আজকে আমরা আলোচনা করব দেশের সবচাইতে বড় সাফারি পার্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নিয়ে। আজকের আলোচনায় আমরা জানতে পারবো এই সাফারি পার্কের ইতিহাস ও কি কি ধরনের বন্যপ্রাণী রয়েছে এবং সেগুলোকে কিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিরল প্রাণী গুলোকে কিভাবে সংরক্ষণ ও তাদের বংশবিস্তার করার জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। সাফারি পার্ক পুরো পরিদর্শন করতে কত খরচ হতে পারে আরো জানতে পারবেন কিভাবে সাফারি পার্ক আপনি পৌঁছাবেন। তো আপনি এসব কিছু জানতে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন। শুরু করছি মূল আলোচনা –
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ইতিহাস
আমরা সাফারি পার্ক নামে যেটাকে চিনি এটার পুরো নাম হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। সংক্ষেপে এই পার্কে বলা হয় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার অধীন মাওনা ইউনিয়নের বড় রাতুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের পিরুজালী মৌজার খন্ড খন্ড শালবনের ৪৯০৯ একর বনভূমি ছোট বড় প্রজাতির প্রাণীর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে এই পার্ক পরিচিত। এ পার্কের অধিকাংশ অংশকে মাস্টারপ্লানের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
পার্কের প্রায় ৩৮১০ একর এলাকাকে ঘিরে মাস্টার প্রাণের আওতাভুক্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শীর্ষক এই প্রকল্পটি ২০১০ সালের প্রতিষ্ঠা করার কার্যক্রম আরম্ভ হয়। একই বছর এই প্রকল্পটি ৬৩.৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কালিত ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। গাজীপুরের ২০১১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নামক প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কার্যক্রম করা হয়।
এ প্রকল্পটি যখন শুরু করা হয় তখন কোন মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। এরপর এই পার্কে আন্তর্জাতিক মানের একটি সাফারি পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্কের উন্নতি করার উদ্দেশ্যে একটি বড় আকারের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়। মাস্টার প্লানে উল্লেখ কৃত কার্যক্রম টিম বাস্তবায়ন ও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিরসনের লক্ষে ২০১১ সালের চৌঠা অক্টোবর তারিখে ” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর প্রকল্প টিম একনেক কর্তৃক বর্ধিত আকারে ২১৯.৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কালিত ব্যয়ে অনুমোদন করা হয়।
যেহেতু এদিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্ক করার মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল। তাই এটি দক্ষিণ এশীয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের কতিপয় ধারণাগুলো এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সাফারি পার্কের চতুর্দিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ীভাবে ঘেরা এবং উহার মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বন্য প্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করার কারণ হচ্ছে যাতে করে পর্যটকগণ চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্ত বিনোদনের সুযোগ লাভ করতে পারে।
সাফারি পার্ক এবং চিড়িয়াখানার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যটি হচ্ছে চিড়িয়াখানার মধ্যে জীবজন্তু সমূহ আবদ্ধ অবস্থায় থাকে এবং দর্শনার্থীরা মুক্ত অবস্থায় জীবজন্তু পরিদর্শন করে। কিন্তু সাফারি পার্কে বন্যপ্রাণী সমূহ মুক্ত অবস্থায় বন জঙ্গলে বিচরণ করবে এবং মানুষ সতর্কতার সাথে নিরাপদে চলমান যানবাহনে করে ভ্রমণ করতে পারবে। এটার একটা সুবিধা হচ্ছে এখান থেকে বাস্তব শিক্ষা গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করা যাবে। কারণ প্রাণীগুলো থাকবে তাদের নিজেদের মতোই। কিন্তু চিড়িয়াখানার মধ্যে প্রাণীগুলো নিজের ইচ্ছামত থাকতে পারে না। সাফারি পার্ক হচ্ছে এখানে বন্যপ্রাণীরা সবাই নিজ নিজ মত অবস্থান করবে নিজের ইচ্ছামতো আচরণ করবে।
আরো পড়ুন – সুন্দরবন ভ্রমণ এবং নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের অবস্থান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি গাজীপুর জেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারি পার্ক অবস্থান করছে। এই পার্কের আয়তন প্রায় ৩৬৯০ একর।সাফারি পার্কের ভৌগোলিক অবস্থান হচ্ছে ২৪.১৭ ডিগ্রী উত্তর ও ৯০.৩৯ ডিগ্রী পূর্ব প্রায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পার্ক স্থাপিত হয়েছে ২০১৩ সালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের দেখাশোনা করেন বাংলাদেশ বন বিভাগ।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ঐতিহাসিক পটভূমি
গাজীপুরের শালবন ঐতিহাসিকভাবে ভাওয়াল রাজার জমিদারের অংশ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৫০ সালে এই অঞ্চল থেকে জমিদারের প্রথার উচ্ছেদ করা হয় এবং প্রজাস্বত্ব আইন জারি করা হয়। প্রজাস্বত্ব আইন জারি করার পর ভাওয়াল রাজার জমিদারের অংশ হিসেবে পরিচিত এই শালবন ব্যবস্থাপনা বনবিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তবে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শাল বনের অধিকাংশ জমি চাষকৃত জমি বলে ব্যক্তি মালিকানাধীন এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শালবনটি ঢাকার খুব নিকটে অবস্থান করছে। যার কারণে এখানে দ্রুত শিল্পায়ন হচ্ছে জবরদখল গোচারণ ও ভূমিদস্যুতার কারণে এই সালবনের জীববৈচিত্র্য ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। এর ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে দূষিত হচ্ছে মাটি, পানি, বায়ু।
এসব শিল্প কারখানা থেকে নিস্তারিত বর্জ্যের কারণে জীববৈচিত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে যদি জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে তাহলে একসময় এই শালবন কে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই সাফারি পার্ককে রক্ষা করতে হলে শুধু বন অধিদপ্তরকে সচেতন হলেই হবে না আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। কারণ এত বড় একটি নিদর্শন কেউ একা রক্ষা করতে পারবে না। সাফারি পার্ক রক্ষা করার জন্য সকলের সাহায্যের দরকার। যারা জবরদস্তি করে বনের দখল নিচ্ছে তাদেরকে সচেতন হতে হবে এবং তাদের প্রতি কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মূল উদ্দেশ্য
শাল বনের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র সংরক্ষণ করা। এই পার্কে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের উদ্ভিদগুলোকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। যে সকল উদ্ভিদগুলো বিলুপ্তির পথে বিশেষ করে সেই সকল উদ্ভিদগুলোকে সংরক্ষণ করা। বন্যপ্রাণীগুলোকে কে আলাদাভাবে তাদের বংশবৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া। যাতে করে জীব বন্যপ্রাণী গুলো ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত না হয়ে যায়।
বাংলাদেশের যে সকল প্রাণীগুলো বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় সে সকল প্রাণীগুলোকে আলাদাভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। এবং সে সকল প্রাণীগুলোর উন্নতি সাধন করা। যাতে করে বিরল প্রাণীগুলো তাদের নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারে।
এখানে একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান বানানো যাতে করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধিত হয়। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তারা যেন এখানে কাজ করে নিজেদের জীবনপরিচালনা করার সহজ হয়ে যায়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিক্ষা ও চিত্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা। যারা গবেষণা করেন তারা যেন খুব সহজেই এই পার্ক থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তার গবেষণা কার্য পরিচালনা করতে পারে। যারা শিক্ষা গ্রহণের জন্য বন্যপ্রাণী সরাসরি উপভোগ করতে চাই তাদের জন্য একটি বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এই পার্কের মাধ্যমে। তারা বাস্তব শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। আর যারা বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের জন্য এই ধরনের পার্ক বা বোন খোঁজেন তাদের জন্য তো অনেক বড় একটি সুযোগ।
বন্যপ্রাণীর খাদ্য উপযোগী ফলজ, ফডার, ও মিশ্র প্রজাতির বাগান সৃজন। বন্যপ্রাণীরা যেসব খাদ্য খেতে পছন্দ করে বা যেসব ফল খেতে ভালোবাসে সে সকল ফলের গাছ। এবং পাখিদের জন্য সৃজনশীল মূলক বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালি ছোট ছোট বোন তৈরি করা। বন্যপ্রাণীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খাদ্যের ব্যবস্থা করা।
শালবনের বন্যপ্রাণী যেমন বানর, মায়া হরিণ, বেজী, বনরুই, বাঘদাস, বন বিড়াল, খড়গোশ, শিয়াল, খেকশিয়াল ও অজগরসহ বিপন্ন বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল সৃষ্টি ও সংরক্ষণ করা। এখানে উল্লেখিত যে সকল পশু ও পাখি রয়েছে এদের জন্য আলাদাভাবে নিরাপদ আবাসস্থল থাকাটা আবশ্যক। যেমন হরিণ কে যদি নিরাপদে না রাখা হয় তাহলে বাঘ কিংবা সিংহ তাকে খেয়ে ফেলবে। এমন অনেক প্রাণী রয়েছে যেগুলোকে আলাদাভাবে নিরাপদ অবস্থায় রাখা লাগবে। নয়তো বন্যপ্রাণীর আক্রমণে এগুলো জীবন হারাবে এবং এভাবে চলতে থাকলে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই এসব প্রাণীকে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
বিরল ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন বাঘ, চিতাবাঘ, সাম্বার হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ এবং অন্যান্য তৃণভোজী বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা। আমাদের দেশে বাঘ প্রায় বিলুপ্তির পথে কারণ বিভিন্ন কারণে এরা ঠিকমতো বংশবৃদ্ধি করতে পারছে না। সঠিকভাবে বংশবৃদ্ধি করতে না পারার আসল কারণ হচ্ছে তারা তাদের মনের মত পরিবেশ পাচ্ছে না। তাই বাঘের জন্য অবশ্যই আলাদাভাবে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
এছাড়াও তৃণভোজী যেসব প্রাণী রয়েছে তাদের জন্য আলাদাভাবে সুন্দর পরিবেশে ঘাস চাষ করতে হবে। কারণ তৃণভোজী প্রাণীর আসল খাদ্য হচ্ছে ঘাস। তারা যদি তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘাস খেতে না পায় তাহলে তারা বংশবৃদ্ধি করতে পারবে না, এই পরিবেশের সাথে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতে পারবে না।
গণ্ডার, এশীয় হাতী,জলজ, পাখী পরিযায়ী পাখী,বনছাগল, সিংহ, শ্লথ বীয়ার, কালো ভাল্লুক, মিঠা পানির কুমির, লোনা পানির কুমির, নীল গাই, জলহস্তী ইত্যাদি বিপন্ন ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণকরণ। এখানে যে সকল প্রাণীগুলোর উল্লেখ রয়েছে এ প্রাণীগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্ত হওয়ার আসল কারণ হচ্ছে তারা তাদের মনের মত পরিবেশ পাচ্ছে না। এসব বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী গোলকের সংরক্ষণ করার জন্য অবশ্যই এদের নিজ নিজ মতো পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
আহত ও উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর চিকিৎসার নিমিত্তে বন্যপ্রাণীর সেবাশ্রম ও হাসপাতাল স্থাপন। বিভিন্ন কারণে অনেক প্রাণী আহত হয়ে যায় তাই এদেরকে সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে হবে। এবং আহত প্রাণের আলাদাভাবে যত্ন নিতে হবে।
সারাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি। আমাদের সাধারণ মানুষের জন্যই অনেক বন্যপ্রাণী আজ বিলুপ্তের পথে। কারণ আমরা নিজেদের স্বার্থে বন জঙ্গল উজার করে দিচ্ছে এবং পশু পাখিগুলোকে ধরে ভোজন করে ফেলছে। তাই অবশ্যই সারাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য গনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে যেসব প্রাণী রয়েছে
সাফারি পার্কে আছে জলহস্তী, বাঘ, সিংহ, হাতি, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, ক্যাংগারু, জেব্রা, বানর, হনুমান, ভাল্লুক, গয়াল, কুমির ও বিচিত্র পাখি। সাফারি পার্ক পরিদর্শন করলে উপরের সবগুলো প্রাণী আপনি দেখতে পাবেন। এছাড়াও ২০২১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে নীল গায়ের দুইটি বাচ্চা জন্ম নেই। এই নীল গাইটিকে কিছু স্বার্থপর মানুষের জবায়ের হাত থেকে বিজিবি উদ্ধার করে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়।
কোর সাফারি পার্ক এর বর্ণনা
এ পার্কে সাফারি গাড়ি ছাড়া কোন পর্যটক প্রবেশ করতে পারবে না। এই পার্কে প্রবেশ করতে হলে পর্যটককে অবশ্যই সাফারি গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। তবে পর্যটকগণ বন্যপ্রাণী বেষ্টনীতে ঢুকে মুক্ত অবস্থায় একদম প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণরত অবস্থায় বন্যপ্রাণী গুলোকে চড়ে নির্দ্বিধায় অবলোকন করতে পারবেন। প্রায় ১৩৩৫ একর এলাকা জুড়ে কোর সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে। এই নির্ধারিত এলাকার মধ্যে প্রত্যেকটি প্রাণীকুলের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এর মধ্যে বিশ একর বাঘের জন্য, প্রায় ৮১ একর চিত্রা হরিণের জন্য, সিংহের জন্য ২১ একর, প্রায় ৯ একর কালো ভাল্লুকের জন্য, ৮ একর আফ্রিকান চিতার জন্য, ৮০ একর সাম্বাব ও গয়াল এর জন্য, হাতির জন্য ১০৫ একর, ৩৫ একর জলহস্তীর জন্য, মায়া ও পারা হরিণের জন্য ২২ একর, বারো শিঙ্গা ও নীল গায়ের জন্য ২৫ একর এছাড়াও অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বাকি অংশ বরাদ্দ করা হবে। আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করার কারণ হচ্ছে কোন হিংস্র প্রাণী অন্য কোন প্রাণীর ক্ষতি না করতে পারে। এবং প্রত্যেকটি প্রাণীর জন্য তাদের সুবিধামতো পরিবেশ তৈরি করা।
সাফারি কিংডম এর বর্ণনা
সাফারি কিংডমের মধ্য দিয়ে পর্যটক গুণ পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করতে পারবে। এবং বন্যপ্রাণী গুলোকে ছোট বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হবে।সাফারি কিংডমের আসল লক্ষ্য হচ্ছে , বন্যপ্রাণী গুলোর নৈপুণ্য খেলাধুলা প্রদর্শন করা এবং বন্যপ্রাণী সম্পর্কে বাস্তব শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং গবেষকদের জন্য গবেষণা কার্য সহজ করে তোলা। প্রায় ৫৭৫ একর এলাকা নিয়ে এই সাফারি কিংডম প্রতিষ্ঠা করা হবে।এর প্রধান কার্যক্রম গুলোর মধ্যে রয়েছে জিরাফ ফিডিং স্পট, প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, বোটিং ও লেকজোন, পেলিকেন আয়ল্যান্ড, বড় বড় আকারের গাছপালা ঘেরা ক্রাউন্ট ফিজেন্ট এভিয়ারী, ধনেশ এভিয়ারী, প্যারট এভিয়ারীসহ দেশি-বিদেশী পাখির পাখীশালা, কুমির পার্ক, অর্কিড হাউজ, শকুন ও পেঁচা কর্ণার, প্রজাপতি কর্ণার, এগ ওয়ার্ল্ড, কচ্ছপ-কাছিম ব্রিডিং সেন্টার, লামচিতা হাউজ, হাতী-শো গ্যালারী, ক্যাঙ্গারু বাগান, ময়ুর বা মেকাউ ওপেন ল্যান্ড, সর্প পার্ক, ফেন্সি কার্প গার্ডেন, ফেন্সি ডার্ক গার্ডেন, লিজার্ড পার্ক, ফুডকোটর্ , পর্যবেক্ষন টাওয়ার ও জলাধার ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এর বর্ণনা
বঙ্গবন্ধু স্কয়ার তৈরি করা হয়েছে সাফারি পার্কের ৩৮ একর জায়গা জুড়ে। বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থান পেয়েছে বিনোদন উদ্যান ও প্রশাসনিক কাজে নির্মিত ভবনগুলো আরো স্থান পেয়েছে পার্কিং এলাকা। বঙ্গবন্ধু স্কয়ার রয়েছে আরও আকর্ষণীয় মুরাল ও মডেল সজ্জিত প্রধান ফটক এবং আরো রয়েছে লেক ও ফোয়ারা।প্রশাসনিক ভবনগুলোর পাশাপাশি আরও রয়েছে পার্ক অফিস, ডিসপ্লে ম্যাপ, তথ্যকেন্দ্র, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ডরমেটরি, ইকো-রিসোর্ট ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রবেশের মূল্য ও অন্যান্য খরচ
সাফারি পার্ক প্রবেশ ফিঃ পার্কে প্রবেশের জন্য বয়স ভেদে টিকিটের মূল্য ভিন্ন রয়েছে। ১৮ বছর বয়সের নিচের ছেলেমেয়েরা ২০ টাকায় এ পার্কে প্রবেশ করতে পারবে। প্রাপ্তবয়স্ক সকল বাংলাদেশীদের জন্য প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবার আলাদা সুযোগ রয়েছে। সাধারণ অথবা শিক্ষা সফরে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রবেশের টিকেট মূল্য মাত্র ১০ টাকা করে। বিদেশ অর্থাৎ বাইরের দেশ থেকে যেসব দর্শনার্থী এই পার্ক পরিদর্শনের জন্য প্রবেশ করবে তাদের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ ডলার করে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে স্পেশাল প্রবেশ ফি। যদি শিক্ষা সফরে আসার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হয় ৪০থেকে ১০০ জনের মধ্যে তাহলে তাদের সবার প্রবেশ ফি একসাথে ৪০০ টাকা। যদি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১০০ এর উপরে হয় তাহলে সবার একসাথে ৮০০ টাকা ফি দিতে হবে।
কোর সাফারি পার্ক প্রবেশ ফিঃ কোর সাফারি পার্কে যে স্থানে খোলা মাঠে জীব জন্তু ঘুরে বেড়ায় জিপ ও মিনিবাসে করে পরিদর্শন করার জন্য ১০০ টাকা করে জন প্রতি ফি দিতে হবে। যদি দর্শনার্থীর বয়স ১৮ বছরের কম হয় বা ছাত্র-ছাত্রী হয় তাহলে তাদের জন্য প্রবেশ ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মিনি বাসে করে ঘুরে দেখানোর সময় হচ্ছে ২০ মিনিট । পার্কের মধ্যে অন্যান্য যে সকল আলাদা আলাদা জায়গা রয়েছে সেগুলোতে আলাদা আলাদা ভাবে প্রবেশ ফি দিতে হবে। সবগুলো স্পট দেখতে মোটামুটি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হবে। এখানে একটি অফার রয়েছে। এখানে আপনি একসাথে কয়েকটি স্পট দেখান প্যাকেজ পাবেন যেখানে আপনার খরচটা অনেকটাই কম হবে। প্যাডেল বোটে করে ভ্রমণ করতে চাইলে ২০০ টাকা জনপ্রতি ফি দিতে হবে। ২০০ টাকার বিনিময়ে আপনি ৩০ মিনিট বোটে করে ভ্রমণ করতে পারবেন।
পার্কিং এর ভাড়া
প্রতিটি বাস, কোচ বা ট্রাক এর পার্কিং ভাড়া ২০০ টাকা করে দিতে হবে।মিনি বাস বা মাইক্রোবাস এর পার্কিং ভাড়া ১০০ টাকা করে। প্রাইভেট কার, জিপ, অটোরিক্সা বা সিএনজির পার্কিং ভাড়া ৬০ টাকা করে। এই ভাড়া সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে।
পর্যটকদের জন্য কিছু পরামর্শ
যেকোনো পচনশীল দ্রব্য ছাড়া পানির বোতল পলিথিন সহ যেকোনো ময়লা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলবেন।বাঘ ও সিংহ পরিদর্শন করার সময় ভুল করেও গাড়ি থেকে নামবেন না। যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে।সকল হিংস্র প্রাণীদের খাঁচা থেকে দূরে অবস্থান করুন। তারা সুযোগ পেলেই আপনাকে আক্রমণ করতে পারে।পার্কের বিভিন্ন স্থানে সতর্ক ও বার্তা দেওয়া রয়েছে সেগুলো অবশ্যই অনুসরণ করবেন। অন্যথায় বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।বাঁশি বাজানো বা উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী কোন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করবেন না। উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করলে বন্যপ্রাণীগুলো অস্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আপনার যদি বিশ্রামাগার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই অগ্রিম টিকিট বুকিং করতে হবে।বন্যপ্রাণীদেরকে খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ খাবারের লোভে তারা আপনাকে আক্রমণ করতে পারে।বাইরে থেকে খাবার নিয়ে পার্কের মধ্যে প্রবেশ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। পার্কের মধ্যে সব ব্যবস্থা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পরিদর্শনের সময়
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুধুমাত্র সপ্তাহের মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বন্ধ থাকে। সাফারি পার্কের সাপ্তাহিক ছুটির দিন হল মঙ্গলবার। সাফারি পার্ক পুরোটা ঘুরে দেখতে চাইলে একটা পুরো দিন শেষ হয়ে যাবে। যদি সাফারি পার্কের পুরোটা ঘুরে দেখার ইচ্ছা থাকে তাহলে অবশ্যই সকাল সকাল পৌঁছে যেতে হবে।
ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক যাওয়ার উপায়
ঢাকা মহাখালী হতে শ্রীপুর, ময়মনসিংহ বা ভালুকাগামী বাসে গাজীপুরের চৌরাস্তা অতিক্রম করে অল্প কিছুদূর গেলে বাঘের বাজারে সাফারি পার্কের বিশাল বড় সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়া যাবে। বাঘের বাজার থেকে রিক্সা বা অটো রিক্সায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক যাওয়া যাবে। অটো রিক্সায় সাফারি পার্ক যাওয়ার ভাড়া .২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যেই হবে। আপনি যদি দেশের অন্য কোন জায়গা থেকে আসতে চান তাহলে প্রথমে আসবেন গাজীপুরে তারপর উপরে উল্লেখিত উপায় অনুসরণ করে পৌঁছে যাবেন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে।