Dreamy Media BD

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহ

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহ

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহ

রাজশাহী বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন শহর গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সুন্দর। রাজশাহী বিভাগ জুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক কিছুর সন্ধান মিলেছে এই বিভাগে। আজকের এই আর্টিকেল পড়লে রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে বিস্তর ধারনা পাবেন 

পুঠিয়া রাজবাড়ি (Puthiya Rajbari)

পুঠিয়াবাড়ি রাজবাড়ি রাজশাহীর অন্যতম একটি প্রাচিন স্থাপনা। এটি রাজশাহী জেলা থেকে ৩২ কিমি পূর্বে নাটোর মহাসরক অভিমুখে অবস্থিত। এই রাজবাড়িটি মহারানী হেমন্তকুমারী দেবির বাসভবন। এই জমিদার বাড়িটি পাচআনি জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে যত প্রাচীন প্রত্ন-ভারতীয় নিদর্শন রয়েছে তারমধ্যে পুঠিয়া জমিদার বাড়ি অন্যতম। মহারানী হেমন্তকুমারী ১৮৯৫ সালে ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যকে অনুসরন করে আয়তাকার দ্বিতল এই জমিদার বাড়ি স্থাপন করেন। 

দ্বিতল এই জমিদার বাড়িটি দেখতে মুগ্ধ হওয়ার মতই। বাড়ির সামনের যে  স্তম্ভ  তার মধ্যে শিল্পীর নকশা, অলংকরন, বাহারী সুনিপুন  কাঠের কাজ, প্রতিটি কক্ষের দেয়াল ও দরজার উপর বাহারি ফুল ও লতাপাতার কাজ দারুন নির্মান শৈলির পরিচয় বহন করে৷ এই রাজবাড়িটির ছাদ অনেকটাই সমতল,  ছাদে রয়েছে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং বাড়িটিতে অনেক  টালি ব্যবহৃত হয়েছে। সে সময় রাজবাড়ির পরিবারের সদস্যদের জন্য বাড়ির চারপাশে পরীখা খনন করা হয়েছিল। 

পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এ বাড়িটিতে ছয়টি দিঘী রয়েছে। প্রতিটি দিঘীর আয়তন ছয় একর করে৷ বিশালাকৃতির এই দিঘীর জন্য জমিদার বাড়িটিতে বাড়তি সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। এই জমিদার বাড়ির রানী অনেক ধর্ম ভিরু ছিলেন। এখানে রয়েছে ছয়টি বেশ বড় মন্দির এবং সবচেয়ে বড় শিবমন্দিরও রয়েছে। শিবমন্দির ছাড়াও রয়েছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির এবং দোলমলঞ্চ। পোড়ামাটির কাজ যে কোনো জিনিসকে বাড়তি সৌন্দর্য এনে দেয়। এই জমিদার বাড়িটির প্রতিটি মন্দিরে রয়েছে সুনিপুন হাতে গড়া পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। মন্দির গুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মন্দির হচ্ছে জোরবাংলো মন্দির, বাংলো মন্দির, এবং পঞ্চরত্ন। দিঘী এবং মন্দির ছাড়াও রয়েছে স্নানের ঘাট এবং অন্দরমহল মিলিয়ে বিশাল রাজবাড়ি প্রাঙ্গন। 

 

যেভাবে পুঠিয়ে রাজবাড়ি যাবেন? 

ঢাকা থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ি বাস ট্রেন দুই ভাবেই যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে পুঠিয়ে রাজবাড়ি যেতে হলে প্রথমে রাজশাহী যেতে হবে। রাজশাহী থেকে পুঠিয়ার দূরত্ব ৩৪ কিমি এবং নাটোর থেকে পুঠিয়ার দূরত্ব ১৮ কিমি। রাজশাহী – নাটোর মহাসরক থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ি যেতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে।

মহাস্থানগড় 

যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় প্রাচীন একটি স্থাপত্যশীল্পের নাম বলো তখন প্রথমেই যে নামটি মুখে আসবে তা হলো মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড় প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে সারা বাংলাদেশের মানুষ চিনে। প্রাচীন এই প্রত্নতাত্ত্বিক টি রাজশাহী জেলায় অবস্থিত। প্রাচীন এই নগরীর ভিতরে রয়েছে অনেক পুরনো  প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।  প্রথম দিকে প্রাচীন এই নিদর্শনটি পাল, মৌর্য ও সেনরা শাসন করত। পরবর্তীতে হিন্দু রাজাদের দখলে চলে আসে৷ ইতিহাসবিদদের মতে, খৃষ্টপূর্বাব্দ তৃতীয় থেকে পঞ্চদশ খৃষ্টাপূর্বাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা এবং অন্য ধর্মের লোকেরা শাসন করেন। প্রাচীন এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন মহাস্থানগড়  বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত৷ এটি দেখার জন্য বগুড়া শহর থেকে ১৩ কিমি দূরে করতোয়া নদীর পশ্চিম দিকে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ চোখে পরবে। 

মহাস্থামগড়ের আদি নাম ছিল পুন্ন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর। মহাস্থানগড় একসময় বাংলার রাজধানী ছিল। প্রাচীন এই নগরে মৌর্য,  পাল, গুপ্ত এবং সেনরা দীর্ঘ দিন বাস করায় ওখানে গেলে তাদের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া যায়। 

আলপনা গ্রাম টিকইল

টিকইল গ্রাম রাজশাহী নবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষ নিপুন ভাবে আলপনা আকতে পারে। এই গ্রামে প্রতিদিন অনেক মানুষ বেড়াতে আসে। গ্রামে গেলেই চোখে পরবে শিল্পীদের নিপুন হাতে আকা লাল, নীল,সবুজ বেগুনী সহ অসংখ্য অনেক রঙে রঙিন চিত্র।  দেখে মনে হবে পরীর রঙিন কোনো জগতে এসে পরেছেন বুঝি। পূজার সময় এই গ্রামে গেলে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। পূজার সময় পুরো গ্রাম আরো রঙিন হয়ে ওঠে৷ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি দেখলে মনে হবে প্রতিটি বাড়ি যেন জীবন্ত ক্যানভাস। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে শোভা পেয়েছে রঙিন ফুল পাতা সহ নানান আঁকিবুঁকি। মজার ব্যপার হলো এই গ্রামের মানুষজন শুধু নিজেদের থাকার ঘর যে আলপনা দিয়ে রঙিন করে তা নয়। বরং রান্না ঘর এবং গোয়াল ঘরও শিল্পির ছোয়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে। এই গ্রামে পূজা ছাড়াও পহেলা বৈশাখ এবং যেকোনো বাংলা অনুষ্ঠানে পুরো গ্রাম সুন্দর করে আলপনা দিয়ে  সাজানো হয়। 

আলপনা গ্রামের চিত্রশিল্পী কারা

ভাবতে পারেন টিকইল গ্রামের শিল্পীরা হয়তো সবাই নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পী। মোটেও না। পুরো একটি গ্রামের সবাই শিল্পী না হলেও এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ চিত্র শিল্পী বলা চলে। তবে এই গ্রামের প্রায় সব নারীরাই নিপুন ভাবে আকতে পারে। এই গ্রামে গেলে দেখা যাবে নারী পুরুষ সবাই নিপুন ভাবে আকতে পারে। ছোটবেলা থেকে আঁকি বুকি দেখতে দেখতে বড় হয়ে বাচ্চারাও রঙ তুলি নিয়ে খেলে এবং খুব অল্প বয়সে তারাও হয়ে ওঠে নিপুন চিত্রশিল্পি। এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের সাথে মিশে রয়েছে আলপনা। আলপনা আঁকায় তাদের  নেই কোনো ক্লান্তি। অনেক বয়স্ক মানুষ শরীরের ভারে হয়তো দাড়াতেও পারছেনা না অথচ কি নিপুন ভাবে রং তুলির ব্যবহার করে না দেখে বিশ্বাস করা যাবেনা। এই গ্রামের যে কোনো সময় শীত বর্ষা কালে গেলেও দেখা যায় নানা কল্পনা। বর্ষা কালে অনেক সময় বৃষ্টির পানিতে যেন আলপনা মুছে না যায়, তাই পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন শিল্পীরা। এই গ্রামের সবাই একেকজন বড় বড় শিল্পী। বংশপরম্পরায় শিল্পীরা টিকিয়ে রেখেছেন তাদের এই গুন। মায়াবতী নারীরা যুগযুগ ধরে টিকিয়ে রেখেছেন এই পেশাটি৷

যেভাবে আলপনা গ্রাম যাবেন

আলপনা গ্রাম টিকইল যেতে চাইলে প্রথমে চাপাইনবয়াবগঞ্জ যেতে হবে এবং এরপর সেখান থেকে ২৪ কিমি দূর আলপনা গ্রামে যাওয়া যাবে। 

মুঘল তাহখানা

মুঘল তাহখানা সুলতান শাহ ফিরোজপুরে তাপনিয়ন্ত্রন হিসেবে এই ইমারত নির্মান করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় শাহ সুজা যখন সুবাদার ছিলেন তখন নিয়মিত তার কাছে মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামত উল্লাহর সাথে দেখা করতে যেয়ে ইমারতের মধ্যবর্তী একটি সুপ্রসস্ত কামরাতে বাস করতেন।  তোহখানায় গেলে অনেক সমাধি চোখে পরে যেগুলোর পরিচয় এখনো মেলেনি৷ ধারনা করা হয় এগুলো নেয়ামত উল্লাহর খাদেমের সমাধি। মুঘল তাহখানায় গেলে ছোটবড় অনেক ইমারত দেখা যাবে। এছাড়াও রয়েছে মসজিদ এবং গম্বুজ। 

চায়না বাধ

চায়না বাধ মুলত বাইকারদের অনেক পছন্দের একটি জায়গা। ঢাকা থেকে এবং আশেপাশের অনেক জায়গা থেকে মানুষ বাইক নিয়ে চায়না বাধে বেড়াতে যায়। ঢাকা থেকে এই বাধ খুব কাছে হওয়ায় প্রতিদিন অনেক বাইকার এই বাধে বেড়াতে যায়। অসাধারন এই বাধটি সিরাজগঞ্জে অবস্থিত। এই বাধটি যমুনা নদীর পাশে নির্মান করা হয়েছে৷ বাধ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার চলে গেছে বাধের শেষ প্রান্ত। 

গোকুল মেঘ

অনুমান করা হয় ৭ম থেকে ১২শ শতাব্দীতে গোকুল মেঘ নির্মান করা হয়। সেন যুগের গল্প অনেকেই শুনে থাকবেন। এখানেই বেহুলার বাসর ঘর নির্মান করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে দেবপাল ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস

খৃষ্টাব্দে এই বৌদ্ধ মঠ নির্মান করেন। অনেক আগে এখানে একটি গর্তে  ষাড়ের আকৃতির স্বর্ন পাওয়া যায়। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা এবং হিউয়েন সাং এর ভ্রমন কাহিনী থেকে জানা যায় এটি একটি বৌদ্ধ মঠ। মুলত এই মঠটি শত্রুদের কাছ থেকে নিরাপত্তার জন্য নির্মান করা হয়েছিল। 

হার্ডিঞ্জ  ব্রিজ

১৮৮৯ সালে ইবিভক্ত ভারত সরকার অসম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তর বঙ্গের‍  সাথে যোগাযোগ করার জন্য পদ্মা নদীর উপর ব্রিজ নির্মান করার প্রস্তাব করলে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে রবার্ট গেইলস সেতুটি নির্মান করেন। এই ব্রিজটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি ও কুষ্টিয়া উপজেলার ভেড়ামারা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত।  হার্ডিঞ্জ  ব্রিজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু। এই সেতুর নাম ভাইরাসরয় হার্ডিঞ্জ এর নাম অনুসারে রাখা হয়েছে।

সেতুটি পদ্মা নদীর তীরে হওয়ায় ট্রেন ভ্রমনের সময় অদ্ভুত সুন্দর অনুভুতি হয় মনে। ট্রেনে ভ্রমনের সময় চোখে পরবে নয়নকারা কিছু সুদৃশ্য ভবন। চারপাশে সাড়ি সাড়ি ছোট বড় সবুজ গাছ,  পদ্মার পানি মিলিয়ে মোহনীয় এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ব্রিজের পাশ দিয়ে প্রবাহিত অপূর্ব দৃশ্য দেখতে ভীর জমান হাজার হাজার দর্শনার্থী। 

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভ্রমনে গেলে যেমন নয়নের ক্ষুধা মিটবে সেই সাথে মনের যত হতাশা দুশ্চিন্তা সব নিমিষেই দূর হয়ে যায়৷ সেখানে বেড়াতে গেলে অপূর্ব সুন্দর কিছু কটেজ দেখতে পারবেন। বিকেলে ঘুরতে গেলে নদীর নানা ধরনের মাছ খেতে পারবেন। স্বস্তায়  কিনতে পারবেন পদ্মার টাটকা ইলিশ মাছ।

কিভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজে যাবেন

ঢাকা থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখতে  যেতে চাইলে প্রথমে যেতে হবে পাবনায়৷ পাবনা থেকে ঈশ্বরদীর দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ কিমি। ঈশ্বরদী থেকে পাকশি যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা। 

বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহী

রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহীর হেতেমখাতে অবস্থিত। বরেন্দ্র জাদুঘর বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর এবং এশিয়া মহাদেশের প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে প্রথম জাদুঘর। এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন নাটোরের দিঘাপতিয়া জমিদার শরৎ কুমার রায়,  বিশিষ্ট আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, এবং কলেজিয়েট কলেজের শিক্ষক রামপ্রাসাদ চন্দ্র। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে জাদুঘরে সংগ্রহের জন্য ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এই জিনিস গুলো সংগ্রহের জন্য নাটোরের দিঘাপতিয়ার জমিদার শরৎ কুমার একটি জমি দান করেন এবং সেখানেই জাদুঘর নির্মান করার কাজ শুরু হয়। সংস্কার কাজ শেষে ১৯১৩ সালে বরেন্দ্র জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। এই জাদুঘরটি মহাত্না গান্ধী এবং নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু এই জাদুঘর পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। 

বরেন্দ্র জাদুঘরে যা রয়েছে

বরেন্দ্র জাদুঘরে প্রায় নয় হাজারের বেশি জিনিস সংগ্রহে রয়েছে। এখানে হাজার বছরের সিন্ধু সভ্যতার অনেক কিছু সংগ্রহে রয়েছে। মহেনজোদারো থেকে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়, পাথরের মূর্তি,  বৌদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্র গুপ্তের গোলাকার স্বর্ন মুদ্রা সম্রাট শাহাজানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা,  মূর্তি সহ অনেক মূর্তি এই জাদুঘরে সংগ্রহ করা হয়েছে।। 

বরেন্দ্র জাদুঘরের সময়সূচি

বরেন্দ্র জাদুঘর শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বরেন্দ্র জাদুঘরের সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। 

রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা

রাজশাহী চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানার মধ্যে অন্যতম। রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা একসময়ের রেকসোর্স ময়দানে  নির্মান করা হয়েছিল। ৩২.৭৬ একর জায়গার মধ্যে এই চিটিয়াখানাটি নির্মান করা হয়েছে। 

চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করার আগেই চোখে পরে অবিকল জিরাফের মতই বিশাল ভাস্কর্য এবং মৎস্য কুমারীর ফোয়ারা। চিড়িয়াখানার চারপাশে রয়েছে অজস্র ফুল ও  ফলের গাছ। যা চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য কে আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন ধরনের পশু এবং পাখির সমাহার রয়েছে। যেমন ঘোড়া, হরিন, বাজরিকা,  উডবিড়াল, অজগর সাপ, কুমিড় সহ বিভিন্ন  রয়েছে জলজ ও স্থলজ পশুপাখি। এই চিড়িয়াখানার বিশেষ আকর্ষণ হলো কৃত্তিম পাহাড়৷ দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি কোনো প্রাকৃতিক পাহাড় নয়। এই পাহাড়ের জন্য প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমান। এই পাহাড়ের উপরে উঠলে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এগুলোর বাইরেও রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বোট, নাগর দোলা সহ আরো অনেক কিছু। 

বাঘা মসজিদ

বাঘা মসজিদ রাজশাহী শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই মসজিদের প্রধান আকর্ষণ এর গম্বুজ। মসজিদটির চারপাশে চারটি গম্বুজ এবং মাঝখানের দুই সাড়িতে মোট ১০টি গম্বুজ রয়েছে৷ এই মসজিদের সব গুলো দরজাই বর্তমানে বন্ধ রয়েছে শুধু পূর্ব পাশের ৫টি দরজা খোলা রয়েছে। এই মসজিদের ভিতরে চোখে পরবে পোড়া মাটির ফলক দিয়ে বানানো দৃষ্টিনন্দন কাজ। এই মসজিদের ভিতরের বেদিতে রয়েছে নামাজের জন্য বিশেষ কক্ষ। যদিও এখনো জানা যায়নি এই বিশেষ কক্ষ গুলো কার জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। 

বাঘা মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে বিশাল একটি দিঘী। যেখানে দর্শনার্থীরা বিকেলে বসে গল্প করেন নিরিবিলি তে পাখির কুচকাওয়াজ শুনতে শুনতে আনন্দদায়ক সময় কাটান। দিঘীর ঠিক অপর পাশেই রয়েছে বাধাই করা একটি কবর। ভূমিকম্পের কারনে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে পরবর্তীতে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ বাঘা মসজিদ পুন:নির্মান করেন। 

কিভাবে যাবেন বাঘা মসজিদ

বাঘা মসজিদ যেতে হলে প্রথমে রাজশাহী যেতে হবে। রাজশাহী শহর থেকে সিএনজি বা রিক্সাতে গেলে জনপ্রতি ৪০ টাকা ভারা নেয়। 

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। এই শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটি বাংলাদেশের প্রথম শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। এই জাদুঘরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নানা রকম সংগ্রহ। যেগুলো দেখলে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভাল ধারনা পাওয়া যায়। তরুন প্রজন্মদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্পর্কে জানানোর জন্য ১৯৭৬ সালে এই শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার যাত্রা শুরু হয়। 

এই সংগ্রহশালাটি ৬৬০০ বর্গফুট জায়গার মধ্যে অবস্থিত এবং তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম গ্যালারীতে রয়েছে ১৯৫৩ থেকে ১৯৭১ সাল এর নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ। তারমধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র, বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনারের ছবি, বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি, শিল্পীদের আকা বিভিন্ন ছবি সহ অনেক কিছু। দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে পাকিস্থানীদের বর্বরতার চিহ্নের নানারকম ছবি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত নানারকম জিনিস, প্রতিকৃতি সহ আরো অনেক কিছু। তৃতীয় গ্যালারীতে রয়েছে একাত্তরের গনহত্যায় ব্যবহৃত নিহত শহীদদের মাথার খুলি, শেখমুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ছবি এবং পাকিস্থানী বাহিনীদের আত্নসমর্পণের অনেক ছবি। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নানা রকম বই। 

সবুজ সি এন্ড বি রাস্তা

সবুজ সি অ্যান্ড বি রাস্তা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা গুলোর মধ্যে একটি। সবুজ, শ্যামল নিরিবিলি রাস্তা দেখলে চোখ এবং প্রান দুটোই জুরিয়ে যায়। যদি খুব সকালে আপনি সেখানে হাটতে যান তাহলে অন্যরকম এক ভাললাগা অনুভব করবেন। সেখানে গেলেই অনুভব করবেন নৈসর্গিক এক ধরনের মায়া। এখানে বিকেলে হাটতে গেলে সব ক্লান্তি দূর হয়। তাই প্রতিদিন সবাই পরিবার বন্ধু বান্ধব সহ সেখানে হাটতে যান। এখানকার গরম গরম রসগোল্লার সুখ্যাতি সারা রাজশাহী জুরে রয়েছে। 

প্যারিস রোড,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

প্যারিস রোড রাজশাহী শহরের অন্যতম সুন্দর একটি রোড। রাজশাহী আসলে এই রোড না ঘুরে গেলে রাজশাহী আসাই বৃথা। এর সৌন্দর্য লাবন্যময় পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। 

পদ্মা গার্ডেন

পদ্মা গার্ডেন রাজশাহী শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিনোদন কেন্দ্র। এই গার্ডেনটি পদ্মা নদীর কোল ঘেসে অবস্থিত৷ পদ্মা গার্ডেনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য স্থান,ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরা।

গাজনার বিল

রাজশাহী বিভাগের সুজানগর উপজেলায় অবস্থিত গাজনা বিল। বিশাল বড় এরিয়া জুরে অবস্থিত এই গাজনা বিল  দেখার জন্য বর্ষাকালে অনেক পর্যটক আসেন।  বিলে ফোটা পন্ম ফুল, শাপলা ফুল রয়েছে কচুরিপানা ফুল। বর্ষাকালে যখন  পানি অনেক বেড়ে যায় তখন এর সৌন্দর্যে আশ্চর্য হন দর্শনার্থীরা। যতদূর চোখ যায় পানি আর বিলে ফোটা নানা রকম ফুল। গাজনা বিলকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামের অনেক মানষ বেচে আছেন এই বিলে বেড়াতে গেলে নানা রকম দেশী মাছ কিনতে দেখতে পাবেন এবং কিনতে পাবেন।

হালতি বিল

হালতি বিল হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সমূদ্র। উত্তরাঞ্চলে কোনো সমূদ্র না থাকায় হালতি বিলই যেন সমূদ্রের স্বাদ পূরন করেছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের। হালতি বিল নাটোর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ হালতি বিলের উত্তাল জলরাশি দেখলে আপনি ভুলে যাবেন এটি সমুদ্র নয়। উত্তাল জলরাশি আপনাকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য। এই বিল দেখার জন্য বর্ষাকালে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন একটু খানি মুগ্ধতার জন্য, স্বস্তিতে নিস্বাস ফেলার জন্য। 

শেষ কথা 

রাজশাহী বিভাগ নানা রকম ঐতিহাসিক স্থান দিয়ে সমৃদ্ধ একটি বিভাগ। এই বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা রয়েছে। উপরে উল্লেখিত জায়গা ছাড়াও রয়েছে  উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রুয়েট সহ গুরত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান। এই শহরের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দূশনমুক্ত বাতাস এবং শান্ত মায়াবী পরিবেশ দেখলে যে কেউ সারাজীবনের জন্য থেক্ব যেতে চাইবে। যদি আপনি ভ্রমন ভাল বাসেন তাহলে অবশ্যই রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান গুলো ভ্রমন করবেন। 

Also Read: নিকলী হাওর : ভ্রমন

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents