Dreamy Media BD

মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থান

মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থান

একঘেয়েমি কাজ আর দৈনন্দিন জীবনের টানা হেঁচড়া থেকে কখনো কখনো মন চায়  কোথাও থেকে  ঘুরে আসতে। যেখানে গেলে হারিয়ে যাওয়া যায় প্রকৃতির মাঝে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের মন এবং দেহকে সতেজ করা যায় । তাহলে আর দেরি করছেন কেনো আজই বেরিয়ে পড়ুন আপনার সেই কাঙ্খিত ভ্রমণে। মন ভালো করা এবং শরীরকে চাঙ্গা করে তোলার জন্য ভ্রমনের চেয়ে আনন্দময় ভালো কোন কিছু হতেই পারে না।

আপনার মনের সকল চাহিদা পূরণ করতে আজকে এসেছি তেমনই আকর্ষণীয় এক জেলার ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থানের বিস্তারিত আলোচনা করতে।  আজকে এসেছি মৌলভীবাজার জেলা সম্পর্কে উপস্থাপন করতে আর জেলাটির ইতিহাস, সংস্কৃতি আর দর্শনীয় স্থানের তথ্য নিয়ে। “মৌলভীবাজার” জেলা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আরেক নাম।বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চলের নাম মৌলভীবাজার।

দুটি পাতা একটি কুঁড়ি সবুজে ভরা মায়াবী স্বপ্নপুরী এই জেলাটি সবার কাছে পরিচিত চা বাগানের জন্য।বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পৌরসভা হিসেবে মৌলভীবাজার পৌরসভাকে সমর্থন করা হয়। বিশেষ বিবেচনা সাপেক্ষে মৌলভীবাজারকে “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ প্রশাসনের উদ্যোগে মৌলভীবাজারে উন্নয়ন এবং অগ্রগতির বিশেষ কর্মকান্ড চলতেছে।

বর্তমানে এই পৌরসভাটিকে আরো আধুনিক ও উন্নত মানের করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। মৌলভীবাজার মনু নদীর তীরে অবস্থিত।  বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলাকে সাধারণত চা বাগান এবং গ্রীষ্ম মন্ডলীয় বন অঞ্চলের জন্য বিখ্যাত।

জমিদার মৌলভী সৈয়দ কুদরদউল্লাহ ১৭৭১ সালে তার জমিদারি ভূমিতে একটি বাজার স্থাপন করেন। বাজারটিতে তিনি ভোজ্য পন্য যেমন ফলমূল ও শাক-সবজি আমদানি করে তা বিক্রয় করতেন। এতে করে এলাকার লোকজন এখানে শুধু পণ্য কিনতে আসতো না বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছিল।

বাজারটির অবস্থানগত কারণে এখানে যানবাহন খুব সহজে আসতো এবং যেত। ফলে এলাকার লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চাহিদা পূরণ হতো। মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহের নাম অনুসারে সকলেই বাজারটিকে মৌলভীবাজার নামে ডাকতো।

মৌলভীবাজারে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তাই দেরি না করে আজই বেরিয়ে পড়ুন মৌলভীবাজারে দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করতে। নিচে মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোর সম্পূর্ণ গাইডলাইন দেওয়া হল।

আরো পড়ুন – বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট

মাধবকুণ্ড-জলপ্রপাত
মাধবকুণ্ড-জলপ্রপাত

১. মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত/মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানী মৌলভীবাজারের বড়লেখা। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা। সবুজ বনবনানী, পাহাড়টিলা,গ্যাসতেল, আগর,হাওর, বিল ঝরনা মৌলভীবাজারকে সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে। বাংলাদেশে অনেক অপরূপ মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা থাকলেও,  বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের আকর্ষণ  দর্শনার্থীদের মনে সবসময় আলাদা একটা স্থান করে নিয়েছে।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও আশেপাশের দৃশ্যগুলো আপনাকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করবে।  পাহাড়ের উপরে সৌন্দর্যে সজ্জিত অনেক সুন্দর চা বাগানও নজরে আসবে। চারিদিকে যতই দেখবেন ততই মুগ্ধ হবেন কখনোই বোরিং হবেন না। পাহাড়ের গা বেয়ে রয়েছে এখানকার স্থানীয়দের ছোট ছোট পল্লী।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখার উপযুক্ত সময় শীতকাল হলেও বর্ষাকাল কিংবা এর আশেপাশে ঋতুগুলোতে আসলে এখানে পানি বেশি থাকে তাই ঝর্নার ধারা তখন বেশি আকর্ষণ করে দর্শনার্থীদের। এই ঝর্ণাকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে সরকারি উদ্যোগে  পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্ট হাউস, রেস্টুরেন্ট ও মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক।

২০০১ সালে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে ঘিরে ২৬৭ একর জায়গা নিয়ে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইকো পার্কের গেটের সামনে স্থানীয়দের অনেক দোকানপাট দেখতে পাবেন। যদি আপনি ঝর্নাতে গোসল করতে চান এবং আপনার সাথে যদি কোন আলাদা কাপড় না থাকে তাহলে এখান থেকে অনায়াসে কাপড় কিনে নিতে পারবেন। এখানে আরো পাবেন মৌলভীবাজারের বিখ্যাত সেই কমলা লেবু।

টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলে শুনতে পাবেন পাতার শব্দ, পাখির ডাক, স্থানটির নিরিবিলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুহূর্তে আলিঙ্গন করে নেবে। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ শান্ত পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে অনায়াসে। মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের মেইন গেট থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে গেলে দেখতে পাবেন সেই প্রত্যাশিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।

ছোট বাচ্চাদের আকর্ষিত করার জন্য এখানে কিছু কৃত্রিম ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। বাচ্চারা যেন আনন্দের সাথে খেলতে পারে এবং আনন্দ উপভোগ করে। সেজন্য তাদের কথা চিন্তা করে এগুলো তৈরি করা হয়েছে।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক দর্শনার্থীদের কাছে একটা আকর্ষণীয় উপভোগ্য স্থান। দিনের পুরো টার সময় আপনি পার্কটিতে ঘুরে ঘুরে উপভোগ করতে পারবেন। নিচ থেকে ১৬২  ফুট উঁচু থেকে এই ঝর্ণার ধারা নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দূর থেকে ঝর্নার পানি পড়ার শব্দ আপনার ঝর্ণার দিকে এগিয়ে যেতে আরো বেশি আকর্ষিত করবে।

ছোট-বড় পাথরের উপরে দিয়ে বয়ে চলা ঝর্ণার ঝিরি আপনার মনকে চঞ্চল করে তুলবে। পাথুরিয়া পাহাড়ের উপর থেকে গঙ্গা মরা ছড়ায়  বহমান। এই ছড়ার পানি গিয়ে পড়ে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে। এই ছড়ার বিশাল জলরাশি মিশেছে হাকালকি হাওরে।

চারিদিকের পরিবেশ দেখে আপনি এতটা মুগ্ধ হয়ে যাবেন মনে হবে যেন কল্পনার রাজ্যে এসে পড়েছেন। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এত সুন্দর এখানে না গেলে আপনি বুঝতে পারবেন না। প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে এসে উপভোগ করে প্রকৃতির এই ভালোবাসা। কেউবা নেমে পড়েন এখানের ঠান্ডা পানিতে গোসল করার জন্য, কেউ বা ছবি তুলে স্মৃতি হিসেবে তুলে রাখে।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এর কাছাকাছি আরো আরেকটি ঝর্ণা আছে যার নাম পরিকুন্ড জলপ্রপাত। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের ঝিড়ি ধরে ১০/১৫ মিনিট হেঁটে গেলেই এই জলপ্রপাত দেখতে পাওয়া যায়। এখানে গেলে আরো দেখতে পাবেন শ্রী শ্রী মাধবেশ্বর এর তীর্থস্থান। যার নাম অনুসারে এই জলপ্রপাতের নাম করা হয়েছে। এখানে গেলে আরো দেখতে পাবেন পানের বাগান, সুপারি, কমলালেবু, বিশাল  চায়ের বাগান আরো কোথাও দেখতে পাবেন স্থানীয়রা জুম চাষ করে রেখেছে।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন :

মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঠালতলীতে আসতে হবে ‌।

কাঁঠালতলী বাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিলে ১৮০ টাকা ভাড়া মূল্যে যেতে পারবেন। আর যদি লোকাল সিএনজিতে যেতে চান তাহলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা  মাধবকুণ্ড যাওয়ার জন্য।
যদি ট্রেনে করে যেতে চান বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন  মৌলভীবাজারের কুলাউড়া স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি ভাড়া করে কাঁঠালতলী যেতে হবে। তারপর কাঁঠালতলী থেকে আবার সিএনজি নিয়ে মাধবকুণ্ডে যেতে হবে।

কাঁঠালতলী বাজারের মেইনরোড থেকে হাতের ডান দিকে রাস্তা ধরে মাধবকুণ্ড যেতে হয়। মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা করে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০ টাকা করে। বাইক নিয়ে গেলে এখানে রাখার সুব্যবস্থা আছে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে।

লাউয়াছড়া-জাতীয়-উদ্যান
লাউয়াছড়া-জাতীয়-উদ্যান

২.লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

বৃক্ষ পৃথিবীর প্রথম প্রাণ, আর সেই প্রাণের উৎস স্থল হচ্ছে বন। পৌরাণিক কাহিনীতে আছে জীবনের কলরবহীন পৃথিবীতে বনের বৃক্ষরা সূর্যের কাছে হাতজোড় করে বলেছিল আমাদেরকে আলো দাও, আমাদের সতেজ করে তোলো। পৃথিবীর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বৃক্ষের সৃষ্টি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রাণের বিকাশের তীর্থে আমাদের জীবন যাত্রা। জগতের জীবেরা বাঁচবে এই বৃক্ষের ছায়ায়। প্রাণদায়ী গাছের সাথে তাই মানুষের চিরকালের সখ্যতা।

বৃক্ষের সমাহারে তেমনই একটি উদ্যান গড়ে উঠেছে মৌলভীবাজারে, যেটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নামে পরিচিত। এইখানে আসলে মুগ্ধ করে চারিদিকের প্রাকৃতিক সবুজ পরিবেশ এবং মন মাতানো পাখির কিচির মিচির মিষ্টি শব্দের সাথে অসংখ্য পোকামাকড়ের মুখর কলরবে। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ আর দূর দূরান্ত থেকে এখানে নিজেকে একটু সময় দেওয়ার জন্য ছুটে আসে। বনের ভিতর দিয়ে চলে গেছে একটা লম্বা রেল লাইন। রেল লাইন বলতে আমরা এক লহমায় চলে যায় ছেলে বেলার সেই দিনগুলিতে।

যখন আমরা বুঝতাম রেললাইন মানেই কু ঝিকঝিক ট্রেন। খুব ভালো লাগা সেই রেলের সমান্তরাল লাইন যদি থাকে এই মনোমুগ্ধকর বনের মাঝে তাহলে সেটি কেমন হয়? বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি সিনেমা আমার আছে জল ছায়াছবির গান ” আমার আছে জল” গানটির শুটিং এখানেই দৃশান করা হয়েছিল। এ বনে মেছো বাঘ, বানর, বনমোরগ, খাটাশ ,বন বিড়াল, উল্লুক সহ আরো অনেক প্রজাতির জীবজন্তু আছে। বনের রূপসোভায় যাত্রীদের মন রাঙিয়ে এই রেল পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত ছুটে চলে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও ঢাকাগামী ট্রেন।

সাধারণ গাছের পাশাপাশি অনেক দুর্লভ গাছ ও আছে এই বনে। এখানে আছে আগর গাছ যার আঠালো কষের মাধ্যমে তৈরি হয় মূল্যবান সুগন্ধি আতর।  চলার পথে কখনো কখনো কাঠের সাঁকো পার হতে হয়। বনের ভিতরে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক টিলা। টিলা কেটে তৈরি করা হয়েছে পথযাত্রীদের জন্য রাস্তা। প্রচুর টিয়া পাখি এই বনে বসবাস করে। সবুজের মাঝে তাদেরকে খুঁজে বের করাই দায় । তবে তাদের কলকাকলিতে কারোর বুঝতে বাকি থাকে না যে এখানে টিয়া পাখির বাস। এই বনের আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে বাঁশ গাছ।

প্রায় আট প্রজাতির বাঁশ জন্মায় এই বনে। এই বনের পানির অন্যতম উৎস পাহাড়ি ছড়া। পাহাড়ের উঁচু টিলা থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়া পানি বনের মাঝে নিজের বয়ে চলার পথ করে নিয়েছে আপন মনে নিজের খেয়াল মত। এ ছড়ার পানি সমগ্র বনের বৃক্ষের তৃষ্ণা নিবারণ করে। বনের মাঝে রেল গাড়ি সময় মাফিক আসলেও সময় মানে না বৃষ্টির বেলাই। বর্ষাকাল ছাড়াও শীতকালেও এই বনে বৃষ্টির দেখা মেলে। এখানে বৃষ্টির ঘনঘটা লেগেই থাকে।

এই রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে প্রকৃতি এক নতুন রূপে সজ্জিত হয়। বনের মাঝে রয়েছে দুর্লভ কিছু বন্যফুল। এই ছায়া নিবিড় বনের মাঝে আসলে যে কারোর মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে যথেষ্ট। আপনি যদি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান অবশ্যই একবার হলেও মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ঘুরে যেতে পারেন।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যেতে গেলে প্রথমেই আপনাকে বাসে করে শ্রীমঙ্গলে যেতে হবে। তারপর সিএনজি, অটো, রিকশা করে শ্রীমঙ্গল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খুব সহজেই যেতে পারবেন।

৯ টা থেকে ৪ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে এই উদ্যান। প্রাপ্তবয়স্ক প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা আছে। স্টুডেন্ট আইডি দেখালে ২০ টাকা মূল্যে প্রবেশ করতে দিবে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা । যদি শুটিং করতে চান সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৬৯০০ টাকা।  এবং পিকনিকের জন্য জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১১৫০ টাকা । গাড়ি ভেদে আলাদা আলাদা চার্জ দিয়ে গাড়ি পার্কিং করতে হবে।

লরেল-হিলস-পার্ক-
লরেল হিলস পার্ক

৩.লরেল হিলস পার্ক

হাজার ব্যস্ততার মধ্যে আমরা একটু সময় পেলেই ছুটে যেতে চাই এমন একটি স্থানে যেখানে একঘেয়েমি জীবনের সব পাওয়া না পাওয়ার কথা ভুলে নিজেকে একটু বিনোদন দেওয়া যায়। বিনোদনের কথা মাথায় আসলেই প্রথমেই মাথায় আসে মৌলভীবাজারের লরেল হিলস পার্কের কথা।

শিশু-কিশোর যে বয়সের লোক হোক না কেন এই পার্কে রয়েছে সবার জন্য বিনোদনের সুব্যবস্থা। নান্দনিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে উঠেছে এই বিনোদন কেন্দ্রটি। এটি একটি পিকনিক স্পট।

পার্কটিতে প্রবেশের পরে প্রথমেই দেখবেন একটি কৃত্রিম ভাষ্কর্য। দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্যই হয়তো বানানো হয়েছে এটি। আরেকটু এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন একটি কৃত্রিম পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া জলপ্রপাতের ধারা। পাহাড়টি রঙিন পাথর দ্বারা বেষ্টিত এবং নিচের দিকে আছে সাদা সাদা বক পাখির ভাস্কর্য যা দেখে মনে হবে বক গুলো যেন অধীর আগ্রহে পুটি মাছ ধরার অপেক্ষায় বসে আছে। যেমনি আমরা ছোট বেলায় ছড়াতে পড়তাম। পাহাড়ের গা বেয়ে নুইয়ে পড়ছে স্বচ্ছ জলধারা যা দেখতে খুবই চমৎকার।

কৃত্রিম ঝর্ণার পানি যেখানে পড়ছে সেখানে একটি ছোটখাটো সুইমিংপুলের মত বানানো আছে। ঝরনার পানি সেখানে জমা হচ্ছে দিবারাত্রি। কৃত্রিম হলেও এর মনোরম দৃশ্যে যে কারোর মন আনন্দিত করে তুলবে। পানির ঝরঝর শব্দ কার না ভালো লাগে! রাস্তার পাশে গাছগুলো সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো। এখানে একটি বড় সুইমিং পুল রয়েছে। যেখানে দর্শনার্থীরা মনের মতো সুইমিং করে। সুইমিং পুলের পাশে রয়েছে ছাতা বিশিষ্ট বিশ্রামের জন্য চেয়ার।

সুইমিং পুলের পাশে রয়েছে চেঞ্জিং রুম। পার্কটির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাঘ, ময়ূর, জিরাফ, হাতি, পাখি সহ নানান পশু পাখির ভাস্কর্য যা বাচ্চাদের আনন্দিত করবে। সব থেকে মজার ব্যাপার হলো একটি কৃত্রিম ডাইনোসরের ভাস্কর্য আছে যার মুখ থেকে গর্জনের আওয়াজ আসে। যা বাচ্চারা দেখলে ভয় পাবে আবার রোমাঞ্চিত অনুভূতি অনুভব করবে। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে অনেকগুলো রাইডসের ব্যবস্থা ।

রাইডস গুলোর মধ্যে রয়েছে বড় নাগরদোলা, দোলনা, মেরিগো রাউন্ড, রোলার কোস্টার, কিডসজোন ইত্যাদি। এছাড়াও ক্লান্ত দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে পার্কের ভিতর অনেকগুলো বিশ্রামের জন্য ছায়া বিশিষ্ট বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বলে রাখা ভালো পার্কটি দুইটি অংশে বিভক্ত। একটি ছড়া পার্কের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে। ছড়া বেয়ে অন্য পার্কটিতে যাওয়ার জন্য দুইটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। একটি ঝুলন্ত ব্রিজ অন্যটি রড দ্বারা নির্মিত।

পার্কটিতে দর্শনার্থীদের নাস্তার জন্য রয়েছে একটি সুন্দর ক্যান্টিন। পুরো পার্কটি সবুজে সমরহ। পুরো পার্কটি সাজানো হয়েছে দর্শনার্থীদের মনের কথা মাথায় রেখে। আপনি যদি মৌলভীবাজার এসে পার্কে ঘোরার কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনারই জন্য লরেল হিলস পার্ক  একটি আদর্শ স্থান। ফ্যামিলি নিয়ে একবার হলেও মৌলভীবাজারের এই লরেল হিলস পার্কে ঘুরে যাবেন কিংবা পিকনিকের জন্যও এখানে আসতে পারেন ধন্যবাদ।

 লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন

মৌলভীবাজার থেকে লরেল হিলস পার্কের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রথমেই সোনমপুরে যেতে হবে। সোনাপুর থেকে সিএনজি বা অটোযোগের লরেল হিলস পার্কে খুব সহজেই যাওয়া যায়। অটো ভাড়া ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এন্ট্রি ফি জন প্রতি ৫০ টাকা করে।

মনু ব্যারেজ
মনু ব্যারেজ

৪.মনু ব্যারেজ

মৌলভীবাজার জেলার উঁচু নীচু টিলা, সবুজে ভরা চা বাগানের সৌন্দর্য, রাবার বাগান অতি সহজে মন কাড়ে দর্শনার্থীদের। সবুজে ঘেরা এই জেলাটির বুক চিরে বয়ে গেছে কত ঝর্না, লেক, হাজারো পাখির কলকাকলি আর অপরূপ সৌন্দর্য মণ্ডিত জলপ্রপাত মৌলভীবাজারকে করেছে আরো বেশি আকর্ষণীয়।

মৌলভীবাজার শহরের মাতারকাপন এলাকায় মনু ব্যারেজের অবস্থান। ১৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মৌলভীবাজারের মনু নদী। ৯৩ কিলোমিটার ভারতীয় এলাকা অতিক্রম করে মৌলভীবাজার জেলার গোবিন্দপুর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে অতি বর্ষণ  ও পানির চাপের ফলে প্রায় প্রতি বছরই বন্যার সৃষ্টি হয়।

বন্যার প্রকোপ থেকে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও মৌলভীবাজার উপজেলার ৫৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় মনু নদীর ওপরে মনু ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় লোকেদের কাছে  এটা সুইচগেট নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সিলেট জেলায় প্রচুর পরিমাণে বন্যা দেখা দেয়।

তাই সরকারী উদ্যোগে ১৯৭৬ সালে বন্যার প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য মনু ব্যারেজ তৈরি শুরু হয়। কঠোর পরিশ্রম এবং চেষ্টার ফলে ৭ বছর পর ১৯৮৩ সালে ব্যারেজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। ৮৬ মিটারের এই ব্যারেজ নির্মাণে ৭ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়। তৎকালীন সময়ে এটা ব্যারেজ হিসেবে তৈরি হলেও বর্তমানে এটা একটি পর্যটন স্থান হিসেবে ধরা যায়।
বর্তমানে এই দৃষ্টিকান্দনিক ব্যারেজটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দশনাার্থদের আগমন ঘটে এজন্য এর ধারাবাহিকতায় এর আশেপাশে গড়ে উঠেছে একটি পার্ক। যেখানে আপনি পরিবারসহ অতি সহজে ঘুরে যেতে পারবেন।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন

মৌলভীবাজার সহ থেকে এটা ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাতার কাপন এলাকায়। বাংলাদেশের যে প্রান্ত থেকে আসেন না কেন মৌলভীবাজারে যেখানে বাস থেকে নামিয়ে দেবে যে স্ট্যান্ডে সে জায়গাটার নাম ঢাকাইয়া বাসস্ট্যান্ড।
ঢাকাইয়া বাস স্ট্যান্ড হতে এক ধরনের গাড়িতে উঠতে হবে যেটা স্থানীয় ভাষায় টমটম নামে পরিচিত। টমটমে উঠে বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল আসতে হবে। জন প্রতি ভাড়া নেবে ১৫ থেকে ২০ টাকা। চক্ষু হাসপাতালের সামনে নেমে ৫-৭ মিনিট হাঁটালেই পৌঁছে যাবেন মনু ব্যারেজে।

৫.দুবাই ফান সিটি পার্ক

নাম শুনেই নিশ্চয় ভাবলেন অন্য দেশের কথা কেনো বলছি? আসলে বাংলাদেশেই আছে দুবাই সিটি পার্ক। যেটি কি না মৌলভীবাজারে অবস্থিত একটি নান্দনিক পার্ক। এই পার্কটির নির্মাতা যিনি তিনি দুবাই থাকেন। সেই জন্য তিনি শখ করে এই পার্কটি বাচ্চাদের জন্য নির্মাণ করেন এবং নাম দেন দুবাই সিটি পার্ক।

এই পার্কটি মূলত ওইখানকার বাচ্চাদের জন্য নির্মাণ করলেও বর্তমানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এইখানে মানুষ জন এই পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করে। পার্কটি আয়তনে ছোট হলেও বেশ চমৎকার ভাবে সব সাজানো হয়েছে। বেশ পরিপাটি যে কারনে অল্প সময়ে দর্শনার্থীদের মনে জায়গা করে নেই এই স্থানটি।

পার্কটিতে প্রবেশের পরেই দেখতে পাবেন পার্কটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রকৃতিক সোভার সঙ্গে মানুষের তৈরি কৃত্রিম অনেক কিছু। রয়েছে একটি কৃত্রিম ডাইনোসরের ভাষ্কর্য যেটি হা করে আছে। আরো রয়েছে একটি কৃত্রিম জলাশয় যেটা কিনা তারার আদলে নির্মাণ করা হয়েছে । যার প্রতি কোনে একটি করে সামুদ্রিক মাছের ভাস্কর্য দেখে মনে হচ্ছে তারা যেন আড্ডার আসর জমিয়ে নিয়েছে ।

দেখতে পাবেন আমাদের সবার মামা রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর শিকারি রূপী ভাস্কর্য যেটি কিনা একটি শিকারকে হামলা করেছে। ভাস্কর্য হলেও এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রাণীদের জীবন চক্র। তাদের খাদ্য শিকার করার দৃশ্য যা দেখতে অনেক সুন্দর। এছাড়াও আরো অনেক কৃত্তিম ভাস্কর্য পার্কে বিদ্যমান। বক, হাতি, দোয়েল, ময়ূর, জিরাফ, শেয়াল, ডাইনোসর সহ বহু কৃত্রিম ভাস্কর্য। দেখেই বোঝা যায় নিখুঁত কারিগর দ্বারা এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

পুরো পার্কটি কৃত্রিম ভাস্কর্য আর প্রাকৃতিক ফুলের সমারোহ দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে। কার ড্রাইভ, হর্স রাইড, বড় নাগরদোলা, ঘূর্ণি চেয়ার পার্কটিতে রয়েছে। আউটডোর ছাড়াও ইনডোরেও অনেক গুলো রাইডস আছে কিন্তু শুধু নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে বাচ্চারা এটি চড়তে পারবে।

ছোট থেকে বড় সবারই এই পার্কটি ভালো লাগবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের আনন্দের সীমা থাকবে না এইখানের রাইডসগুলোর জন্য। মনোমুগ্ধকর ঠান্ডা পরিবেশে সবার ভালো লাগবে। পার্কে রাতের বেলায় বিভিন্ন রকম রংবেরঙের লাইট জ্বলে। সকালের থেকেও রাতের ওই দৃশ্যটা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা দুবাই ফান সিটি পার্কে এসে ভিড় জমায়।

আপনি যদি মৌলভীবাজার ভ্রমণ করতে গিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে চান ভাবেন কোথায় গেলে একটু মনের মতো একটু পরিবার কিংবা বাচ্চাদের সময় দিতে চান কিংবা হাওয়া বদলের জন্য অন্যরকম আমেজে নিজের মন মাতিয়ে তুলতে চান তাহলে আপনার জন্য আদর্শ স্থান হবে দুবাই ফান সিটি পার্ক।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন

মৌলভীবাজার শহর থেকে কনক পুরের দূরত্ব ৬.৭ কিলোমিটার। মৌলভীবাজার জেলার কনকপুরে এই পার্ক অবস্থিত। মৌলভীবাজার শহর থেকে দুবাই ফান সিটি পার্ক যেতে হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কনকপুর বাজার থেকে পেট্রলপাম্প থেকে সামনে তাকালেই দেখতে পাবেন দুবাই ফান সিটি পার্কের মূল প্রবেশদ্বার।
মৌলভীবাজার থেকে প্রথমে কনকপুর বাজারে আসতে হবে তারপর পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সা করে খুব সহজে পার্কে যেতে পারবেন। দুবাই সিটির পার্কের মূল্য জন প্রতি ৫০ টাকা করে।

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট
লেমন গার্ডেন রিসোর্ট

৬.লেমন গার্ডেন রিসোর্ট

ভ্রমণ পিপাসু মানুষরা ঘুরতে যাওয়ার জন্য এমন একটি স্থান খোঁজে যেখানে গেলে তারা মনের মতো মনোরম পরিবেশ ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।  তাইতো দূর দুরন্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে মৌলভীবাজার দর্শন করতে। ফুল পছন্দ নয় এমন লোক প্রায় খুঁজে পাওয়াই যাবে না।

ফুলের কথা মাথায় আসলেই আমরা কোনো গার্ডেনের কথা ভাবি। তবে শুধু ফুল গাছ নয় এই রিসোর্টে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লেবুর গাছ যার জন্যই এই রিসোর্ট এর নামকরণ করা হয়েছে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট। সিলেটের মৌলভীবাজার এসে যদি ভাবেন কোনো গার্ডেনে ঘোরার কথা তবে আপনার জন্য লেমন গার্ডেন রিসোর্ট হতে পারে আদর্শ স্থান।

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট এর মনোরম দৃশ্যে যে কারোরই ভালো লাগার কথা। প্রবেশদ্বারের পথের একপাশে দেখতে পাবেন একটি লেমন অর্থাৎ একটি সবুজ লেবুর ভাস্কর্য। যদি শুরুটাই এমন বিচিত্র হয় তবে কার না ভালো লাগে। প্রবেশের পরেই দেখতে পাবেন রাস্তার দুপাশে লেবু গাছের সমাহার। এ যেন গ্রামীন পরিবেশে একটুও আধুনিকতার পরশ ছড়িয়ে রয়েছে।
শুধু লেবু গাছে নয় এর পাশাপাশি রয়েছে নানা ফুলের সমারোহ। চারিদিকে ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত এখানে আসা দর্শনার্থীরা। ফুলের ঘ্রাণে উৎসুক হয়ে প্রজাপতির দল ঝাঁক বেঁধে রিসোর্টটির এখানে সেখানে ছোটাছুটি করে।

দুই তিন মিনিট হাঁটলেই পাবেন একটি চায়ের দোকান। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এসে সতেজ চা পাতা নিয়ে বাসায় যাবেন না এটি কি হয়? কেউ সতেজ চায়ের পাতা নিতে চাইলে এই চায়ের দোকানে পাবেন। আরেকটু এগুলোই পেয়ে যাবে বাম্পার কার রাইড এর ব্যবস্থা এবং কিছু হরিণ।

জনপ্রতি ৫০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে সেখানে আপনি যেতে পারেন। সেখানে গেলেই দেখতে পাবেন কিছু হরিণ এবং আরেক পাশেই রয়েছে ছোট্ট সোনামণিদের জন্য কিডস জোন। যার ভিতরে অনেক গুলো রাইড দেখতে পাবেন। কার ড্রাইভ , দোলনা, স্লিপার, হর্স রাইড সহ নানা রকম রাইড যা বাচ্চাদের আনন্দিত করবে।

বাচ্চারা তো খেলার কিছু পেলেই তো মহা খুশি। বাচ্চাদের খুশির কথা মাথায় রেখে তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছে এই রাইডস গুলো। এবার আসি বড়দের কথায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রয়েছে আলাদা রকম একটি আনন্দদায়ক জিনিস। লেমন গার্ডেন পুরোটুকু ঘুরে আপনার ক্লান্ত দেহটাকে একটু স্বস্তি দিতে হলে এবং রিফ্রেশমেন্টের জন্য আপনি যেতে পারেন লেমন গার্ডেনের সুইমিংপুলে।

জন প্রতি ২০০ টাকা সুইমিং পুলে সুইমিং করার জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। নীল পানিতে আপনি আপনার ইচ্ছামত সুইমিং করতে পারবেন। সব বয়সি মানুষই এখানে সুইমিং করে থাকে। আপনি যদি সুইমিং না পারেন সেক্ষেত্রে আপনার জন্য ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা রয়েছে।

সুইমিং করতে করতে যদি হালকা নাস্তার করার দরকার হয় তার জন্য সুইমিং পুলের পাশে রয়েছে একটি উন্নত মানের রেস্তোরাঁ। যেখান থেকে চা, কফি কিংবা যেকোনো ধরনের ফাস্টফুড পেয়ে যাবেন। যেহেতু এটার রিসোর্টও তাই এখানে অনেকেই রাত্রি যাপন করার উদ্দেশ্যেও এসে থাকে।

আপনি যদি এখানে রাত্রী যাপন করতে চান তাহলে এখানে আপনার রুম বুকিং করতেই হবে। সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা মূল্যের রুম বুকিং পাওয়া যায় এই রিসোর্টে। বুকিং অনুযায়ী রুমগুলোর উন্নত মানে সাজানো ও গোছানো পরিপাটি পাবেন।

রং বেরঙের ফুল, সবুজ রঙের থোকায় থোকায় ঝুলে পড়া লেবুর গুচ্ছ, স্বচ্ছ জলরাশি দেখতে আপনার একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত এই লেমন গার্ডেন রিসোর্ট থেকে। আপনি যদি মৌলভীবাজার এসে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে কিংবা অল্প সময়ে কোথাও একটু ঘুরে আসার কথা ভাবেন তাহলে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট আপনার জন্য হতে পারে একটি সুন্দর ও পরিপাটি আপনার মনের মত স্থান।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন

অত্যাধুনিক এই রিসোর্ট টি মৌলভীবাজার শহর থেকে ২৬.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট অবস্থিত। লেমন গার্ডেন রিসোর্টে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজার থেকে শ্রীমঙ্গলগামী বাসে উঠতে হবে।

আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে মৌলভীবাজার থেকে শ্রীমঙ্গল ট্রেনের স্টেশনে নেমে সিএনজি কিংবা টমটম করে মুক্ত বাতাসে চা বাগানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে যেতে পারেন লেমন গার্ডেন রিসোর্ট।
সিএনজি ও টমটম ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা করে। আপনি যদি বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে চান সে ক্ষেত্রে রিজার্ভ‌ নিয়ে আপনি যেতে পারেন খুব সহজেই সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা করে।
লেমন গার্ডেন রিসোর্ডের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৩০০ টাকা।

রাঙ্গাউটি রিসোর্ট 
রাঙ্গাউটি রিসোর্ট

৭.রাঙ্গাউটি রিসোর্ট

বাঙালি ঘোরা ফেরা করার জন্য খুঁজতে থাকে এমন একটি স্থান যেখানে তারা একটু অবসর সময়টা কাটাতে পারবে। মৌলভীবাজারে তেমনি একটি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে যেখানে আপনি রাত্রে যাপন ছাড়াও আপনার অবসর সময় টা কাটিয়ে আসতে পারবেন। ছবির মত সুন্দর এই রিসোর্ট টি দেখতে যে কারোরই ভালো লাগবে। সাজানো গোছানো পরিবেশ এক কথায় আপনার পছন্দ অনুযায়ী সব পাবেন ।

প্রবেশদ্বার থেকে একটু এগিয়ে গেলেই পাবেন রিসিপশন । আপনি যদি এই রিসোর্টে রাত্রী যাপন করতে ইচ্ছুক হন তবে এখান থেকে আপনাকে ফরমালিটিস মেইনটেইন করতে হবে। আরেকটু এগিয়ে গেলেই পাবেন উন্নত মানের রেস্তোরাঁ। যেখানে আপনি অনেক সুস্বাদু মজাদার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে পারবেন। তার ঠিক সামনেই পাবেন দুই তলা বিশিষ্ট একটি রিসোর্ট যেটি খুব সুন্দর করে সাজানো রয়েছে।

রিসোর্ট টি থেকে হেঁটে একটু সামনে গেলেই বাম দিকে  দেখতে পাবেন ৮ টি খড় বিশিষ্ট চালের আধাপাকা ঘর। ছোট বড় মাঝারি গাছে ঘেরা সবুজ ঘাস বিশিষ্ট একটি চত্বর। যেখানে আপনি বসে বন্ধুত্বের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবেন। মাঠের পাশে রয়েছে একটি কৃত্রিম লেক। এই লেকটি পার্শ্ববর্তী মনু নদীর সাথে মিলিত।

লেক থাকবে অথচ স্পিড বোট থাকবে না এইটি কি হয়? তাই লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে বোটের ব্যবস্থা যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়াতে পারবে।  স্পিড বোটে ১০ জন ভ্রমণ করে আসতে পারবে পুরো লেক। সে ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ২৫০০ টাকা। লেকের ওপর দর্শনার্থীদের বসার জন্য খুবই সুন্দর বসার ব্যবস্থা রয়েছে।

লেকের ওপর একটি ঘর আছে এই রিসোর্টে সবথেকে চমৎকার স্থান ওইটি। ওই ঘরটিতে প্রবেশ করতে গেলে পেরতে হবে একটি লোহার  ভাসমান সেতু। ইট বালি দ্বারা নির্মিত স্তম্ভের ওপর ঘর দেখতে মনে হলেও এটি কিন্তু পুরো ভাসমান অবস্থায় আছে। লেকের ভিতর থেকে যখন কেউ স্পিড বোট নিয়ে যায় তখন ওই ঘরটা ঢেউয়ের তালে দুলতে থাকে। যা এক চমৎকার অনুভূতি আপনাকে উপহার দিবে।

লেকের ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় যে কারোর মন ছুঁয়ে যাবে । লেকের পাশেই রয়েছে বসার ব্যবস্থা সেখানে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্যের শোভা উপভোগ করতে পারবেন। রিসোর্টে শেষ প্রান্তের দিকে রয়েছে সুইমিং পুলের ব্যবস্থা। সুইমিং পুলের স্বচ্ছ নীল জলরাশি দেখলেই আপনার মন শিহরণ সৃষ্টি করবে।

এর পাশেই রয়েছে ছাতা বিশিষ্ট বিশ্রামের জন্য চেয়ার। যারা সুইমিং পুলের পাশে বসে ম্যাগাজিন অথবা খবরের কাগজ করতে চাই তাদের জন্যই এই চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিসোর্ট এর প্রত্যেকটা রাস্তা অনেক সুন্দর এবং রাস্তার পাশে রয়েছে সুন্দর ফুলের গাছের সমরহ।

সুইমিং পুলের পাশেই রয়েছে বাচ্চাদের জন্য গেমিং রুম। লেকের মাঝখানের দিকে রয়েছে রিসোর্ট থেকে বিচ্ছিন্ন একটি স্থান যেখানে বসে আপনি লেকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে দিতে হবে আলাদা চার্জ।

প্রতি ঘন্টায় ৩০০০ টাকা করে দিয়ে এর সৌন্দর্য আপনি উপভোগ করতে পারবেন। রিসোর্ট এর প্রত্যেকটি ঘর অনেক উন্নত মানের। আপনি যদি রাত্রি যাপনের জন্য এখানে আসেন তাহলে আপনার এক মুহূর্তের জন্যেও বোরিং ফিল হবে না।
আপনি যদি মৌলভীবাজার এসে রাত্রী যাপনের জন্য কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে একটু একান্তে সময় কাটাতে ইচ্ছে হয় তাহলে আপনার জন্য রাঙ্গাউটি রিসোর্ট হতে পারে শ্রেষ্ঠ স্থানের মধ্যে একটি।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন

মৌলভীবাজার শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গাউটি রিসোর্ট অবস্থিত। মৌলভীবাজারের মনু নদীর তীরে এই রিসোর্ট টি অবস্থিত। মৌলভীবাজার শহর থেকে অটো কিংবা সিএনজি করে খুব সহজেই রাঙ্গাউটি রিসোর্টে যাওয়া যায়। অটো বা সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা করে।রিসোর্ট এর প্রবেশের পর গেটের বা পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। রিসোর্সটির ডান দিকেই আছে রিসিপশন ও লবি যেখান থেকে ফরমালিটিজ কমপ্লিট করে রিসোর্ট বুকিং করতে হবে।

৮.আমিনপুর পার্ক

সপ্তাহের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি শেষে বন্ধুবান্ধব বা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে নির্মল পরিবেশে কে না ঘুরে আসতে চাই ? আপনারই জন্য এমন একটি ক্লান্তি দূর করার এবং পরিবারকে নিয়ে ঘুরে আসার জন্য শ্রেষ্ঠ স্থান হবে আমিনপুর পার্ক। আপনার ছুটির দিন গুলোকে আরো সুখময় করে দিতে আমানিপুর পার্ক সর্বদা প্রস্তুত। সুন্দর ও আকর্ষণীয় সব দেখে আপনার দিনটিকে করে তুলুন স্বর্ণালী স্মরণীয় দিন।

সাজানো গোছানো পরিবেশ ছোট থেকে বড় সবারই পছন্দ হবে এই পার্কটি। পার্কটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি কৃত্রিম সব জিনিসপত্র। বাচ্চাদের আনন্দিত করার জন্য অনেক গুলো রাডসের ব্যবস্থা। আছে একটি কৃত্রিম ঝর্ণা যেখান থেকে দিবারাত্রি জলপ্রপাত ধারা বয়েই চলছে যা দেখতে সত্যিই চমৎকার। রয়েছে একটি লাভ পয়েন্ট যেখান থেকে সবাই বিভিন্ন রকম অঙ্গভঙ্গি দিয়ে ছবি তুলছে সর্বদা। রয়েছে একটি পদ্ম পুকুর যেখানে পদ্ম ফুলে হাতছানি দেয়।

এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক কিছু। পার্কে বসার জন্য রয়েছে অনেকগুলো বেঞ্চের ব্যবস্থা। পার্কের একধারে রয়েছে একটি ছোট একটি গ্রাম যেখানে গ্রামীণ পরিবেশের রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছোট্ট ছোট্ট ঘর আর তার সামনে দিয়ে একটা রেল লাইন। রেল লাইনের উপর দিয়ে কু ঝিকঝিক ট্রেন চলাচল করছে কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর। এইটি এই পার্কের রেল বাগান নামে পরিচিত।এই দৃশ্য নন্দন পার্ক দেখে যে কারোর মনে এর প্রভাব পড়বে।আপনি যদি মৌলভীবাজার এসে মৌলভীবাজারের সবচেয়ে সুন্দর পার্ক দেখতে চান তাহলে আপনাকে আমিনপুর পার্ক থেকে একবার হলেও ঘুরে আসতে হবে।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/ কিভাবে যাবেন

আমানিপুর পার্ক মৌলভীবাজার থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে কুলাউড়ায় অবস্থিত। এই পার্কে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া উপজেলায় আসতে হবে। তারপর কুলাউড়ার দক্ষিণ বাজারে আসতে হবে সেখান থেকে রবির বাজার সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে যে কোনো একটি সিএনজিতে করে এ পার্কে যেতে পারবেন।

কুলাউড়া থেকে রবির বাজার যেতে লাগবে ২৫ টাকা। আর রবির বাজার থেকে পার্কে যেতে লাগবে ১০ টাকা। আপনি যদি রিজার্ভ নিয়ে যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে বেশি মূল্যের পরিবর্তে যেতে হবে। আমানিপুর পার্কের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০টাকা। তবে উচ্চতা ৩ ফুটের নিচে বাচ্চাদের জন্য ফ্রি।সমস্ত রাইড গুলোর মূল্য ২০ থেকে ৩০টাকা। পার্ক সপ্তাহের সাত দিন খোলা থাকে। বাইরে থেকে কোনরকম খাবার নিয়ে পার্কে প্রবেশ করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ।

ঢাকা টু মৌলভীবাজার বাস পরিবহন:

ঢাকা-মৌলভীবাজার ননএসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি-২০২৩

  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ হিনো (Hino) ইকোনমি ক্লাস ৫৭০
  • এনা ট্রান্সপোর্ট হিনো (Hino) ইকোনমি ক্লাস ৫৭০
  • শ্যামলী পরিবহন হিনো (Hino) ইকোনমি ক্লাস ৫৭০

ঢাকা-মৌলভীবাজার এসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি-২০২৩

  • এনা ট্রান্সপোর্ট ৬০০ টাকা

ইতিকথা,
মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রাবার বাগান, চা বাগান, আগর থেকে আতর উৎপন্ন দেখতে অবশ্যই একবার হলেও আপনার আসা উচিত। প্রিয়জনকে নিয়ে অবশ্যই একবার হলেও মৌলভীবাজার থেকে ঘুরে যান এবং দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করে আপনার মনের সুপ্ত বাসনা গুলো পূরণ করার  দাওয়াত রইলো। ধন্যবাদ….

 

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents