ময়েশ্চারাইজার ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার বাছাই করতে হয়। ময়েশ্চারাইজার স্কিন কেয়ারে রাখলে ত্বক হেলদি এবং গ্লোয়িং হয় এবং সেই সাথে বয়সের ছাপ পরাও দূর করে। অনেকেই মনে করেন অয়েলি স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার এর কোনো প্রয়োজন নেই৷ এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারনা।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের ওয়াটার লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অয়েলি স্কিনে অন্যান্য ত্বকের চেয়ে বেশি প্রব্লেম হয়ে থাকে। যেমন ওপেন পোরস, পিম্পল না ব্রন তেলতেলে ভাব হয়ে থাকে। অয়েলি স্কিন হওয়ায় খুব সহজে ময়লা ওপেন পোরসে জমে ওপেন পোরস ব্লক করে দেয় ফলে পিম্পল প্রবনতা বেড়ে যায়। তাই স্কিনের সুরক্ষায় অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার রাখতে হবে।
তৈলাক্ত স্কিনে কোন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন?
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অয়েল বেজড প্রডাক্ট চুজ না করাই ভাল। জেল বা ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভাল। তাই ময়েশ্চারাইজার কেনার সময় ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার কিনতে হবে। ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে তেল চিটচিটে ভাব কমে যায়। এই ধরনের ময়েশ্চারাইজারে হায়ালুরোনিক নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে ত্বককে ডিহাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারে কোন ধরনের উপাদান দেখে কিনবেন?
বাজারে অনেক ধরনের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। তাই ময়েশ্চারাইজার কেনার আগে ভালভাবে দেখে নিতে হবে কোন ধরনের উপাদান আপনার স্কিনের জন্য ভাল হবে বা শ্যুট করবে। চলুন তাহলে যে ধরনের উপাদান দেখে ময়েশ্চারাইজার বেছে নিবেন।
গ্লাইকোকোলিক এসিড:
তৈলাক্ত ত্বকের পাওয়ার হাউজ বলা হয় গ্লাইকোকোলিক এসিড কে। এই এসিডটি তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল প্রডিউস হওয়া বন্ধ করে দেয়, ওপেন পোরস এর সমস্যা বন্ধ করে দেয় এবং স্কিনকে ডিহাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
হাইলুরনিক এসিড:
হাইলুরনিক এসিড তৈলাক্ত ত্বকের তেল চিটচিটে ভাব কমিয়ে দেয়, ত্বকে ময়লা জমতে দেয় না, এছাড়াও ওপেন পোরসের সমস্যা থাকলে সেটি দূর হয়ে যায়। ত্বককে কোমল ও মোলায়েম রাখতে সাহায্য করে।
ডাইমেথিকন:
ডাইমেথিকন ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে দেয়। ময়েশ্চারাইজিং এর কাজ করে এবং ত্বকের অতিরিক্ত শাইন ভাব কন্ট্রোল করে। এই উপাদান গুলো যে ধরনের ময়েশ্চারাইজারে উপস্থিত থাকে সেই ময়েশ্চারাইজার গুলো তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুব ভাল হয়ে থাকে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার কেনার আগে যে বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখবেন:
- এস পি এফ দেখে ময়েশ্চারাইজার কিনতে হবে।
- জেল বা ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে।
- ময়েশ্চারাইজার কেনার আগে হাতে টেষ্ট করে নিবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ঘরে বসে ময়েশ্চারাইজার বানানোর টিপস
অনেকেই আছেন যারা আর্টিফিশিয়াল উপাদান থেকে নিজের ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে চান। তারা নিজেরাই ঘরে বসে ময়েশ্চারাইজার বানাতে পারেন ঘরে থাকা উপাদান দিয়ে।
১. এক চামচ এলোভেরা জেল, কয়েক ফোটা গোলাপ জল এবং দুই থেকে তিন ফোটা টি ট্রি অয়েল নিন। এবার সব উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিন। ভালবাবে মেশানো হয়ে গেলে ত্বকে লাগিয়ে নিন। এই ময়েশ্চারাইজার টি আপনি চাইলে ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করতে পারেন।
২. এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল এবং মধু নিন। এবার উপাদান দুটি ভালভাবে ভাবে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। দশ থেকে পনের মিনিট লাগিয়ে রেখে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে এবং পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে।
৩. পাকা কলা ও মধুর ফেসপ্যাক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ভাল কাজ করে। একটি পাকা কলা নিয়ে ভাল ভাবে পেষ্ট করে নিন। এবার কলার পেষ্ট এর সাথে হাফ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এই প্যাকটি ভাল ভাবে মুখে ও গলায় লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি যেমন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে তেমনি পাশাপাশি আপনার ত্বককে উজ্বল ও ফরসা করবে।
তৈলাক্ত ত্বকে কখন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন?
ময়েশ্চারাইজার দেয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ক্লিন করার পর। মুখ ভালভাবে ক্লিন করলে ত্বক শুস্ক হয়ে যায় অনেক সময়। তাই মুখ ওয়াশ করার পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিবেন। রাতে ঘুমানোর আগে ভালভাবে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। বিশেষ করে যারা লং টাইম এসিতে থাকেন তারা অবশ্যই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
কোন সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল?
অনেকের ধারনা ময়েশ্চারাইজার শুধু শীতকালে ব্যবহার করতে হয়। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। বরং ত্বকের ভালোর জন্য সারাবছর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা যে কোনো সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যেভাবে ঘরে বসে জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন
গরম কালে আমাদের ত্বক এমনিই অনেক তেলতেলে হয়ে থাকে। তার উপর যদি তেল জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয় তাহলে বিরক্তির শেষ নেই। অয়েলি প্রডাক্ট ব্যবহার করলে আরো বেশি ঘাম হয় তাই এই সমস্যা দূর করার জন্য প্রয়োজন জেল বা ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার। ওয়াটার বা জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার বানাতে প্রয়োজনীয় উপাদান:
১. শসা
২. রোজ ওয়াটার
৩. নারিকেল/ বাদাম তেল
৪. এলোভেরা জেল
৫. গ্লিসারিন
বিদ্র: এলোভেরা জেল বাজার থেকে না কিনে প্রাকৃতিক এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমে শসা থেকে বীজ আলাদা করে নিয়ে শসা খুব ভাল ভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। যেন সব শসা ভাল ভাবে ব্লেন্ড হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবার শসার রসের সাথে হাফ চামচ রোজ ওয়াটার মিশিয়ে একটু নেড়ে নিন৷ তারপর একে একে হাফ চামচ করে গ্লিসারিন, বাদাম তেল মিশিয়ে নাড়তে হবে। যতক্ষন পর্যন্ত জেল থকথকে হবেনা ততক্ষন পর্যন্ত ভাল ভাবে নাড়তে হবে।
ব্যস তৈরি হয়ে গেল আপনার ত্বকের জন্য জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার। সকালে রাতে এবং গোসলের পরে এই ময়েশ্চারাইজার টি নিয়মিত ব্যবহার করবেন। সাত দিন পর্যন্ত এই ময়েশ্চারাইজার ফ্রিজে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যাবে। এই প্যাকটি ব্যবহার করলে ত্বক হাইড্রেট হবেনা, গভীর থেকে ত্বকে পুষ্টি যোগাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের ছেলেদের জন্য ময়েশ্চারাইজার
ছেলেদের ত্বক এবং মেয়েদের ত্বকের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। ছেলেদের ত্বক অনেক পুরু হওয়ায় ছেলেদের ত্বকে ব্রন বেশি দেখা যায়। ছেলেদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন ছেলেরা শেভ করার সময় যখন শেভিং ক্রিম ইউস করে তখন এই ক্রিম ত্বকলে শুস্ক করে৷ তাই সারা বছর ছেলেদের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিৎ। ছেলেদের তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ঘরে বসে ময়েশ্চারাইজার বানানো অনেক সহজ।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল ত্বকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে ফলে ত্বক দেখতে হেলদি লাগে, এবং ত্বকে যে অতিরিক্ত তেল থাকে তা ত্বকের গভীর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করার জন্য একটি আ্যলোভেরা পাতা থেকে জেল আলাদা করে ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে এর সাথে অল্প পরিমান ভিটামিন ই ক্যাপসুল ফুটো করে ভিতরের পিচ্ছিল তেল বের করে নিন। এবার মধু সহ জেল এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। এই ময়েশ্চারাইজার টি শেভ করার পর, গোসলের পর সকালে এবং রাতে লাগাতে হবে। শেভ করার সময় শেভিং ক্রিম ত্বকের ক্ষতি করে ময়েশ্চারাইজারে ভিটামিন ই ক্যাপসুল থাকার কারনে ত্বকের ক্ষতি করতে পারেনা।
এই মিশ্রনটি এয়ার টাইট বক্সে এক সপ্তাহ ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করা যাবে।
অলিভ অয়েল
যাদের স্কিনে গ্লো নেই, বয়সের ছাপ পরে গেছে তারা অলিভ অয়েল কে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পেতে পারেন। অলিভ অয়েল হাল্কা গরম করে সাথে হালকা চিনি মিশিয়ে শরীরে লাগিয়ে নিন। এতে মরা চামড়া দূর হবে ফলে ত্বক উজ্বল করবে সেই সাথে আপনার ত্বককে অনেক হেলদি এবং গ্লোয়িং বানাবে।
শিশুদের জন্য ময়েশ্চারাইজার
বাচ্চাদের জন্য ময়েশ্চারাইজার বানাতে প্রয়োজন নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং শিয়া বাটার।
এবার একটি পরিষ্কার বাটিতে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল, বাটার এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে ভাল করে। মসৃন না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। বাচ্চাকে গোসলের দশ মিনিট আগে মাখিয়ে তারপর ভাল কোনো বডি ওয়াশ বা সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে নিন।
ময়েশ্চারাইজার তৈরি করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করবেন:
- শুষ্ক উপাদান থাকলে সেগুলো আগে মিশিয়ে নিতে হবে এবং তারপর তরল উপাদান যোগ করুন।
- সমস্ত উপাদান ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে যতক্ষণ না একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি হয়।
- ময়েশ্চারাইজার বানানো হলে একটি বায়ুরোধী বা এয়ার টাইড বক্সে কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন।
পরিশেষ
তৈলাক্ত ত্বক অনেক বেশি সেনসিটিভ হয়ে থাকে। কারন প্রায় সারাবছর তৈলাক্ত ত্বকে ব্রন সহ নানা ধরনের সমস্যা লেগেই থাকে। তাই তৈলাক্ত ত্বকে প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্ন। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে চাইলে ভাল মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে এবং স্কিনের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের আগে ব্যবহারের সঠিক সময় এবং নিয়ম জানতে হবে।
আরো পড়ুন –