Dreamy Media BD

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা কার্জন হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিলেই যে কয়েকটি ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তার মধ্যে কার্জন হল (Curzon Hall) অন্যতম। লাল রঙের দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্যটি যে কারও নজর কাড়বে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত এবং প্রায় ১১৮ বছরের পুরনো একটি ঐতিহাসিক ভবন, যা পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত। 

বহু ইতিহাস সাক্ষী এ কার্জন হল আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। আজ তাহলে চলুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা কার্জন হলের বৃত্তান্ত জেনে আসি।

 

কার্জন হলের বৃত্তান্ত

উপমহাদেশের মধ্যে ব্রিটিশ স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন কার্জন হল। এটি নির্মিত হয়েছিল, ভিক্টোরীয় স্থাপত্যরীতি, মোগল স্থাপত্যশৈলী ও বাংলার স্বতন্ত্র সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে।

১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতবর্ষের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন এ হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এ ভবনটির নামকরণ হয় এবং ১৯০৮ সালে এর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এ ভবনটি ঢাকা কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

কিন্তু ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কার্জন হল তার অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ভবনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান অণুষদের শ্রেনীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কার্জন হলে এর স্থাপত্যরীতি


স্থাপত্যবিদদের মতে, এ ভবনের স্থাপত্য নকশার সাথে সম্রাট আকবরের নির্মিত ফতেহ্পুর সিক্রির দুর্গের বেশ মিল রয়েছে। ইউরোপ ও মোগল স্থাপত্যরীতির অপূর্ব সংমিশ্রণে নির্মিত ভবনটি যা বিশেষ করে পরিলক্ষিত হয় অভিক্ষিপ্ত উত্তরদিকের সামনের অংশের অশ্বখুরাকৃতি ও খাঁজকাটা খিলানের মাঝে।

এছাড়া আংশিকভাবে মুসলিম স্থাপত্যরীতির ছাপও লক্ষ্য করা যায়। ভবনটির বাইরের অংশে কালচে লাল রঙের ইট ব্যবহৃত হয়েছে। এই ভবনটিতে ঐতিহাসিক শিল্পের সাথে আধুনিক কারিগরি বিদ্যার দারুণ এক সংমিশ্রণের দেখা মিলবে। 

কার্জনের খিলান ও গম্বুজগুলো আধুনিক স্থাপত্য বিদ্যা এবং মোগল কাঠামোর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলান এবং অনেক ছোট বড় গম্বুজ দূর থেকে চমৎকার দেখায় যা মোগল স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। কার্জনই বোধহয় একমাত্র স্থাপনা যা তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার রূপরস ধরে রেখেছে।

Curzon hall
Curzon hall

কার্জন হল এর রঙ লাল কেন?


এইরকম প্রশ্ন অনেকের মনে উঁকি দিতেই পারে। লোকমুখে শোনা যায় কার্জনের লাল রঙের পেছনেও নাকি রয়েছে আরেক ইতিহাস। এ স্থাপনায় যে ইউরোপীয় ও মোগল স্থাপত্যরীতির সম্মিলন ঘটেছে এটাতো কারো অজানা নয়। মোগল যুগে আগ্রা, দিল্লি, জয়পুর এইসব অঞ্চলে প্রচুর লাল বেলেপাথরের ইমারত নির্মাণ করা হতো।

 কিন্তু বাংলায় বেলেপাথর সহজলভ্য ছিল না। তাই লাল বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার প্রয়াসে ইটের ভবনে লাল রং ব্যবহৃত হতো। এবার একটু ইতিহাসের গভীরে ডুব দেওয়া যাক, কার্জন হলের রঙ কেন লাল এই রহস্য উদঘাটনের জন্য।

জানা যায় মুঘল সম্রাট আকবরের ফতেহপুর সিক্রির দিওয়ান-ই-খাসের দুর্গের অনুকরণে স্থাপত্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে ব্রিটিশরা লাল বেলেপাথরের পরিবর্তে গাঢ় লাল ইট ব্যবহার করেছিল। কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়, এ স্থাপনার মাধ্যমে ব্রিটিশরা প্রমাণ করতে চেয়েছিল এই উপমহাদেশে তাদের অবস্থান আকবরের মত। কেননা তারা একমাত্র আকবরকেই শ্রেষ্ঠ ও যোগ্য মোগল শাসক হিসেবে গণ্য করত।

এবার চলুন একটু কার্জন হল থেকে ঘুরে আসি। কি কি দেখতে পাবেন এই নয়নাভিরাম স্থাপত্যটিতে?

ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত কারুকার্যময় এ ভবনের অভ্যন্তরে রয়েছে বিশাল একটি কেন্দ্রীয় হল। দ্বিতল ভবনটির সামনে রয়েছে একটি প্রশস্ত সুন্দর বাগান। আর বাগানের মাঝে সবুজের বুক চিরে পশ্চিম থেকে পূর্বে চলে গেছে একটি সরু রাস্তা। সেই সাথে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পার্শ্বে রয়েছে অসংখ্য কক্ষ সমৃদ্ধ সংযোজিত কাঠামো এবং চারপাশ দিয়ে বারান্দা ঘেরা। 

ভবনটির ঠিক পেছনের দিকে রয়েছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মুসা খাঁ মসজিদ। আরো আছে একটি বিশাল পুকুর ও শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের মূল আবাসিক ভবন। কার্জন হলের পাশেই রয়েছে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবর। 

আর কার্জনের উল্টো দিকের রাস্তার অন্য পাশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দোয়েল চত্বর এবং শিশু একাডেমি। এসব বাদেও কার্জন হলের মূল ভবনের সামনে ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জনের উদ্বোধন করা নামফলকটি দেখতে পাবেন।

এবার নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে কে এই লর্ড কার্জন?

লর্ড কার্জন ভারতবর্ষের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তার পুরো নাম জর্জ নাথানিয়েল কার্জন। তিনি ১৮৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ডার্বিশায়ারের কেডেলস্টোন নিবাসী লর্ড স্কার্সডেল এর জ্যেষ্ঠপুত্র ও উত্তরাধিকারী ছিলেন।  আর তিনি পর পর দুবার ভারত সাম্রাজ্যের অধিকর্তা ছিলেন। 

গৌরবের মধ্য দিয়েই তাঁর প্রথম বারের শাসনকালের (১৮৯৯-১৯০৪) সমাপ্তি ঘটে এবং এই সময়টুকু কে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা যায়। কিন্তু দ্বিতীয় বারে শাসনভার গ্রহণের পর মাত্র একবছরের মাথায় তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের মূল কারণ ছিল তাঁর গৃহীত ব্যবস্থাদি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক। এর মধ্যে তাঁর সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল বঙ্গভঙ্গ। 

তিনি অপেক্ষাকৃত অবহেলিত পূর্ব বাংলার ভাগ্য উন্নয়নের নামে প্রদেশটিকে দুভাগে ভাগ করেন যথাক্রমে ক. পশ্চিমবঙ্গ এবং খ. পূর্ববঙ্গ ও আসাম। এ বিভাজনকে জাতীয়তাবাদীরা সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করার অভিসন্ধিরূপে দেখেছেন। পরবর্তীতে এই বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন স্বদেশী ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের রূপ নেয়। 

বলাই বাহুল্য এ স্বদেশী ও বিপ্লবী আন্দোলন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে পদত্যাগ করেন। আর তিনি ১৯২৫ সালের ২০ মার্চে মৃত্যু বরণ করেন।

Lord Curzon
Lord Curzon

লর্ড কার্জনের ঢাকা আগমন


১৯০৪ সালে ট্রেনে চড়ে লর্ড কার্জন এবং লেডি কার্জন এসেছিলেন ফুলবাড়িয়া স্টেশনে। সেসময় ফুলবাড়িয়াতে ঢাকার প্রধান রেল স্টেশন ছিল। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মতামত জানতে চাওয়া। তখন ঢাকা বাংলার রাজধানী নয়, নিতান্তই একটি মফস্বল ছিল। আয়তনের দিক দিয়েও খুব বেশি বড় ছিল না। তখন ঢাকার বিস্তৃতি ছিল বুড়িগঙ্গার পাড় থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত। কয়েক দশকের মধ্যে ঢাকা শহরের পরিধি উত্তর দিকে বাড়তে বাড়তে উত্তরা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

লর্ড কার্জনের আগমন উপলক্ষে সেদিন ঢাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল এবং ফুলবাড়িয়া স্টেশনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তৎকালীন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু হেন্ডারসন লেথ ফ্রেজার নিজ হাতে ফুলের মালা পড়ানোর মাধ্যমে লর্ড কার্জনকে সংবর্ধনা জানান। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রমনায়। সেখানে তিনি ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘কার্জন হল’ নামে একটি টাউন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

লর্ড কার্জনের ঢাকা আগমণ ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যা ঢাকার ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে বার বারই সামনে আসে। সেবারই সর্বপ্রথম পিছিয়ে পড়া পূর্ব বাংলার মানুষেরা কোনো ভাইসরয়ের সাক্ষাৎ পায়। ঢাকায় লর্ড কার্জনের আগমণের পর থেকেই উপমহাদেশে ঢাকার ভাবমূর্তি এক অনন্য উচ্চতায় উঠে আসে। 


এবার মনে হতেই পারে, কেন এই ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল? বা এর পেছনের ইতিহাস টাই বা কি?

প্রথমেই বলে রাখি কার্জন হলের ইতিহাস খোদ শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও পুরোনো। সেই সাতচল্লিশের দেশভাগ থেকে শুরু করে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের নীরব সাক্ষী হয়েছে এই স্থাপনাটি। বলতে গেলে কার্জন হল যেন এক মৌন ভাষাসৈনিক এবং মহান মুক্তিযোদ্ধা।

কার্জন হল মূলত কি কারণে নির্মিত হয়েছিল -এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে রয়েছে বেশ দ্বিমত। মজার ব্যাপার হল এটি নির্মাণ করা হয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে। 

বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা পূর্ব বাংলার রাজধানী হওয়ার কথা ছিল। তখন ঢাকার গুরুত্ব বুঝতে পেরে ব্রিটিশরা ঢাকায় বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন দেন। কারণ সে সময় ঢাকায় তেমন কোনো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি স্থাপনা ছিল না। তার মধ্যে ‘কার্জন হল’ অন্যতম। 

উনিশ শতকের শেষভাগ থেকেই ঢাকা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মুখরিত হয়ে ওঠে। তখন সভা, বিতর্ক, আলোচনা, ও সংবর্ধনাসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষিত শ্রেণী একটি টাউন হল নির্মাণের দাবি তোলেন। এ দাবি কানে যায় খোদ ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তিদের। তারাও আর দেরি না করে পূর্ববঙ্গের মানুষগুলোকে সন্তুষ্ট রাখতে এই মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগায়। 

বাংলাপিডিয়ার মতে, কার্জন হল মূলত নির্মিত হয়েছিল একটি টাউন হল হিসেবে। ইতিহাসবিদ আহমাদ হাসান দানীও বাংলাপিডিয়ার এ মতের প্রতি সমর্থন দেন। তবে আরেক ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দীন আহমদ তার এক প্রবন্ধে বলেছেন, এ ধারণাটি ভুল। তার মতে, এটি নির্মিত হয়েছিল ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। আর এটি নির্মাণের জন্য ভাওয়ালের রাজকুমার দেড় লক্ষ টাকা প্রদান করেছিলেন।

ফেব্রুয়ারি ১৯, ১৯০৪ সাল ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন রমনা এলাকায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এক ভাবী সুদৃশ্য ভবনের। লর্ড কার্জনের নামানুসারে এই ভবনটি পরিচিতি পায় ‘কার্জন হল’ নামে।

বাংলাপিডিয়া থেকে আরও জানা যায়, ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের পর ভবনটি ঢাকা কলেজের একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। তারও পরে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণীকক্ষ ও পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


বঙ্গভঙ্গ ইতিহাস


কার্জন হলের সঙ্গে বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এটি নির্মিতই হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ উপলক্ষ্যে। লর্ড কার্জন ছিলেন বঙ্গভঙ্গের প্রবক্তা। এই বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবনার পেছনে সরকারি ব্যাখ্যা যথেষ্ট যৌক্তিকভাবে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে বাংলা হচ্ছে একটি বিশাল প্রদেশ। 

পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা ছাড়াও বিহার এবং উড়িষ্যা বাংলার অন্তর্গত। তাই কলকাতা কেন্দ্রে বসে গভর্নর জেনারেলের পক্ষে পুরো বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছিল কষ্টসাধ্য। এই কারণে পূর্ব বাংলা ও আসাম অবহেলার শিকার। কার্জন ভেবেছিলেন বাংলা প্রদেশকে দুটো অংশে ভাগ করে শাসন করার মাধ্যমেই বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। 

নতুন এই প্রদেশের নাম হবে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ। যার রাজধানী হবে ঢাকা। আর প্রদেশটির শাসনভার একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে দেওয়া হবে। এই ঘোষণায় পূর্ববঙ্গের মানুষ উৎফুল্ল হয়ে ওঠে।

১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব প্রস্তুত করেন। এরপর তিনি সফরে বের হন, পূর্ববঙ্গে প্রস্তাবের সমর্থনে জনমত তৈরির জন্য। তিনি ঢাকাসহ কয়েকটি জেলা ভ্রমণ করেন। ১৯০৪ সালে তিনি ঢাকায় এসে উন্নয়নের সূচক হিসেবে একটি টাউন হল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯০৫ সালে অর্থাৎ পরের বছর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়। 

তবে শিক্ষিত ও অভিজাত হিন্দুদের বড় একটি অংশ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। তাদের মতে এটি ইংরেজ শাসকদের চালাকি। ব্রিটিশরা আসলে বাংলার হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কে ফাঁটল ধরাতে চায় বঙ্গভঙ্গের মধ্যদিয়ে। যাতে করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে নিজেরা নিশ্চিন্তে শাসন করতে পারে।

এই ধরনের রাজনৈতিক ঝগড়ায় উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছিল তাতেও ছেদ পড়ে যায়। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন একপর্যায়ে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত ১৯১১ সালে ইংরেজ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

অনেক তো ইতিহাস জানা হল। এবার জানা যাক বাংলার বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে কার্জন হলের কি ভূমিকা ছিল?

কার্জন হল পরবর্তীকালে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী ছিল। এখনও ভাষা আন্দোলনের জ্বলজ্বলে স্মৃতি নিয়ে কার্জন হল ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৪৮ সালে যখন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এখানে পুনরায় ঘোষণা দেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তৎক্ষণাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তাঁরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং না না না বলে চিৎকার করে এর বিরোধীতা প্রকাশ করেন।

এরপর ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে এ হলের ভূমিকা অপরিসীম। বলতে পারেন সব আন্দোলন-সংগ্রামের আঁতুড়ঘর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ ‘কার্জন হল’। একইভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও কার্জন হলের নাম স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।


কিভাবে যাবেন কার্জন হল?


প্রথমত আপনি অন্য জেলায় বসবাস করলে ঢাকা শহরে আসতে হবে আপনাকে। রাজধানী ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে কার্জন হল দেখতে আসতে পারবেন। দ্বিতীয়ত ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজস্ব পরিবহন কিংবা যেকোনো লোকাল পরিবহনে করে গুলিস্তান, হাইকোর্ট এলাকা, শাহাবাগ এলাকা বা পুরান ঢাকা এলাকায় এসে, সেখান থেকে রিকশাযোগে খুব সহজেই কার্জন হলে যেতে পারেন। উল্লেখ্য যেকোন সময় কার্জন হল পরিদর্শন করা যায় এবং কোন প্রকার ফি লাগে না।

বিঃদ্রঃ অনেকেই কার্জন হলকে ভুল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আবাসিক হল এর মতো ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল মনে করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে কার্জন হলটি বিজ্ঞান অনুষদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন মাত্র।

বর্তমানে ভবনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজে ব্যবহৃত হলেও এটি ছাত্র-ছাত্রীসহ দেশ-বিদেশের পর্যটকদেরও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রও বটে। ব্রিটিশ স্থাপত্যের স্বাদ নিতে প্রতিদিনই এখানে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে। প্রতিদিন বিকালে হাজারো মানুষের আড্ডা বসে এবং জমায়েত হয় নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের। ঢাকায় এলে একটু সময় করে দেখে নিতে পারেন এই স্থাপনাটি। কেননা এর অসাধারণ নির্মাণশৈলী যেকোনো ভাবুক ব্যক্তিকে দ্বিতীবার তাকাতে বাধ্য করবে।

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents