আজ আপনাদেরকে এমন এক ভেষজ তেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যার ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। যার নাম ক্যাস্টর অয়েল বা ভিন্নার তেল। চুলের যত্নে এই তেল খুবই উপকারী ত্বকের যত্নও অতুলনীয়। চুল অথবা ত্বকের যত্নে যেখানেই আমরা কোন টিপস খুঁজতে যাই সেখানেই টের পাই ক্যাস্টর অয়েলের উপস্থিতি।
প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বিশেষ গুণাগুণ সম্পন্ন এই তেলটি বিশ্বের প্রায় প্রথম কাতারের তেল। ত্বকে এবং চুলের যত্নে অসামান্য উপকারিতা রেখে এটি ক্ষান্ত হয়নি বরং এই তেল রান্নার কাজে এবং চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয় আসছে অনেক আগে থেকেই। এটি বহুবিদ ব্যবহার উপযোগ একটি তেল।
ক্যাস্টর অয়েল কি
ক্যাস্টর অয়েল যাকে বলা হয় রেড়ির তেল। এই রেড়ির বীজ থেকেই তৈরি হয়।এই বীজের অপর নাম ক্যাস্টর বিন। এতে হিউজ পরিমাণ ফ্যাটি এসিড থাকায় বেশ ঘণ হয় তেলটি। ক্যাস্টর অয়েল নামটা শুনতে যেমন গুন সম্পূর্ণ মনে হয়। গুনাগুন গুলাও হয় সব বলে শেষ করা যাবে না। এই উদ্ভিজ তেলটি হয়ে বর্ণহীন স্বতন্ত্র স্বাদ এবং গন্ধ নিয়ে গঠিত। এটি অত্যন্ত
ঘনত্ব বিশিষ্ট একটিতে তেল যার বাষ্পীভবনের মান ৫৯৫° ফারেনহাইট।
ত্বকে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
ত্বকের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল অন্যান্য একটি প্রাকৃতিক উপাদানের নাম। এটি দেহের যে কোন ডার্ক সাইট দূর করতে মহৌঔষধ হিসেবে কাজ করে। মুখ করে উজ্জ্বল লাবণ্যময়।ঠোঁটে আনে গোলাপি সাইন। চোখের পাপড়ি জ্বরে পড়া রোধ করে এবং নতুন পাপড়ি গজাতে সাহায্য করে। ব্রনের ফলে মুখে যে কালো দাগ পরে করে ফেলে মুখ সেই দাগ সহজে দূর করে দিতে বেশ উপকারী এই অয়েল।
ত্বকে মসৃণতা আনতে
নিয়মিতভাবে ত্বকে অয়েল মেসেজ করার ফলে ত্বক হয় নরম, মসৃণ। হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে আঙ্গুলের ডগায় দুই তিন ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে মেসেজ করতে থাকুন। ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে মুখের নমনীয়তা অনেক গুণ বেড়ে যায় । হাফ চামচ নারিকেল তেলের সাথে হাফ চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে মেসেজ করতে পারেন ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ফেলুন। এটি মুখের নমনীয়তা বাড়িয়ে দেয় ।
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে
মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চাইলে এক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মেসেজ করতে পারেন আলতোভাবে।তাছাড়া আরো ব্যবহার করতে পারেন উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে এর সাথে হলুদের গুড়ো মিশিয়ে।উভয় ফেইস প্যাকটি ২০ মিনিট রেখে ভালোভাবে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
ডার্ক স্পট দূর করতে
লেবু ত্বকের যেকোনো ধরনের দাগ দূর করতে ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে আর তার সাথে যদি হয় ক্যাস্টর তেল এর যোগ তাহলে তো কথাই নেই। ব্রণ হওয়ার পরে মুখে যে দাগ পরে গর্ভবতী মায়েদের প্রসব পরবর্তী যেসব ডার্ক সাইট শরীরে থাকে এসব দাগ দূর করে থাকে। বলিরেখা দূর করতে খুবই উপকারী এই প্যাকটি। এক চা চামচ লেবুর রস আর এক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল প্রয়োজন শুধু। মিশ্রণটি মুখে দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট রাখতে হবে।
ত্বকের যত্নের জন্য পড়তে পারেন এই পোস্ট টি – চেহারায় লাবণ্য ধরে রাখার ১০ উপায় ও ফেইস প্যাক
ফাটা গোড়ালিতে ক্যাস্টর অয়েল
আমাদের যাদের গোড়ালি ফেটে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা একটা বালতির মধ্যে হালকা গরম পানি নিয়ে সে পানিতে কয়েক ফোটা ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে ও সামান্য শ্যাম্পু নিয়ে পা ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারি। তারপর ভালোভাবে পা ঘষে পরিষ্কার করে নিন। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে পানি মুছে নিন। সবশেষে গ্লিসারিনের সাথে কয়েক ফোটা ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে মেসেজ করুন। ব্যাস এভাবেই খুব সহজে পায়ের গোড়ালী ফাঁটা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ঠোঁট, নখ ও হাতের যত্নে
ঠোট ফাটা এবং ঠোঁটের কাল দাগ দূর করতে, নখ মজবুত করতে আর খসখসে হাতকে হাতে তুলে নরম করতে ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে সামান্য অলিভ অয়েল যোগ করে মেসেজ করুন। এভাবে ব্যাবহারে খুব দ্রুত একটি ভালো ফল পেতে পারেন।
ক্যাস্টর অয়েল এর উপকারিতা
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি সহ চুলকে লম্বা করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে এটি ক্ষান্ত হয়নি। বরং ক্যাস্টর অয়েল এ রয়েছে আরো অনেক অনেক কার্যকরী উপকারিতা। এটি খাবারের কাজে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানে বেশ সুপরিচিত এই তেল। যেকোনো ধরনের ব্যথা উপশমে একটি ভালো কাজ করে।এটি আর্থাইটিসের সাথে যুক্ত প্রদাহ কমায়। দাদ রোধ করে। তাছাড়া এটি এমন এক ধরনের তেল যা ত্বকের যত্নে সহ খাওয়া ওষুধ শিল্পে ব্যবহার হয়।
ক্যাস্টর অয়েল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েলের রয়েছে বেশ অতুলনীয় এবং কার্যকরী ভূমিকা। অয়েলটিতে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা চুলের ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। আবার ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে এমন এক ধরনের এসিড থাকে যা অন্য সাধারণ কোন উপাদানে বিদ্যমান থাকে না। যার নাম রিসিনোলেইক এসিড। মাথার স্কেল্পের রক্ত চলাচল ঠিক রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চুল পড়া রোধ করে। খুশকি থেকে দেয় মুক্তি। এমনটাই দাবি করেন কিছু বিশেষজ্ঞ।
নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুলের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হয়। এবং স্বাস্থ্যকর চুল পাওয়া যায় যেকোনো ধরনের তেলের সাথে মিক্স করে এটি চুলে ব্যবহার করতে পারেন চুলে। নারিকেল তেলের সাথে ব্যবহার করলে বেশ উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। স্কেল্পের উর্বরতা ধরে রাখতে লেমন এসেন্সিয়াল তেলের সাথে মিশিয়ে মেসেজ করতে পারেন।হেয়ার পিক গুলো ২০ থেকে ২৫ মিনিট চুলে রেখে ভালো সেম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করে নিন।তারপর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
চুলের যত্নে কিছু হেয়ার প্যাক চাইলে ব্যবহার করতে পারেন । আমাদের এই পোস্টে ১০ টি হেয়ার প্যাক নিয়ে বলা হয়েছে ।
ক্যাস্টর অয়েলের অপকারিতা
সব কিছুরই একটা পরিমাপ আছে। মাত্রারিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। যদিও ক্যাস্টর অয়েল একটি প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি পণ্য। তারপরও এর অতিরিক্ত ব্যবহারে রয়েছে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি। যাদের অ্যালার্জি আছে এই তেল ব্যবহারে এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। বমি বমি ভাব আর পেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে। অধিক পরিমাণে ব্যবহারের ফলে মাথা ঘুরা শুরু হয়ে যায়। পেট খারাপ হওয়া সেন্সলেস হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যাগুলোদেখা দিতে পারে।
অরজিনাল ক্যাস্টর অয়েল চেনার উপায়
এত এত নকলের ভেতরে আমরা কিভাবে অরজিনাল ক্যাস্টর অয়েল খুঁজে বের করব সে উপায়টি আসুন জেনে নেই। আসল ক্যাস্টর অয়েল অবশ্যই কাঁচের বোতলে থাকে। অরজিনাল অয়েলের বোতলে কিছুটা ডিজাইন করা। বোয়মের মুখটা লাগানো থাকে। তেমন কোন বর্ণের হয় না। অনেক বেশি গাঢ় হয়। এটি একটি বিদেশি প্রোডাক্ট যা ফ্রান্সের হয়ে থাকে সাধারণত। লোগোতে আমদানি কারকের নাম থাকে।
এসব বৈশিষ্ট্যের যে কোনো একটি সাথে না মিললে বা বিপরীত হলেই সে তেলটি অরজিনাল নয় বুঝতে হবে। অর্থাৎ নকল ক্যাস্টর অয়েলে বোতলে কোন ডিজাইন থাকে না তেলের রং কিছুটা হলুদ বর্ণের হয়। বিদেশি প্রোডাক্ট না হওয়ায় নির্দিষ্ট লোগো থাকেনা ইত্যাদি।
ক্যাস্টর অয়েল এর দাম কত
ক্যাস্টর অয়েল অনেক গুনাগুন সম্পন্ন তেল হলেও এর দাম অনেক টাই হাতের নাগালে। ১১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৬০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন এই মূল্যবান তেলটি। কারন এই তেলটি মূলত কসমেটিক দোকানে পাওয়া যায়। আর একেক কসমেটিক দোকানে একেক রকম দামে রাখে সেজন্যই দামের কম বেশী হতে পারে।
উপসংহার
অগণিত ন্যাচারাল গুণসম্পন্ন এই অয়েলে ব্যবহার বাড়াতে হবে প্রত্যহিক জীবনে। যাতে আমরা ব্যথা মুক্ত জীবন মন ভোলানো ক্যাশ কোমল-উজ্জল ত্বকের অধিকারী হতে পারি। তবে এর সামান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সাইড ইফেক্টগুলোও তখনই দেখা যখন এর ব্যবহার সামান্য মাত্রায়। তাই যাদের এলার্জি আছে তারা এই তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকব। ফেসপ্যাক এবং হেয়ার প্যাকে নিয়মমাফিক ব্যবহার করব।