ময়েশ্চারাইজার এমন একটি জিনিস যা সারা বছর সকল ধরনের ত্বকে ব্যবহার করতে হয়। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে ত্বকে ডিহাইড্রেশন হয়। যার ফলে ত্বকের উজ্বল ভাব কমে যায়, ত্বক কুচকে যাওয়া সহ আছে নানান সমস্যা। তাই ত্বকের সুস্থতায় নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিৎ। অনেকেই আছেন যারা বাজারে কেনা প্রডাক্ট ব্যবহার করার চেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে পছন্দ করে। আবার হয়তো আপনার ময়েশ্চারাইজার ফুরিয়ে গেছে কোনো কারনে কিনতে পারছেন না৷ আজকের এই আর্টিকেলে বলে দিব কোন কোন উপাদান ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক ভাবে ত্বক ময়েশ্চারাইজ হবে।
প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল কমবেশি আমাদের সবার বাসাতেই থাকে। অলিভ অয়েল ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ই, ফাইটোষ্টেরল, পলিফেনল উপাদান থাকায় ত্বক ডিহাইড্রেট হতে পারেনা। তাই আপনার ত্বককে প্রাকৃতিক উপায়ে ময়েশ্চারাইজ এবং হেলদি রাখতে অলিভ অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সকালে এবং রাতে বা গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল।
মধু
যারা নিয়মিত রূপচর্চা করেন তারা সবাই জানে মধু কত উপকারী একটি উপাদান। রূপচর্চা ছাড়াও ঠান্ডা কাশির সমস্যায় মধু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি কি জানেন মধু ত্বকে ময়েশ্চারাইজার এর কাজও করে থাকে? তাহলে শুধু শুধু বাজার থেকে ময়েশ্চারাইজার কিনে ত্বকের বারটা বাজাবেন কেন? আজই বেছে নিন মধুকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে। মধুতে থাকা ইমোলিয়েন্ট ত্বককে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে। কিন্তু বাজারে কেনা ময়েশ্চারাইজার গভীর থেকে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে পারেনা। এছাড়া মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে প্রাকৃতিক উপায়ে ফরসা ও উজ্বল করে এবং সান ট্যান দূর করে৷ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে প্রতিদিন ত্বকে মধু লাগিয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে মধুর ময়েশ্চারাইজার।
গ্লিসারিন
গ্লিসারিন কমবেশি আমরা সবাই ব্যবহার করে থাকি। গ্লিসারিন ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। যাদের ব্রনের সমস্যা আছে তারা মুখে গ্লিসারিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। গ্লিসারিন ব্যবহার করলে বাতাস থেকে পানি টেনে এনে ত্বকে সংরক্ষণ করে যার ফলে ত্বক ময়েশ্চারাইজ থাকে। গ্লিসারিনে রয়েছে হিউমেক্টেন্ট নামক একটি উপাদান যা ত্বককে হাইড্রেট রাখে।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো তে ওমেগা থ্রি নামক উপাদানে সমৃদ্ধ একটি ফল। রিসার্চ থেকে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, “ওমেগা থ্রি নামক উপাদান থাকায় ত্বক ও চুলের জন্য এই ফলটি বেশ কার্যকরী।” এই ফলটি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক লুব্রিকেট করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং প্রাকৃতিক ভাবে ত্বককে হাইড্রেট হওয়া থেকে রক্ষা করে। প্রাকৃতিক এই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চাইলে পাকা অ্যাভোকাডো ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা রস গুলো সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহার করার পনের মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
দুধ
দুধ পুষ্টিকর একটি খাবার। দুধ রূপচর্চায় ত্বকের পরিচর্যায় বহু কাল থেকে ব্যবহার করা হয়। দুধ কে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে দুধ খুব ভাল কাজ করে৷ কারন দুধ এমন একটি উপাদান যা ত্বককে ভিতর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে। ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়৷ একটি তুলো দুধে ভিজিয়ে নিয়ে প্রতিদিন ত্বকে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চিনি
চিনি স্ক্রাবার হিসেবে খুব ভাল কাজ করে৷ চিনিতে থাকা উপাদান আলফা হাইড্রক্সি এসিড ত্বকের ভিতরে যেয়ে ত্বকের ময়লা দূর করে সেই সাথে ত্বককে প্রয়জনীয় পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে। চিনির সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করুন। এই স্ক্রাবার ব্যবহার করলে যেমন ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে একই সাথে চিনি তারুন্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে। চিনিকে প্রাকৃতিক হিউমেক্টান্ট বলা হয় যা পরিবেশ থেকে ত্বকে আর্দ্রতা টেনে নেয়।
শসার রস
শসার রস ত্বকের জ্বালাপোড়া যেমন দূর করে সেই সাথে ত্বক কে ফরসা করে। আবার শসার রস প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই আপনিও আপনার ত্বকের পরিচর্যা করতে চাইলে শসার রস দিয়ে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে পারেন। শসার রস ত্বক কে কে শুধু ময়েশ্চারাইজ করবেনা পাশাপাশি কালোভাব বা দাগ দূর করবে৷
পাকা কলা
পাকা কলা পুষ্টির আধার। এর রয়েছে অসংখ্য বিস্ময়কর উপকারিতা। তাই আদিম কাল থেকে এখন পর্যন্ত পাকা কলা চুল ও ত্বকের নানান সমস্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। পাকা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ই এবং বি। পাকা কলার পেষ্ট ব্যবহার করলে ত্বক কোমল ও উজ্বল হয়। ত্বকের নতুন কোষ বাড়াতেও পাকা কলা ভূমিকা রাখে। কলাতে থাকা পটাশিয়াম ত্বকের নতুন কোষ বাড়াতে সাহায্য করে। একটি পাকা কলা ভাল করে ব্লেন্ড করে ত্বকে কমপক্ষে বিশ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দুই দিন পর পর এই প্যাকটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
নারিকেল তেল
যাদের ত্বক অনেক শুস্ক। যারা শুস্ক ত্বক নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেল হালকা গরম করে অল্প পরিমান চিনি সহ মুখে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। ত্বকের মরা চামড়া দূর হওয়ার সাথে সাথে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করবে।
এলোভেরা
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারি গাছ নিশ্চই সবাই চিনে থাকবেন। এলোভেরা প্রাকৃতিক ভাবে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে। এলোভেরা থেকে জেল আলাদা করে নিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে ভালকরে। এবার জেলের সাথে চালের গুড়ো বা বেসন সহ মুখে হাতে আ্যপ্লাই করুন। তবে মনে রাখতে হবে, এলোভেরা থেকে জেল আলাদা করার সময় কখনো হলুদ পিচ্ছিল পদার্থ সহ নিবেন না। কারন ত্বকের জন্য এই পদার্থ অনেক ক্ষতিকর। এলোভেরা পাতার দুই সাইড কেটে কয়েক মিনিট রাখলে বিষাক্ত পদার্থ বেড়িয়ে যায়। অনেকে শুধু এলোভেরা জেল ব্যবহার করে। এই ভুল কখনো করবেন না। অবশ্যই সাথে একটা উপাদান মিশিয়ে আপনার ত্বকে আ্যপ্লাই করবেন।
আঙুর
রূপচর্চায় আবার আঙুর? অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনি জানলে অবাক হবেন যে আঙুর শুধু ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও এটি ত্বকে সানস্ক্রিন এর কাজ করে। ত্বকের কোষ কে সজিব রাখে। আঙুর থেকে রস বের করে একটি তুলোর সাহায্যে মুখ, গলা ও হাতে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। তারপর নিজেই বুঝবেন এর বিস্ময়কর গুনাগুন।
পেপে
পেপে ফেশিয়ালে খুব জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পেপে ত্বক পরিষ্কার ও চকচকে করে। সেই সাথে শুস্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। যাদের ত্বক অনেক শুস্ক তারা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে সপ্তাহে দুই দিন পেপের রস ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ত্বক কে অনেক কোমল ও ময়েশ্চারাইজ করবে।
আমন্ড অয়েল
আমন্ড অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই। আমন্ড অয়েলের এই বিশেষ গুনের জন্য প্রায় সব ধরনের কসমেটিক্সে আমন্ড অয়েল ব্যবহার করা হয়। কোনো প্রডাক্ট ব্যবহার করার চেয়ে সরাসরি আপনি আমন্ড অয়েল ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন। ত্বকে ব্যবহার করলে আমন্ড অয়েল ত্বক কেময়েশ্চারাইজ করবে। অল্প পরিমান অয়েল নিয়ে ত্বকে লাগান এক ঘন্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। বেশি উপকারের জন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমন্ড অয়েল লাগিয়ে ঘুমাতে যাবেন। কারন ঘুমালে আমাদের ত্বক রিলাক্স থাকে যার ফলে যে কোনো উপাদান সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। যেহেতু আমন্ড অয়েল অনেক আঠালো তাই এটা ব্যবহার করে বাইরে না যাওয়াই ভাল।
মেয়োনেজ
মেয়োনেজ অনেকের কিচেনে সব সময় থাকে। তারা মেয়োনেজ খাবারে ব্যবহারের পাশাপাশি ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। দুই চামচ স্বাদহীন মেয়োনেজ নিয়ে অল্প পরিমান বেবি অয়েল সহ মিশিয়ে ঘার গলা মুখে লাগান। কিছুক্ষন পর ধুয়ে ফেলুন।
বাদাম তেল ও ডিমের সাদা অংশ
বাদাম তেল সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে। বাদাম তেলে রয়েছে ভিটামিন ই, মনোস্যাচুরেট ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন, পটাশিয়াম ও জিংক সহ অনেক উপাদান। যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। বাদাম তেলের সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে পনের মিনিট অপেক্ষা করবেন। যখন আপনার ত্বক টানটান হয়ে আসবে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহারের পর দেখবেন ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে ময়েশ্চারাইজ হয়ে গেছে।
শীতে এলোভেরা জেল,ই ক্যাপসুল ও গ্লিসারিন এর ময়েশ্চারাইজার
শীতে যাদের ত্বক অনেক বেশি শুস্ক হয়ে যায়। তাদের জন্য এই প্যাকটি ম্যাজিকের মত কাজ করে৷ এক চামচ এলোভেরা জেল, একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং কয়েক ফোটা গ্লিসারিন একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। ভালভাবে মেশানো হয়ে গেলে হাত, পা, মুখ গলায় সুন্দর করে ম্যাসাজ করুন। এক ঘন্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি চাইলে ফ্রিজে রেখে সাতদিন ব্যবহার করতে পারেন।
পরিশেষ
ত্বক সুস্থ ও সুন্দর করতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার শুরুত্বপুর্ন। তাই শুধু শীত আসলেই ময়েশ্চারাইজার নয় বরং সারা বছর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। আর যদি না করেন তাহলে নিজ হাতে ত্বকের সর্বনাশ করে ফেলছেন। তাই যদি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে না থাকেন তাহলে আজকে থেকেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার শুরু করুন। যদি বাজেট বা অন্য সমস্যার জন্য ময়েশ্চারাইজার কিনেন তাহলে ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে যেন আপনার ত্বকের সুস্থতায় ময়েশ্চারাইজ করতে পারেন তাই আজকে এই আর্টিকেলে ঘরে বসে ময়েশ্চারাইজার বানানোর পদ্ধতি দেয়া হয়েছে। আশা করি ভাল লাগবে। নিজে সুস্থ থাকুন ও ত্বককে সুস্থ রাখুন।
আরো পড়ুন –
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার
- চেহারায় লাবণ্য ধরে রাখার ১০ উপায় ও ফেইস প্যাক
- অ্যালোভেরার উপকারিতা