Dreamy Media BD

শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও তার আশ্রম

শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও তার আশ্রম

প্রিয় পাঠক আজকে আমি আপনাদের সাথে আমাদের সবার প্রিয় বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী সম্পর্কে আলোচনা করব। এই লেখনীর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন বাবার লোকনাথের আশ্রমের বর্ণনা কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার আশ্রম। কিভাবে তার আশ্রম যেতে পারবেন তার আশ্রমে গিয়ে কি কি দেখতে পারবেন সবকিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। আপনি যদি লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও তার আশ্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন। মূল আলোচনা শুরু করছি –

লোকনাথ ব্রহ্মচারী জন্মগ্রহণ করেছেন ১৭৩০ সালে এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৮৯০ সালে। শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী ছিলেন একজন হিন্দু সিদ্ধ পুরুষ। তিনি সবার কাছে বাবা লোকনাথ নামেও পরিচিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে লোকনাথ ব্রহ্মচারী একজন অত্যান্ত পূজারীয় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। লোকনাথ ব্রহ্মচারী দেহত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বারদী আশ্রমে অবস্থান করছিলেন। বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ভারতী তো অবস্থিত এটি হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।

শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বাল্যজীবন

বাবা লোকনাথ শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমীতে ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ আগস্ট (২৫ শ্রাবণ, ১১৩৭ বঙ্গাব্দ) কলকাতা থেকে কিছু দূরে বর্তমান উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার চৌরাশীচাক্‌লা গ্রামে (চাকলাধাম নামে পরিচিত) একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।(লোকনাথে জন্মস্থান নিয়ে শিষ্যদেরও ভেতরে বিতর্ক আছে। নিত্যগোপাল সাহা এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন ও রায় অনুযায়ী তার জন্মস্থান কচুয়া বলে চিহ্নিত হয়।) তার পিতার নাম রামনারায়ণ ঘোষাল এবং মাতা শ্রীমতী কমলা দেবী। তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের ৪র্থ পুত্র।

পিতা রামনারায়ণ ঘোষাল ছিলেন ধর্মপরায়ণ ব্যাক্তি এবং গুপ্তসাধক। তার বাসনা ছিলো একজন সন্তানকে ব্রহ্মচারী করবেন। কিন্তু মাতৃমায়ায় আচ্ছন্ন মা তাঁর পুত্রদের ব্রহ্মচারী হতে সম্মতি দিতে চাইছিলেন না। শেষে চতুর্থ সন্তান লোকনাথের জন্ম হলে মাতা কমলা দেবী নিজ হতেই ব্রহ্মচারী হওয়ার সম্মতি দেন।

এরপর রামনারায়ণ, আচার্য গাঙ্গুলী(ভগবান চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়)-কে লোকনাথের আচার্য রূপে ‍উপনয়ন সংস্কার করিয়ে আধ্যাত্ম জীবনের গুরুভার গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানালেন। আচার্য গাঙ্গুলী ছিলেন পরম নিষ্ঠাবান এবং সর্বশাস্ত্রে সুপণ্ডিত গৃহী সন্ন্যাসী। তিনি চৌরাশীচাকলা গ্রামের নিকটে কাঁকড়া গ্রামে বাস করতেন। গ্রামটি কচুয়া নামে পরিচিত ছিল।

উপনয়নের জন্য লোকনাথ আচার্য গাঙ্গুলীর শিষ্যত্ব লাভ করেন। একই সঙ্গে তাঁর প্রিয় সখা বেণীমাধব চক্রবর্তী ভগবান গাঙ্গুলীর শিষ্যত্ব লাভ করেন। এ সময় লোকনাথ ও সখা বেণীমাধবের বয়স ছিল ১১ বছর এবং আচার্য গাঙ্গুলীর বয়স তখন ৬০। এরপর আচার্য গাঙ্গুলীর সাথে দুজন বালক বেদোক্ত বিধিমত নৈষ্ঠিক-ব্রহ্মচারী হয়ে গৃহস্থাশ্রম ত্যাগ করেন।

শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী – সিদ্ধি লাভ

গৃহ ত্যাগের পর বাংলা ১১৪৮ সনে আচার্য গাঙ্গুলী তাদের নিয়ে আসেন কালীঘাটের শক্তিপীঠে। একান্ন পিঠের অন্যতম মহাপীঠ কালীঘাট। তৎকালে কালীঘাট ছিল ঘন জঙ্গলময়। কালীঘাটে আসার পর বাল্য ব্রহ্মচারীদ্বয় আচার্যকে সাধন-ভজন শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেন। সাধন-ভজনের জন্য নির্জন স্থানের উদ্দেশ্যে তারা কালীঘাট ত্যাগ করেন। নির্জন স্থানে এসে শিষ্যদ্বয় কঠোর সংযম পালন করেন এবং দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর নক্ত-ব্রত (দিনে অনাহারী থেকে রাত্রে আহার) ধারণ করেন।

এরপর একান্তরা-ব্রত (একদিন উপবাসের পর দিন আহার), ত্রিরাত্রি, পঞ্চহ, নবরাত্রি ব্রত পালন করে করেন। আচার্য গাঙ্গুলী তাদের ধ্যান ও যোগ শিক্ষা দেন। এরপর সিদ্ধলাভের জন্য তারা হিমালয়ের বরফাবৃত এক নির্জন স্থানে ‍উপস্থিত হলেন। পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় কঠিন তপস্যা দ্বারা লোকনাথ সমাধির উচ্চতম শিখরে পৌছান এবং পরমতত্ত্ব লাভ করেন। তখন তার বয়স ৯০ বছর।

শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী
শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী

শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ভ্রমণ

মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা

শিষ্যদের সিদ্ধি লাভের পর ভগবান গাঙ্গুলী তাদের নিয়ে মক্কা দর্শনের অভিলাস করেন। তারা পায়ে হেঁটে রওনা হলেন মক্কার উদ্দেশ্যে। প্রথমে তারা উপস্থিত হলেন কাবুলে। সেখানে ‘মোল্লা সাদি’ নামে একজন ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ ধার্মিক মুসলমানের সাথে তাদের পরিচয় হয়। তার সাথে কুরআন ও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে নানা আলোচনা হয়। এখানে লোকনাথ কোরআন শিক্ষা করেছিলেন। তারা উপলব্ধি করলেন, বাহ্যিক আচার-আচরণ ছাড়া দুই ধর্মের মাঝে প্রভেদ নেই।

কাবুলের পর তারা আসেন মদিনায়। এখানেও বেদ ও কুরআন নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা হয়। এখান থেকে তারা মক্কার পথে যাত্রা করেন। যাত্রা পথে ‘আব্দুল গফুর’ নামে ৪০০ বছর বয়সী এক উচ্চস্তরের মুসলমান ফকিরের দর্শনের জন্য তাঁর আস্থানায় যান। তিনি সবসময় মৌন এবং সমাধি অবস্থায় থাকতেন। সিদ্ধপুরুষ লোকনাথকে দেখে তার সমাধি ভঙ্গ হয় এবং তাকে আলিঙ্গন করেন। এরপর দুর্গম পথ অতিক্রম করে তারা মক্কায় পৌছান।

কাশীধাম যাত্রা

মক্কায় কয়েকদিন অবস্থানের পর তাঁরা বারাণসীর কাশীধামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেখানে মহাযোগী ত্রৈলঙ্গস্বামীর পর্ণকুটির অবস্থিত। বৃদ্ধ গাঙ্গুলী তার শিষ্যদ্বয়ের সমস্ত দায়িত্ব ত্রৈলঙ্গস্বামীর হাতে তুলে দিয়ে গঙ্গার তীরে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মহাপ্রস্থান হন। ত্রৈলঙ্গস্বামী মূলত পণ্ডিত হিতলাল মিশ্র। সেখানে স্বামীজীর সাথে তাঁরা কিছুকাল যোগশিক্ষা করে ভ্রমণে বের হন।

বিশ্ব ভ্রমণ

ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তারা ভারতের পশ্চিমে আফগানিস্তান, আরব, ইসরায়েল, পারস্য, ইউরোপ ইত্যাদি স্থান অতিক্রম করে আটলান্টিক মহাসাগর উপকূল পর্যন্ত গমন করেছিলেন। এরপরে তারা ভারতে ফিরে পুনরায় উত্তরের পথে গমন করেন।

তারা বরফাচ্ছন্ন সুমেরু এলাকা গমনের ইচ্ছায় প্রাক-প্রস্তুতি উপলক্ষে শৈত্যপ্রধান এলাকা হিসেবে বদ্রীনাথ শ্রীমন্দিরের আশ্রমে অবস্থান করেন। সেখান থেকে আধুনিক পরিজ্ঞাত সীমা অতিক্রম করে উত্তরে বহুদূরে চলে যান।

তারা হেঁটে হেঁটে সাইবেরিয়াতে চলে আসেন। সেখানে সূর্যোদয় না হওয়ায় সময় নির্ণয় করা যায় নাই; তবে তারা সে পথে ২০ বার বরফ পড়তে ও গলতে দেখেছিলেন। কয়েকটি বরফের স্তম্ভের কাছে এসে তারা যাত্রা সমাপ্ত করলেন। এরপর পূর্ব দিকে গমন করে চীন দেশে উপস্থিত হন। সেখান থেকে ত্রৈলঙ্গস্বামী উদায়াচলের পথে যাত্রা করেন। লোকনাথ ও বেণীমাধব তিব্বত ও বদ্রীনাথ পাহাড়ে অবস্থান করলেন। তারপর বেণীমাধব কামাখ্যার উদ্দেশ্যে চলে যান এবং লোকনাথ চলেন চন্দ্রনাথ পহাড় সংলগ্ন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে।

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বারদীতে অবস্থান

জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাত্রাকালে হঠাৎ জঙ্গলে আগুন লেগে যায়। তিনি লক্ষ করলেন বৃক্ষতলায় এক জটাজুটধারী সন্ন্যাসী ধ্যানমগ্ন আছেন। তিনি যোগবলে তাকে নিরাপদে নিয়ে আসেন। ইনি ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।

এরপর লোকনাথ ত্রিপুরা জেলার দাউদকান্দি গ্রামে আসেন। বারদী গ্রামের ডেঙ্গু কর্মকার নামে এক ব্যাক্তি সেসময় ফৌজদারী মামলার আসামি হয়ে দাউদকান্দিতে ছিল। উদভ্রান্ত ডেঙ্গু কর্মকার লোকনাথকে দেখতে পেয়ে সব ঘটনা খুলে বলেন। তখন লোকনাথ তাকে নির্ভয়ে থাকতে বলেন। পরদিন বিচারপতি ডেঙ্গুকে বেকসুর খালাস রায়ে দেন। লোকনাথকে ডেঙ্গু তার বাড়িতে নিয়ে আসেন।

ডেঙ্গুর মৃত্যুর পর বারদীর জমিদার তাকে নিয়ে আসেন জমিদার বাড়িতে। জমিদার তাকে ‘ছাওয়াল বাঘিনী’ নদীর তীরে একটি নিষ্কর শ্মশানে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে দেন। দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর তিনি সেখানে অবস্থান করেন। সে সময় থেকেই “বারদী’র ব্রহ্মচারী” হিসেবে লোকনাথ পরিচিতি পান।

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মহাপ্রয়াণ

বারদী অবস্থান কালে ভক্তগণ কৃপার জন্য তার নিকট আসতেন। এক ভক্ত তার পুত্রের দুরারোগ্য যক্ষ্মার মুক্তির জন্য তার নিকট আসেন। লোকনাথ বুঝতে পারেন সেই পুত্রের আয়ু শেষ হয়ে এসেছে। তবুও ভক্তকে কৃপা করে যক্ষ্মা রোগ নিজ শরীরে গ্রহণ করেন। পুত্র ধীরে ধীরে রোগ মুক্ত হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তার মৃত্য হয়। কিন্তু যক্ষ্মা রোগ লোকনাথের শরীরে ক্রমে ক্রমে বাড়তে থাকে। এরপর ১৯ জৈষ্ঠ্য তিনি তার দেহত্যাগের ঘোষণা দেন। এই সংবাদ পেয়ে ভারাক্রান্ত ও অশ্রুসিক্ত ভক্তগণ দলে দলে আসতে থাকে বারদীর আশ্রমে। সেখানে তিনি সবাইকে প্রসাদ গ্রহণ করতে বললেন।

এরপর ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭ বঙ্গাব্দে(১ জুন ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ), এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ১১টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বারদী আশ্রমে মহাসমাধি মগ্ন হলেন। এসময় তার বয়স ছিল ১৬০ বছর।

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম

ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে সু-পরিচিতি রাজধানী ঢাকার খুব কাছেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা। উপজেলার মাত্র আট কিলোমিটার উত্তর পার্শ্বে বারদী ইউনিয়নে যে কোনো সময় ঘুরে আসতে পারেন উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক সাধক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম

হিন্দু সম্প্রদায়ের এই জনপ্রিয় তীর্থস্থানটিতে প্রকৃতির নিবিড় সজীবতায় আর আধ্যাত্মিক নিস্তব্ধতায় পরম ঈশ্বরের আরাধনায় মগ্ন হতে আসেন ভক্তরা।

আশ্রমের মূল ফটকের সামনে রঙিন ছাতায় ঘেরা ছোট ছোট দোকানগুলোতে মিষ্টির ও প্যারা ছাড়াও পাওয়া যাবে শিশুদের খেলনা, মোম, আগরবাতি, স্টিল ও পিতলের সামগ্রী এবং শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বিভিন্ন ছবি। এ ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পূজা-অর্চনার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও মিলবে এসব দোকানে।

ছোট ছোট দোকানগুলো পেছনে ফেলে সিঁড়ি ভেঙে মূল আশ্রমে গেটে প্রবেশ করে হাতের ডান দিকে দেখতে পাওয়া যায় আধুনিক ডিজাইনে নির্মিত ও মূল্যবান পাথরে সুসজ্জিত মহাসাধক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সমাধি মন্দির।

সমাধি মন্দিরের পূর্বদিক ঘেঁষে রয়েছে জানকীনাথের আরেকটি মন্দির। আশ্রম সূত্রে জানা যায়, জানকীনাথ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। উত্তর দিকে দুর্গা মন্দির ও স্মৃতি মন্দিরের দেখা পাওয়া যাবে। মূল মন্দির থেকে পূর্ব-উত্তর কোণে এক বিশাল নাটমন্দির। এ নাটমন্দিরে প্রতি বছর ১৬ অগ্রহায়ণ একনাম কীর্তন হয়।

নাটমন্দিরে দক্ষিণ পার্শ্বে বিশাল পুকুর। ইমারতের ঘেরার মধ্যখানে আধুনিক ডিজাইনে নির্মিত শিব মূর্তি। সাধকের মূল আসনটি আস্তানার মণিকোঠায় অবস্থিত। এ আসন মন্দিরে সাধক লোকনাথ তার ভক্তবৃন্দের সঙ্গে নানা সুখ-দুঃখের আলোচনা করতেন। নিদ্রা-আহার ও ধ্যানের স্থানও ছিল এটি।

বর্তমানে লোকনাথ বাবার মন্দিরের সম্মুখে বিশাল একটি বকুল ও ৪/৫টি আম গাছ রয়েছে। পুরো আস্তানা ছায়াময় হয়ে রয়েছে বিভিন্ন জাতের গাছ-গাছালিতে। ৪/৫টি তিনতলা ভবন সহ অতিথি শালা, ধর্মশালা, অফিসকক্ষ, বিক্রয় কেন্দ্র, গোশালা, রন্ধনশালা, পূজামণ্ডপ ইত্যাদি রয়েছে। পাশেই রয়েছে বারদী দৃষ্টি নন্দন মহাশ্মশান ।

১২৯৭ বাংলা সালে ১৯ জ্যৈষ্ঠ শুক্ল পক্ষের ত্রয়োদশী বেলা ১১টা ৪০মিনিটে ১৬০ বছর বয়সে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সোনারগাঁয়ে বারদীতে দেহত্যাগ করেন। সেই থেকে প্রতি বছর ১৯জ্যৈষ্ঠ পালিত হয়ে আসছে উৎসব। এ উপলক্ষে আশ্রম প্রাঙ্গণে বিশাল মাঠে ৩দিনব্যাপী মেলা হয়। এতে দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে হাজার তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটে থাকে এখানে।

আশ্রমে সন্ন্যাসী এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য যত দিন ইচ্ছা থাকা-খাওয়ার ফ্রি ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও প্রতি শুক্র ও শনিবার এখানে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন এবং বিশেষ দিনে উপবাস পালন করেন।

আশ্রমের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সাংবাদিক শ্রী শংকর কুমার দে জানান, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার জীবন বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, তিনি ১১৩৭ বাংলা সালের ভাদ্র মাসে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাঠের চৌরাশি চাকলার অন্তর্গত কচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১২৭০ বাংলা সালে ত্রিপুরা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থানের পর সোনারগাঁও উপজেলার (তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার বৈদ্যের বাজার থানা) বারদী গ্রামে আসেন। সীতাকুণ্ড থেকে এই যোগ সিদ্ধ মহাপুরুষকে বারদীতে নিয়ে আসেন এক খুনের মামলার আসামি ডেঙ্গু কর্মকার।

তিনি আরও জানান, বারদীতে শ্রী শ্রী লোকনাথ বাবার আসন বা ধ্যান মন্দির, এখানে সমাধি থাকার কারণে এখানকার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের তুলনা করা যায় না। শ্রুতি আছে, শ্রী শ্রী লোকনাথ বাবার কাছে বারদী ধামে এসে কায়মনোবাক্যে কিছু চাইলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।

শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম
শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম

লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম এর গুরুত্ব

প্রতি বছর ১৯ জৈষ্ঠ্য এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাপুরুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসব পালিত হয়। ১৮৯০ সালের (বাংলা ১২৯৭ সন) এই দিনে পরমপুরুষ শ্রীশ্রীলোকনাথ ব্রহ্মচারী দেহত্যাগ করেন। তার এই মহাকাল প্রয়াণের দিনটিকে ভক্তি এবং শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে স্মরণ করার জন্যই এই উৎসব ও মেলার আয়োজন হয়।

এই তিরোধান উৎসবে অংশগ্রহণ করতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাসহ দেশের লক্ষাধিক লোকনাথ ভক্ত বারদী আশ্রমে এসে সমবেত হন। জৈষ্ঠ্যের ১৯ তারিখ আশ্রমের চৌচালা ছাদের উপর থেকে ভক্তদের ছুঁড়ে দেয়া বাতাসা মিষ্টান্ন ও তা কুড়ানোর উচ্ছল আয়োজন হয় যা “হরি লুট” নামে পরিচিত। এছাড়া দিন ব্যাপী চলে গীতা পাঠ, বাল্যভোগ, লোকনাথের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ, রাজভোগ, প্রসাদ বিতরণ ও আরতি কীর্তনসহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান।

বারদীর লোকনাথ আশ্রম এখন শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থানই নয়, বরং ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকল ধর্মের, সকল মানুষের কাছে এক মিলন মেলা হিসেবে পরিচিত। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসবে সপ্তাহ ব্যাপী মেলা বসে। আশ্রমের ঠিক সামনে বিশাল সবুজ মাঠ। এখানেই মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে বিশাল আয়োজন করা হয় এখানে। নানান এলাকা থেকে হাজারও পণ্য আসে। আসে বাহারী তৈজসপত্র, আহারের ফল ফলাদি আরো কত কী। বহুদেশে বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের আগমন ঘটে এই মেলায়। এ এক বিশাল আয়োজন। এক সপ্তাহব্যপী চলতে থাকে রাতদিন।

লোকনাথ ব্রহ্মচারী এর আশ্রম যাওয়ার উপায় ও থাকার ব্যবস্থা

ঢাকার গুলিস্থান থেকে দোয়েল, স্বদেশ বা বোরাক বাসে নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়ায় নেমে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশায ভাড়া করে বারদী লোকনাথ আশ্রম পৌঁছাতে পারবেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরে হোটেল মেহরান, হোটেল সোনালি, হোটেল নারায়নগঞ্জ, হোটেল মিনা আবাসিক ও হোটেল মজিবরের মতো বেশ কিছু আবসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়াও অনুমতি নিয়ে সার্কিট হাউজ ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় থাকতে পারবেন।

 

ইতিহাস নিয়ে এমন আরও জানতে পারেন আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সেকশন – এ

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents