Dreamy Media BD

দার্জিলিং ভ্রমণ

দার্জিলিং ভ্রমণ
ভ্রমণ যাদের নেশা তাদেরকে কি অজুহাত দিয়ে বেঁধে রাখা যায়? তাঁরা ঠিকই বেরিয়ে পড়ে তাদের মনকে চাঙ্গা করতে আর নিজেকে মুক্ত পাখির মতো মেলে ধরতে। প্রিয়জন যদি সাথে থাকে তাহলে তো কথাই নেই , সুন্দরের সাথে প্রিয়জন, দুয়ে মিলে হয়ে যাবে অবর্ণনীয় উপভোগ্য আমেজ আর দারুন উপহার।আজ চলেছি দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দার্জিলিং ভ্রমণে।

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি শহর ও পৌরসভা হিসেবে দার্জিলিংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। দার্জিলিং হিমালয়ের শিবালিক পর্বত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থানে করছে। দার্জিলিংকে “পাহাড়ের রানী” নামেও ডাকা হয়। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দার্জিলিং। দার্জিলিংয়ের অনাবিল সৌন্দর্য ও জলবায়ুর কারণে ভারতের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।

 

চা প্রিয় বাঙালির প্রিয় পানীয় চা এই দার্জিলিং থেকেই পেতে পারেন।চা শিল্পের জন্য বিখ্যাত শহর দার্জিলিং এটা কে না জানে? তাছাড়া বিশ্বের তৃতীয়তম উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য এই দার্জিলিং থেকে আপনি উপভোগ করতে পারবেন। ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী দার্জিলিং এর হিমালিয়ান রেলের জন্য বিখ্যাত একটি পর্যটন কেন্দ্র এটি। দার্জিলিং হিমালিয়ান রেল দার্জিলিং শহরকে সমতলের সাথে যুক্ত করেছে।

 

পর্যটন স্পট গুলো ছাড়াও দার্জিলিংয়ে রয়েছে ব্রিটিশ শৈলী যুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়। বিদ্যালয় গুলির জনপ্রিয়তা রয়েছে ভারত জুড়ে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের ছাত্রছাত্রীদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে আছে। পাহাড়ের রানী দার্জিলিংকে উপভোগ করতে অবশ্যই একবার হলেও আপনার যাওয়া উচিত। দার্জিলিং এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে আজ আলোচনা করব এবং থাকবে সম্পূর্ণ গাইডলাইন।

দার্জিলিং কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বুড়িমারী বর্ডারের দূরত্ব ৪৫৭ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে দার্জিলিং যদি আপনি বাসে যেতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে ঢাকা থেকে বাসে উঠতে হবে বুড়িমারী বর্ডারের উদ্দেশ্যে। আছে হানিফ পরিবহন,শ্যামলী পরিবহন,এস আর ট্রাভেলস সহ আরো কিছু পরিবহন আছে।

 

ঢাকা-বুড়িমারী ননএসি বাসে ৯০০/১৬০০ টাকা। হানিফ পরিবহনে ভাড়া পড়বে ১০৫০ টাকা।
বাস আপনাকে বুড়িমারী জিরোপয়েন্টে নামিয়ে দেবে।বর্ডারের ওপার চেংড়া বান্ধা বর্ডার থেকে বাংলাদেশি টাকা পরিবর্তন করে ইন্ডিয়ান রুপিতে রূপান্তরিত করতে হবে তারপর অটোতে উঠে চেংড়া বান্ধা বাইপাসে যেতে হবে। অটো ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০ রুপি করে।

 

বাইপাস থেকে আপনি খুব সহজেই লোকাল বাস পেয়ে যাবেন শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য। বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৭০ রুপি করে। শিলিগুড়িতে পৌঁছানোর পর শিলিগুড়ি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে ২৫০/৩০০ রুপি দিয়ে আপনি লোকাল গাড়ি করে দার্জিলিংয়ে যেতে পারবেন

 

দার্জিলিং
দার্জিলিং

১.লেপচা জগত

পাহাড়ের নাম শুনলে মনটা আনচান করে উঠে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই মুসকিল।আর যদি শোনেন পাহাড়ে ঘেরা গ্রাম তাহলে কেমন হবে বলুন তো? দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত ঘুম স্টেশন থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে শান্ত, স্নিগ্ধ ও পরিচ্ছন্ন একটি গ্রামের নাম লেপচা জগত। লেপচাদের জগত এই লেপচা জগৎ। লেপচা একটি উপজাতির নাম আর জগৎ মানে হচ্ছে বিশ্ব। এক কথায় বলতে গেলে, লেপচা জগত মানে লেপচাদের বিশ্ব।

 

আগে সবাই এটাকে লেপচা বস্তি নামে চিনতো। কালের পরিক্রমায়, অপরূপ সৌন্দর্য এবং পার্শ্ববর্তী ভ্রমণ স্পট গুলোর জন্য লেপচা হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের কাছে আধুনিক লেপচা ভ্রমন স্পট। লেকচারা প্রধানত সিকিমের বাসিন্দা। কিন্তু বর্তমানে এরা ছড়িয়ে পড়েছে ভুটান, নেপাল, তিব্বত ও দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের গায়ে বসবাস শুরু করছে।

 

৬,৯৫৬ ফিট উচ্চতায় এই লেপচা জগতের অবস্থান।লেপচা জগতের এই লেপচা পল্লীতে আছে গোটা দশেক বাড়ি যা প্রত্যেকটা এক একটি হোম স্টে। সর্বসাকুল্যে দু একটি দোকান আছে। এখানে গেলে পাওয়া যাবে মোমো, দার্জিলিং এর ফ্রেস চা,কফি,ম্যাগী ও পানীয়। এখানের মানুষেরা  গোমাংস দিয়ে ভাত খেতে অনেক পছন্দ করে। এখানকার মানুষের আচার-আচরণ সংস্কৃতি খুবই নরম, ভদ্র প্রকৃতির। আতিথেয়তায় তাদের কোন জুড়ি নেই।

 

ট্রেকিং না করে এত পরিষ্কার কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জায়গা পাওয়ার সত্যিই দুষ্কর। গ্রামের চারিদিক মুড়ে রেখেছে পাইন গাছের বন বনানী। আবহাওয়া শীতল হওয়ার কারণে প্রায় সারা বছর কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকে এই গ্রাম। লেপচা জগতের গ্রাম থেকে দেখা যায় দার্জিলিং শহরকে।যা রূপের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দূর থেকে দেখলে সেটাই মনে হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এর বড় বাংলোটি লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গল লাগোয়া পাইন বনের মধ্যে অবস্থিত। বাংলোটি নির্মাণ করা হয়েছে শুধু দর্শনার্থীদের জন্য।আগে থেকেই রুম বুকিং করে রাখতে হয় এখানে।পাহাড়ী নাম না জানা ফুলের সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো বাংলোটি।

 

বছরের যে কোন সময় লেপচা জগতে আসা যাবে তবে বর্ষাকালটা এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো। রডোডেন ডন আর ওক গাছে ঘেরা লেপচার চারিপাশ। লেপচা জগতে যাওয়ার পথে জামুনিও যেতে পারেন। দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট একটি জনপদ জামুনি। এটা একটা সাজানো গোছানো পার্ক যেখানে আছে শিবের একটা বিরাট আকারের বড় মূর্তি।

 

একদিকে রয়েছে কৃত্রিম লেক আর অপরদিকে বয়ে চলেছে কুলকুল করে রঙ্গিত নদী। রঙ্গিত নদীর ওপরে রয়েছে জামুনি ব্রিজ যেখান থেকে দেখতে পাবেন আশেপাশের পুরো জনপথটি। জামুনি ব্রিজকে আবার “হ্যাপি নিউ ইয়ার” ব্রিজ নামেও ডাকা হয়। কারণ এই ব্রিজকে পহেলা জানুয়ারি ২০০৬ উদ্বোধন করা হয়েছিল।এই পার্কটি প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা করে জনপ্রতি।

 

টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন সারিবদ্ধভাবে সাজানো গোছানো কটেজ। কটেজ দেখলে যে কারো মন মুগ্ধ হয়ে ওঠে? রয়েছে ব্রীজ সংলগ্ন একটা পার্ক ও বিশাল মূর্তি যা এখানের মূল আকর্ষণ। হিন্দি ছবি বারফি দৃশ্যয়ান করা হয়েছিলো এখানে, যা এখানের জনগণ গর্বের সাথে আজও বলে।একপাশে ছোট রঙিত নদী, চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা, মাঝখানে শ্বেত শুভ্র বিশাল শিবমূর্তি নীল আকাশ তার গায়ে রোদের আলো এ যেন কল্পনাকে হার মানায়। রূপকথার গল্পের মতো সাজানো দার্জিলিং এই লেপচা জগত দেখতে ভুল করে না দর্শনার্থীরা‌

 

ভারতবর্ষ ভ্রমণে এলে দার্জিলিং এর লেপচা জগত ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইলো। মনে মনে খোঁজা আপনার পছন্দের জায়গাটি হতে পারে লেপচা জগত।

 

লেপচা জগত কিভাবে যাবেন :

শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ি থেকে লেপচা জগতের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। আর দার্জিলিং থেকে লেপচা জগতের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। প্রথমে শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ি আসতে হবে। তারপর এখান থেকে গাড়ি রিচার্জ করে বা শেয়ার গাড়িতে চলে আসতে হবে লেপচা জগত। শেয়ার গাড়িতে করে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে প্রথমে আসতে হবে ঘুম স্টেশনে। শেয়ার গাড়িতে ভাড়া পড়বে ৩০০/৪০০ টাকা।ঘুম থেকে লেপচা জগত খুবই কাছাকাছি। মাত্র সাড়ে সাত কিলোমিটার। শেয়ার গাড়িতে ভাড়া পড়বে ৫০/৬০ টাকা।

 

আর যদি সরাসরি নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে লেপচা জগত যেতে চান তাহলে ছোট গাড়ির ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা আর বড় গাড়ির ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ হাজার টাকা।
দার্জিলিং থেকে লেপচা জগত যেতে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট ।

২.টাইগার হিলস

ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি ছুটি পেলেই ছুটে যেতে চায় প্রকৃতির কোলে। শুধু নিজের দেশেই নয়, ঘুরে বেড়ানোর জন্য অন্যান্য দেশে যেতেও তারা পিছপা হয় না।

 

আপনি যদি দার্জিলিং ভ্রমণ করতে এসে টাইগার হিল দর্শন না করে থাকেন তাহলে আপনার এতো দূরের জার্নি বৃথা। টাইগার হিল বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিং জেলার সবুজ মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। ২,৫৯০ মিটার উচ্চতার টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও মাউন্ট এভারেস্ট পর্বত পরিলক্ষন করা যায়।

 

পাহাড়ের চূড়ার উঁচু পথে যখন আপনি রয়েল হিল দর্শনে যাবেন তখন মনে হবে এই পথ আরেকটু দূর হলেই বোধহয় আরও ভালো হতো। চলার পথে আপনাকে সঙ্গ দেবে আশেপাশের অসংখ্য সব উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়ের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য আপনাকে রোমাঞ্চিত একটি অনুভূতি উপহার দিবে। কখনো চারপাশ ঢেকে দিবে মেঘের ঘনঘটা। হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যাবে এই মেঘ। কখনো বা পাহাড়ের ঢালের সরু পথ থেকে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশের গভীর খাদ দেখে যে কারোরই পিলে চমকে যাবে। এ যেন এক লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার মাঝে রোমাঞ্চকতায় ভরপুর অভিজ্ঞতা।

 

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ পেয়ে দর্শনার্থীরা দার্জিলিং এর টাইগার হিলে পৌঁছাতে হবে। মূলত টাইগার হিলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হল সকালের সূর্যোদয় নিজ চোখে দেখে উপভোগ করা। সূর্যোদয় দেখতে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো দর্শনার্থীরা। শুধুমাত্র ভারতবর্ষ থেকেই নয় ভারতের পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের নাগরিক ও রয়েল হিল দর্শন করতে আসে। দর্শনার্থীদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, মল সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকানের পসরা সেখানে দেখা যায়।

 

দর্শনার্থীরা দার্জিলিং এর রয়েল হিলের স্মৃতি ধরে রাখতে দোকান থেকে কিছুনা কিছু কিনে নিয়ে যায় তাদের প্রিয়জনদের জন্য। সূর্য উদিত হওয়ার সময় সূর্যের আলোক রেখায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর গুলো চকচকে আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। সূর্যের লাল আভায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরে লেগে ছবির মত দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে।

 

দেখে মনে হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন আলাদা একটি রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। ভোর হতে না হতেই সবাই টাইগার হিলের উচ্চতায় দাঁড়িয়ে মাউন্ট এভারেস্টের দিকে শুধুমাত্র সূর্যোদয়ের সেই অপলক দৃশ্য দেখার জন্য তীর্থের কাকের মতো অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকে।

 

শীতের কুয়াশা  ঢাকাই হোক, বর্ষার স্যাতসেতে আবহাওয়াই হোক আর গ্রীষ্মকালের রোদ ঝলমলে চকচকে দিনেই হোক দার্জিলিং এর থেকে রূপসী পাহাড়ী শহর আর আছে কিনা আমার জানা নেই। উঁচু নীচু পাহাড়ে ঘেরা দার্জিলিং এর এই রয়েল হিল অন্যরকম একটা সৌন্দর্য। দার্জিলিং ভ্রমণ এলে দর্শনার্থীরা রয়েল হিলে ঘুরতে ভুল করেন না। ভারতবর্ষ ছাড়াও বহু বিদেশি পর্যটকেরা প্রতিদিন ভিড় করে এই স্থানটিতে।

 

যখন সেই শুভক্ষণ চলে আসবে তখনই আপনি বুঝতে পারবেন দার্জিলিং ভ্রমণে আপনার রয়েল হিল দর্শনের ভূমিকা কতটা রোমাঞ্চকর। পাহাড়ের মধ্যে থেকে উঁকি দেওয়া সূর্যের হাসি আপনার হৃদয়কে অদম্য ভালো লাগায় ভরিয়ে দেবে।পাহাড়,পর্বত, সূর্যোদয় দেখতে কার না ভালো লাগে বলেন? তাইতো রয়েল হিলে সব সময় লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। পরিবেশের সঙ্গে মিতালি করতে দার্জিলিংয়ে এলে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন রয়েল হিল দর্শনের উদ্দেশ্যে।

 

টাইগার হিলস কিভাবে যাবেন :

দার্জিলিং জেলার শহর থেকে রয়েল হিল এর দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। দার্জিলিং থেকে যে কোন গাড়িতে করেই আপনি খুব সহজে রয়েল হিলে যেতে পারবেন ।
দার্জিলিং

 

৩.বাতাসিয়া লুপ

ভারতবর্ষের সুন্দরতম জেলা গুলোর মধ্যে দার্জিলিং অন্যতম। দার্জিলিং এর সব থেকে মনোরম ট্রেন রুট হচ্ছে বাতাসিয়া লুপ। বাতাসিয়া লুপকে মেঘের রাজ্যও বলা হয়। “বাতাসিয়া” শব্দের অর্থ বাতাস যুক্ত স্থান। আর ইংরেজিতে “লুপ” শব্দের অর্থ বৃত্তাকার বা বক্রাকার কোনো অঞ্চল । পাহাড়ে চড়ার পথে টয় ট্রেনের যাত্রাকে সাবলীল করার জন্য ১৯১৯ সালে বাতাসিয়া লুপ গড়ে তোলা হয়। পর্যটকদের খুব পছন্দের একটি স্থান বাতাসিয়া লুপ।

 

টয় ট্রেনের জানালার পাশে বসে বাতাসিয়া লুপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যে কারোর মন উদ্বিগ্ন হয়ে যাবে। ব্রিটিশ নির্মাণাধীন দার্জিলিংয়ের এই টয়ট্রেন যাত্রা প্রত্যেকটা দর্শনার্থীর এক রোমাঞ্চকর ভ্রমনে আমেজ দেয়। ঝিক ঝিক শব্দে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে একে বেঁকে উঠে যাওয়া টয় ট্রেন যাত্রা আর চারিপাশের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে উপভোগ করা কত যে মনমুগ্ধকর তা বাতাসিয়া লুপে না আসলে আপনি বুঝতে পারবেন না।

 

সাদা মেঘের মধ্যে দিয়ে, কখনো ঘন বন-জঙল কখনো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চা বাগান যাওয়া টয় ট্রেন থেকে দার্জিলিংয়ের গোলাকার ভিউটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হবে। কখনো মনে হবে মেঘের ভেলায় আপনি ভাসছেন আবার কখনো মনে হবে রাজকীয় ভঙ্গিতে দুলকি চালে সপ্নের রাজ্যে পরিদর্শন করছেন। এই অনুভুতির কথা বলে শেষ করা যাবে না।

 

বাতাসিয়া লুপের মধ্যবর্তী স্থানে আছে একটি যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ স্বগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই স্মৃতিস্তম্ভটি। এই স্মৃতিসৌধ জেলা সৈনিক বোর্ড অফ দার্জিলিং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছিল। যারা স্বাধীনতার পর থেকে জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল নির্দ্বিধায় তাদের শরণার্থের এই স্মৃতিসৌধ নির্মিত।

 

বাতাসিয়া লুপে রয়েছে একটি ইকো গার্ডেন মাউন্ট , কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো তুষারে ঢাকা হিমালয়ের চূড়া গুলির অভাবনীয় সৌন্দর্য দেখার জন্য লোকজনের আনাগোনা এখানে লেগেই থাকে। আপনি যদি বাগানের একপাশে দাঁড়িয়ে টয় ট্রেনকে হুইসেল বাজাতে বাজাতে যেতে দেখেন তাহলে এটি হতে পারে আপনার জীবনের একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। বাতাসিয়া লুপের পরিবেশটা অনেক সুন্দর ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া অবিরাম বয়ে চলে মনকে শীতল করে দেয়।

 

রাস্তার পাশে দেখতে পারবেন বড় বড় করে লেখা আই লাভ দার্জিলিং। এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন রাস্তার দুপাশের গাছ গুলো খুবই পরিপাটি ভাবে সাজানো রয়েছে। কিছু বিলুপ্ত গাছ সেখানে বিদ্যমান। এখানে আপনি দূরবীনের সাহায্যে দূরের পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি এখানে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ি পোশাক পরে ফটোশুট করতে পারেন।

 

অথবা আপনি স্মৃতি রাখার জন্য পাহাড়ি পোশাক কিনেও নিয়ে যেতে পারেন আপনার পরিবার পরিজন এবং আপনার প্রিয়জনের জন্য। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সময় কেটে যাবে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন না।আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে একজন হন তাহলে অবশ্যই বাতাসিয়া লুপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে একবার হলেও এখানে ঘুরে যাবেন।

 

বাতাসিয়া লুপ কিভাবে যাবেন:

দার্জিলিং শহর হতে বাতাসিয়া লুপের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। দার্জিলিং পৌঁছে সেখান থেকে ট্যাক্সিতে করে খুব সহজে আপনি বাতাসিয়া লুপে পৌঁছাতে পারবেন।

 

৪.রক গার্ডেন

দার্জিলিংয়ে আসবেন অথচ রক গার্ডেন ঘুরবেন না সেটি কি কখনো হয়? দার্জিলিংয়ের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থানের নাম রক গার্ডেন। এখানে এলে আপনি এক মুহূর্তের জন্যও হতাশ হবেন না। রক গার্ডেনে বসে কখন যে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় চলে যাবে সেটা নিজেও বুঝবেন না। তবে সেখানে যাওয়ার আগে রাস্তার পাশে গভীর পাহাড়ে অপরূপ সৌন্দর্য যে কারোরই মন কেড়ে নেবে।

 

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা দুর্গম পথ পাড়ি দিতে যেমন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাভ করবেন তেমনি ভয়ংকর একটি অনুভূতি অনুভব করবেন। পাহাড়ের গা ঘেঁষে সবুজের সমারোহ দেখে মনে হবে যেন আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এই রোদ, এই বৃষ্টির খেলায় চারিদিকের পরিবেশটা অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। কৃত্রিমভাবে পাথর কেটে কেটে  সাজানো হয়েছে গার্ডেনটি।

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কৃত্রিমতার ছোঁয়া  দুয়ে মিলে রগ গার্ডেন।রক গার্ডেন মানেই যে সেখানে শুধু বড় বড় বিশাল আকৃতির পাথর আছে সেটি ভাবলে কিন্তু আপনার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। সেখানের মূল আকর্ষণ হলো বিশাল লম্বা  বড় ঝর্ণা। ঝরনার ঝর ঝর পানির শব্দ অনেক দূর অব্দি শোনা যায়। পাহাড়ের গা বেয়ে এমন মনোমুগ্ধকর ঝর্না দেখতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে হাজারো দর্শনার্থীরা।

 

সেখানে আছে একটি গোল চত্বর। সেখান থেকে বহুদূর দূরান্ত পর্যন্ত দেখা যায়। পাহাড়-পর্বত সাদা সাদা মেঘ উড়ে যেতে দেখে মন পুলকিত হয় সেখানে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীদের। রক গার্ডেনের বয়ে চলা ঝরনার পানির উৎস কোথা থেকে শুরু হয়েছে তা দেখতে আপনাকে অবশ্যই পাহাড়ের উপরে উঠতে হবে।

 

হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের বসার জন্য পাহাড়ে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অনেক গুলো বিশ্রামের জন্য বেঞ্চ। ঝর্ণার সেই উপর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য পাহাড় কেটে রাস্তার ব্যবস্থা করেছে। দর্শনার্থীদের সেখানে উঠে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ও কৃত্রিমভাবে সাজানো দুয়ে মিলে এই রক গার্ডেন।

 

 পর্যটকেরা চারিদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাধ নিতে দার্জিলিংয়ে এলে রক গার্ডেন পরিদর্শনে একবার হলেও আসে। মিষ্টি মিষ্টি ঠান্ডা হাওয়ায় মনের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়ে যাবে। সেখানে গেলে আপনি পাহাড়ি পোশাক পরে ফটোশুট করতে পারেন বিভিন্ন ভঙ্গিমায়।নেপালী ড্রেস পরে রাজাদের মতো বিভিন্ন কায়দায় ছবি তুলে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন।

 

রক গার্ডেনে ঝর্নার পানি বিভিন্ন স্থানে থাকার কারণে অনেকগুলো সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ের গা বেয়ে বিভিন্ন রং এর মৌসুমী ফুল আর তার ওপরে উড়তে থাকা প্রজাপতির দল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই আকর্ষণীয়।আপনি যদি প্রকৃতির সাথে মিতালী করতে চান তাহলে আপনার জন্য হতে পারে রক গার্ডেন আদর্শ স্থান। বন্ধু কিংবা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে আসতে পারেন।

রক গার্ডেন কিভাবে যাবেন:

দার্জিলিং থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতিক পরিবেশে রক গার্ডেন অবস্থিত। দার্জিলিং থেকে যেকোনো গাড়িতে করে কম সময়ে আপনি খুব সহজেই রক গার্ডেনে যেতে পারবেন।
প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ রুপি।

৫.মহাকাল মন্দির

উঁচু পাহাড়, সাদা সাদা মেঘের দল, আর ঠান্ডা কুয়াশা মাখা সবুজ গাছগুলো দেখতে ভালো লাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই যাবে না। কেমন হয় যদি একই স্থানে আমরা এই তিনটির সঙ্গ একসাথে পাই? আপনারা নিশ্চয়ই এর মধ্যে বুঝে গেছেন আমি কোন স্থানের কথা বলছি? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন আমি দার্জিলিং এর মহাকাল মন্দিরের কথাই বলছি। মহাকাল মন্দিরটি এমন এক জায়গায় অবস্থিত যেখান থেকে অনায়াসে আশেপাশের সব ছোট বড় নৈসর্গিক পাহাড় গুলো দেখতে পারবেন। দেখে মনে হবে পাহাড়গুলো হাতছানি দিয়ে যেনো কাছে ডাকছে।

 

এছাড়াও যতদূর দেখা যায় শুধু দেখতে পাবেন সাদা সাদা মেঘের দল, আর কুয়াশা মাখা প্রকৃতি যেনো আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছে বারংবার। ভ্রমণ প্রেমিক বাঙ্গালীদের পছন্দ অনুযায়ী সবকিছুই যেন ডালি সাজিয়ে নিয়ে বসে আছে দার্জিলিং। শুধুমাত্র প্রকৃতির সভায় নয় দার্জিলিংয়ের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পৌরাণিক ইতিহাসের গন্ধও! এখানকার প্রত্যেকটি পাহাড় স্বগর্বে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মনের মতো করে।

 

হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য দার্জিলিং এর বুকে নির্মিত হয়েছে মহাকাল মন্দির। দার্জিলিং এর চৌরাস্তা থেকে মিনিট কয়েক পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায় এই পবিত্র মন্দির প্রাঙ্গণে। মন্দিরটিতে ভগবান শিবের মূর্তি  থাকাই সনাতন ধর্মের অনুসারীদের কাছে এটি একটি খুবই পবিত্র স্থান। পাহাড়ের ওপর মন্দির হওয়ায় আলাদা রকম একটি সৌন্দর্য বিরাজ করে মন্দিরটিতে। এই মন্দিরে শিবের পাশাপাশি রয়েছে একটি বৌদ্ধ মুর্তির প্রতিমা। আজও এই চত্বরকে সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করে স্থানীয়রা।

 

মন্দিরটির প্রবেশদ্বারে রয়েছে একটি ঘন্টা। পুরো মন্দিরটি স্থাপন করা হয়েছে হিন্দু স্থাপত্য রীতি অনুসারে। পুরো মন্দির কমপ্লেক্সটি সাজানো হয়েছে পাহাড়ি নানারকম সবুজ সবুজ গাছ দ্বারা। খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় মন্দিরটি অবস্থিত বিধায় উঠতে উঠতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও মন কিন্তু শান্ত থাকে, কারণ এখানকার চারপাশের পরিবেশ এতটাই মনমুগ্ধকর আপনাকে এক মুহূর্তের জন্যেও কষ্টের লেশ মাত্র মনে করতে দেবে না।

 

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে খানিক চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন ক্লান্ত দর্শনার্থীদের জন্য একটি বসার স্থান। সেখান বসে ঠান্ডা মৃদু হাওয়ায় একটু জিরিয়ে নিতে পারেন কিছুক্ষণ। মন্দিরটি মহাকাল মন্দির হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে যে শুধুমাত্র ভগবান শিবের মূর্তি রয়েছে তা কিন্তু নয়। মন্দিরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট ছোট কালি, গণেশ, পার্বতী, রাম, বিষ্ণু, দুর্গা ও হনুমান মূর্তি ছাড়াও আরো অনেক দেব দেবীদের মূর্তি স্থাপন করা আছে।

 

যেহেতু হিন্দু ধর্মের মন্দিরে শিব ছাড়াও বুদ্ধ মূর্তির প্রতিমা সেখানে আছে তাই প্রতিনিয়ত ভক্তরা আরাধনা করে তুষ্ট করেন তাদের নিজ দেব দেবীকে। আরাধনার প্রতিক হিসাবে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে ঘন্টা ও নীল, সাদা, হলুদ, সবুজ সব প্রেয়ার ফ্ল্যাগ দ্বারা। একই অঞ্চলে যেভাবে হিন্দু আর বৌদ্ধ ধর্মের লোকজন মিলে মিশে বাস করে সেইভাবেই একই মন্দিরে হিন্দুদের শিবলিঙ্গের পাশাপাশি বৌদ্ধদের বৌদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে দুটি পৃথক ধর্মের প্রতি মর্যাদাবোধ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

 

ধর্মের প্রতি এমন শ্রদ্ধাশীল মনোভাবের কারণে পরিবেশটা আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে সবার মাঝে। কেউ কেউ বলে এই জায়গাটি অনেক বছর আগে সিকিমের রাজাদের আয়ত্তে থাকার সময় বৌদ্ধদের আশ্রম ছিল‌। আবার কারো কারোর ধারনা এই জায়গা থেকে দার্জিলিংয়ের জনপথ সৃষ্টি হয়েছে এবং এখন এটা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের সন্যাসীরা এই স্থানের নামকরণ করেন “দোর্জে” ও “লিং” এই দুই শব্দের অর্থ এসে দাঁড়ায় বজ্রের দেশ।

 

মন্দিরটি গোলাকার হওয়ার চমৎকার দেখা যায়। আরো সুন্দর লাগে যখন হিন্দুদের শিবলিঙ্গ ব্রাহ্মণ পুরোহিত এবং বৌদ্ধের বৌদ্ধমূর্তি সন্যাসী দুইজনেই এক সাথে নিজ নিজ ধর্মের আরাধ্য দেবতার সন্তুষ্টি লাভের আশায় পূজা অর্চনা করেন। এখানে হিন্দুদের সরস্বতী পূজা, শিবরাত্রি, গনেশ পূজা, বসন্ত পঞ্চমী, দুর্গা পূজা ইত্যাদি এবং বৌদ্ধদের মাঘী পূর্ণিমা, বুদ্ধ জয়ন্তী, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, মধু পূর্ণিমা ইত্যাদি ছাড়াও সব রকম ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মহাকাল মন্দিরে খুব ধুমধাম করে উদযাপিত হয়।

 

যেদিন হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয় সেদিন শুধুমাত্র হিন্দুরাই নয় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিরাও সমান ভাবে অনুষ্ঠানে যোগদান করে। একই ভাবে বৌদ্ধ ধর্মের কোন অনুষ্ঠান হলেও হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা তাদের অনুষ্ঠানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দের সাথে মিলেমিশে উদযাপন করে। পৃথক পৃথক ধর্মের এমন ভালোবাসা দেখতে কার না ভালো লাগে? তাই তো হিন্দু হোক বা বৌদ্ধ দার্জিলিং এ আসলেই মহাকাল মন্দির দর্শনে ছুটে আসে হাজারো জন মানব।

 

মন্দিরটি বর্ষাকালে যেন এক নতুন রূপে রূপান্তরিত হয়। বৃষ্টির ঘন ঘটায় মন্দিরটির বেশ পাল্টে যায়। বর্ষার সময় মন্দিরটি মেঘেদের রাজ্যে পরিণত হয়ে যায়। মেঘ, বিদ্যুতের ঝলকানি ও বৃষ্টির সমাহার পরিবেশকে আরো শান্ত ও নিস্তব্ধতায় ভরিয়ে দেয়। দার্জিলিং এর সঙ্গে যেন মেঘেদের মিতালী অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে সবসময়। তাই তো প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা ভীড় জমায় প্রকৃতির সাথে এই সখ্যতা দেখতে। দার্জিলিংয়ের বুকে মহাকাল মন্দিরের অবস্থান চিরস্থায়ী।

 

মহাকাল মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি খাবার রেস্তোরাঁ যেখান থেকে আপনি মানসম্মত খাবার খেতে পারবেন আপনার সাধের মধ্যেই। এছাড়াও রয়েছে আরো কিছু দোকান যেখান থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবেন। দার্জিলিং এর বুকে জীবন্ত ইতিহাসে মোড়া এই মন্দিরটিতে যারা আগে এসেছে তারা বিলক্ষণ চেনে এই মন্দিরটিকে।  মহাকাল মন্দিরটি বাস্তবেই এমন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যতাবদ্ধ। আমরা বাস্তব জীবনে এমন মন্দির খুব কমই দেখে থাকি।

 

মহাকাল মন্দির এমন অভূতপূর্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রথার এক সৌধ। আপনি যদি সনাতন ধর্মের অনুসারী কিংবা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে হন একজন তাহলে আপনার জন্য জায়গাটি একদম আদর্শ স্থান হবে বলে আশা করি। পরিবার পরিজনকে একবার হলেও দার্জিলিং এর মহাকাল মন্দির পরিদর্শনে যাবেন। আপনার জার্নি বিফলে যাবে না একটু সময় নিয়ে যাবেন মন্দির দর্শনের উদ্দেশ্যে।

মহাকাল মন্দির কিভাবে যাবেন :

দার্জিলিং এর মেলের পাশেই এর অবস্থান। মহাকাল মন্দিরে আসতে হলে প্রথমেই আপনাকে দার্জিলিং শহর থেকে ট্যাক্সিতে করে দার্জিলিং মল থেকে নিউ মহাকাল মলের রাস্তা দিয়ে কয়েক মিনিট পায়ে হাঁটলেই পেয়ে যাবেন আপনার গন্তব্যস্থান।
মিরিক লেক
মিরিক লেক

৬.মিরিক লেক

যান্ত্রিকতার জীবনে মনে মাঝে মাঝে সুপ্ত বাসনা জাগে কোথাও একটু ঘুরে আসি। দার্জিলিং এমন একটা জায়গা যেখানে বড় পাহাড়, ঝিল, লেক সব আছে। যার জন্য ভ্রমণ প্রেমী বাঙালিরা দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে পরিবার, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনকে নিয়ে। বড় বড় পাহাড়, স্বচ্ছ ঝিল আমরা কে না পছন্দ করি! তাহলে কেমন হয় যদি চারিদিকে সবুজ সবুজ পাহাড় আর মাঝখানে স্বচ্ছ ঝিল হয়?

 

ঝিলের পাশে বসে একা একা কিংবা জীবন সাথীকে নিয়ে ঠান্ডা শীতলতার পরশ গায়ে মাখিয়ে শিহরিত মনের মনিকোঠায় গেঁথে রাখার মত প্রত্যেক ভ্রমণ প্রেমীদের নিজস্ব ব্যাপার। কিংবা মন চাইলেই লেকের বুক থেকে ঘুরে আসতে পারেন বোটিং করতে করতে। মনের সকল আকাঙ্ক্ষা একসাথে পাওয়া যায় বিধায় মিরিক দর্শনার্থীদের কাছে স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।

 

মিরিকের প্রধান আকর্ষন হলো সুমেন্দু হ্রদ। হ্রদের এক পাশে রয়েছে ঘন বাগান অন্য দিকে সারি সারি পাইন গাছের বাহার। লেকের দুই পারকে যুক্ত করেছে একটি দৃষ্টিনন্দন রামধনু সেতু। এখানে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার  সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ঘোড়ায় চড়ে ও পুরো মিরিক লেকের পাড়ে ঘুরতে পারবেন। লেকের পশ্চিম দিকে আছে সিংহ দেবের মন্দির। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করে।

 

মুক্ত বাতাসের শ্বাস নিতে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা এখানের প্রকৃতির মায়া ভরা শোভায় হারিয়ে যায় মনের অজান্তে। মিরিকের আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে আই লাভ মিরিক লেখা একটি স্থান যেখানে দর্শনার্থীরা ফটোশুট করে। বড় পাহাড়, স্বচ্ছ জলের লেক এবং বনবিলাশ এই তিনটির সঙ্গমে আপনার মনকে আনন্দে ভাসিয়ে দিতে যথেষ্ট।

 

মিরিক লেকের আঁকাবাঁকা পাড় বেয়ে হাঁটতে ভালো লাগবে না এমন লোক খুব কম। পাড়ের ধার দিয়ে হাঁটার সময় ওই গানটার কথা মনে আসবে “আজকে আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা”। এখানে এলে মনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। আমাদের সকলের উচিত হাজারো ব্যস্তার মাঝে নিজেকে একটু সময় দিতে। আপনারা নিজ চোখে না দেখলে মিরিক লেকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য কতটা সেটা নিজেও বুঝতে পারবেন না।

 

তাহলে আমার ভ্রমণ প্রেমী বন্ধু দেরি কিসের আজ বেরিয়ে পড়ুন মিরিক লেক দেখার উদ্দেশ্যে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কিংবা নিজেই নিজেকে একটু আলাদা সময় দিতে একবার হলেও পাহাড়ি রাণী দার্জিলিংয়ের মিরিক লেকে ঘুরতে যাওয়া আবশ্যক।

মিরিক লেক কিভাবে যাবেন:

দার্জিলিং থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরে মিরিক লেক অবস্থিত।এবং শিলিগুড়ি থেকে উত্তর পশ্চিমে ৫২ কিলোমিটার দূরে এই মিরিক লেক অবস্থিত। শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি বুকিং করে কিংবা শেয়ার গাড়িতে করে আপনি সরাসরি মিরিক লেকে পৌঁছাতে পারবেন।

 

শিলিগুড়ি জংশন থেকে আপনি গাড়ি পেয়ে যাবেন মিরিক লেকে যাওয়ার জন্য। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টা। তবে বাজি ধরে বলতে পারি এই এক থেকে দেড় ঘন্টা যাত্রা পথে আপনাকে একটুও বোরিং করবে না।

 

সমতল থেকে যখন আস্তে আস্তে গাড়ি উপরের দিকে যাবে তখন এক এক করে নদী, ব্রিজ ও পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে আপনার গন্তব্যের কাছে পৌঁছে দেবে। এন্ট্রি ফী জনপ্রতি ২০ টাকা করে।

৭.পিস প্যাগোডা ও জাপানিজ স্টেম্পল

দার্জিলিংয়ে একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থানটি পিস প্যাগোডা। দার্জিলিংয়ে আসলে এমন কেউ নেই যে এই পিস প্যাগোডা দেখতে আসে না। পিস প্যাগোডা মূলত অন্যান্য  প্যারাগোডার মত নির্মিত হয়েছে। পিস প্যাগোডা ও জাপানি স্টেম্পল মূলত বৌদ্ধ ধর্মালম্বিদের একত্রিত করতে এটি নিচিডাতসু ফুজি যিনি জাপানের বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং নিপ্পনজান-মাইহিজি বৌদ্ধ আদেশের প্রতিষ্ঠাতা এর নেতৃত্বে নির্মিত করা হয়েছে।

 

পিস প্যাগোডা ও জাপানি স্টেম্পল দেখতে খুব সুন্দর।ভারতের দার্জিলিংয়ে রয়েছে জাপানি আদলে নির্মিত স্টেম্পল। দার্জিলিং এর সবচেয়ে উঁচু ইমারত গুলোর মধ্যে পিস প্যাগোডা একটি। জাপানি স্টেম্পল ভেতর প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন প্রথমে একটি বৌদ্ধ মুর্তি ও আরো তিনটা বৌদ্ধ মূর্তি।

 

দ্বিতীয় তলায় রয়েছে অনেকগুলো বুদ্ধমূর্তির প্রতিমা। সাজানো গোছানো পরিবেশ। দেখলে যে কারোরই মন কেড়ে নেবে। এই প্রতিমা দেখতে ভিড় জমায় ধর্মীয় অনুসারীরা প্রতিনিয়ত। এখানে এসে ধর্মীয় অনুসারীরা হাতজোড় করে করজোড়ে তাদের মনের আশাগুলো প্রকাশ করে। এই প্যাগোডার টপ  থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ এবং চারপাশের পাহাড়ের দৃশ্য দারুণভাবে উপভোগ করা যায়।

 

জাপানি স্টেম্পল এর থেকে কিছুদূর এগিয়েই পিস প্যাগোডা। পিস প্যাগোডা পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। অনেক গুলো সিঁড়ি পেরিয়ে সেখানে দর্শন করতে যেতে হয়। সিঁড়িগুলোতে উঠতে উঠতে আশেপাশের বিভিন্ন পাহাড়ের দৃশ্য আপনার চোখে পড়বে। প্রভুর সৃষ্টি এতটা সুন্দর যা নিজের চোখকেও বিশ্বাস করার জন্য দার্জিলিং এর এই স্থানটিতে আসুন।

 

পাহাড়ের উপর থেকে উড়ে যাওয়া মেঘ এবং ঝাকে ঝাকে যাওয়া উড়এ চলা নাম না জানা পাখি গুলো আপনাকে এক লহমায় পৌঁছে দেবে অন্য জগতে। এ যেন এক স্বপ্নপুরী। প্রায় সকলেই পছন্দ করে এই স্থানটিকে। অনেকে পিস প্যাগোডাকে বৌদ্ধদের তীর্থস্থান মনে করলেও এটি মূলত বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার সন্ধানে সকল জাতি ও ধর্মীয় লোকদের একত্রিত করতে ডিজাইন করা হয়েছে।

 

বিশ্বে যতগুলো উঁচু পর্বত শ্রেণীতে প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে তার মধ্যে পিস প্যাগোডা অন্যতম। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে “বিশ্ব শান্তি”। পিস প্যাগোডার সামনে দুইটি রাজ সিংহমূর্তির ভাস্কর্য বিদ্যমান। জুতা খুলে এখানে প্রবেশ করতে হয়। সকল ধর্মের মানুষেরা এখানে আসে এর অপরুপ শোভা দেখতে। বিশেষ করে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান।

 

প্যাগোডার দেওয়াল গুলো পাথর খোদাই করে কারুকাজ খচিত করা যা দেখতে খুবই সুন্দর। এছাড়াও চারটি ধর্মীয় মূর্তি রয়েছে। ধর্মীয় মানুষরা সেখানে এসে সম্মানের সহিত প্রণাম জানাই। আপনি যদি হাঁটতে হাঁটতে যান তাহলে বেশি ভালো অনুভব করবেন আশা করি। তবে আবহাওয়া যদি বেশি প্রতিকূল হয় তাহলে আশা করি আরও বেশি আপনার মনের মতো হবে পরিবেশটা।

 

চারিদিকে সবুজের সমাহার পরিবেশ থেকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।আপনি যদি ভারতের দার্জিলিং শহরে আসেন অবশ্যই একবার হলেও আসবেন শান্তির এই মিলনায়তনটি।  দেখার উদ্দেশ্যে। আশা করি আপনার একটুও বিরক্তি বোধ হবে না। বিশেষ করে আপনি যদি হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হন তাহলে এতে আপনার জন্য হতে পারে একটি শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান।

পিস প্যাগোডা ও জাপানিজ স্টেম্পল কিভাবে যাবেন :

দার্জিলিং থেকে ৮-৯ কিলোমিটার দূরে জাপানি স্টেম্পল অবস্থিত তার একটু দূরে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে অবস্থিত পিস প্যাগোডা। দার্জিলিং থেকে আপনি নিজস্ব গাড়ি কিংবা যে কোন গাড়িতে করেই জাপানি স্টেম্পল ও পিস প্যাগোডায় খুব সহজেই যেতে পারবেন ।
পিস প্যাগোডা সকাল আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং পুনরায় একটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

৮.ডালি মনস্ট্রি

দার্জিলিংয়ে আসবেন অথচ ডালি মনাস্ট্রি ঘুরবেন না এটি কি কখনো হয়? দার্জিলিংয়ের অন্যতম সুন্দর মনস্ট্রির মধ্যে ডালি মনাস্ট্রি অন্যতম। দারুন সুন্দর এই মনস্ট্রিকে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে ডালি মনস্ট্রিতে আসলে যে কারোরই মন ঠান্ডা হয়ে যাবে। এটি একটি বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র উপাসনালয়। সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে ডালি মনস্ট্রি গেলেই বুঝতে পারবেন কতটা সুন্দর সেই স্থান।

 

পাহাড়ের বুক চিরে বানানো হয়েছে এই মনাস্ট্রি।  দার্জিলিং এর বড় বড় বিশাল মনাস্ট্রির মধ্যে ডালি মনাস্ট্রি অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। যে পাহাড়ের কেটে এই মনাস্ট্রি নির্মাণ করা হয়েছে সেই পাহাড়ের মধ্যে গুহার মতো আকার সৃষ্ট ছিল যার কারনে স্থানীয়রা এই মনাস্ট্রিকে ডালি গোম্পা বলেও জানেন। ডালি মনাস্ট্রিতে  সব রকমের কালচার শেখানোর জন্য ধর্ম গুরুরা রয়েছে। এক অপূর্ব সুন্দর মায়া ভরা পরিবেশ আপনাকে মুহূর্তে রোমাঞ্চকতায় ভরিয়ে দেবে।

 

ডালি মনাস্ট্রির সামনেই মেইন রোড। রোড পার হয়ে প্রবেশদ্বার দেখলেই আপনার আন্দাজ হয়ে যাবে ভেতরে কতটা সুন্দর হতে পারে। অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ করা প্রবেশদ্বার থেকে ভিতরে ঢুকলেই দেওয়ালে দেখা যাবে নানা রকম দৃষ্টি নন্দন আকর্ষণীয় কারুকাজ। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটি আপনাকে মনোরঞ্জন করতে যথেষ্ট। মন্দিরের ওপর থেকে আশেপাশের দৃশ্যটা আপনার মন ছুয়ে দেবে। পাহাড়গুলো যেন কানে কানে আপনাকে বলে দেবে প্রকৃতির সৌন্দর্যের গল্প গুচ্ছ।

 

সকালে মনাস্ট্রিতে গেলে একটা দারুন জিনিস দেখতে পাবেন। সেটি হল, মেঘমালার দল আপনাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবে। দেখলে মনে হবে আকাশ আর পাতাল মিলে মিশে এক হয়ে গেছে। পুরো মনাস্ট্রিটি অপূর্ব কারুকাজ খচিত এবং চারপাশে অসংখ্য রংবেরঙের ফুলের সমাহার। এই বৌদ্ধ মন্দিরের বাইরে রয়েছে অনেক বড় একটি বৌদ্ধ মূর্তি। যার সামনে রয়েছে একটি বড় ফুলের বাগান। হাজারো ফুলের মাঝে বৌদ্ধ মুর্তি যেন আলাদা রকম শোভা ছড়াচ্ছে চারিদিকে।

 

এখানের প্রত্যেকটা দেওয়াল গুলোতে বৌদ্ধ শিল্পকলা প্রদর্শনীয়। ডালি মনাস্ট্রির ভেতরে রয়েছে অনেকগুলো বুদ্ধমূর্তি প্রতিমা। এছাড়াও রয়েছে একই সারিতে কয়েকটি খুদে বৌদ্ধ স্তুপ। বুদ্ধ মূর্তির অনেক দূর থেকেই শোনা যায় এখানকার টংটং করতে থাকা ঘন্টা গুলোর মধুর আওয়াজ। এই বৌদ্ধ মন্দিরটিতে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে আসে অনেকেই। তাদের রয়েছে আবার এক জাতীয় পোশাক।

 

প্রতিদিন অনেক দূর দূরান্ত থেকে বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুসারিরা ছুটে আসে এখানে প্রার্থনা করতে। দার্জিলিং এর সবচেয়ে সুন্দরতম দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ডালি মনাস্ট্রি অন্যতম স্থান লাভ করেছে। ক্ষুদার্থ দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে ডালি মনাস্ট্রির পাশেই একটি উন্নত মানের রেস্তোরাঁ। হাঁটতে হাঁটতে হালকা ক্ষুধার্ত হলে যে কোন খাবার পেয়ে যাবে সেই রেস্তোরায়।

 

ডালি মনাস্ট্রির দেখতে এতটাই সুন্দর অবশ্যই হাতের সময় না নিয়ে আসলে আপনি এর সৌন্দর্য পুরোটুকু দেখে শেষ করতে পারবেন না। বিশেষ করে আপনি যদি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মধ্যে একজন হন তবে আপনি একবার হলেও ডালি মনাস্ট্রি ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

ডালি মনস্ট্রি কিভাবে যাবেন :

দার্জিলিং মেল থেকে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরেই ডালি মনাস্ট্রি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। দার্জিলিং থেকে ৪/৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ডালি মটর স্ট্যান্ড এসে এক মিনিট পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যেতে পারেন আপনার গন্তব্য ডালি মনাস্ট্রিতে।

 

আর যদি ঘোমের দিক থেকে আসতে চান সে ক্ষেত্রে ও আপনাকে প্রথমে ডালি মটর স্ট্যান্ড আসতে হবে তারপর যথারীতি পায়ে হেঁটে মনাস্ট্রিতে আসতে পারবেন খুব সহজেই। আপনার যদি নিজস্ব গাড়িতে করে কিংবা রিজার্ভ গাড়ি করে আসতে চান সেক্ষেত্রে বেশি সুবিধা লাভ করতে পারবেন।

 

এখানে প্রার্থনা করার সময় হলো সকাল ৬ টা থেকে সাড়ে ৭ টা। এবং বিকেল বেলায় ৫ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ রুপি করে। দার্জিলিং এর সবচেয়ে বড়  এবং সুন্দর মনস্ট্রি হচ্ছে ডালি মনস্ট্রি।

৯.চিড়িয়াখানা

ছুটি পেলেই বাচ্চাদের বায়না ঘুরতে যাব ঘুরতে যাব। আর আমরা সবাই জানি বাচ্চাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদর্শ স্থান হচ্ছে চিড়িয়াখানা। দার্জিলিং পাহাড়ের রানী হওয়ায় আমরা শুধু ভাবি দার্জিলিংয়ের শুধু পাহাড় ছাড়া আর কিছুই নেই। কেমন হয় যদি এই পাহাড়ের বুকেই পাওয়া যায় নান্দনিক শিশু পার্ক ? জ্বী হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনেছেন দার্জিলিংয়ে রয়েছে পাহাড়ের ওপর বাচ্চাদের জন্য একটি নান্দনিক চিড়িয়াখানা। নাম তার পদ্মজা নাইডু হিমালিয়ান জুলজিকাল পার্ক। প্রতিবছরে তিন লাখেরও বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এই পার্কে।

 

দার্জিলিং এ এলে আপনিও ঢুঁ মারতে পারেন এই পার্কে। দেশের সেরা চিড়িয়াখানা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে এই পদ্মজা নাইডু হিমালিয়ান জুলজিকাল পার্ক। এখানে আছে হিমালিয়ান কালো ভাল্লুক, বন বিড়াল, হনুমান ,পাহাড়ি ছাগল, তুষার চিতা বাঘ, নেকড়ে, বিভিন্ন রকম রংবেরঙের পাখির সমারোহ এছাড়াও আছে বনের রাজা রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আরো আছে রেড পান্ডা, তিব্বতি নেকড়ে, স্নো লেপার্ড এবং পূর্ব হিমালয়ের বিভিন্ন বিপন্ন জাতের প্রাণী। চিড়িয়াখানায় মোট ৫০০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে।

 

সুতরাং ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির পাশাপাশি বাচ্চাদের কাছে এটি অনেক জনপ্রিয় পার্ক হিসেবে গড়ে উঠেছে দার্জিলিংয়ে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে এক একটি প্রাণীর বসবাসস্থল ,যা দেখতে সত্যিই চমৎকার। এই পার্কের মূল আকর্ষণই হলো রেড পান্ডা। কারণ এই প্রজাতির পান্ডা অন্য কোন চিড়িয়াখানাতে সচরাচর দেখা যায় না। যার জন্য সব সময় পর্যটকের আনাগোনা লেগেই থাকে এই পার্কে। আর এই সুযোগেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পার্কটি।

 

পাহাড়ের উপরে পার্কটি হওয়ায় আলাদা রকম মজা উপভোগ করা যায় এই পার্ক দর্শনে। তাহলে আর দেরি কিসের? প্রতিবছর চিড়িয়াখানায় আসা তিন লাখ দর্শনার্থীদের মধ্যে আপনিও হয়ে যান একজন। বাসার ছোট্ট সোনামণি কিংবা পরিবারকে নিয়ে আজই বেরিয়ে পড়ুন এই দৃষ্টিনন্দন চিড়িয়াখানা দেখার উদ্দেশ্যে। আশা করি আপনার মনের মত একটি স্থান হয়ে উঠবে এটি।

চিড়িয়াখানা কিভাবে যাবেন :

দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে এই পদ্মজা নাইডু হিমালিয়ান জুলজিকাল পার্ক নির্মিত। দার্জিলিং শহর থেকে পার্কটি অতি নিকটে হওয়ায় নিজস্ব গাড়ি কিংবা অটো রিক্সায় পড়ে খুব সহজে আপনি পদ্মজা নাইডু হিমালিয়ান জুলজিকাল পার্কে আসতে পারবেন।

১০.কালিম্পং

দার্জিলিং এর পূর্ব ,পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ যেদিকে যান না কেন সব দিকেই রয়েছে সেরা সেরা দর্শনীয় স্থান কোনটি ছেড়ে কোনটিতে যাবেন সেটা বেছে নিতে নিতে হঠাৎ দার্জিলিংয়ের কালিম্পং এর কথা মাথায় আসবে। কালিম্পং এ যেতে হলে আপনাকে পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে যেতে হবে। পাহাড়ের পথের ধারে গহীন সব খাদ তাকালেই ভয় ভয় শিহরণে গা ছমছম করবে।

 

রোমাঞ্চে ভরা এই পথের বাঁকে বাঁকে রয়েছে বৈচিত্রের সব রকমারি আয়োজন। চারপাশে অকৃত্রিম বনের দারুন নিবিড়তা। ধোঁয়া নেই, ধুলা নেই, হিমালয়ের দারুন শীতল সমিরন। চারিদিকে শুনশান নীরবতা শব্দ বলতে শুধু অবিরাম বয়ে চলা পাহাড়ি ঝর্ণার সুরেলা উচ্ছল শব্দ যেন মনকে নাড়া দেয়। চঞ্চলা হরিণের মতো বয়ে চলা ঝর্নাকে দেখে আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ১৯২২ সালে লিখেছিলেন তার মুক্তধারা কাব্য। অগণিত ঝর্ণার জল মিলে মিশে সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ি নদী।

 

এই কালিম্পং নামের অনেক মানে আছে ভুটানি ভাষায় এর অর্থ রাজার মন্ত্রীর শক্ত ঘাঁটি , পাহাড়ীরা বলে কালিম্পং শব্দের অর্থ কালো উপত্যকা ,লেপচারা বলে খেলবার জায়গা। কালিম্পং মূলত একটি শৈল শ্রেণি। এদের অবস্থান দুটি পাহাড়ের মাঝখানে। কালিম্পং বাসীরা তাদের জনবসতি গড়ে তুলেছে পাহাড়ের গায়ে গায়ে। কালিম্পং এর আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে মঙ্গল থাম স প্রথম টেম্পল। দুই তলা বিশিষ্ট টেম্পলটি দুই একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত।

 

মঙ্গল থাম নামক এই টেম্পল টি শ্রীকৃষ্ণর প্রতি উৎসর্গিত। আকর্ষণীয় এই টেম্পলে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা প্রতিনিয়ত ছুটে আসে পূজা অর্চনা বা প্রার্থনা করতে। নির্মাণশৈলী আর আভিজাত্যের দিক থেকে ভারতের সবচেয়ে সুন্দর টেম্পল এর মধ্যে কালিম্পং টেম্পল অন্যতম। নৈসর্গ কালিম্পং এর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল কালিম্পং নামকরা সব নার্সারি। এখানে সবচেয়ে নামকরা নার্সারিটি ক্যাকটাসের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে অসংখ্য বড় বড় জাতের দারুন সব ক্যাকটাস। ক্যাকটাস গুলো বিদেশি হলেও দার্জিলিং এর আবহাওয়া ওদের জন্য উপযোগী।

 

মোটা পলিথিনের তৈরি ক্যাটাস হট হাউজ গুলো যোগান দেয় ক্যাকটাসের উষ্ণতা। এখানে প্রতিটা হট হাউজই নানা প্রজাতির ক্যাকটাসে ঠাসা সেজন্য এখানে আসা দর্শনেরথীরা শখ করে এখান থেকে বিভিন্ন রকম ক্যাকটাস কিনে নিয়ে যায় । এখানে এক একটা ক্যাকটাস এক এক রকম কোনটা ভারতের, কোনটা আফ্রিকার, কোনটা মধ্য আমেরিকার। এখানে ১০০, ২০০ রকমের ক্যাকটাস নয়  বরং রয়েছে দেড় হাজার রকমের ক্যাকটাস। যখন একসাথে ক্যাকটাসের ফুল ফোটে তা দেখতে যে কারোরই মন কেড়ে নেবে।

 

প্রায় অনেক বছর আগে নিতান্ত শখের বসে  ক্যাকটাসের অরণ্য ভুবন করার কাজ শুরু করেছিলেন ক্যাকটাস প্রেমিক মোহন এস প্রধান। তার উৎপাদনকৃত ক্যাকটাস রপ্তানি করে এখন এই পাইম পিউ নার্সারী  বিশ্বজুড়ে খ্যাতি। তার এখন বিশাল নাম ডাক। কালিম্পং এলে পাইম পিউ হোক বা অন্যান্য নার্সারি একবার হলেও কিন্তু ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। নার্সারীর আশেপাশের দিকটাও কিন্তু খুবই সুন্দর।

 

কালিম্পং এর অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল জং ডগ পারলি ফো ব্রাং মনাস্ট্রি । এখানে দালাই লামা দেয়াল, পিলার, ছাদ, সবখানই বৌদ্ধ শিল্প কলার বর্ণাঢ্য সব প্রদর্শনী। বৌদ্ধদের এমন শিল্পকলা দেখলে যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। দালাই লামা এখানে একাধিকবার পদধূলি দিয়েছেন এই মনাস্ট্রিতে। তিনি দান করেছেন তিব্বত থেকে বয়ে আনা অমূল্য পান্ডুলিপি। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমূর্তি। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এখানে এসে তাদের পবিত্র বৌদ্ধমূর্তি দর্শন করে এবং তাদের প্রভুর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে।

 

দোতলা বিশিষ্ট মনাস্ট্রিটি দ্বিতীয় তলাটি চমৎকার একটি ভিউ পয়েন্ট। এই মনাস্ট্রির পাশেই রয়েছে একই শারির নয়টি বৌদ্ধ স্তুপের খুদে সংস্করণ। যা দেখতে চমৎকার। প্রত্যেকটা স্তূপের রয়েছে একটি ইতিহাস। কালচক্র স্তুপ বাদে বাকি একটি স্তপ বুদ্ধের জীবনের আটটি ঘটনার সারক। প্রত্যেকটা স্তুপ অনেক সুন্দর কারুকাজ করা। এই মনাস্ট্রির আরেক নাম দূরবীন মনাস্ট্রি। এই মনাস্ট্রি যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি আকর্ষণীয়। ভারতের দার্জিলিংয়ের কালিম্পং এর সবচেয়ে বিখ্যাত মনাস্ট্রি এটা।

 

পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত কালিম্পং এর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হনুমান মন্দির। সনাতন ধর্মের অনুসারীদের কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান। পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় মন্দিরটিতে যেতে হলে পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠতে হয় সেজন্য এখানে আসা লোকজনদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে রয়েছে রেলিং এর ব্যবস্থা। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ওপরে উঠতে গেলে দেখতে পাবেন হাজারো সবুজ গাছের বন বিলাস। খাড়া পাহাড়ের সেই রাস্তা ধরে উপরে উঠে কিছু সিঁড়ি পেরিয়ে দেখতে পাবেন একটি বড় হনুমান মূর্তি।

 

দূর থেকে আপনি হনুমান মন্দিরের ঢং ঢং ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পারবেন। যা শোনা মাত্রই আপনার মনে এই মন্দির পরিদর্শনের ইচ্ছা আরো জাগ্রত হবে। এখানে হিন্দু ধর্মীয় মেয়েরা সাদা ও লালপাড়ের শাড়ি পরে পুজো দেওয়ার জন্য আসে। হনুমান মূর্তি অনেক ওপরে হওয়ায় সেখান থেকে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায় যা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। এবং সেখানে সবথেকে সুন্দর দৃশ্য হলো উপর থেকে তিস্তা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা। যেটি জেড আকৃতির হয়ে বয়ে চলেছে অবিরাম নিজ গতিতে।

 

শীতলতার পরশ মাখিয়ে প্রকৃতি যেন আপনাকে নিজের শোভা দেখাতেই ব্যস্ত সারাক্ষণ। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই আপনি মেঘ ছুঁতে পারবেন। দুষ্টু মেঘের দল আপনার সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ে খেলবে সর্বক্ষণ। হনুমান মন্দিরে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে একটি ছায়া বিশিষ্ট বিশ্রাম স্পট। হনুমান মন্দিরের চারপাশ ঘোরার পর ক্লান্ত দর্শনার্থীরা এসে সেখানে বসে সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

 

এ ছাড়াও অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান আছে কালিম্পং এ যে গুলোতে ঘুরে খুব ভালো লাগবে আপনার। আপনি যদি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার দার্জিলিং এর কালিম্পং এ একবার হলেও ঢুঁ মারতে পারেন। পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জন কিংবা একা এখানে আসতে পারেন। আশা করি এখানে এলে এই সুন্দর মনোরম পরিবেশে আপনার মনের মত সবকিছুই পাবেন ।

কালিম্পং কিভাবে যাবেন:

দার্জিলিং থেকে কালিম্পং প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে। শিলিগুড়ি থেকে সড়কপথে প্রাইভেট ট্যাক্সি বা বাসযোগে খুব সহজেই কালিম্পং যাওয়া যায়। সময় লাগবে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট । ভারা পড়বে জনপ্রতি ৪০-৬০ রুপি মাত্র।

১১.হ্যাপিভ্যালি টি স্টেট

আপনি দার্জিলিং আসবেন অথচ চা বাগান না দেখে চলে যাবেন তা কি হয় ? এবার পরিচয় করিয়ে দেবো হ্যাপি ভ্যালি টি স্টেট এর সাথে। আপনি দার্জিলিংয়ে আসবেন আর চা বাগান না দেখে চলে গেলে আপনার দার্জিলিং ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় টি গার্ডেন।

 

হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট বৃটিশদের তৈরি করা চা বাগান।শৈল শহর আমরা অনেক দেখেছি ঝাঁ চকচকে টুরিস্ট স্পট অনেক দেখেছি দেখে ভালো লাগে চোখ জুড়ায় মনও ভরে। কিন্তু দার্জিলিং এ কি জানি একটা অন্যরকম কিছু একটা আছে যা দেখে সেই প্রেমে পড়ে। পাহাড়ের এই স্বর্গরাজ্যে মন ভোলানো ও মন মাতানোর রয়েছে হাজারো উপকরণ। প্রায় ১৭৭ হেক্টর ৪৪০ একর জায়গা জুড়ে এই চা বাগানটি অবস্থিত।

 

পাতা আকারে ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। দার্জিলিং এর চায়ের সাথে অন্য কোন চায়ের তুলনা করার কথা ভাবাই যায় না। চা বাগান তো নয় এ যেন সবুজে ঢেউ খেলানো চাদর, যা প্রকৃতি সযত্নে গায়ের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। সকালে যখন মেঘের দল ছোটাছুটি করে তখন তার ভেতর থেকে চা বাগানে সরু পথ ধরে হাটতে গেলে আপনি অবশ্যই এর প্রেমে পড়তে বাধ্য। এখানে মেঘের লুকোচুরি, আর বড় বড় পাহাড় গুলো দেখতে দেখতে মন হারিয়ে যাবে অন্য কোনো প্রান্তে।

 

দার্জিলিং শহরের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম চা বাগানটি  হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট। পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা চা বাগান দেখতে অন্য দেশের পর্যটকরাও ভিড় জমায় সেখানে। হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট দেখতে আসা পর্যটকরা সতেজ চায়ের স্বাদ গ্রহণ করে পাশে থাকা টি স্টল থেকে আর উৎপাদিত কারখানার চা কিনে নিয়ে যায় বাড়ীর উদ্দেশ্যে। পাহাড়ের উপর থেকে বাগান দেখলে মনে হবে পাহাড় যেন সবুজ শাড়ি পরে আছে।

 

সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে দর্শনার্থীদের পদচারণের উদ্দেশে। কি অপরূপ তার শোভা। পাহাড়ী মেয়েরা যখন দল বেঁধে চা পাতা তোলে কতই না ভালো লাগে সেই দৃশ্য। পাহাড়ের বসবাসরত নেপালীদের দোকান থেকে  পোষাক ভাড়া করে পরে ঘুরে বেড়াতে পারেন চায়ের বাগানে। মনে হবে রাজ্য দর্শন করতে বেরিয়েছেন আপনি।

 

দার্জিলিং ভ্রমণ এলে এই হ্যাপি ভ্যালিটি দেখার আমন্ত্রণ রইল। আর সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবেন টাটকা সতেজ চা। চায়ের স্বাদ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক না এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে হ্যাপি ভ্যালিটি স্টেট ঘুরে মনের সুপ্ত বাসনা পূরণ করতে আসবেন আশা করি।

হ্যাপিভ্যালি টি স্টেট কিভাবে যাবেন

দার্জিলিং শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে হ্যাপি ভ্যালি টি স্টেট এর অবস্থান। দার্জিলিং শহর থেকে যেকোনো গাড়িতে উঠে হ্যাপি ভ্যালিটি স্টেট যেতে পারেন।

 

পরিশেষে বলা যায় :

এই আলো, এই মেঘ এইতো হঠাৎ নামলো বৃষ্টি, শনসনে হওয়ায়, কনকনে ঠান্ডায় মায়াবী ভরা শৈল শহর ভারতের দার্জিলিং । পাহাড়ের গায়ে সজ্জিত পাইন ফারের রাজত্ব তাদের বুক বেঁধে সাদাকালো মেঘের আনাগোনার ভেলা যখন সবুজে মেশে তখন মোহিত না হয়ে আপনার আমার উপায় কি বলুন? আপামর বাঙালির কাছে নস্টালজিয়া এই শৈল্পিক শহর দার্জিলিং হলো, আমাদের মত ভীতু বাঙালীদের জন্য বাস্তব জীবনে হাজারো ঝুট ঝামেলা, টেনশন, ফ্রাস্টেশন এসব থেকে পালানোর জায়গা।
রোজকার গড়পত্তার জীবনের থেকে দু চার দিন একটু আলাদাভাবে বাঁচার প্রয়াস। পাহাড়ের রানী দার্জিলিংয়ের আকর্ষণ দুর্নিবার যা লঙ্ঘন করার স্পর্ধা বাঙ্গালীদের নেই। তা আসুন নিজে এবং প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে দার্জিলিংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং সঙ্গে করে নিয়ে যান রোমাঞ্চকর সব স্মৃতি।
ধন্যবাদ

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents