মধু একটি ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার। মধুতে রয়েছে আ্যন্টিওক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন পুষ্টির সমীকরণ যা ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে খারাপ ব্যকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। রূপচর্চার জন্য মধু খুবই সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্যকর উপাদান। মধু প্রত্যেকের বাসায় কমবেশি থাকে ফলে মধুর মাধ্যমে সহজেই আমরা ত্বকের যত্ন নিতে পারি। খুব কম সময়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা চাইলে প্রতিদিন ত্বকে মধু লাগানোর বিকল্প নেই। এটি শুধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় না ত্বকের দাগ দূরীকরনে এর জুড়ি নেই। আজ আমরা আলোচনা করব মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়।
মধু কি ত্বক ফর্সা করে
মধু ত্বক ফর্সা করে কিনা এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে প্রথমে জানতে হবে মধুর কার্যকারিতা সম্পর্কে। মধুতে পটাসিয়াম, জিংক, ভিটামিন বি, আ্যন্টিওক্সিডেন্ট ইত্যাদি রয়েছে। এই উপাদানগুলির রস ত্বকের গভীরে পৌঁছিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের কালোভাব দূর করে ত্বককে করে নরম ও উপকারি আদ্রভাব বজায় রাখে।
তবে প্রশ্ন জাগতে কোন মধু বেশি কার্যকারী? বিশেষজ্ঞগন বলেছেন বাজারে যে প্রক্রিয়াজাত মধু পাওয়া যায় সেটার থেকে বেশি ভালো হয় বাড়ির পাশে যে অপ্রক্রিয়াজাত খাঁটি, টাটকা মধু পাওয়া যায় সেটি ব্যবহারে এবং যে মধু যত গাড়ো সে মধু তত ফলপ্রসূ। কারন যে মধু বেশি গাড়ো সে মধুতে বেশি পরিমানে আ্যন্টিওক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বককে করে ফর্সা। মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলো সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানতে পারবো এই আর্টিকেলটি পড়ে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মধু
ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর করার জন্য মধু একটি জাদুকরী উপায়। সারাদিন ত্বক তেলতেলে থাকলে অস্বস্তির যেন শেষ নেই তাই ঘরোয়া উপকরন মধুর মাধ্যমে আমরা চাইলে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি।
মধুর সাথে একটু কাঠবাদামের গুড়া মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। মধু ত্বককে এক্সফলিয়েট করে মুখের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে ত্বককে টানটান রাখে। মুখের তেলেভাব দূর করতে মধু ও কলার মিশ্রণ খুবই উপাদেয় উপকরন।
একটি কলার সাথে এক চামচ মধু ভালোভাবে চটকিয়ে মুখে লাগাতে হবে এরপর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং একটি তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছে ফেলতে হবে। মধুর গুনের যেন শেষ নেই। আমরা চাইলে মধু কোন কিছুর মিশ্রণ ছাড়াও দিতে পারি। মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে মধুর সাথে লেবু মিক্সড করে মুখে লাগানো যায় যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সাথে সাথে ত্বকের জীবানু প্রতিহত করে ত্বকের লোমকূপ উন্মুক্ত রাখে।
মধুর কয়েকটি ফেইসপ্যাক
বাজারের পণ্য একশ পার্সেন্ট প্রাকৃতিক হয় না বরং বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে। তাই আপনার সৌন্দর্য ধরে রাখতে বাড়িতেই মধুর ফেইসপ্যাক বানিয়ে ইউজ করতে পারেন। নিচে মধুর কিছু ফেইসপ্যাক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:-
মধু ও বেসন
এক চামচ মধুর সাথে দুই চামচ বেসন মিক্সড করে মুখে লাগিয়ে পরিপূর্ণভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। আধাঘণ্টা পর ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। বেসন ও মধুর মিশ্রণ মুখের ওয়েলিভাব হ্রাস করে আপনার ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে।
মধু ও মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি একধরনের কাদামাটি যা মুখের প্রসাধনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুই চামচ মুলতানি মাটির সাথে দেড় চামচ মধুর পেস্ট বানিয়ে মুখে ২০ মিনিট রাখলেই চলবে। এটি ত্বকের ছিদ্রের ভেতরে জমিয়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে এবং ব্রণ শুকিয়ে ফেলে। এছাড়া মুলতানি মাটি ত্বকের ওয়েলিভাব কমিয়ে ভারসাম্য ঠিক রাখে।
মধু ও তুলসি পাতা
বিশেষজ্ঞগন বলেছেন ১২-১৪টি তুলসি পাতা বেটে এর রস ছেঁকে নিতে হবে। কটন বা তুলো দিয়ে এই রসটুকু মুখে দিতে হবে আর বাকি পাতার অংশটুকু এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। রসটুকু শুকিয়ে গেলে বাকি মিশ্রণ মুখে ২০ মিনিট রাখলেই হবে। এই ফেইস প্যাক ত্বকে লাগালে ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে ত্বক আর্দ্র রাখে। যাদের ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা এই ফেইস প্যাক সপ্তাহে দুদিন ইউজ করতে পারেন।
মধু ও পাকা পেঁপে
পাকা পেঁপের দু-তিন টুকরো নিয়ে এক চামচ মধুর সাথে পেস্ট করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। পেঁপেতে রয়েছে এনজাইম যা ত্বকের সকল বর্জ্য বের করে দেয় এবং ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে। সপ্তাহে একবার এই ফেইস প্যাক লাগালেই হবে।
মধু ও আ্যলোভেরা
মধু ও আ্যলোভেরা ত্বকের গ্লো বৃদ্ধি করে। এই দুই উপকরনের সাথে একটু টকদই মিশিয়ে ত্বকে ভালোমতো ম্যাসাজ করতে হবে। এই ফেইস প্যাক ইউজ করলে আপনার ত্বক হবে জাজ্বল্যমান এবং দাগবিহীন সফট ত্বক।
মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় হিসেবে মধুর সাথে কাচা দুধ, হলুদ, কলা মিক্সড করে মুখে লাগানো একটি অতিউত্তম ফেইস প্যাক।
মধু দিয়ে ফেসিয়াল করার নিয়ম
আর নয় পার্লারে যাওয়ার তাড়া আপনি চাইলে বাড়িতেই খুব সহজে ফেসিয়াল করতে পারেন শুধু প্রয়োজন কিছু অলস সময় আর বাড়তি কিছু উপকরন।
প্রথমেই মধু মুখ, গলা ও ঘাড়ে দিয়ে কিছুক্ষন রাখব এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলব। এটি কৃত্রিমতা বর্জিত ক্লিনজার যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। এরপর মধুর সাথে এক চামচ চিনি মিশিয়ে মুখে স্ক্র্যাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এটি ত্বকের ময়লা দূর করে ত্বক এক্সফলিয়েট করে। ত্বকের ব্লাকহেডস, হোয়াইটহেডস, শুষ্কভাব কমিয়ে আনে এবং ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনে।
শেষে আর একটা কাজ করতে পারি মধুর সাথে শসার রস মিশিয়ে টোনার করতে পারি এবং এই টোনার দিনে অন্তত দুইবার মুখে স্প্রে করতে পারি। এ সবকিছুর সমন্বয়ে ত্বকের হাজারো সমস্যা প্রতিহত করা সম্ভব।
মধু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
প্রাকৃতিকভাবে মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলো জানার পাশাপাশি এটিও গুরুত্ত্বপূর্ণ যে কিভাবে মধুর প্যাক মুখে লাগালে ব্রণ দূর করা যায়। এখন এই বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করব:
অল্প বয়স থেকে বেশি বয়স কমবেশি সবাই ব্রণের সমস্যায় জর্জরিত। ব্রণ দূর করতে মধু একপ্রকারের ঔষধি ভেষজ। মধু তুলসি পাতার সাথে মিক্সড করে ত্বকে দিলে ব্রণ কমে যায়। এটি সপ্তাহে একবার মুখে লাগালেই চলবে। তবে ঠান্ডা পানির চেয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ত্বক ভালো ক্লিনজিং হবে।
মধুতে রয়েছে আ্যন্টিফাংগাল এবং আ্যন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বকের জ্বালাপোড়া কমিয়ে ব্রণ থেকে রক্ষা করে। ব্রণের জন্য ত্বকে অনেক দাগ রয়ে যায় নিয়মিত মধু ব্যবহারে এই দাগগুলো নিরাময় হয়। ওয়েলি ত্বক হলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এজন্য মধুর সাথে একটু লেবু মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখলে ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর হবে যা লোমকূপের জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং ব্রণ হতে সুরক্ষা দেয়।
ছেলেদের মুখে মধু মাখার নিয়ম
ছেলেরাও তাদের মুখের যত্নে মধু ব্যবহার করতে পারে। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ভীড়ে একটু ত্বকের যত্ন খুবই প্রয়োজন। সপ্তাহে একবার অন্তত ১ চামচ মধু, এক চামচ কফি, এক চামচ লেবুর রস পেস্ট করে মুখে লাগালে ত্বক হবে কোমল ও জ্বলজ্বলে। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারি ফেইস প্যাক এছাড়া তেলতেলে ভাব দূর করতে সহায়তা করে এবং ব্রণ কমিয়ে দাগ দূরীভূত করে।
শেষ কথা
মধু সর্বগুন সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ। মধুর ক্লিনজার, ফেইস প্যাক, ফেসিয়াল সবকিছু ত্বকের জন্য খুবই কার্যকর। এটি যেন একাই একশ কারো সাথে তুলনা চলে না। মধু ত্বকের মৃত কোষ বা নিস্তেজ কোষগুলি প্রতিহত করে ত্বক করে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। মধু শুধু শুধু মুখে না লাগিয়ে কিছু উপকরনের সাথে মিশিয়ে লাগালে সেটি বেশি ফলপ্রসূ। মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় অনেক রয়েছে তবে নির্দিষ্ট উপায়ের মাধ্যমে ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্ন নিলে ত্বক হবে ফর্সা, কোমল ও দাগমুক্ত।