Dreamy Media BD

স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং করণীয়

স্কিন ক্যান্সার

গোটা বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ দূষণ, অপুষ্টিকর খাবার, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের অভাব ইত্যাদি অনেকাংশে ক্যান্সারের জন্য দায়ী। ক্যান্সার শরীরে যে কোন অংশেই হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের উপসর্গও ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কিন্তু ক্যান্সারের কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে। যেগুলো সাধারণত ঘাড়, মুখ এবং কানের কাছাকাছি দেখা গিয়ে থাকে।

অন্য সকল রোগের তুলনায় স্কিন ক্যান্সার খুব দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই স্কিন ক্যান্সার ঠিক কখন হয়েছে, কিভাবে হয়েছে, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এর শেষ পরিণতি সকলের মেনে নিতে হয়। একেবারে শেষের পর্যায়ে গিয়ে এই ক্যান্সার ধরা পড়ে কিন্তু তখন আর করার কিছু থাকে না। আজকের এই কনটেন্টটিতে তাই স্কিন ক্যান্সার সম্পর্কে যাবতীয় আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক-

স্কিন ক্যান্সার কি?

স্কিন ক্যান্সার মূলত ত্বক হতে উদ্ভূত একটি ক্যান্সার। এটি মূলত ঘটে থাকে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফলে। এটি শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ করার অথবা ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। স্কিন ক্যান্সার প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে: বেসাল-সেল স্কিন ক্যান্সার (বিসিসি), স্কোয়ামাস-সেল স্কিন ক্যান্সার (এসসিসি) এবং মেলানোমাস।

 প্রথম দুটি বেশ কম সাধারণ ত্বকের ক্যান্সার, এবং এই ক্যান্সার দুটি ননমেলেনোমা স্কিন ক্যান্সার নামেও পরিচিত। বিসাল সেল ক্যান্সার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং তার চারপাশের বিভিন্ন টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে যাওয়া বা মৃত্যুর সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু স্কোয়ামাস-সেল স্কিন ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এই ক্যান্সার সাধারণত মাথা আঁশযুক্ত একটি শক্ত ডলার দেখা দেয়। এটি আলসার তৈরি করতেও স্বাক্ষর। মেলানোমাস স্কিন ক্যান্সার মূলত সবচেয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। এর লক্ষণগুলো হলো এটি তিল আকারের, আকৃতি এবং রং পরিবর্তিত হয়, এছাড়া এতে চুলকানি এবং রক্তপাত হয়ে থাকে।

স্কিন ক্যান্সার মূলত সূর্যের অতিবেগুনি বিকিরণের কারণে হয়ে থাকে। এই বেগুনি রশ্নি আমাদের ত্বকে তিনটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ

স্কিন ক্যান্সার বা চামরার ক্যান্সার হলে তা খুব সহজে বোঝা যায়না। লক্ষণ দেখে বোঝা যায় না বলে অনেক রোগী চিকিৎসকের কাছে যেতে অনেক দেরি করে ফেলেন। এতে পরিণতি আরো ভয়াবহ এবং ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে।

স্কিন ক্যান্সার মূলত এমন একটি রোগ যা খুব দ্রুত আপনার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমাদের সকলের উচিত এই রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা। যাতে আমরা খুব সহজে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে পারি এবং চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারি। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই রোগের লক্ষণ :

১. শরীরের ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় গোল গোল দাগ হলে বুঝতে হবে এটি স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ। চামড়ায় ক্যান্সার হলে চামড়া বিভিন্ন রঙ ধারণ করে যেমন: লাল, গোলাপি, কালো, বাদামি ইত্যাদি।

২. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চামড়ায় এর রোগ হলে চুলকানির তুলনায় জ্বলুনি বেশি হয়ে থাকে।

৩. শরীরে তিল অথবা আচলি থাকলে তার দিকে ভালোভাবে নজর রাখুন। দেখুন এর রং অথবা আকারের কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা।

৪. নিজের ঠোটের চারপাশে কোন দাগ হয়ে থাকলে তবে এটি কেবল হরমোন জনিত ব্রণ না এর বাইরে অন্য কোন সমস্যাও থাকতে পারে। এটি মূলত হজমের সমস্যা এবং এনজাইম ফাংশনসংক্রান্ত সংকেত হতে পারে। নিচের ঠোঁটে সাধারণত ব্রণ হয় না। সুতরাং ভালোভাবে দেখতে হবে এটি কিট বা জীবাণু সংক্রান্ত কোনো সমস্যা কিনা।

৫. বয়সন্ধিকালের ঋতুস্রাব বন্ধ বা অন্য কোন কারণে প্রায়ই  নানা রকম ব্রণ উঠে থাকে। ব্রণ, চুল পরা, চুল বৃদ্ধি অথবা শুষ্ক ত্বকের লক্ষণগুলোও হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে। এই সকল সমস্যা চিকিৎসক ছাড়া নির্ধারণ করা বেশ কঠিন।

৬. পানি আমাদের শরীরে স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের শরীর পানি শোষণ না করলে এটি ত্বকে প্রদর্শন করবে, ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। যদি আমাদের ত্বক পানি শোষণ করে তাহলে সাধারণত কোন দাগ থাকবে না।

৭. শরীরে লাল লাল ফোসকা পড়তে পারে।

স্কিন ক্যান্সার

স্কিন ক্যান্সার কেন হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্কিন ক্যান্সারে ঘাড়, কান বা মুখের কোন অংশে সাদা কোন পিন্ডের মত দেখা গিয়ে থাকে। এটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে কার্সিনোমা। ত্বকের ক্যান্সারের লক্ষণ এটি হতে পারে। সাধারণত সূর্যের আলো আমাদের ত্বকের যে সকল স্থানে পৌঁছাতে পারে  বা স্পর্শ করে সেই অঙ্গ গুলোতে এই রোগ বিকাশিত হয়। ত্বকের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হচ্ছে সূর্যের আলোর প্রতিবেগুনি রশ্মি। 

অতিরিক্ত রোদে ঘুরাঘুরি করলে, প্রচুর পরিমাণে মেকআপ ব্যবহার করলে, নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ না করলে, ঘনঘন ব্লিজ করা অথবা ব্র্যান্ড ছাড়া কসমেটিক ব্যবহার করলে সাধারণত তাকে ক্যান্সার হয়ে থাকে।

স্কিন ক্যান্সার হলে কি করবেন

উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

এছাড়া তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী ছাড়ালেই সতর্ক হতে হবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ত্বকের জন্য উপযুক্ত সানক্রিম ব্যবহার করুন।

মেয়েদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা প্রতিদিন মুখে মেকআপ নেন। মেকআপে অবস্থিত ক্যামিকাল ত্বকের কোষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে মেকআপ করার ফলে ত্বকের উপর কেমিক্যাল এর আস্তরণ জমা হয়ে আস্তে আস্তে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমার মতে প্রয়োজন ছাড়া মেকআপ না করাই ভালো।

এছাড়া আপনারা ঘন ঘন ব্লিচ করার প্রবণতা ও কমিয়ে ফেলুন। ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত

সামান্য তিল হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ

এজন্য সাধারণ ব্রণ হলেই যে ডাক্তারের কাছে দৌড়াতে হবে এমন কোন কিছু নয়। তবে ব্যথাযুক্ত ফোরা সহজে না  অবশ্যই গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মূল কথা হচ্ছে তোকে ছোটখাটো পরিবর্তন দেখা দিলে বিপদ এড়াতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। যে সকল লক্ষণগুলো জানা থাকা প্রয়োজন।

নতুন আঁচিল ওঠা বা পুরনো তিলের পরিবর্তন

ত্বকের ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক হল মেলানোমাস। যা দেখতে অনেকটা অস্বাভাবিক আঁচিলের মতো অথবা ত্বকে বাদামি রংয়ের ফোটা ফোটা দাগের মতো হয়ে থাকে। রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যটি জানান নিউ ইয়র্ক’য়ের ত্বকবিশেষজ্ঞ হ্যাডলি কিং। যুক্তরাষ্ট্রের এক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, হঠাৎ করে শরীরের কোন স্থানে নতুন আঁচিল উঠলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক অবস্থাতেই ক্যান্সার রোগ নির্ণয় করতে পারলে রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া খুব সহজ।

ক্ষত না সারা

ত্বকের অতি সাধারণ ক্যান্সার হলো ‘বেইজাল সেল কার্সিনোমা’। যা ত্বকের উপরে ত্বকের মতোই রংয়ের বা লালচে আবার কখনো কখনো কালচে ছোট আকারে ফুলে ওঠে। আর এই ধরনের সমস্যা যদি সহজে না সারে তাহলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই ক্যান্সার মূলত দেহের অন্য জায়গায় ছড়ায় না। বরং যেখানে উৎপত্তি হয় তার চারপাশে আরো কয়েকটি উড়তে পারে। আর চিকিৎসা না করা হলে এই ক্যান্সার হাড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

অস্বাভাবিক চুল পড়া

দৈনিক মানুষের ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক। সাধারণত এটি আমাদের চোখে পড়ে না। তবে যদি প্রচুর পরিমাণে চুল পড়তে থাকে, পাতলা হতে থাকে, চুলের ঘনত্ব কমে যায় কিংবা টাক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে চিকিৎসা না করিয়ে অনেক দিন অপেক্ষা করলে চুলের ফলিকল নষ্ট হয়ে যেতে পারে ফলে যেই জায়গায় চুল উঠেছে সেই জায়গায় চুল পুনরায় নাও গজাতে পারে।

ত্বকের গভীরে ব্যথাযুক্ত ব্রণ

মুখে ব্রণ উঠা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। ব্রণ উঠলে ব্রণ সেরে যায়। তবে কোনো কারণে ত্বকের ভেতরের দিকে থেকে ফুলে থাকা ব্যথাযুক্ত ব্রণ দেখা দিলে এবং সেটি লালচে হয়ে না সারলে যত দ্রুত সম্ভব ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তা না হলে কুৎসিত ক্ষত দেখা দিতে পারে। একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ বলেন, ঘুম থেকে হওয়া ক্ষত প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে সারানো সম্ভব। ডাক্তাররা সে ক্ষেত্রে ক্রিম জাতীয় লোশন, ইঞ্জেকশন বা বরির মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকে।

ফুসকুড়ি ওঠা

একজন ডাক্তার বলেন, ত্বকের কোন জায়গা যদি হঠাৎ করে অদ্ভুত ধরনের ফুসকুরি, জ্বালাপোড়া, চুলকানি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ওষুধের দোকান থেকে চুলকানির মলম কিনে ব্যবহার করলে প্রথমের দিকে কিছুটা আরাম পাওয়া যায় কিন্তু ত্বকের গভীরে সমস্যা থেকেই যায়।

একজিমা, ক্ষত, ফাঙ্গাস কিংবা এলার্জিজনিত সমস্যার কারণে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে যদি ফুসকুড়ির জায়গায় উষ্ণ ভাব অনুভব হয়, নরম লালচে আভা থাকে, পুঁজ অথবা পানি বের হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।

বেশিরভাগ সময় ত্বকে লালচেভাব

গরমে অথবা রোদে থাকার কারণে মানুষের ত্বক লালচে হতেই পারে। কিন্তু যদি এই লালচে ভাব সবসময় থাকে। দেখা যায় বিশেষ করে নাকে এবং গলায় তবে সেটা হতে পারে রোজেইশা’র লক্ষণ।

এ অবস্থায় সাধারণত তেমন কোন চিকিৎসা নেই। তবে এ রোগের তীব্রতা কম করার জন্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দিতে পারে।

ক্যান্সার

স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

নিচে স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:

১. সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করার ফলে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি আপনার ত্বকে প্রবেশ করতে পারবে না ফলে আপনার স্কিন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বাহিরে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। আপনি যদি ঘেমে যান অথবা সাঁতার কাটেন তাহলে পুনরায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

২. সূর্যের আলো থেকে আপনার ত্বক রক্ষা করুন। বাহিরে যাওয়ার আগে আপনার ত্বক ভালো করে ঢেকে নিন যাতে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি আপনি ত্বকে না পড়ে। চেষ্টা করবেন ফুল হাতা শার্ট এবং ফুল প্যান্ট পরার। বর্তমানে অনেক কোম্পানি সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উন্নত মানের ফেব্রিক্স দিয়ে কাপড় তৈরি করে থাকে। আপনি চাইলে এ সকল কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।

৩. আপনার পরিবারে কারো ক্যান্সার আছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করুন। আপনার পরিবারে যদি কারো ক্যান্সার থেকে থাকে তাহলে আপনার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এজন্য স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনার পরিবারের কারো ক্যান্সার আছে কিনা তা ভালোভাবে জেনে নিন।

৪. দিনের বেলা যথা সম্ভব বাইরে না যাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ত্বকের ক্ষতিসাধন করতে পারে।

৫. লিপবাম ব্যবহার করুন।

৬. রোড থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন। সানগ্লাস ব্যবহার করার ফলে আপনি স্কিন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

৭. ট্যানিং বেড এবং সান ল্যাম্প ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

৮. যদি আপনার ত্বকে কোন অস্বাভাবিক কিছু দেখেন অথবা ত্বকের কোন পরিবর্তন দেখেন তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বছরে আমরা যেমন একবার দাঁত পরীক্ষা করি অথবা নারীরা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে যায় ঠিক তেমনি বাৎসরিক ত্বক পরীক্ষা করার মাধ্যমে স্কিন ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব। বিশেষ করে মেলানোমা। প্রাথমিক অবস্থায় মেলানোমা ধরা পড়লে তা চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব। কিন্তু যদি দেরি হয়ে যায় তা দেহের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বছরে একবার হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মতো ত্বক পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

স্কিন ক্যান্সারের চিকিৎসা

ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরন এবং ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন উপায়ে স্কিন ক্যান্সারের চিকিৎসা করা যায়।

ক্রায়োসার্জারি:

বছরের পর বছর সূর্যের সংস্পর্শে থাকার কারণে আপনার ত্বকে যে রুক্ষ এবং বিভিন্ন দাগ সৃষ্টি হয়েছে অথবা ত্বক ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। ডাক্তাররা প্রাথমিক ক্ষেত্রে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে এসব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দেবে। মৃত টিস্যু গলানোর পর স্লো হয়ে যায়।

সার্জিকাল এক্সিশন:

এই পদ্ধতিতে কিছু সহ টিউমার কেটে বাদ দিতে অস্ত্র প্রচার করা হয়ে থাকে। পুরো টিউমার অপসারণ বা কেটে ফেলা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য একটি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিটি যেকোনো ধরনের ত্বকের ক্যান্সারের জন্য করা যেতে পারে।

মোহস সার্জারি:

এই পদ্ধতিতে একটি মাইক্রোস্কোপিক নিয়ন্ত্রিত সার্জারি থাকে যেখানে টিউমারের স্তর দিয়ে সরানো হয়ে থাকে, সাথে টিস্যুর একটি ছোট টুকরা যা পড়ে ক্যান্সার কোষগুলোর জন্য একটি মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিটি পুনরাবৃত্তিমূলক, বড় বা চিকিৎসা করা কঠিন ত্বকের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি করা হয়ে থাকে।

সিউরেটাগে এবং ইলেক্ট্রোডিসিকেশন:

এই পদ্ধতিতে ত্বককে বারবার একটি দীর্ঘ তীক্ষ্ণ যন্ত্র দিয়ে ক্যুরেট করা হয়ে থাকে, তারপর ক্যান্সারের অবশিষ্ট কোষগুলি একটি বৈদ্যুতিক সুইচ বা ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

বিকিরণ থেরাপি:

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এলার্জি বিম ক্যান্সার মেরে ফেলার জন্য এই পদ্ধতি সাধারণত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা না গেলেও এই পদ্ধতিতে করা যায়।

কেমোথেরাপি:

কিছু ঔষধ কেমোথেরাপিতে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্বকের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যা শুধুমাত্র ত্বকের উপরের স্তরে সীমাবদ্ধ থাকে, কিছু ঔষধযুক্ত ক্রিম বা লোশন সরাসরি তাকে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

স্কিন ক্যান্সারে কি খাবেন

ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে আমাদের জীবন যাপনের ধরন এবং খাদ্যাভাস অনেকটা ক্যান্সার রোগের জন্য দায়ী। এজন্য এই মরণ খাতি ক্যান্সার রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের সকলের পরিবর্তন আনতে হবে জীবন ধারা এবং আমাদের খাবারের। এমন কিছু খাবার প্রতিদিন খেতে হবে যা আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রুকলি, বেরি বা রস ুন ক্যান্সারের মাত্রা অনেকটা কমাতে পারে। ক্যান্সার রোগ দূর করনে এই খাবারগুলো বেশ কার্যকরী। এই খাবারগুলোতে রয়েছে ফটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার ফলে এগুলো বেশ কাজ করে। নিচে কিছু খাবার সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো যা খিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে বা ঝুঁকি কমায়।

তিল:

এটি ইস্ট্রোজেনের কারণে সৃষ্ট ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে তিলের তেল থেকে পাওয়া ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যান্সার কোষের ধ্বংস করতে পারে। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় তিলে তেল রাখা প্রয়োজন।

হলুদ:

স্বাস্থ্যের জন্য হলুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্যান্সারের কোষ বিশেষ করে ফুসফুস এবং স্কিন ক্যান্সার এর থেকে দূরে রাখে। এছাড়া হলুদ ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া রোধ করতেও সাহায্য করে। বিভিন্ন গুণাবলী প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে।

ব্রকোলি:

সবুজ রঙের শাকসবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া ব্রকলি ব্রেস্ট ক্যান্সার, টিউমার ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে থাকে। এটি মুক্তি দিতে পারে হরমোন জনিত ক্যান্সার থেকেও। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় ব্রকলি রাখুন।

মাশরুম:

মাশরুম খেতে সুস্বাদু না হলেও এটি বেশ স্বাস্থ্যকর খাবার। কোলেস্ট্রল কমাতে মাশরুম সাহায্য করে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এইসবজি কাজ করে থাকে। তাই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাশরুম খান।

স্কিন ক্যান্সার হলে কি কি খাবার খাবেন না

স্কিন ক্যান্সার হলে যেসব খাবার খাবেন না তা নিচে তুলে ধরা হলো:

১. ফ্রিজে রাখা খাবার ক্যান্সার রোগীরা কখনো খাবেন না।

২. খাদ্য সংরক্ষণে ফরমালিন এর ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু বর্তমানেও এই ফরমালিন বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রিজারভেটিভ দেওয়া কোন খাবার ক্যান্সার রোগীরা খাবেন না।

৩. সিঙ্গারা,সমুচা, অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাবেন না।

৪. যে সকল খাবার সরাসরি আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হয় সেগুলো খাবেন না।

পরিশেষে,

ক্যান্সার রোগের সংখ্যা দিন দিন ক্রমশ বেড়ে চলছে। এ রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের জীবন যাপন এবং খাদ্য ভাসে পরিবর্তন আনা জরুরী। এছাড়া আমরা কিভাবে এই স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করব সেই সম্পর্কে আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা উচিত। যদি মনে হয় আপনার শরীরের কোন অঙ্গ ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত অথবা আপনার শরীরে কোন অঙ্গ পরিবর্তিত হয়েছে তাহলে অযথা সময় নষ্ট না করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

কেননা ক্যান্সার প্রথমের দিকে নির্ণয় করা গেলে খুব সহজে এটি নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু যদি এ রোগ অনেকদিন যাবত আপনার হয়ে থাকে তাহলে এটি আপনার পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুরো শরীর ছড়িয়ে গেলে চিকিৎসা করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অল্প থেকে এ রোগের চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

এছাড়া যে সকল খাবার খেলে এ রোগ প্রতিরোধ হয় তা আমাদের নিয়মিত খাবারের রাখা উচিত। বছরে একবার হলেও আমাদের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে যাওয়া উচিত। যাতে করে আমরা শরীরে কোন অংশে স্কিন ক্যান্সার হলে খুব সহজেই নির্ণয় করতে পারি।

আরো পড়ুন –

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents