চুলকানি দূর করার ক্রিম
চুলকানি খুব পরিচিত একটি রোগ। প্রতিটি মানুষই তার জীবনে কখনো না কখনো চুলকানি সমস্যায় ভুগেছে। বিভিন্ন কারণে এই চুলকানি হয়ে থাকে। শরীরে বা চামড়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ, ত্বক সুস্থ এবং শীতকালে ময়েশ্চার কমে যাওয়া, এছাড়াও ডায়াবেটিস রক্তশূন্যতা এবং হরমনের সমস্যা থাকলে চুলকানি হয়।
তবে এই চুলকানি দীর্ঘদিন যাবৎ চলতে থাকলে শরীরে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধেতে পারে। চুলকানি সমস্যাটি কম বেশি প্রায় সবার মাঝে লক্ষ্য করা যায়। চুলকানিকে অনেকেই দাদ বা দাউদ নামে ডেকে থাকে। তবে অনেকেই জানেনা এই চুলকানি বা দাদ দূর করার জন্য ক্রিম অনেক উপযোগী একটি ওষুধ। আপনি চাইলে ক্রিম ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনার চুলকানি দূর করতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে চুলকানি দূর করার সঠিক ক্রিম সম্পর্কে জানতে হবে।
সঠিক ও ভালো মানের ক্রিম ব্যবহার না করলে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি চুলকানি দূর করার সঠিক ক্রিম সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেই সাথে চুলকানি দূর করার ক্রিমের নাম ও এর ব্যবহার বিধি তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাই চলুন দেরি না করে আর্টিকেলটি শুরু করা যাক:
চুলকানি কেন হয়
চুলকানির অন্যতম কারণ হচ্ছে শুষ্ক ত্বক। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক কম তৈলাক্ত হতে শুরু করে ও শুষ্কতার পরিমাণ বাড়ে। এর কারণে চুলকানি হতে পারে বিশেষ করে শীতকালে যখন বাতাস শুষ্ক এবং ঠান্ডা থাকে। এমন শুষ্ক ত্বক উপশম করতে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত মশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি।
এইজন্য গ্লাসেরিন ও হায়ালুরোনিক এসিডের মত উপাদান রয়েছে এমন পণ্যগুলোর সন্ধান করুন যা ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। একজিমা এবং সোরিয়াসিস হলো চুলকানির দুটি সাধারণ কারণ। একজিমা এমন একটি অবস্থা যার কারণে ত্বক লাল হয়ে যায়, ত্বক চুলকায় এবং স্ফীত হয়। এটা সাধারণত শুষ্ক ত্বকের সাথে যুক্ত তবে এলার্জির কারণেও হতে পারে।
অপরদিকে সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা ত্বককে লাল এবং আশযুক্ত করে তোলে। এটা সাধারণত একটি সক্রিয় ইমিউন সিস্টেমের কারণে হয়। তবে বিভিন্ন ওষুধ ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে।
চুলকানির উপসর্গ
চুলকানির অনুভূতি খুবই সাধারণ এবং সহজেই চেনা যেতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে অথবা আঁচড়ানোর পরেই চলে যেতে পারে। তবে চুলকানির নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ আছে চলুন এগুলো জেনে নিই:
- ফুলে যাওয়া
- শুষ্ক ত্বক
- জায়গাটি লালচে হয়ে যাওয়া
- প্রদাহ
- জ্বালা করা
- ফোস্কা পড়া
- খসখসে হয়ে যাওয়া
- ত্বক আঁশের মতন হওয়া
চুলকানি দূর করার ক্রিম
আমাদের দেশে বর্তমানে চুলকানি দূর করার ক্রিমের অভাব নেই। এমনকি নির্দিষ্ট দাম রয়েছে, তাই আমাদের অবশ্যই চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করলে, তার সঠিক দাম এবং ব্যবহারের কার্যকরী প্রত্যেকটি বিষয়ের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই চুলকানি দূর করার ক্রিম গুলো সম্পর্কে:
১) ফানজিডাল এইচ সি
ক্রিমটির কার্যকারীতাঃ শরীরের এলার্জি সহ যে কোন জায়গার চুলকানি দূর করার জন্য ক্রিমটি বেশি কার্যকর।
ব্যবহারবিধ: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে শরীরের যে অংশে চুলকানি হয় সেই অংশে এই ক্রিমটি ব্যবহার করুন এবং ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন।
এই ক্রিমটির দাম: ৫৫ টাকা।
২) Licerin Cream
ক্রিমটির কার্যকারিতারঃ শরীরের বিভিন্ন অংশে জ্বালাপোড়া ওৎপ্রচন্ড চুলকানি ইত্যাদি রোগ দূর করতে এই ক্রিমটি ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহারবিধি: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে শরীরের যে অংশে চুলকানি হয়,সেই অংশ এই ক্রিমটি ব্যবহার করুন এবং ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। যদি চুলকানি বেশি থাকে তাহলে ক্রিম এর সাথে ওষুধ ও সেবন করুন। রাতে খাবার খাওয়ার শেষ ১ টি ট্যাবলেট খেতে পারেন। চুলকানি দূর করার ঔষুধ ১ মাসে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ ট্যাবলেট খাওয়া যাবে।
এই ক্রিমটির দামঃ– ৩০-৩৫ টাকা।
৩)Fungin Cream
ক্রিমটির কার্যকারীতাঃ এই ক্রিমটিও চুলকানি দূর করতে বেশ কার্যকার ভূমিকা পালন করে থাকে।
ব্যবহারবিধি: খাওয়া-দাওয়ার পর, ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে শরীরের যে অংশে চুলকানি হয় সেই অংশে এই ক্রিমটি ব্যবহার করুন এবং ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন।
এই ক্রিমটির দামঃ- ৩০-৩৫ টাকা।
৪) ডার্মাসল এন
ক্রিমটির কার্যকারীতাঃ শরীরে চুলকানির স্থানে কালো দাগ এবং নির্দিষ্ট জায়গা উজ্জলতায় ভরপুর, এমনকি চুলকানির প্রভাব থেকে মুক্তি দিতে কার্যকারী একটি ক্রিম এটি।
ব্যবহারবিধি: রাতে ঘুমানোর পূর্বে এই ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।
এই ক্রিমটির দাম একটি ২৫ gm ক্রিমের মূল্য ৮১.০০ টাকা।
৫) ভেট সিএল
ক্রিমটির কার্যকারীতাঃ মুখসহ শরীরের সব জায়গায় চুলকানি দূর করার জন্য ক্রিমটি বেশ কার্যকর।
ব্যবহারবিধি: শরীর কিংবা মুখ যে স্থানে লাগাবেন সেই স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। এবং রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে ক্রিমটি ব্যবহার করুন।
এই ক্রিমটির দামঃ- ৫৪.০০ টাকা।
৬) ইজেক্স
ক্রিমটির কার্যকারীতাঃ ক্রিমটি ব্যবহার করার সাথে সাথে ফলাফল পাবেন, মুখসহ শরীরের যে কোন জায়গার চুলকানি দূর করতে বেশ কার্যকর এই ক্রিম।
ব্যবহারবিধি: রাতে ঘুমানোর আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হওয়ার পর, ক্রিমটি ব্যবহার করবেন এবং সকালে ধুয়ে ফেলবেন। চুলকানির রোগ দূর করার জন্য বেশ আরামদায়ক এই ক্রিম এটি।
ক্রিমটির দাম ৭০ টাকা।
৭) পেভিসন
দাদ ও চুলকানি রোগের চিকিৎসার জন্য Sanofi Aventis ঔষধ কোম্পানীর এই ক্রিমটি খুবই ভালো। যাদের অতিরিক্ত দাদ ও চুলকানির সমস্যা তারা পেভিসন চুলকানির ক্রিমটি ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারবিধি: রাতে ঘুমানোর আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হওয়ার পর, ক্রিমটি ব্যবহার করবেন এবং সকালে ধুয়ে ফেলবেন। চুলকানির রোগ দূর করার জন্য বেশ আরামদায়ক এই ক্রিম এটি।
এই ক্রিমের দাম ৭০ টাকা
চুলকানি প্রতিরোধের উপায়
খুবই সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললে চুলকানি প্রতিরোধ করা সম্ভব। চলুন চুলকানি প্রতিরোধের উপায় গুলো জেনে নিই:
- ত্বক মশ্চারাইজার রাখুন
- অত্যাধিক পরিমাণে ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
- অত্যাধিক সুগন্ধি যুক্ত কসমেটিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
- সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখুন
- হাত পায়ের নখ ছোট ছোট রাখুন
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
- সুতি কাপড় পরিধান করুন
- টাইট ফিটিং পোশাক পরিহার করুন
- অত্যধিক গরম যুক্ত জায়গায় অবস্থান করা থেকে বিরত থাকুন।
সবশেষে
চুলকানি কমবেশি সবারই হয়। তবে এটিকে দীর্ঘদিন চেপে না রেখে নিরাময় করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের এই সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু অলসতার কারণে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না,পরবর্তীতে দেখা যায় চুলকানির এই সমস্যা থেকে বড় কোন ধরনের সমস্যা হয়। এইজন্য চুলকানির সমস্যাকে অবহেলা করা উচিত নয়। খুব সহজেই শুধুমাত্র কয়েকটি ক্রিম ব্যবহার করলে এ সমস্যা সহজে দূর করা যায়। উপরোক্ত আলোচনার ক্রিমগুলো ব্যবহার করে আপনারা খুব সহজেই চুলকানি দূর করতে পারবেন। তবে, যেকোনো ধরনের ঔষধ খাওয়া বা ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
also read : ৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায়
