Dreamy Media BD

১০ জন বিখ্যাত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী

বিখ্যাত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী

বাঙালি বা বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানে অবদান রহস্যজনকভাবে তেমন গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয় না। বাঙালি হিসেবে নিজেদের সংস্কৃতি ও সাহিত্যপ্রেমী পরিচয় দিতে আমরা বেশি পছন্দ করি। কিন্তু বাঙালির বিজ্ঞান চর্চা একসময় বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও আলোচিত ছিল। শত বছর আগে আইনস্টাইন থেকে স্টিভেন হকিংয়ের সহকর্মী ছিল বাঙালি বিজ্ঞানীরা। আধুনিক দুনিয়ার বহুতল ভবনের রূপকার আরেক বাঙালি বিজ্ঞানী। তাদের সহ ইতিহাসের সেরা ১০ বাঙ্গালী বিজ্ঞানীকে নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের লেখাটি।

১। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, শিক্ষক, ও শিল্প উদ্যোক্তা। তিনি ভারতের প্রথম শিল্প প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল কেমিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কারি (I) নাইট্রেটের আবিষ্কারক

প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হেয়ার স্কুল থেকে ১৮৮১ সালে এফএ পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৮৪ সালে তিনি গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ১৮৮৭ সালে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং ১৮৮৮ সালে রসায়নে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৮৮ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে,  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

১৮৯২ সালে প্রফুল্লচন্দ্র রায় বাঙালিদের ব্যবসায়িক অনাগ্রহ ও হীনমন্যতা দূর করার লক্ষ্যে মাত্র ৭০০ টাকা বিনিয়োগে নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে ১৯০১ সালে এই কারখানা কলকাতার মানিকতলায় স্থানান্তরিত করা হয়।

প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৯৫ সালে মার্কারি (I) নাইট্রেট (মারকিউরাস নাইট্রাইট) আবিষ্কার করেন। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।

১৯০৯ সালে তিনি নিজ জন্মভূমিতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে তিনি পিতার নামে আর,কে,বি,কে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৮ সালে তিনি বাগেরহাট জেলায় পি.সি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদানের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯২৯ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে রায়বাহাদুর উপাধি লাভ করেন। ১৯৩০ সালে তাকে লন্ডন রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।

মহান বাঙালি বিজ্ঞানী, প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

২। মেঘনাদ সাহা

মেঘনাদ সাহা ছিলেন বাংলার ইতিহাসে আরেক সফল বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর  ঢাকা জেলার শেওড়াতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন।

মেঘনাদ সাহা তার তাপীয় আয়নবাদ তত্ত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই তত্ত্বটি নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মগুলো ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। এই তত্ত্বের জন্য তিনি ১৯৩০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। তবে নোবেল কমিটি তার কাজকে “আবিষ্কার” হিসেবে বিবেচনা না করায় তিনি পুরস্কার পাননি।

মেঘনাদ সাহা পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনার মত গুরুত্বপূর্ণ সব কাজে অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৩১ সালে ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স, ইন্ডিয়া এবং ১৯৩৪ সালে ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এই মহান বাঙালি বিজ্ঞানী কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

৩। ড.কুদরাত-এ-খুদা

ড.কুদরাত-এ-খুদা ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

কুদরাত-এ-খুদা রসায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা করেছেন। তিনি পাটকাঠি থেকে পারটেক্স কাঠ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা একটি খুবই উচ্চমানের দৃঢ় কাঠ। তিনি সমুদ্রের পানি থেকে লবণ, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড ও ব্রোমিন উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এছাড়াও তিনি বনৌষধি, গাছ গাছড়ার গুনাগুন, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেছেন।

অপরদিকে, কুদরাত-এ-খুদা একজন শিক্ষাবিদ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৭২ সালে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সভাপতি ছিলেন। এই কমিশনের রিপোর্ট, যা “ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট” নামে পরিচিত, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনে ও আধুনিকায়নে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বিখ্যাত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু
বিখ্যাত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু

৪। জগদীশ চন্দ্র বসু

জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ( বাংলাদেশ) অঞ্চলের মুন্সীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন পদার্থবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা ছিলেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক এবং গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচিত হন

তিনি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে

জগদীশ চন্দ্র বসু ১৯০১ সালে রয়েল সোসাইটির একটি বক্তৃতায় উদ্ভিদের বৈদ্যুতিক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেন। তিনি দেখান যে, উদ্ভিদও প্রাণী এবং মানুষের মতো উত্তেজনা অনুভব করতে পারে এবং সাড়া দিতে পারে। তার এই আবিষ্কারটি উদ্ভিদ বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।

তিনি উদ্ভিদের বৈদ্যুতিক প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করার জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। এই যন্ত্রটিকে অনুরণন মাপক বলা হয়। তিনি এই যন্ত্রটি দিয়ে  বিভিন্ন উদ্ভিদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তিনি প্রমান দেখান যে, উদ্ভিদ আলো, তাপ, পানি, এবং অন্যান্য উদ্দীপনায় সাড়া দেয়।

জগদীশ চন্দ্র বসু তার গবেষণার ফলাফল ১৯১০ সালে একটি বইয়ে প্রকাশ করেন। এই বইটির নাম “জীব ও জড়ের সাড়া“। তিনি এই বইতে দেখান যে উদ্ভিদও প্রাণী এবং মানুষের মতো একটি জটিল এবং সংবেদনশীল জীব।

জগদীশ চন্দ্র বসু বেতার প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি ১৮৯৫ সালে প্রথমবারের মতো অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফল হন। এই আবিষ্কারের ফলে রেডিওর আবিষ্কার সম্ভব হয়।

আইনস্টাইন বসুকে একজন “বিশ্বমানের বিজ্ঞানী” বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “জগদীশচন্দ্র বসু যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত।

জগদীশচন্দ্র বসুর আবিষ্কৃত, বেতার আধুনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে রাডার, টেলিভিশন, মহাকাশ যোগাযোগসহ নানা ক্ষেত্রে তারবিহীন প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

৫। সত্যেন্দ্রনাথ বসু

অনেকেই ভাবেন, ইংরেজি ছাড়া বিজ্ঞান হয় না, তাদের উদ্দেশ্য, আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদানকারী বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী, সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছেন,

“যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না”

শুধু এই উক্তি দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হন নি, বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান পরিচয় নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন।

১৯২৪ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন সময়ে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম তেজস্ক্রিয়তা নীতিকে একটি নতুন উপায়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি দেখান যে, ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের পরিবর্তে, কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের নীতি ব্যবহার করেও এই নীতিকে প্রতিপাদন করা সম্ভব। এই কাজের জন্য একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন, যা পরবর্তীতে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান নামে পরিচিত হয়।

বসুর প্রবন্ধটি প্রথমে প্রকাশের জন্য জার্নাল আগ্রহী ছিল না। অবশেষে, তিনি এটি আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে পাঠান। আইনস্টাইন প্রবন্ধটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে Zeitschrift für Physik সাময়িকীতে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন।

বসুর এই কাজের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন এবং ভারতের বাইরে গবেষণার সুযোগ পান। তিনি দু’বছর ইউরোপে অবস্থান করে লুই ডি ব্রগলি, মারি ক্যুরি এবং আইনস্টাইনের সাথে কাজ করেন।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।

৬। জামাল নজরুল ইসলাম

জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বাংলাদেশী পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণ করেন।

জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি) কাজ করেন। এখানে তিনি আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতেন এবং এই সূত্রে স্টিভেন হকিংয়ের সঙ্গে পরিচিত হন (অনেকে দাবি করেন তারা রুমমেট ছিলেন)।

জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

জামাল নজরুল ইসলামের গবেষণামূলক কাজ গুলো মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি, মহাকর্ষ, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং মহাজাগতিক রশ্মির উপর ব্যাপক অবদান রেখেছে। তিনি মহাবিশ্বের বিবর্তনের একটি মডেল তৈরি করেন যা, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং ক্রমবর্ধমান গতিবিধি ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি, তিনি মহাকর্ষীয় ব্ল্যাক হোলের ধারণার উপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।

জামাল নজরুল ইসলামের গবেষণাগুলি বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০৫) ।

জামাল নজরুল ইসলাম ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ চট্টগ্রামে মারা যান। তিনি আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে গেছেন।

৭। ফজলুর রহমান খান (এফ আর খান)

শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের নকশা প্রণয়নকারী, বিশ্ব বিখ্যাত বাংলাদেশী-আমেরিকান স্থপতি ও প্রকৌশলী, ফজলুর রহমান খান।  একজন প্রকৌশলী হিসাবে, তিনি তার কর্মজীবনে বেশ কিছু বিশ্ববিখ্যাত করেছেন। তাই, তাকে বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীও বলা হয়।

ফজলুর রহমান খান ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ সনদ এবং ১৯৫৫ সালে তত্ত্বীয় ও ফলিত বলবিজ্ঞান ক্ষেত্রে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

ফজলুর রহমান খান তার কর্মজীবনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হল শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার। এই ভবনটি ১৯৭৩ সালে বিশ্বের উচ্চতম ভবন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই মর্যাদা ধরে রাখে।

ফজলুর রহমান খানের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে:

  • শিকাগোর জন হ্যানকক সেন্টার
  • জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হজ্ব টার্মিনাল
  • বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য নকশা

ফজলুর রহমান খান একজন মেধাবী স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের গর্ব।

আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের রহস্যময় অপরাধের জগৎ

৮। সমীর কুমার সাহা

সমীর কুমার সাহা একজন বাংলাদেশী অণুজীববিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি ডায়াগনস্টিক বিভাগের অধ্যাপক, সিনিয়র পরামর্শদাতা এবং বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক। তিনি ২০২১ সালে গবেষণায় একুশে পদক লাভ করেন।

সমীর কুমার সাহা নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এবং এন্টেরিক জ্বর বিশেষজ্ঞ বিশেষত পেডিয়াট্রিক সংক্রামক রোগগুলির নিয়ে অনেক গবেষণা করেন। গবেষণার মাধ্যমে তিনি এই রোগগুলির প্রকৃত বোঝা, তাদের কার্যকারক জীব, ওষুধ প্রতিরোধের নিদর্শন এবং সেরোটাইপ ইত্যাদি  বিষয় নিয়ে কাজ করেন।

সমীর কুমার সাহার গবেষণা বাংলাদেশে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তিনি মেনিনজাইটিস এবং নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী দুটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মূল ভূমিকায় ছিলেন। এটি আমাদের দেশের শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

উল্লেখ্য যে, সমীর কুমার সাহা অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহার পিতা।

৯। মাকসুদুল আলম

মাকসুদুল আলম পেঁপে, রাবার, পাট এবং ছত্রাক এর জিন নকশা আবিষ্কারের বিখ্যাত। তিনি ১৯৫৪ সালে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিনতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

মাকসুদুল আলম ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৮ সালে বিভাগের চেয়ারম্যান যোগ দেন।

মাকসুদুল আলম তার গবেষণায় উদ্ভিদের জিন নকশা এবং বংশগতির বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি পেঁপে, রাবার, পাট এবং ছত্রাক সহ বিভিন্ন উদ্ভিদের জিন নকশার আবিষ্কারে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মাকসুদুল আলমের গবেষণা ফসল উৎপাদন এবং কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তার গবেষণার ফলে নতুন জাতের উদ্ভিদ উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে যা – রোগ প্রতিরোধী, উচ্চ ফলনশীল এবং পরিবেশ বান্ধব।

বিজ্ঞানে ব্যাপক অবদানের জন্য, মাকসুদুল আলম বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি পদক এবং একুশে পদক লাভ করেন।

১০। ডঃ আতাউল করিম

ডঃ আতাউল করিম আরেক বিশ্ব বিখ্যাত বাংলাদেশি-মার্কিন বিজ্ঞানী।  লাইন স্পর্শ না করে ( চুম্বক শক্তি ব্যবহার করে) চলাচলকারী ট্রেন আবিষ্কারের জন্য তিনি বিখ্যাত। তিনি বর্তমান বিশ্বের সেরা ১০০ জন বিজ্ঞানীর একজন।

ডঃ আতাউল করিম ১৯৫৫ সালে বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যাট আমহার্স্ট থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ডঃ আতাউল করিম ১৯৯২ সালে ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটি তে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের প্রধান হিসাবে যোগ দেন।  এবং মাত্র দেড় বছরে চুম্বক শক্তি ব্যবহার মাধ্যমে চলাচলকারী ট্রেনের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন।

ডঃ করিমের আবিষ্কৃত এই ট্রেনটি অত্যন্ত দ্রুতগতির  ও নিরাপদ। এটি প্রতি ঘণ্টায় ১০০০ মাইল বেগে চলতে পারে, জা যে কোন পরিবহন বিমানের থেকে বেশি। অপরদিকে, এই ট্রেনের নির্মাণ খরচ অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় অনেক কম।

এই ছিল সেরা বাঙালি বিজ্ঞানিদের নিয়ে আমাদের আয়োজন। এখানে ব্যাবহারক্রিত ক্রমিক সংখ্যাগুলো দ্বারা কারও অবস্থান বোঝনো হয়নি।  কেননা, সব বিজ্ঞানীই তাদের অবদানে আমাদের দেশ জাতি ও দুনিয়াকে সমৃদ্ধ করেছেন। এনারা ছাড়াও আরও অনেক বাঙালি বিজ্ঞানী আছেন যাদের এই নিয়ে আজকে লেখা হয়নি। হয়ত লেখা হবে অন্য কোনদিন তাই আমাদের সাথে থাকুন, নিয়মিত পড়ুন।

লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ

Source: 

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents