তীব্র গরম সবার কাছেই খুব অস্বস্তিকর একটি ব্যপার। ছোট থেকে বুড়ো সবাই তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে নানান রকম উপায় বেছে নেন গরম থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য। তীব্র গরম যে শুধুই অস্বস্তিদায়ক তা নয় বরং তীব্র গরমে ত্বকে ঘামাচি,ফুসকুড়ি, লাল বা কালো হয়ে যাওয়া, ব্রন ওঠা সহ নানান ধরনের ব্যধি দেখা দেয়। এছাড়াও ডাইরিয়া বা জ্বরও দেখা দেয় হতে পারে হিট ষ্ট্রোকও তীব্র গরমের কারনে।
আর এ সকল সমস্যা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু উপায় অনুসরণ করলেই গরম থেকে রেহাই পাওয়া যায় কিছু হলেও। আজকের আর্টিকেলে কিভাবে গরম থেকে বাচতে পারবেন সেই উপায় জানতে পারবেন:
১. পাতলা ও হাল্কা রঙের পোশাক পরুন
তীব্র গরমে জরজেট বা সিনথেটিক টাইপের পোশাক পরলে বেশি গরম লাগে৷ শরীর অনেক ঘেমে যায়, ঘামও শুকাতে পারেনা। ফলে চরম অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাই গরমে ভারী ও জরজেট পোশাক পরিহার করে হাল্কা সুতি পোশাক বাছাই করতে হবে৷ সেই সাথে পোশাকের রঙের ব্যপারেও সচেতন থাকতে হবে৷
হাল্কা রঙ এর পোশাক পরলে গরম কম লাগে কারন সূর্যের তাপকে বিকর্ষণ বা দূরে ঠেলে দেয়। কালো বা অন্যান্য ভারী রঙ এর পোশাক সূর্যের তাপকে আকর্ষণ করে ফলে গরম লাগে। তাই কালো রং পরিহার করে সাদা, হাল্কা গোলাপী বা সোনালী রঙের পোশাক পরিধান করলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়।
২.বাড়ির বাইরে থাকাকালীন রোদ কে উপেক্ষা করুন
অতিরিক্ত রোদ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত রোদ আমাদের শরীরের মেলানিন এর পরিমান বাড়িয়ে শরীর কে কালো করে। তাই বাইরে বের হলে যথা সম্ভব রোদ কে এড়িয়ে চলুন। ছাতা ব্যবহার করুন এবং ত্বককে রোদের ক্ষতিকর তাপ থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী।
৩. পানি পান
গরমে পানি শূন্যতা একটি সাধারন সমস্যা। ছোট শিশু থেকে বয়স্ক যে কারো পানি শূন্যতা হতে পারে। যেহেতু গ্রীষ্মকালে ত্বক থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বেড়িয়ে যায়৷ এ সময় পানি শূন্যতার কারনে ইলেকট্রোলাইড ইমব্যালেন্স তৈরি হয়। তাই প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
খাওয়ার পানির সাথে স্যালাইন পানি, ফলের রস, ডাবের পানি পান করতে পারেন। স্যালাইন পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম তাই এই স্যালাইন পানি শরীর কে সতেজ ও ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করার।
৪. মাংস কম করে খাওয়া
মাংস তে প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও আশ থাকে যার ফলে মাংস খেলে শরীর অনেক তাপ সৃষ্টি হয়, পানির পিপাসা বাড়িয়ে দেয়। মাংস পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে গরুর মাংস যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
মাংস পরিহার করে সবুজ শাক এবং সবজি খাবার হিসেবে বেছে নিতে হবে। শাক সবজি খাওয়ার ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাবে এবং শরীর কে সতেজ রাখবে। শুধু মাংস নয় সকল ধরনের ফাষ্ট ফুড এই সময় না খাওয়াই ভাল। সেই সাথে পুরনো বা বাসি খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটাও পরিহার করতে হবে।
৫. প্রস্রাবের রং খেয়াল করুন
গরমে পানি শূন্যতা সাধারন সমস্যা হওয়ায় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান পানি জমে থাকতে পারেনা। তাই গরমে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত পর্যাপ্ত পরিমান পানি না খেলে প্রস্রাব হলুব বা লাল হয়ে থাকে। তাই প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাব এর রঙের দিকে খেয়াল রাখুন। যদি গাড় হয় তাহলে বুঝবেন আপনি যে পরিমান পানি পান করছেন তার চেয়েও বেশি পরিমান পানি পান করতে হবে৷ যদি প্রস্রাব এর রঙ সাদা বা পানির মত হয় বুঝবেন আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পানি আছে।
৬.সানস্ক্রিন লোশন/ ক্রিম ব্যবহার
নিয়মিত সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে৷ বাজার থেকে লোশন বা ক্রিম কেনার আগে অবশ্যই আপনার ত্বকের ধরন বুঝে তারপর সানস্ক্রিন লোশন কিনতে হবে। এস পি এফ ত্রিশ বা তার চেয়ে বেশি সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করাই উত্তম।
৭.রুমে পর্যাপ্ত জানালা রাখা
রুমে যতই ফ্যান এসি চলুক না কেন প্রাকৃতিক বাতাস একটু পেলেই শরীর আরাম পায়। তাই চেষ্টা করুন রুমের সব জানালা খুলে রাখার। যেন রুমে আলো ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে। লোডশেডিং হলেও রুমে পর্যাপ্ত জানালা থাকলে গরমেও তেমন কষ্ট হয়না।
৮. বাহির থেকে এসেই গোসল না করা
অনেকেই আছে বাইরে থেকে এসেই গোসল করে। এমন ভুল এর কারনেই হিটষ্ট্রোক হয়ে থাকে। তাই বাহির থেকে বাসায় ফিরলে প্রথমে ফ্যান বা এসির নিচে বসে শরীর ঠান্ডা করে নিন তারপর গোসলে যান। হিট ষ্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
৯.দিনের বেলা বাইরে কম বের হওয়া
যেহেতু গরম কালে সূর্য একদম মাথার উপরে থেকে তাপ প্রদান করে যার ফলে প্রচুর গরম লাগে। কিন্ত বিকেল হওয়ার সাথে সাথে তাপ কমতে থাকে। তাই চেষ্টা করতে হবে দিনের বেলা বাইরে না যেয়ে বিকেল বা সন্ধ্যার পর বাইরের কাজ করা। আর যদি যেতেই হয় দিনের বেলা তাহলে অবশ্যই সকল নিয়ম মেনে বাইরে যেতে হবে।
১০. সঠিক জুতা নির্বাচন
এই গরম থেকে বাচার জন্য জুতা নির্বাচনেও সতর্ক থাকা উচিৎ। অনেকে আছেন যারা এই সিনথেটিক বা কাপড়ের জুতা ব্যবহার করে৷ আপনার সেই অভ্যাস থাকলে অবশ্যই পরিহার করতে হবে৷ চেষ্টা করুন এই সময় চামড়ার জুতা ব্যবহার করার। চামড়ার জুতা ব্যবহার করলে পায়ে বাতাস লাগে ফলে আরাম লাগে।
১১. সকালে গোসল
এই গরম থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন সকালে গোসল করতে পারেন। এতে করে সারাদিন গরম কম লাগবে এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে। এছাড়াও বাইরে বের হলে রুমাল ভিজিয়ে সাথে রাখলে যখন অতিরিক্ত গরম বোধ হবে তখন রুমাল দিয়ে শরীর মুছে নিতে পারেন।
১২. এসির সীমিত ব্যবহার
গরমে এসি যদিও অনেক আরামদায়ক তবে প্রচন্ড গরমে এসি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসির বিকল্প হিসেবে বালতিতে পানি ভরে রুমে রাখতে পারেন। পানি আপনার রুমকে ঠান্ডা রাখবে।
১৩. হিটষ্ট্রোক সম্পর্কে জানুন
গরমে হিট ষ্ট্রোক খুব সাধারন একটি ব্যপার। তাই কিভাবে হিটষ্ট্রোক হয় এবং এর লক্ষন কি হওয়ার পরে কিভাবে চিকিৎসা করতে হয় ভাল ভাবে জেনে নিন। এতে করে হিট ষ্ট্রোকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। হিট ষ্ট্রোক হলে সাধারনত বমি বমি ভাব, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা, মাথা ঝিমঝিম করে। তাই এমন হলে সাথে সাথে চিকিৎসক এর কাছে যেতে হবে।
১৪. বাড়ি নির্মানে উইন্ড ক্যাচার টাওয়াল লাগানো
বাড়ি নির্মান করার সময় উইন্ড ক্যাচার টাওয়ার লাগালে সেই বাড়িতে বায়ু চলাচলের সুন্দর ব্যবস্থা করে দেয়। ফলে গরম কম অনুভূত হয় এসব বাসায়।
১৫. গাছ লাগানো
গরম থেকে সব চেয়ে বেশি বাচাতে পারে গাছ। কারন গাছ প্রচুর পরিমান অক্সিজেন এর ভান্ডার। তাই বেশি বেশি গাছ লাগালে গাছ আমাদের গরমে ছায়া প্রদান করবে।
পরিশেষ
অতিরিক্ত তাপদাহ আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাপদাহ একই সাথে যেমন আমাদের শরীরের ক্ষতি করে তেমনি করে পরিবেশের। এক গবেষনায় এসেছে ২০১৯ সালে তাপদাহের কারনে ৩ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ মরে গেছিল৷ বিশেষজ্ঞরা মনে মরেন এই তাপদাহ দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাবে।
জলবায়ু এভাবে পরিবর্তন হলে তাপদাহ আর ঘন ও তীব্র হয়ে উঠবে। তাই আমাদের সুস্থ থাকতে সকল নিয়ম সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আমাদের সবার উচিৎ অতিরিক্ত গরম থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সে সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা এবং সেগুলো মেনে চলা।
আরো পড়ুন –