। মোষ ও গোরুর লাঙলের সংখ্যার ওপর রাজস্ব ধার্য হওয়া উচিত। রাজস্বের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমলাদের তদারকি বেড়েছিল। নতুন অঞ্চলে বসতি স্থাপনের জন্য মহাজনদের ওপর তারা নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছিল। 

প্রশাসনের ওপর সাঁওতালদের আস্থা কমতে থাকে কারণ প্রশাসন ও মহাজনদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। মহাজনি শোষণের তাৎপর্য শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, মহাজনের কাছে বিভিন্ন ধরনের অধীনতার বেড়াজালে সাঁওতালরা ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছিল। সাঁওতালদের প্রধান অভিযোগ হল তারা দেনার দায়ে শুধু সর্বস্বান্ত হয়নি, গোলামে পরিণত হয়েছে। তাদের সামাজিক মান-মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। তাদের মা, স্ত্রী ও বোনের ইজ্জত গেছে অথচ আদালতে এর কোনো প্রতিকার মেলেনি। সাঁওতালদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল ধারের জন্য সুদ আদায়ের প্রথা ন্যায়বিরোধী। সুদ আদায় যেহেতু ন্যায়ধর্ম বিরোধী ঋণ আদায়ের জন্য মহাজনদের ফন্দিফিকিরকে তারা প্রকাশ্য প্রবঞ্চনা বলে গণ্য করত।

আদালত মহাজনের অভিযোগের ওপর নির্ভর করে একতরফা রায় দিয়ে দিত। মহাজনরা সাঁওতালদের ইচ্ছেমতো খাটাত, ধার কখনও শোধ হত না, গোলামি (কামিয়াতি) থেকে মুক্তিও জুটত না। বংশানুক্রমে এই বাধ্যবাধকতা থেকে যেত। সাঁওতালরা মনে করত মহাজনের একাজ হল পাপ, ন্যায় বিরোধী বলেই পাপ। সাঁওতালদের এই ন্যায়ের ধারণা অলঙ্ঘনীয় কোনো বিশ্ববিধানের ধারণা, এ বিধান সকলের ক্ষেত্রে, সর্বত্র প্রযোজ্য। নৈতিক বিচারের সীমা অনির্দিষ্ট, মহাজন সম্পর্কে তিক্ততা যত বাড়ে নৈতিক বিচারের অস্পষ্টতাও বাড়ে। অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা ভুলে দিক্ দুশমনদের সম্পূর্ণ বিনাশ তাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

মহাজনদের সম্পর্কে আক্রোশ বাড়লেও ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের আগে তারা হিংসা প্রয়োগের কথা ভাবেনি। মহাজনদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেত, রেল কোম্পানির কলি হিসেবে কাজ করত। মহাজনরা সাঁওতালদের বিদ্রোহী মনোভাব আঁচ করে প্রশাসনকে জানিয়েছিল। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস থেকে দামিন-ই কোর সাঁওতালরা মহাজনদের ওপর হামলা শুরু করে। দিয়েছিল। প্রশাসন মহাজনদের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের অভিযোগ দূর করার কোনো চেষ্টা করেনি। বরং ডাকাতির অভিযোগ এনে হামলাকারীদের গুরুতর সাজা দেওয়া হত।

প্রশাসনের সহানুভূতিহীন আচরণ সাঁওতালদের গভীরভাবে বিক্ষুব্ধ করেছিল। সম্মিলিত প্রতিরোধের চিন্তা-ভাবনা তখন থেকে শুরু হয়েছিল, হল শুরু হয়েছিল এর এক বছর পরে। মধ্যবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে দেখা দেয় বহু দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, সংশয় ও বিকল্প পথের সন্ধান। এক প্রচণ্ড অস্থিরতা সমগ্র সাঁওতাল সমাজকে আলোড়িত করেছিল, নানা বিচিত্র ধরনের গুজব সাঁওতাল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্রাডলি বার্ট জানিয়েছেন : ‘গোটা সাঁওতাল অঞ্চল জুড়ে যেন এক অভূতপূর্ব ভাবের তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছিল। তা গভীর রহস্যময়, বাইরে তার চিহ্নমাত্র নেই, অথচ একান্ত সত্য এবং তীব্র’। কোনো কোনো গুজব প্রাচীন সাঁওতালি লোকগাথা ও কাহিনিকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছিল।

সাঁওতালদের নিজস্ব সামাজিক ব্যবস্থা ছিল, ছিল স্বতন্ত্র উপজাতি সত্তা। এই স্বাতন্ত্র্য হল সাঁওতালদের ঐক্য ও সংহতিবোধের একটি উৎস। সাঁওতালদের নানা গান এর প্রসারে সহায়ক হয়। কুখ্যাত মহাজন কেনারাম ভগতকে ব্যঙ্গ করে লেখা নানা গান সাঁওতালদের মহাজন বিদ্বেষ তীব্রতর করে তুলেছিল। ব্রিটিশ রাজত্ব ও প্রশাসন সম্পর্কে সাঁওতালদের স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। এজন্য বিদ্রোহীদের কেউ কেউ কলকাতায় গিয়ে ছোটোলাটের কাছে আর্জি পেশ করার দায়িত্ব নিয়েছিল।

সিধু ও কানু দেবতার আবির্ভাবের কথা বললে গোটা সাঁওতাল সমাজ একে তাদের মুক্তির জন্য অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বলে মেনে নিয়েছিল। তাদের দীর্ঘ দিনের সংশয় ও অস্থিরতা এতে দূর হয়েছিল। নতুন ধর্মচেতনা তাদের মানসিকতায় এনেছিল আকস্মিক এক আমূল রূপান্তর। সাঁওতালরা দেবতার আবির্ভাবের কথা দূর দূরান্তরে ছড়িয়ে দিয়েছিল, সাঁওতালরা তাদের ‘শুরু ঠাকুর’ সিধু ও কানুকে দেখতে এসেছিল। সিধু ও কানু ধরে নেন এই ঘটনার পর সরকার ও মহাজনরা সতর্ক হবেন। এজন্য তারা তখনই বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়নি, কিন্তু নেতাদের প্রত্যাশা বিফল হয়। শত্রু তাদের পরোয়ানা গ্রাহ্য করেনি, সহিংস বিদ্রোহ ছাড়া আর কোনো পথ তাদের সামনে খোলা ছিল না।

দিঘি থানার দারোগা মহেশ দত্তকে খুন করে সাঁওতাল বিদ্রোহীরা হল শুরু করেছিল। ভগবানের আবির্ভাবের ঘটনা সব সাঁওতাল বিশ্বাস করেছিল। সীমিত শক্তি নিয়ে প্রবল শত্রুর বিরুদ্ধে সাঁওতালরা জয়ী হবে কারণ দিব্যশক্তি তাদের পক্ষে। বিদ্রোহের ফলে সাঁওতালরাজ স্থাপিত হবে, ন্যায় ধর্মের জয় এবং দিকু শোষণ শাসনের অবসান হল অনিবার্য পরিণতি।

ব্রিটিশরাজের অবসান ঘটবে কিন্তু ক্ষমতা বিনাশের উপায় সম্পর্কে সাঁওতালদের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। অস্পষ্টভাবে তারা ধরে নিয়েছিল বিদ্রোহের ফলে ইউরোপীয় শাসকগোষ্ঠী নির্মূল হয়ে যাবে। সাঁওতালদের সমাজ ও অর্থনীতি সম্পর্কিত ধারণা কিছুটা স্ববিরোধী, একদিকে তারা বলেছে দিকুরা নিশ্চিহ্ন হবে, আসলে তারা চেয়েছিল দিকুদের কাজকর্মের ওপর সাঁওতালরাজের নিয়ন্ত্রণ। জমির খাজনার ন্যায়সংগত হার ঠিক করবে সাঁওতালরাজ। পুরোনো কায়দায় মহাজনি কারবার চলতে দেওয়া হবে না। সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে নতুন এক বিশ্বাসের জগৎ গড়ে উঠেছিল।

এক আদর্শ সাঁওতাল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের জন্য প্রচার চলেছিল। নেতারা সাঁওতাল পুরাণ, লোকগাথা ও সৃষ্টিতত্ত্বে ব্যবহৃত ভাষা ও প্রতীক ব্যবহার করেন। শত্রুদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ কোনো বিচ্ছিন্ন আঞ্চলিক ঘটনা নয়, বিশ্বব্যাপী আসন্ন প্রলয়ের অঙ্গ, কারণ পৃথিবী পাপে ভরে গেছে, প্রলয় আসন্ন। প্রলয় আনবে নতুন সৃষ্টির অঙ্কুর। আকাশ থেকে নিরবচ্ছিন্ন অগ্নি বৃষ্টিতে সাঁওতাল শত্রুকুলের বিনাশ ঘটবে। সাঁওতাল ধর্মগুরুরা অভিন্ন সাঁওতালি সত্তা সম্পর্কে বোধ ছড়িয়ে দেন। দৈব শক্তির হস্তক্ষেপ সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও সাঁওতালরা সামরিক প্রস্তুতি নিয়েছিল, বাইরের শক্তির সাহায্য লাভের চেষ্টাও চালিয়েছিল। নিজেদের মধ্যে সংহতি ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়াস চালিয়েছিল। নতুন বোধ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল সমগ্র সাঁওতাল সমাজ। এরপর সাঁওতাল হল ছিল অনিবার্য। 

সাঁওতাল বিদ্রোহ এর সময়কাল

এই বিদ্রোহ শুরু হয় ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন এবং দীর্ঘদিন ধরে চলার পর ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে শেষ হয়। সাঁওতালদের কাছে আধুনিক কোন অস্ত্র ছিল না। তারা যুদ্ধ করেছিল তীর-ধনুক ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে। ইংরেজদের কাছে আধুনিক বন্দুক ও কামান ছিল বলে সাঁওতালরা তাদের কাছে টিকতে পারেনি। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ সহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধারা মারা গেছিল। এই যুদ্ধে একে একে সিধু কানু চাঁদ ও ভৈরব সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান চাল নেতা নিহত হলে ১৮৫৭ সালে নভেম্বর মাসের এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।

সাঁওতাল বিদ্রোহ এর ফলাফল

সাঁওতাল বিদ্রোহের পর ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের ব্যবস্থা করে। বিদ্রোহের পরবর্তীকালে ভাগলপুর ও বীরভূমের কিছু অংশ নিয়ে ৫, ৫০০ বর্গ মাইল জুড়ে এবং প্রথমে দেওঘর ও পরে দুমকায় প্রধান কার্যালয় নির্দিষ্ট করে সাঁওতাল পরগণা জেলা গঠিত হয়, সেটি বিদ্রোহ প্রশমনের পর প্রশাসনিক ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট পরিবর্তন। এই পরগণাকে অনিয়ন্ত্রিত (নন- রেগুলেটেড) একটি জেলা ঘোষণা করা হয়।

এই জেলার নাম হয় প্রথমে ডুমকা, এই জেলাটি পরবর্তীতে সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিত লাভ করে এই স্থানে সাঁওতাল মানঝি,পরানিক, পরগনা জেলার শাসন কার্য পরিচালনার জন্য পুলিশ দারোগা ও বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। সাঁওতালদের বিচার সালিশ তাদের আইনে করার জন্য সরকার ক্ষমতা প্রদান করে। খাজনা, কর প্রভৃতি তাঁদের হাতে অর্পণ করা হয়। তাঁরা জেলা প্রশাসকে নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতে থাকে। ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল টেনান্সি এ্যাক্ট অনুযায়ী আদিবাসীরা তাদের জমি সরকারু অনুমতি ছাড়া বিক্রি করতে পারতো না। এই আইন এখনও পর্যন্ত কার্যকর আছে।

নাচলের কাহিনী

১৯৪৯থেকে ৫০ সালে নাচোল বিদ্রোহ বৃহত্তর রাজশাহী জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত নাচোল উপজেলার  সাঁওতাল কৃষকদের বিদ্রোহ। ঐ সময়কার তেভাগা, নানকার এবং টঙ্ক আন্দোলনের মতোই নাচোল বিদ্রোহটিও সংগঠিত করেন কম্যুনিস্ট পার্টির কর্মীরা। তাঁরা বাংলায় সমাজ বিপ্লব সাধনের লক্ষ্যে নাচোলের সাঁওতাল কৃষকদের বৈপ্লবিক সংঘটনার একটি কৌশলগত জনগোষ্ঠি হিসেবে চিহ্নিত করেন। একই জমি বংশপরম্পরায় চাষাবাদ করা সত্ত্বেও অধিকাংশ সাঁওতালের ঐ জমির ওপর কখনও কোন স্বত্বাধিকার স্বীকৃত হয় নি। জোতদারগণ ফসলের মাধ্যমে খাজনা আদায় করত।

স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী ফসল কাটার সময় ক্ষেতে কর্মরত প্রতিটি সাঁওতাল কৃষক প্রতি কুড়ি আড়ি ফসল কাটার বিনিময়ে তার ভাগ অনুযায়ী তিন আড়ি ধান পেত, যা তাদের নিজেদের অথবা কামলাদের মাধ্যমে পরে মাড়াই করতে হতো। আধিয়ার (ভাগ চাষি) উপজাতসহ তাদের উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক জোতদারদের দিতে হতো। কম্যুনিস্ট কর্মীরা এই শোষণ ও চাষিদের অধিকার সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তোলেন।

১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৫০ সালের প্রথমদিকে নাচোল উপজেলার চন্ডীপুর, ঘাসুরা, কেন্দুয়া, রাউতারা, ধারোল,জগদাই, শ্যামপুরা এবং নাপিত পাড়ার মতো গ্রামের চাষিরা তাদের মহাজনদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তাদের দাবি ছিল, প্রথা অনুযায়ী তিন আড়ি ধানের পরিবর্তে তাদেরকে শ্রম-ভাড়া বাবদ কুড়ি আড়িতে সাত আড়ি ধান প্রদানে জোতদারদের সম্মত হতে হবে এবং আধিয়ারদের মতো জমি চাষের জন্য তাদেরকে উৎপাদিত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ দিতে হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটে। বহু পুলিশ নিহত হয় এবং জোতদারদের ঘরবাড়ি লুট হয়।

জমিদার ও জোতদারগণ পুলিশের সহায়তায় পাশবিক অত্যাচারের পন্থা গ্রহণ করে। এতে আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। কৃষক সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে  ইলা মিত্র, অনিমেষ লাহিড়ী, আজহার শেখ, বৃন্দাবন সাহা এবং আরও প্রায় কুড়িজন সংগ্রামী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁদের সকলকেই গ্রেফতার করা হয় এবং বিচার করে দীর্ঘমেয়াদি দন্ড প্রদান করা হয়।

পরবর্তীকালে ইলা মিত্রসহ অনেকে রাজনৈতিক কারণে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫০ সালের  পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনএর আওতায় সাঁওতাল চাষিদের জমির ওপর অধিকার দেওয়া হয় এবং তারা অন্যান্য সাধারণ চাষিদের মতো প্রচলিত হারে নগদে খাজনা পরিশোধের অধিকার লাভ করে। দুর্ভাগ্যক্রমে ইতোমধ্যে বহু সাঁওতাল চাষি পুলিশের ধরপাকড় ও বিচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের গ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যায়।

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents