চুল পড়েনা এমন মানুষ হয়ত পাওয়া যাবে না। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তবে মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়লে সেটি অবশ্যই ভাবনার বিষয়। লম্বা, ঘন ও মসৃন চুল কে না পছন্দ করে এমনকি বিয়ের পূর্বেও চুলের বিষয় নিয়ে যাচাই-বাছাই চলে। লম্বা সিল্কি ও ঘন চুল যতটা আপনার সৌন্দর্য বাড়ায় চুল পড়ে যাওয়ার কারনে মেয়েরা তো টেনশনে পড়ে যায়। অনেকের বংশানুক্রমিক চুল ঝরার বা থাইরয়েড এর সমস্যার কারনে চুল পড়ে। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নিন চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে।
চুল পড়া বন্ধ ও চুলের গোড়া শক্ত করার প্রাকৃতিক উপায়
চুল পড়া রোধ করতে আমরা সবাই চাই আসুন জেনে নেই প্রাকৃতিক ভাবে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়:-
নারিকেল তেল ও দুধ
চুলের জন্য তেল খুব উপকারি। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যেমন ভিটামিন প্রোটিন জরুরি তেমনি চুলকে স্বাস্থজ্জ্বল করতে তেল জরুরি। নারিকেল তেল চুলকে গোড়াকে শক্ত করে আর নারিকেল দুধ মাথার ত্বকে সঠিক পুষ্টিগুন যোগায় এবং চুল পড়াকে বলে টাটা।
কালোজিরার তেল
কালোজিরার তেল চুলের শুষ্কভাব বজায় রাখে ও মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে। এই তেল চুলের ফাটা দূর করে গোড়াকে করে শক্ত। খুব ভালো হয় প্রতিদিন কিছু সময় তেল মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে এটি চুলের বৃদ্ধি করে।
আমলকির তেল
আমলকিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি রয়েছে যা চুলের অতিদ্রুত পাক ধরা হতে বাঁচায় এবং এর ফ্যাটিএসিড চুলের ফলিকলকে গোড়া থেকে মজবুত করে। শুধু তেল নয় আপনি আমলকি কাঁচাও খেতে পারেন এটি চুলের সাথে আপনার ত্বককেও সুন্দর করে তোলে।
ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর ওয়েল খুব ঘন তেল। এটি দিতে হয় অন্য তেলের সাথে মিক্সড করে। নিয়মিত কাস্টার ওয়েল চুলে দিলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজায়। এতে রয়েছে ভিটামিন ই, প্রোটিনসহ নানা ধরনের মিনারেলস যা চুলের পুষ্টি যোগায় এবং চুলের পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে বেস্ট ওয়েল।
পেয়াজের তেল
আ্যন্টিওক্সিডেন্ট চুলের জন্য প্রয়োজন যা পেয়াজের তেলে পুরোপুরিভাবে আমরা পেয়ে থাকি।কারো যদি এলোপেসিয়া রোগ থাকে যার জন্য চুল উঠে তবে তিনি এই তেল ইউজ করতে পারেন এটি তার জন্য মহৌষধ।
নিমের তেল
নিমে রয়েছে আ্যন্টিব্যাকটেরিয়াল উপকরন যা চুলের খুশকি দূর করে এবং চুলকে উকুনমুক্ত করে। আরও রয়েছে ভিটামিন ই যা চুল পড়া ঠেকাতে ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং জীবাণু সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়া বন্ধের কিছু ঘরোয়া হেয়ার প্যাক:
মেথির প্যাক
২ চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে সকালে ব্লেন্ড করে এর সাথে এক চামচ নারিকেল তেল বা অলিভ ওয়েল মিশিয়ে চুলে আধাঘণ্টা লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করতে হবে। এটি চুল পড়া রোধ করে চুলের গোড়া ভেতর থেকে মজবুত করে।
আলুর প্যাক
আলু যেমন ত্বকের কালো দাগ দূর করে তেমনি চুল পড়া বন্ধ করে। দুইটি বা তিনটি আলুর সাথে একটি লেবু একটু টক দই মিক্সড করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে ম্যাশ করতে হবে এবং একঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
আ্যলোভেরা জেল
আ্যলোভেরা জেলের সাথে একটি ডিম মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে আধাঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুম। আ্যলোভেরায় রয়েছে আ্যন্টিওক্সিডেন্ট ও মিনারেলস যা চুলের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করে।
তেজপাতার রস
১০-১২ টা তেজপাতা পানির সাথে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর পানি ঠান্ডা হলে তা একটি স্প্রে বোতলে ভরে রেখে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে চুলের গোড়ায় স্প্রে করলে চুলপড়া খুব দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে এবং নতুন চুল গজাবে।
চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ
প্রতিদিন ১০০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। তবে এর বেশি চুল পড়া টা অবশ্যই চিন্তার। চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে আমরা তেল, শ্যাম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি অনেক প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করি। তবে অনেকসময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই আমরা ঔষধ সেবন করি যা আমাদের চুলের সাথে শরীরেরও ক্ষতি করে।
চুল পড়া রোধে দুটি ঔষধ খুব প্রচলিত- একটি মিনোক্সিডিল যা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য আরেকটি শুধু পুরুষের জন্য ফিনাস্টেরাইড বিশেষ করে টাক মাথার পুরুষেরা এটি সেবন করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এগুলো কার্যকরী উপায় না আর না পারে চুলপড়া পুরোপুরি রোধ করতে।
ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই চুল পড়ে যাওয়া চিন্তার বিষয়। চুল ছাড়া যেন সৌন্দর্যের ষোলআনা পূ্র্ণ হয় না তাই প্রাণবন্ত চেষ্টা থাকে কিভাবে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় আলোচনা করা হলো:
- ভিটামিন ই সমৃদ্ধ যেকোন তেল যা চুল পড়া প্রতিরোধ করে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াবে
- চুলে ভালোভাবে শ্যাম্পু করা অনেকসময় ইনফেকশনের কারনে চুল উঠে যায়
- প্রোটিন, আয়রনযুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা কেননা সঠিক ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে যায়
- সপ্তাহে একবার অন্তত চুলে হেয়ার প্যাক লাগানো যেমন- মেথি বা মেহেদি প্যাক
- স্ট্রেস কমানোর সাথে সাথে পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে
গরমে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
গরম আসলে যেন চুল পড়ার হার বৃদ্ধি পায়। গরমে প্রকৃতি যেমন রুক্ষশুষ্ক হয় তেমনি চুল হয় নির্জীব। এইসময় বেশি ঘামঝরে এজন্য চুল ভালোভাবে শুকোতে হবে নইলে চুলে ভেজাভাব থেকে যাবে। সারাদিনের কাজে চুলে ময়লা লেগে যায় ঘাম বাড়তি জীবাণু করে তাই মাথার স্ক্যাল্প শ্যাম্পু দিয়ে ক্লিন করতে হবে। সপ্তাহে একবার কন্ডিশনার ইউজ করতে হবে।
শ্যাম্পু করার একঘণ্টা পূর্বে তেল দিতে হবে এতে চুল প্রোটিন পাবে। পার্লারে গিয়ে চুল কার্ল, স্ট্রেইট না করা। এতে চুল রুক্ষশুষ্ক হয়ে পড়ে। রোদে স্কার্ফ বা সুতি ওড়না ব্যবাহার। প্রোটিনযুক্ত খাবারের সাথে তরতাজা শাকসব্জি ও ফলমূল খেতে হবে এবং বাইরের হেভি খাবারকে না বলতে হবে।
শীতে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
শীত প্রকৃতিকে নিষ্প্রাণ করে দেয় আর চুলকে প্রাণহীন বানিয়ে দেয় তাই চুলের যত্নে অলসতাকে ছুটি পাঠাতে হয়। শীতে আবহাওয়া খুব শুষ্ক থাকায় চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ ও আদ্রহীন। যার ফলে খুশকির রাজত্ব চলে। অতিরিক্ত খুশকির জন্য মাথার স্ক্যাল্প তৈলাক্ত হয়ে পড়ে যা চুলের গোড়া নরম করে ফেলে। ফলে প্রচুর পরিমানে চুল উঠে যায়। এছাড়াও চুলের আগা ফেটে যায়।
এইসব সমস্যার সমাধানে হারবাল সমৃদ্ধ আমলা তেল, আ্যলোভেরাযুক্ত তেল যা চুলের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে। আ্যলোভেরার সাথে একটু পেয়াজের রস, রসুনের রস, গ্রীনটি মিশিয়ে চুলে দিলে ময়েশ্চারাইজার এর কাজ করে এতে চুল হয় নরম, সিল্কি এবং মজবুত। শীতে হরেক রকমের সবজি পাওয়া যায় পালংশাক, বিটরুট, গাজর ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, পটাসিয়াম যা চুল পড়া রোধ করতে খুব কার্যকরী।
শেষ কথা
চুল আমরা সবাই ভালবাসি। চুল ঝরে গেলে মনে যেন গ্রীষ্মের খাঁখাঁ শুরু হয়ে যায় কারন চুল যে সৌন্দর্যের রাজধানী। তবে হাজারো রাসায়নিক প্রোডাক্টস অথবা হারবাল প্রডাক্টস যেইভাবেই যত্ন নিই দিনশেষে আমাদের প্রয়োজন একটি হেলদি লাইফস্টাইল। যেখানে থাকবে না অতিরিক্ত চিন্তা, স্ট্রেস, খাবারের ও ঘুমের অনিয়ম তবেই আমাদের শরীর হেলদি থাকবে সেইসাথে আমাদের চুলও থাকবে মজবুত। চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জানতে পারলাম। যাদের চুল পড়ে উপরের টিপস গুলো ফলো করতে পারেন। আশা করি আপনার চুল পড়া খুব দ্রুত বন্ধ হবে।