Dreamy Media BD

নীল নদের উৎপত্তিস্থল কোথায় এবং কিছু অজানা রহস্য

নীল নদের উৎপত্তিস্থল

জেনে নিন নীল নদের উৎপত্তিস্থল কোথায় ? এবং অজানা অনেক রহস্য

নীল নদের উৎপত্তিস্থল  নীলনদ আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা নীল নদের তীরে গড়ে উঠেছিল। নীলনদের পলির কারনে কৃষকদের ফসল চাষ, জেলেদের মাছ ধরা এবং জীবিকা নির্ভর করত নীলনদের উপর। আফ্রিকা এবং মিশরের কয়েক কোটি মানুষ নীলনদ কে কেন্দ্র করে তাদের জীবন পরিচালিত করত৷ নীলনদের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারনে এটি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য একটি নদী৷ হাজার বছরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইতিহাসের স্বাক্ষি এই নীলনদ। আজকের আর্টিকেলে নীলনদের ইতিহাস এবং কিছু অজানা রহস্য নিয়ে আলোচনা করব। 

পৃথিবীতে মোট সাতটি মহাদেশ আছে যার মধ্যে আফ্রিকা একটি। আফ্রিকা মহাদেশ পৃথিবীর দীর্ঘ তম নদ নীলনদ অবস্থিত। নীল নদের উৎপত্তিস্থল হলো – ভিক্টোরিয়া হ্রদ।

নীলনদের নামকরন

নাহল শব্দ থেকে নাইল বা নীলনদ নামটি এসেছে। নীলনদের অর্থ হচ্ছে প্রবাহমান উপত্যকা। বিখ্যাত গ্রিক কবি হোমার তার ওডিসি কাব্যগ্রন্থে নীলনদ কে ইজিপ্টাস নামে অবিহিত করেন। মিশর ছাড়াও নীলনদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল দেশ হলো সুদান। নীলনদ একেক দেশে একেক নামে পরিচিত। যেমন,  নীলনদ, আল বাহার, বাহর আল নীল, নাহার আল নীল। 

নীলনদের দৈর্ঘ্য এবং নীলনদের অবস্থান

পৃথিবীতে যত প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে তার মধ্যে নদী অন্যতম একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের জীবন ধারনে সাহায্য করে থাকে। প্রাচীন কাল থেকেই নদীর আশেপাশে মানুষ বসতি গড়ে তুলে। নদীর উপর নির্ভর করে পানির চাহিদা,  আমিষের চাহিদা এবং তাদের জীবীকা নির্বাহ করে নদী মাতৃক এলাকার  মানুষজন।

আদি কাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত প্রতিটি সভ্যতা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। নীলনদের মোট দৈর্ঘ্য ৬৬৯৫ কি.মি.।  অনেকের ধারনা নীলনদ শুধু মিশরে অবস্থিত বা মিশরের লোকজন নীলনদের পানি ব্যবহার করে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে নীলনদ আফ্রিকা মহাদেশের মোট ১১ টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দেশগুলো হলো মিশর, সুদান, দক্ষিন সুদান, ইথিয়পীয়,  উগান্ডা, কঙ্গো ,  কেনিয়া, তানজানিয়া, বুরুন্ডি, ইরিত্রিয়া।  

Nil location
Nil location

নীলনদ এর উপনদী  নীল নদের উৎপত্তিস্থল 

দীর্ঘতম নদীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক বা একাধিক উপনদী থাকা। তেমনি ভাবে নীলনদেরও দুটি উপনদী রয়েছে। যথা শ্বেত নীলনদ, নীলাভ নীলনদ। দুটি উপনদীর মধ্যে দীর্ঘতম নীলনদ হচ্ছে শ্বেত নীলনদ। শ্বেত নীলনদ আফ্রিকার মধ্যভাগ থেকে উৎপ্নন হয়ে সর্ব দক্ষিনের উগান্ডা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা এবং দক্ষিন সুদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর নীলাভ নীলনদ ইথিওপিয়ায় উৎপন্ন হয়ে নীলনদ সুদানের দিকে চলে গেছে। নীলনদের এই দুই উপনদী মিলিত হয়েছে সুদানের রাজধানী খাতুমের কাছে আবার একত্রিত হয়েছে। নীলনদ ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে। 

নীলনদের ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য

নীলনদের যে বৈশিষ্ট্য অন্যান্য নদী থেকে আলাদা

নীল নদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যখন অন্য নদীর পানি বেড়ে যায়, তখন নীলনদের পানি কমে যায়। আবার যখন অন্যান্য নদীর পানি কমে যায় তখন নীলনদের পানি বেড়ে যায়। অর্থাৎ নীলনদ এর সাথে অন্যান্য নদীর বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভিন্নধর্মী এই বৈশিষ্ট্যের কারনে দক্ষিন থেকে উত্তরে বয়ে যাওয়া এই নদী কিভাবে উষ্ণ মৌসুমে বন্যায় প্লাবিত হত তা সেই সময়ে সবার কাছে রহস্যময় একটি ব্যপার ছিল প্রাচীন মিশরীয় এবং গ্রিকদের কাছে।

 নীলনদের দান মিশর 

 হেরোডোটাস মিস্রকে নীলনদের দান বলে আখ্যায়িত করেছেন। নীলনদের একটি অংশ পুরোটাই মিশরের মরুভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তাই মিশরের সবাই নীলনদের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল। এমনকি নীলনদের যত গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য বা সাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক যত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে তার সবকিছুই নীলনদের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে। মিশরের অর্থনীতিতেও নীলনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর তাই নীলনদ কে মিশরের দান বলা হয়। 

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার লোকেরা নীলনদ কে অরু বা অর নামে ডাকত। অরু শব্দের অর্থ কালো। প্রতি বছর বন্যায় নীলনদ থেকে আশেপাশের জমিতে কালো রঙের পলি জমত। তখন পুরো অঞ্চল কে দেখলে মনে হত পুরো অঞ্চল বুঝি কালো অন্ধকারে ছেয়ে আছে। এই কালো পলি জমিকে অনেক উর্বর করত। তাই সেখান থেকেই নীলনদ কে তারা অরু বা অর নামে ডাকত। যার দরুন মিশরীয়রা নীলনদের জমা পলি মাটির কারনে ভাল ফসল ফলাত। 

নীলনদ মৃত্যুমুখে পতীত হওয়ার কারন

হাজার হাজার বছর ধরে বয়ে চলা এই নদী মানুষকে বিভিন্নভাবে উপকৃত করেছে। কিন্তু বর্তমানে এখন নীলনদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে। হারিয়ে ফেলছে তার যৌবন। ১৯৭০ সালের দিকে মিশর আসওয়ান হাই ডাম নামে একটি বাধ নির্মান করে তারপর থেকেই বন্যা হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই বাধ এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাসা বাড়িতে পানি সাপ্লাই করা হয় নীলনদের প্রবাহমান নিয়ন্ত্রন করে৷

যে নীলনদ বছরের পর বছর শুধু মানুষকে দিয়ে এসেছে আজ সে নিজেই নি:স্ব হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলেন মিশরের জনসংখ্যা দিন দিন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে যার দরুন নদীর উপর চাপ বাড়ছে।  অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারনেই আজ নীলনদ মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে। শুধু মিশর যে নীলনদ এর ধ্বংসের জন্য দায়ী তা নয় আফ্রিকার আরো এগারটি দেশ নীলনদের পানির উপর সরাসরি নির্ভর করে। যার কারনে নীলনদের পানি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। 

নীলনদ কে ঘিরে মিশরীয়দের কুসংস্কার 

নীলনদের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য মিশরীয় রা সুন্দরী নারীদের সেখানে বলি দিত। সেই সময় মিশরের নীল নদ প্রতিবছর শুকিয়ে যেত।  মিশরীয়রা মনে করত নীলনদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো সুন্দরী যুবতীর পিতা মাতাকে রাজি করিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে নীলনদে ভাসিয়ে দিলে নীলনদের প্রবাহ ফিরে আসত। তাই সেই দিনটিকে তারা অনেক আনন্দ উৎসব করে পালন করত। ইসলামের খলিফা হযরত আমর ইবনে যখন খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন তখন তিনি এই কুসংস্কার প্রথা বন্ধ করে দেন। 

নীলনদের পানি প্রবাহ হওয়ার ঘটনা

হযরত ওমর (রা) পক্ষ হতে নীলনদ কে চিঠি প্রদান করার ঘটনা

প্রচলিত আছে যে নীলনদে যখন বলি দেয়া বন্ধ করেছিল হযরত আমর (রা. )। তখন প্রচুর খরার কারনে নীলনদের পানি প্রবাহিত বন্ধ হয়েছিল। সেই সময় অনেকেই দেশান্তরি হয়েছিল পানির অভাবে। যখন আমর (রা) এই ঘটনার সমাধান চেয়ে হযরত ওমর (রা) কাছে একটি চিরকুট লিখেন।  তখন হযরত ওমর (রা) নীলনদ কে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লেখেন।

চিঠিতে লেখা ছিল”  হে নীলনদ তুমি যদি তোমার পক্ষ হতে এবং তোমার ইচ্ছেমত প্রবাহিত হও,  তাহলে প্রবাহিত হইওনা। আর যদি তুমি এক পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে প্রবাহিত হও এবং তিনি তোমাকে প্রবাহিত হওয়ার ক্ষমতা দান করে থাকেন তা হলে আমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাই তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত হওয়ার তওফিক দান করেন।”  (আল বিদায়া ওয়ন নিহায়া : ৭/১১৪-১১৫; তারিখে দিমাশক : ৪৪/৩৩৬; মিজানুল ইতিদাল : ২/৪৭৫-৪৮৪) এই চিঠি টি হযরত ওমরা (রা) নির্দেষে নীলনদে ফেলে দেয়া হয়েছিল। ফেলে দেয়ার পর সেই রাতেই নীলনদের পানি পুনরায় প্রবাহিত হয়েছিল।  

ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী বহন করে এই নীলনদ। ফেরাউন এর আদেশে নীলনদের পশ্চিমে নির্মান করা হয়েছিল পিরামিড। ধারনা করা হয় নীলনদের ব দ্বীপে প্রায় চার কোটি মানুষ বাস করে। এছাড়াও পিরামিডের পাথর বহন করার জন্য মিসরীয়রা নীলনদ কে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত। প্রাচীন মিসরের লোকেরা নীলনদ কে দেবতা হাপি মনে করত। 

নীলনদের অবদান

৩১০০ অব্দে নীলনদের তীরে গড়ে উঠেছিল সবচেয়ে বড় সভ্যতা। নীলনদ থেকে যে পলিমাটি জমত সেখানে প্রচুর ফসল ফলত। নীলনদে প্রধান ফসল গুলোর মধ্যে রয়েছে যব, রুটির জন্য গম এবং বার্লি। একজাতীয় শন গাছ প্রচুর ফলত নীলনদের পলিমাটিতে। সেই গাছ দিয়ে বানানো হত দড়ি ও কাপড়। আবার প্যাপিরাস নামে এক জাতীয় উদ্ভিদ ছিল যা খাওয়া যেত এবং কান্ড দিয়ে নৌকা বানানো যেত। এই গাছ এর ছাল দিয়েই বানানো হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম কাগজ।

নীলনদ যেমন তার অফুরন্ত ভান্ডার থেকে মাছ এবং শস্য দান করত আবার সব কিছু কেড়েও নিতে দ্বিধা করত না। বর্ষায় নীলনদ ফুলেফেঁপে ভয়ংকর রুপ ধারন করত। কেড়ে নিত মানুষের প্রান সব কিছুকে টেনে নিত তার বুকে। 

নীলনদের কুমিড় নিয়েও অনেক কথা শোনা যায়। সেখানিকার কুমিড় নাকি চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হত। কুমিড় ছাড়াও ছিল প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি।

পরিশেষ

নীলনদ যেমন প্রাচীন কালে মানুষদের কাছে রহস্যময় একটি নদ নামে পরিচিত ছিল। আধুনিক যুগেও মানুষ এর রহস্য নিয়ে বিস্মিত। অন্যান্য নদীর থেকে বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট এবং বিশেষ অবদানের কারনে যুগ যুগ ধরে মানুষ মনে রাখবে এই বিষ্ময়কর নদ কে। বিষ্ময়কর এই নীলনদ এখন মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে সবার উচিৎ বিষ্ময়কর এই নদীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা। তবেই টিকে থাকবে এই নদ কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কোটি কোটি শহর বা গ্রামের মানুষ।

আরো পড়ুন –

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents