দাঁতের ব্যথায় আমরা কমবেশি সবাই ভুগে থাকি। ছোট থেকে বড় সকলেই এই সমস্যায় ভুগে থাকে। ব্যথা কম বা বেশি সকলের হয়ে থাকে। একবার যদি ব্যথা শুরু হয় আপনি কোন কাজে ভালোভাবে মন দিতে পারবেন না। আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে তখন ভালো কথা আপনার শুনতে ভালো লাগবে না। দাঁতে ব্যথা বলতে সাধারণত দাঁত অথবা দাঁতের কাঠামোতে তীব্র ব্যাথা হওয়াকে বুঝিয়ে থাকি।
দাঁতের ব্যথা তীব্র হলে ঘুম খাওয়া এবং দৈনন্দিন বিভিন্ন কার্যকলাপে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। ফলে আপনি আপনার দৈনন্দিন কার্যকলাপ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে পারবেন না। সাধারণত দাঁতে ব্যথার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে মজ্জায় প্রদাহ, দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডেন্টিনের হাইপারস্পেনসিটিভিটি, অ্যাপিকাল পিরিয়ডোনটাইটিস (লিগামেন্ট এবং অ্যালভিওলার হাড়ের প্রদাহ), দাঁতের ফোড়া (পুঁজের সংগ্রহ) অ্যালভোলার অস্টাইটিস (দাঁত তোলার সম্ভাব্য জটিলতা) ইত্যাদি অন্যতম।
সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করতে পারি। দাঁত ব্যথার চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে এর সঠিক কারণের উপর। আমরা যদি এর সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে না পারি তাহলে ভালোভাবে চিকিৎসা নিতে পারব না। ফলে আমাদের দাঁত ব্যথা থেকেই যাবে। দাঁতের ব্যথার উপশম কে দাঁতের ডাক্তারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। নিচে দাঁতের ব্যাথা সম্পর্কিত নানা রকমের তথ্য উপস্থাপন করা হলো
দাঁতের ব্যথা কেন হয়:
১. প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে মুখের মধ্যে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়ে থাকে। ফলে কিছুদিন পর থেকে শুরু হয়ে যায় দাঁতের ব্যথা বা যন্ত্রণা।
২. প্রতিদিন দুইবেলা দাঁত পরিষ্কার না করলে দাঁতে নানা রকম ময়লা জমে দাঁত ব্যথা হতে পারে। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত নানা রকমের খাবার খেয়ে থাকি এবং দাঁতের সাহায্যে ওই সকল খাবার চিবাই। ফলে আমরা যদি প্রতিদিন ভালো করে দাঁত পরিষ্কার না করি তাহলে ব্যথা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
৩. খাবারের পর দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাবারের কনা জমে গেলে দাঁতে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
৪. মাড়ির কোন রোগ বা সংক্রমণ থাকলে তাকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে এবং এর ফলে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
৫. অনেকে আছে যাদের ঘুমের মধ্যে দাঁত পিষানোর অভ্যাস থাকে। এই দাঁত পিষানোর অভ্যাস থেকেও দাঁত ব্যথা হতে পারে।
৬. অধিক পরিমাণে ধূমপান করার ফলে দাঁত অপরিষ্কার হয়ে যায় এর কারনেও দাঁতে ব্যথা হতে পারে।
৭. এছাড়া মজ্জায় প্রদাহ সৃষ্টি হলে দাঁতে ব্যথা হতে পারে।
৮. দাঁতে ক্ষয় বা গর্ত সৃষ্টি হলে দাঁতে ব্যথা হতে পারে।
৯. দাঁতে নানারকম ইনফেকশন হলে দাঁত ব্যথা হতে পারে।
১০. মাড়ি সংক্রামিত হলে দাঁত ব্যথা হতে পারে।
দাঁতের ব্যথার লক্ষণ:
দাঁতের ব্যথা হালকা থেকে মুহূর্তের মধ্যে গুরুতর হতে পারে এবং এটি থেমে থেমে অনুভব হতে পারে। নিচে দাঁতের ব্যথার লক্ষণ গুলি তুলে ধরা হলো:
১. দাঁতে এবং মাড়িতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হওয়া।
২. জ্বর হওয়া।
৩. দাঁত বা দাঁতের মাড়ি স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভব হওয়া অথবা খাবার খাওয়ার সময় কামড় দিলে তীব্র ব্যথা পাওয়া।
৪. মিষ্টি জাতীয় কোন খাবার খেলে ব্যথা হওয়া।
৫. গরম অথবা ঠান্ডা জাতীয় খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করার সময় বেদনময় সংবেদনশীলতা।
৬. চোয়ালে প্রচন্ড ব্যথা।
৭. মুখে খারাপ স্বাদ অনুভব করা।
৮. মুখ দিয়ে বাজে গন্ধ বের হওয়া।
৯. পুঁচ সাদা তরল বের হওয়া।
১০. বিভিন্ন রকম জ্বালা ভাব অনুভব করা ইত্যাদি।
দাঁতের ব্যথায় যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক অথবা শিশু উভয়ের দাঁতের ব্যথা হতে পারে। উপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলির কোন লক্ষণ যদি আপনার উপস্থিত থাকে তাহলে অযথা সময় নষ্ট না করে একজন ডেন্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন। ব্যথার কারণ কি তা খুজে বের করতে সম্ভবত আপনাকে দাঁতের এক্সরে করতে বলতে পারে।
দাঁতের ব্যথায় করণীয়:
দাঁত ব্যথা কখনো বলে কই আসে না। হঠাৎ যদি একদিন দাঁতে ব্যথা শুরু হয় তাহলে দিশেহারা হয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধের খোঁজ করি। কিন্তু কিছু উপায় জানা থাকলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেই সেই উপায়গুলো:
১. দুই একটি লবঙ্গ থেঁতো করে নিয়ে এক ফোটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগিয়ে দিন। অথবা দুটি লবঙ্গ চিবিয়ে জিব্বা দিয়ে ব্যথার স্থানে কিছুক্ষণ চেপে রাখুন দেখবেন আপনার ব্যথা কিছুটা হলেও লাঘব হোক হয়েছে।
২. কিছুটা রসুন খেতিয়ে নিয়ে অল্প একটু লবণ মিশিয়ে দাঁতে লাগান। আর বেশি ব্যথা হলে রসুন চিবিয়ে খান। যদি আপনার ব্যথা কমে যায় তবুও কয়েকদিন এটা করুন।
৩. লবঙ্গ সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং ওই পেস্ট ব্যাথাযুক্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন কয়েক মিনিটের জন্য।
৪. কাঁচা পেঁয়াজ চিবিয়ে খেয়ে নিন। আর পিঁয়াজ খেতে যদি বেশি ঝাঁজ লাগে তবে দাঁতের উপর পিঁয়াজ চেপে ধরে রাখুন দেখবেন তাহলে একটু আরাম লাগবে।
৫. লবণ পানি দাঁত এবং মাড়ির জন্য বেশ উপকারী। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লবণ পানি মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার কুলি করলে দাঁত ব্যথা অনেকটা লাঘব হয়।
৬. পেয়ারা পাতাও দাঁত ব্যথার জন্য বেশ উপকারী। দুই তিনটি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে ব্যথা অনেকটা কমে যায়।
৭.দূর্বা ঘাসের রস দাঁত ব্যথার জন্য বেশ উপকারী ঔষধ। এছাড়া এটি দাঁত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৮.সর্বশেষ উপায় হচ্ছে বরফ আপনি যদি হাতের কাছে কিছু না পান তাহলে শুধুমাত্র বরফ দিয়ে ব্যথা কমাতে পারেন। এক টুকরা বরফ তুলা অথবা কাপড়ে পেঁচিয়ে দাঁতে চেপে রাখুন দেখবেন ব্যথা কিছুটা হলেও কমবে।
ব্যথা তীব্র হওয়ার কারণ:
দাঁতে কোনরকম গর্ত থাকলে, দাঁতের ফিলিং খুলে গেলে, দাঁত ভেঙে গেলে অথবা দাঁতের মাড়ি কোন কারনে আক্রান্ত হলে আমাদের সাধারণত দাঁতে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে।
কোন কিছু ঠান্ডা অথবা গরম খাওয়ার পর ৩০ মিনিট পর্যন্ত যদি দাঁতে ব্যথা স্থায়ী হয়ে থাকে তাহলে সাধারণত ধারণা করা হয় দাঁতের পালস আক্রান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে স্নায়ু নষ্ট হতে সাধারণত ১২ ঘন্টা সময় লেগে থাকে। পুনরায় ব্যথা শুরু হলে বুঝতে হবে আক্রান্ত কোষ আবার সংক্রামিত হয়েছে অথবা আক্রান্ত স্থানে পুঁজ সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যথা তীব্র হলে কি করবেন?
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে মুখে নিয়ে এক মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন। এভাবে করে দিনে তিনবার কুলি করুন দেখবেন ব্যথা কমে গেছে।
এছাড়াও এক টেবিল চামচ লবণ অল্প সরিষার তেলের সঙ্গে অথবা লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং ওই পেস্ট আপনার মাড়িতে দিয়ে কয়েক মিনিট চেপে ধরে রাখুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করে নিন। এই কাজ করার ফলে মুখে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।
লবণ পানি দাঁত ব্যথা কমানোর জন্য একটি কার্যকর উপায়। এটি মুখে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ফেলে এবং দাঁতে প্রদাহ কমিয়ে থাকে।
ব্যথাযুক্ত স্থানে বরফ লাগালে ব্যথা অনেকটা কমে যায়। এজন্য হাতের কাছে কোন কিছু না পেলে এক টুকরো বরফ অল্প পরিমাণ তুলা অথবা এক টুকরা কাগজে পেচিয়ে দাঁতে চেপে ধরে রাখুন। দেখবেন ব্যথা অনেকটা কমে গেছে।
সর্বশেষে দাঁতের ব্যথার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়াই ভালো।
দাঁতের সুস্থতার জন্য করণীয়:
মানুষের সৌন্দর্য অনেকখানি নির্ভর করে সুন্দর হাসির উপর। আর সুন্দর হাসি নির্ভর করে সুস্থ এবং সুন্দর দাঁতের উপর। সৌন্দর্য ছাড়াও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য দাঁতের সুস্থতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যায় পারে দাঁতের সুস্থতা নিশ্চিত করতে। সঠিক সময় দাঁতের যত্ন নেবেন না আর বলবেন দাঁত হলুদ হয়ে গেছে ,দাঁতের মাড়ি ফুলে গেছে, আমার দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা করছে ইত্যাদি নানারকম কথা। একটি কথা মনে রাখবেন বয়স বাড়ার সাথে দাঁত নরা বা পড়ার কোনই সম্পর্ক নেই সম্পর্ক আছে শুধু সঠিক পরিচর্যা। আপনি যদি প্রথম থেকে সঠিকভাবে দাঁতের পরিচর্যা না করেন তাহলে প্রথমে অল্প অল্প ব্যথা থেকে পরবর্তীতে তীব্র ব্যথায় রূপ নিবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু করণীয় নিয়মিত পালন করলে দাঁত এবং শরীর দুটি সুস্থ রাখা সম্ভব। দাঁত সুস্থ না থাকার কারণে আমরা যেমন চাহিদা মাফিক খাবার খেতে পারি না তেমনি ভালোভাবে চিবাতেও পারি না ফলে আমাদের হজমে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া এর ফলে আমাদের শরীর তার প্রয়োজনীয় খাদ্যমানও পায় না। কাজের সুস্থ সবল দাঁতের জন্য কি কি করণীয় তা নিয়েছে তুলে ধরা হলো-
১. বছরে দুবার অথবা কমপক্ষে একবার একজন ডেন্টাল সার্জেন্টের পরামর্শ নেই এবং আপনার দাঁত চেকআপ করান। এতে করে আপনি মাড়ির রোগ অথবা দাঁত ব্যথা অনেকটা প্রতিরোধ করতে পারবেন।
২. সব সময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। একটি কথা মনে রাখবেন যে সকল খাবার আঠার মত লেগে থাকে ওই সকল খাবার খুব সহজে তাদের ক্ষতি করে। কাজেই চকলেট, চুইংগাম,বিস্কুট, ফাস্টফুড ,মিষ্টি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করবেন।
৩. ধূমপান, তামাকজাত, জর্দা, সুপারি, গুল ইত্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক।
শিশুদের টুথপেস্ট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখবেন। টুথপেস্ট এর ধরন যাতে শূন্য থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য ফ্লোরাইড মুক্ত পেস্ট ও ৫-১২ বছরের মধ্যে ৫০০ পিপিএম ফ্লোরাইড থাকতে হবে। ১২ বছরের পর থেকে ১০০০ পিপিএম ফ্লোরাইট থাকা প্রয়োজন বা দরকার।
মাড়ির ব্যথার অন্তর্নিহিত কারণ:
দাঁতের ব্যথা বা মাড়ির ব্যথার সবচেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া। দাঁতের ক্ষয় যদি চিকিৎসা বিহীন অবস্থায় থাকে তাহলে সেখানে ফোড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি হলো আপনার দাঁতের ভেতরের পাল্পে সংক্রামণ। আপনার যদি মনে হয়ে থাকে আপনার দাঁতের মাড়িতে ফোড়া আছে তাহলে অযথা সময় নষ্ট না করে একজন ডেন্টিস্টের কাছে যান। অনেক সময় এই সংক্রমণ আপনার মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে যেতে পারে, যা আপনার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।
দাঁতের ক্ষয়: দাঁতের ক্ষয় প্রথমের দিকে অল্প একটু থাকে কিন্তু চিকিৎসা না করা হলে এটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। যেহেতু দাঁতের গর্তের কারণে প্রথমে দেখে কোন ব্যথা অনুভব হয় না এজন্য এটি উপলব্ধি করা অনেকের জন্য খুব কঠিন। যদি আপনি নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করেন তাহলে প্রাথমিক পর্যায়েই দাঁতের ক্ষয় শনাক্ত করা সম্ভব। দাঁতের ক্ষয় বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্য গুলোর মধ্যে। দাঁত আছে এমন যে কোন বয়সের নারী অথবা পুরুষ এই ক্ষয়জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার দাঁতে ক্ষয় হয়েছে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করে নেবেন যাতে অন্য দাঁত ও ক্ষয়প্রাপ্ত না হয়।
দাঁতের ব্যথা হলে কি কি খাবেন:
আমাদের সৌন্দর্যের অনেকটাই নির্ভর করে সুন্দর এবং ঝকঝকে দাঁতের উপর। আর দাঁত কে সুন্দর এবং ঝকঝকে করতে হলে খাদ্যাভাসের উপর ভালোভাবে নজর দিতে হবে। দাঁত কে সুস্থ রাখতে আমাদের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, যেমন: আমড়া, লেবু, আনারস, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি।
এই ধরনের টক জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। আর এই ধরনের ফলে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের লালা নিঃসরণ বাড়ায় এবং দাঁতের ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। এছাড়া যাদের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে তাদের খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার। ভিটামিন এ জাতীয় খাবারে থাকে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের দাঁত এবং মাড়িকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবারের মধ্যে গাজর এবং পালং শাক অত্যন্ত উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন দুই বেলা দুধ খাওয়া উচিত। কারণ দুধ হচ্ছে একটি সুষম খাদ্য এতে সকল ভিটামিন বিদ্যমান তাই দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য দুধের গুরুত্ব অপরিহার্য।
দুধ আমাদের দাঁত কে শক্ত এবং মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়া দুধের তৈরি বিভিন্ন খাবার যেমন: টক দই, পনির এগুলো আমাদের দাঁতের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সবজি ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি আমাদের দাঁতের জন্য অনেক উপকারী। বিভিন্ন ধরনের আঁশযুক্তকারী খাবার যা দাঁত এবং মাড়ির পরিছন্নতা বা ডিটারজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন ধরনের আঁশজাতীয় খাবার যা আমাদের মুখের লালার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এতে করে আমাদের দাঁতের কেভিটি প্রতিরোধ করে। আঁশজাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, শিমের বিচি ইত্যাদি এগুলোতে যেমন আঁশ রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের দাঁতের এনামেলকে সুরক্ষা দেয়
এছাড়াও রয়েছে চিনি মুক্ত চুইংগাম । চিনি মুক্ত চুইংগাম চাবানোর ফলে আমাদের মুখে লালার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এতে করে খাবার খাওয়ার সময় আমাদের দুই দাঁতের মাঝখানে যে খাবার আটকে যায় তা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং মুখে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এছাড়াও ফ্লুরাইড আমাদের দাঁতের জন্য অনেক উপকারী। যেহেতু পানিতে ফ্লোরাইট আছে তাই আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে করে আমাদের দাঁত এবং মাড়ি সুস্থ থাকবে।
দাঁতের ব্যথা হলে কি কি খাবেন না:
দাঁত একটি অমূল্য সম্পদ। তাই আমাদের সকলের উচিত দাঁতের ভালোভাবে যত্ন নেওয়া। যার একবার দাঁত ব্যথা হয়েছে সেই শুধু বুঝে এই ব্যথার যন্ত্রনা কেমন। তাই দাঁতে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কিছু খাবার পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে চিনি যুক্ত আঠালো খাবার কেক, ক্যান্ডি, পেস্টি, মিষ্টি খাবার খেলে আমাদের দাঁতে কেভিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়াও বর্তমানে নানা রকম কোমল পানিও পাওয়া যায় যা আমাদের দাঁতের নানা রকম ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, চিপস ইত্যাদি আমাদের দুই দাঁতের চিপায় লেগে থাকতে পারে এতে করে এখান থেকে কেভিটি সৃষ্টি হতে পারে।
কিসমিস অথবা খেজুর খাওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায় এগুলো আমাদের দাঁতের সাথে লেগে থাকে এর ফলে আমাদের দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়াও টক জাতীয় খাবার যদি আমরা অধিক পরিমাণে খাই তাহলে এতে অবস্থিত এসিড আমাদের দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করে দিতে পারে। ধূমপান দাঁতের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
যারা ধূমপান করে তাদের দাঁত আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে যায় ফলে এখান থেকে নানা ধরনের কেভিটির সৃষ্টি হয়।এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাবার আছে যা অধিক পরিমাণে খেলে আমাদের দাঁতের নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এগুলো খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করে নেব। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে এগুলো খাওয়ার পর আমরা দুই থেকে তিন মিনিট ভালো করে ব্রাশ করে নেব।
সবশেষে,
দাঁত আমাদের জীবনের একটি অমূল্য সম্পদ। মানুষের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে থাকে। এছাড়া দাঁতের সাহায্যে আমরা খাবার চিবাই যা আমাদের খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। এজন্য আমাদের সকলের উচিত ভালোভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া।
একটি প্রবাদ রয়েছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝা উচিত। তাই দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের যে সকল খাবার গ্রহণ করা উচিত তা আমরা বেশি বেশি করে গ্রহণ করব। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, বিভিন্ন শাকসবজি, আজ জাতীয় খাবার, দুধ ইত্যাদি বেশি বেশি করে পান করার চেষ্টা করব। এছাড়া যে সকল খাবার আমাদের দাঁতের জন্য ভালো না তা বর্জন করার আছে।
সুগার জাতীয় অথবা চকলেট জাতীয় খাবার পরিহার করার চেষ্টা করব। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্ডি, পেস্টি, কেক ইফতারি খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবো। আর যদিও দাঁতে সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে অযথা সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিব। দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন দুইবার ভালো করে দাঁত ব্রাশ করব। এছাড়া প্রতি মাসে একবার হলেও ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁত চেক করাবো। সবাইকে ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন –