Dreamy Media BD

কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান

কুমিল্লার দর্শনীয় স্থান

শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে একটু নিরিবিলি পরিবেশে এবং উদাসী মন নিয়ে একটু ভিন্ন আমেজ পেতে কে না চায়?তাই মনের সাধ পুরণ করতে সবাই ছুটে আসে এমন কোনো জায়গায় যেখানে গেলে একটুও বোরিং লাগবে না,,, হুঁ ঠিকই ধরেছেন আজকে আর্টিকেলটা সাজিয়েছি এমনই একটা জেলা নিয়ে “কুমিল্লা”। ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে গঠিত ও অনেক সুন্দর চোখ জুড়ানো স্পট নিয়ে যার সম্ভার।

চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কুমিল্লা জেলাকে।যেটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। কুমিল্লা জেলাকে বাংলাদেশের খাদি কাপড় আর রসমালাইয়ের নগর নামে সবাই চেনে। অনেক গুলো উপজেলা নিয়ে গঠিত বলেই একে বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা নামে জানি সবাই।

কুমিল্লা নামকরণের কিন্তু শুরুর দিকে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল, পরবর্তীতে অঞ্চলটির  ত্রিপুরা রাজ্যের যোগসূত্র ঘটে। এরপর নবম শতাব্দীর দিকে জেলাটি হরিকেল অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। অষ্টম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ময়নামতির দেব বংশ ও চন্দ্র বংশ এর শাসনাধীনে ছিল। কুমিল্লার মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনার নিদর্শন।

ঐতিহ্যবাহী স্থান ভ্রমণ করতে কার না ইচ্ছা জাগে? তাই স্বাগতম জানাচ্ছি আপনাকে কুমিল্লা ভ্রমণে , একা কিংবা পরিজনদের সাথে নিয়ে বা প্রিয়জনের সাথে দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করার জন্য। নিচে দেওয়া হল কুমিল্লা ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইডলাইন।

১.কুটিলা মুড়া 

কুটিলা মুড়া বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত। এটি মূলত কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির একটি পুরনো প্রত্নসম্পদ। কুমিল্লার বুকে এই ঐতিহাসিক পুরনো তিনটি স্তূপ আজ ও মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। এটি সুলতানি আমলের বৌদ্ধ নিদর্শন।লালমায় প্রত্ন স্থাপনের মধ্যে কুটিলা মুড়া অন্যতম ভূমিকা পালন করছে।

আব্বাসীয় খলিফা মুতাসিম বিল্লাহ এর সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নির্দেশন কুটিলা মুড়া। বিশেষ করে বৌদ্ধধর্ম অনুসারীদের কাছে এটি খুবই পবিত্র স্থান। এই স্থানে মাটি খনন করার পর তিনটি স্তূপে পরিণত করে । পরবর্তীতে এটি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের ত্রিরত্ন বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ এর প্রতীক হিসেবে।

চতুর কোণ বিশিষ্ট বৃত্তের ওপর গোলাকার একটি গম্বুজ প্রত্ন তিনটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। গোলাকার গম্বুজের আকৃতি একটি কক্ষ তৈরি করা হয়েছিল। কক্ষটির চারপাশ ঘিরে আরো আটটি ছোট ছোট কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছিল। যেগুলো পোড়া ইটের তৈরি। কক্ষগুলো গুলো বেশ দৃষ্টি নন্দন।

অন্য একটি ইটের তৈরি স্থূপের মাঝে একটি গত খনন করা হয়েছে যার ভিতর মাটির তৈরি সিল ও স্বর্ণমুদ্রা, দুইটি পাথরের মূর্তি পাওয়া গিয়েছে যেগুলো কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার জাদুঘরে সংরক্ষিত করা আছে। কুটিলা মুড়াকে দূর থেকে দেখলেই আপনার হৃদয় একবার হলেও দর্শন করতে যেতে ইচ্ছা করবে। চারিদিক সবুজ চত্বরে ঘেরা ।এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা আজও ভীড় করে এখানে। 

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন 
কুমিল্লা জেলার মহাসড়ক থেকে প্রায় দুই মাইল দক্ষিণে সেনানিবাস এলাকায় কুটিলা মুড়া অবস্থিত।  কুমিল্লা মহাসড়ক থেকে যেকোনো ভ্যান, রিক্সা বা অটোতে করে কুটিলা মুড়া যেতে পারেন। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১০ টাকা করে।
চন্ডি মুড়া মন্দির 
চন্ডি মুড়া মন্দির

 ২.চন্ডি মুড়া মন্দির 

ইতিহাসের প্রসিদ্ধ মহাতীর্থের মন্দির গুলোর মধ্যে চন্ডীমুড়া অন্যতম। ছায়া শ্যামল পরিবেশে গড়ে ওঠা মন্দিরটিতে ভিড় করে হাজারো হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই মন্দিরটিকে ঘিরে রয়েছে হাজার ও ইতিহাস। হিন্দু ধর্মালম্বীদের থেকে জানা যায়, অতি প্রাচীন যুগে হিন্দু ধর্মের দেবী মা ভগবতি অসুরদের সাথে যুদ্ধকালীন সময়ে রাগান্বিত হয়ে চণ্ডী রূপ ধারণ করে ওসুরদের বিনাশ করে।

মায়ের রাগান্বিত চন্ডী রূপের কারণে শরীর থেকে যে তাপ বের হয় তার জন্যই এই পাহাড়ের মাটি লাল হয়ে যায়। এরপর সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধরাজ দেব ও তার সহধর্মী রানী প্রভাবতী দেবী ছিলেন হিন্দু বংশোদ্ভূত।

তারা ভগবতী মা যেখানে ওসুরদের বদ করেছিলেন ঠিক সেখানেই রানীর ইচ্ছায় পরবর্তী প্রজন্মের সাক্ষী হিসেবে তৈরি করেছিলেন দুইটি মন্দির। এবং সেখানেই দেবী চন্ডীমায়ের মূর্তি স্থাপন করে আরাধনা করতে থাকেন। প্রায় ১৫০ ফুট উপরে অবস্থিত চন্ডীমুড়া মন্দির। প্রবেশের পথের প্রথমেই রয়েছে দূরদর্শন একটি গেট।ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৮০ টি সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে মন্দিরটি তে যেতে হয়।

সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার পর জুতা খুলে প্রবেশ করলেই দুটি মন্দির দেখতে পাবেন একটি শিব মন্দির একটি পার্বতী মন্দির। মন্দিরের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকালে আপনি পুরো অঞ্চল টা অপলৌকন করতে পারবেন মনে হবে সবুজের মাঝখানে আপনি একজন ক্ষুদ্র জীব।

দারুন আকর্ষণীয় মন্দিরটিকে ঘিরে রয়েছে আরো কিছু ভবন আছে যেখানে পুজো পার্বণ এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করা হয়। ভবনগুলোতে রয়েছে কিছু প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা। যা অনেক পুরনো ঐতিহ্য বহন করে আসছে যুগের পর যুগ। চন্ডী মন্দিরে সরস্বতী ও শিব মন্দিরে শিবকে স্থাপন করে দুজনকে আলাদা আলাদা পূজা অর্চনা করা হয় আজও।

বিভিন্ন উৎসবে এই মন্দিরে প্রাঙ্গনে বড় করে মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও এই মন্দিরে বর্তমানে পূজা অর্জনের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মের ইতিহাসের কথা জানতেও দর্শনার্থীরা ছুটে আসে এখানে। মন্দিরের পাশে শিলালিপি পড়ে অনেকেই ধারনা করে মন্দিরের বিষয়ে ।

অনেক দূর দূরান্ত থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আসে এই মন্দিরের তীর্থ করতে। ফল, মিষ্টি, ফুল ইত্যাদি পুজো সামগ্রী দিয়ে আরাধনা করে নিজের মনের ইচ্ছা গুলো এবং পাপ মোচনের জন্য এই মন্দিরের এসে থাকেন। বর্তমানে কুমিল্লা জেলার এটি একটি দর্শনীয় এবং ঐতিহ্যবাহী প্রত্নস্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

আপনি যদি হিন্দু ধর্মের ইতিহাস প্রেমী হন তাহলে একবার হলেও কুমিল্লা জেলার চন্ডীমুড়া ঐতিহাসিক মন্দিরটি এসে দর্শন করে যাবেন ।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
চন্ডি মুড়া মন্দির কুমিল্লা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।  কুমিল্লা সদর থেকে রিক্সা, অটো বা সিএনজিতে করে ৪০ মিনিটের মধ্যে মন্দিরে যাওয়া যায়। বা কুমিল্লা রেল স্টেশন থেকে লালমাই স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সা বা অটোতে করে চন্ডীমুড়া মন্দিরে যেতে পারবেন।

কুমিল্লার যে কোন স্থান থেকে সিএনজি কিংবা টমটমে করে আপনি চন্ডীমুড়া মন্দির দর্শনের জন্য যেতে পারেন। এক্ষেত্রে রিজার্ভে বেশি সুবিধা লাভ করবেন। 

কুমিল্লার সর্বত্র সিএনজি ও টমটম অহরহ যাতায়াত করে থাকে ।

 ৩.রূপবান মুড়া 

রহিম রুপবানের ভালোবাসার কথা আমরা কে না জানি? কুমিল্লার রহিম রুপবানের ভালোবাসার স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে রূপবান মুড়া। তাদের অসম্পূর্ণ প্রেমের বহু নিদর্শন আছে এই স্থাপনাটিকে ঘিরে। ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির জন্য একটি অসাধারণ স্থান হচ্ছে রুপবান মুড়া। কুমিল্লা জেলার একটি প্রত্নতন স্থাপনার মধ্যে রূপবান মুড়া অন্যতম নিদর্শন।

কুমিল্লার স্থানীয় লোকেরা উঁচু ঢিবিকে মুড়া বলে । আর অনেকেই মনে করে এখানে রহিম রুপবানের বসবাস কেন্দ্র ছিল সেখান থেকেই নাম হয় রূপবান মুড়া। টিকিট কেটে প্রবেশের পরেই পথে দুই ধারে দেখবেন ঘন সবুজ গাছ আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছে। একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন রুপবান মুড়ার পরিচিতি। একটি টিলার উপর এই রূপবান মুড়াটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

এখানে মাঝারি আকৃতির আকর্ষণীয় একটি সমাধি মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে খননের পর। এছাড়া আরো পাওয়া গেছে অষ্টাকোন আকৃতির স্তুপ, বর্গাকৃতির ভিতের ওপর একটি স্তূপ এবং বেশ কিছু কাঠামো। আয়তাকার স্তুপ অঙ্গনের পশ্চিম দিকে প্রবেশ পথ আছে। এবং সামনে আছে মঠের প্রবেশদ্বার। 

আয়তাকার স্তূপটি দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত আছে। এখানে ছোট আকৃতির একটি বিহার ও একটি মন্দির আছে। বিহারটির প্রবেশ পথের দুই পাশে দুটি প্রহরী কক্ষ ছিল। বিহারের স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ চোখে পড়ার মতো। এখানে মোট ২৪টি কক্ষ রয়েছে। শ্রমিক ও প্রহরীদের জন্য একটি কক্ষে বিছানা ছিল। যা ইট দ্বারা নির্মিত।

বিহারটি তৈরি করা হয়েছিল কাদা মাটি দ্বারা । রূপবান মুড়ার কেন্দ্রীয় মন্দিরের গায়ে লোকশিল্পের জীবনগাথাঁ পোড়ামাটির ফলকচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রয়েছে একটি শিলালিপি যেখান থেকে রূপবান মুড়া সম্পর্কিত কিছু তথ্য পাবেন। এক কথায় অসম্ভব প্রাকৃতিক সুন্দর যে টইটম্বুর হয়ে আছে এই রূপবান মুড়াটি। কুমিল্লা এসে যদি ভাবেন কোথায় একটু আপনার সময়টা ভালো কাটবে এক কথায় রূপবান মুড়া।

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়িতে অবস্থিত রূপবান মুড়া। কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্ব রোড থেকে সিএনজি, অটো কিংবা রিকশায় বর্ডার গার্ডের সামনে আসতে হবে জন প্রতি ভাড়া ১০ টাকা। বর্ডার গার্ডের সামনে থেকে পায়ে হেঁটে ৫০০ মিটার পশ্চিমে গেলেই রূপবান মুড়া পেয়ে যাবেন।

সপ্তাহের সাত দিন খোলা থাকে রূপবান মুড়া। সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

সতের রত্ন মন্দির
সতের রত্ন মন্দির

৪.সতের রত্ন মন্দির/জগন্নাথ মন্দির

কুমিল্লার দর্শনীয় সেরা স্থানগুলোর মধ্যে সতের রত্ন মন্দির বা জগন্নাথ মন্দির অন্যতম। দারুন কারুকার্যময় পোড়া ইটের তৈরীর মন্দিরটির তিন তলা বিশিষ্ট। এত সুন্দর ভাবে পরিপাটি পরিবেশ যা আপনার সহজেই মন কাটবে। এটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে।

মন্দিরটির দ্বিতীয় তলায় আটটি এবং তৃতীয় তলায় আটটি এবং কেন্দ্রীয় একটি মোট সতেরো কি রত্ন আছে । বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা এখানে ছুটে আসে পূজা অর্জনের জন্য তাই সেখানে আছে একটি দোকান যেখানে পুজোর মালা ,বই-পুস্তক, মোমবাতি এবং বিভিন্ন রকম পুজোর সামগ্রী নিয়ে বসে আছে মন্দিরদের কর্মকর্তারা।

আট কোনাকৃতির মন্দিরটি কিছুটা ছাতার মতো দেখা যায়। মন্দিরের চূড়ায় আছে খাঁজ কাটাযুক্ত একটি সুচের মতো চিকুন দন্ড ।এখানে শাক , উলুধ্বনী, কাসর বাজিয়ে পুজো দেয় হিন্দু ধর্মালম্বী অনুসারীরা। এবং প্রতিনিয়ত ভোজন, কীর্তন হয় মন্দির প্রাঙ্গণে।

প্রতিবছর মন্দিরে রথযাত্রা অনুষ্ঠান পালিত হয়। দূর দুরন্ত থেকে আসা পূর্ণ্যার্থীদের জন্য এখানে আহারের ব্যবস্থা করা হয়। ভক্তগন এখানে এসে নিজের মনের মতো করে কাজ করে মন্দিরের পূর্নের জন্য। মন্দিরটি সবখানেই রয়েছে বিভিন্ন রংবেরঙের ফুল অংকন করা । 

মন্দিরটির ভিতরে তিনজন দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপন করা আছে। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা । মন্দিরটির চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রবেশ পথের দুই পাশে রয়েছে অপরূপ নকশা করা।

দোতালাটিতে রয়েছে ছয়টি জানালা। মন্দিরটির ধাপে ধাপে রয়েছে বিভিন্ন রংয়ের লতাপাতার চিত্র অংকন। মন্দিরটির একপাশে রয়েছে রথ। রথযাত্রার অনুষ্ঠানে সেগুলো বের করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা জান , এই মন্দির প্রতিষ্ঠা কালে বেশ কয়েকজন ত্রিপুরা মহারাজার মৃত্যু, সিংহাসন হারানো, দখলের ঘটনাও ঘটেছিল। এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা প্রথমে শুরু করে মহারাজ দ্বিতীয় রত্ন মানিক্য।

আর শেষ করে মহারাজ কৃষ্ণ মানিক্য। মাঝখানে ৫০ বছরের মতো সময় গেছে।অবসর সময়টা কাটানোর জন্য কুমিল্লায় এলে একবার হলেও ঘুরে যেতে পারেন এই রহস্যে ঘেরা সতেরো মন্দির বা জগন্নাথ মন্দিরটিতে।

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
সতের রত্ন মন্দির টি কুমিল্লা জেলা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে জগন্নাথপুর নামক স্থানে অবস্থিত।  কুমিল্লা শহর থেকে প্রথমে চকবাজার যেতে হবে সেখান থেকে সিএনজিতে করে বা অটোতে করে মন্দিরে যাওয়া যাবে।

প্রতিদিন নিয়মিত রিক্সা বা অটো মন্দির দর্শনার্থীদের দেওয়া নেওয়া জন্য যাতায়াত করে। অটো ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০ টাকা করে । 

৫.ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক 

বাচ্চাদের নিয়ে আমরা যদি ঘুরতে যাওয়ার কথা চিন্তা করি প্রথমেই আমাদের মাথায় আসবে কোন একটি পার্ক । ব্যস্ততার জীবনে ছুটি পেলেই আমরা চিন্তা করি বাচ্চাদের কোন পার্কে নেওয়া যায়? আপনার প্রশ্নের একটাই উত্তর ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক। ম্যাজিক প্যারাডাইসি পার্কটি কুমিল্লা জেলার সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে সুন্দর পার্ক । মনোরম পার্ক টিতে রয়েছে ছোট বড় সবার বিনোদনের সুব্যবস্থা। 

ওয়াটার পার্ক ,ডাইনোসর পার্ক, পিকনিক স্পট, এবং ২০টির ও বেশি রাইড আছে এই পার্কে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় থিম পার্কের আদলে কুমিল্লা জেলার ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কটির ফটোক তৈরি করা হয়েছে। মূল ফটোকের সামনে তিনটি ডাইনোসরের পুতুলের মত আছে যারা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আপনাকে ওয়েলকাম করবে।

বিষয়টি ছোট থেকে বড় সবাইকেই আনন্দিত করবে। প্রবেশ পথের প্রথমেই ডান পাশে টিকিট কাউন্টার এবং বামপাশে গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা রয়েছে। পার্কে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আপনি বিভিন্ন রাইড দেখতে পারবেন।সবচেয়ে বড় রাইড নাগরদোলা। পাশে রয়েছে একটি কৃত্রিম লেক। যেখানে স্বচ্ছ পানি এবং ওয়াটার বোর্ড রয়েছে। লেকের ভিতর দৃষ্টি দিলে দেখতে পাবেন বড় বড় অক্ষরে সাজিয়ে লেখা আছে “ম্যাজিক প্যারাডাইস।”

 বাস্তবে আমরা কখনো ডাইনোসর দেখতে পারবো না কিন্তু কুমিল্লার ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কে আসলে একটি ডাইনোসর রূপি পুতুল দেখতে পাবেন। যার মুখ থেকে ডাইনোসরের ভয়ংকর গর্জন শুনে যে কেউ প্রথমদিকে ঢুকে আপনার পিলে চমকে যাবে। আর সব থেকে মজার বিষয় হলো গর্জনের পাশাপাশি ডাইনোসরের  নড়াচড়া করা দৃশ্য ।

 সত্যি কথা বলতে আপনি যদি একটু ভালোভাবে না দেখেন তাহলে আপনি এক মুহূর্তের জন্যও ধরতে পারবেন না এগুলো কৃত্রিম ডাইনোসর। আপনার কাছে কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হবে এ যেন এক ডাইনোসরের জগত। বিশেষ করে বাচ্চাদের কাছে এটি অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে। 

ডাইনোসর ওয়ার্ডের দুইটি পার্ট আছে প্রথম পার্টে দেখতে পারবেন অনেক ডাইনোসর এবং তাদের গর্জন দ্বিতীয় পার্টে দেখবেন ডাইনোসরের ডিম ও ডিম থেকে বাচ্চা বের হচ্ছে । নিজের চোখকেও বিশ্বাস করায় দায় এত সুন্দর কৃত্রিম প্রাণী দেখে। আপনি চাইলে ডাইনোসরের ডিমে ঢুকে ডাইনোসরের বাচ্চা হতে পারবেন। এবং ডাইনোসর রাইড আছে যেখানে আপনি আপনার সোনামণিকে ডাইনোসরের পিঠে উঠিয়ে মজা উপভোগ করাতে পারবেন ।

এই পার্কে সবথেকে বড় অংশ ওয়াটার পার্ক। যেখানে বিশাল আকৃতির একটি সুইমিংপুল রয়েছে। যেখানে আপনি সুইম করতে পারবেন। এবং কাপড়চোপড় রাখার জন্য লকারের ব্যবস্থা আছে। ১০০ টাকা দিয়ে লকার ভাড়া নিয়ে আপনি জামাকাপড় সেখানে রেখে নিশ্চিন্তে সুইমিং করতে পারবেন।

 প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীরা এখানে ভিড় করে। এখানে রাইডস গুলোতে বাচ্চারা অনেক মজা উপভোগ করবে । ম্যাজিক প্যারাডাইসে আসবেন আর ম্যাজিক দেখবেন না এটা কি কখনো হয়? তাই পার্কের এক কোনায় ম্যাজিক দেখানো হয়। এখান থেকে আপনারা ম্যাজিক দেখতেও পারবেন এবং শিখতে পারবেন। বিশাল এ পার্কটিতে এলে এক মুহূর্তের জন্যও আপনি বোরিং হবেন না।

পার্কটিতেতে মুখোশ পড়া কিছু মানুষ বাচ্চাদেরকে নানা ভঙ্গিমা দিয়ে মজা দেয়। বিশাল আকৃতির পার্কটিতে আপনি আপনার মন খুলে ইনজয় করতে পারবেন। তাই ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য কুমিল্লা নিয়ে এসেছে দারুন এক সুযোগ। তাই দেরি না করে আপনি এবং আপনার পরিবার পরিজন এবং বন্ধুদের নিয়ে চলে আসুন কুমিল্লার সবচেয়ে বড় ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কে। 

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা শহর থেকে ১০.৭ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়িতে অবস্থিত ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক। কুমিল্লা শহর থেকে প্রথমে কোটবাড়ি আসতে হবে তারপর অটো/ সিএনজিতে করে যেতে পারবেন আপনার পছন্দের ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কে। কোটবাড়ি থেকে সিএনজি বা অটোতে করে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে পড়বে ।

আর আপনি যদি বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে চান কিম্বা পরিবারকে নিয়ে রিজার্ভে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। 

এখানে প্রবেশ মূল্যের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি যেকোন প্যাকেজ সিলেক্ট করে টিকিটের মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। 

নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি
নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি

৬.নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি

নবাব জয়জুন্নেছা বাংলার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম । ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লার লাকসামের পশ্চিম গাঁও উপজেলায় এই মহীয়সী নারী জন্ম গ্রহণ করেন । উপমহাদেশের এক নারী জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন তিনি। নারী নবাব হয়েও তিনি বাংলার সাধারণ নারীদেরকে শিক্ষা বিস্তার করে অন্ধকারকে দূর করে আলোর পথে এনেছেন। তাইতো শিক্ষাবিদরা তাকে,” আলোর ফেরিয়ালা।” ভাবতেন।

নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত এই জমিদার চৌধুরানী নারীদের জন্য উচ্চ ইংরেজি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। জমিদার আহমদ আলী চৌধুরী ও আরফাতুন্নেছা চৌধুরানীর বড় কন্যা ছিলেন নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরী। ছোটবেলা থেকে তিনি শিক্ষার প্রতি খুব মনোযোগী ছিলেন। শিক্ষার প্রতি তার এই আগ্রহ দেখে তার পিতা আহমদ আলী চৌধুরী তার জন্য গৃহশিক্ষক নিয়ে নিযুক্ত করেন।সেসময় নারীদের শিক্ষার কথা কেউ কল্পনাতেও আনতো না।

কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন না করেও তিনি বাংলা, ফারসি ,উর্দু ও সংস্কৃতিতে দারুণ পারদর্শী ছিলেন। কুমিল্লার লাকসামে পশ্চিম গাঁও উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীর তীরে এই জমিদার চৌধুরানীর স্মৃতিচিহ্ন জমিদার বাড়িটি আজো ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ১৮শতাব্দীর মাঝের দিকে এই জমিদার বাড়িটি তৈরি হয়।

কথিত আছে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরী তার বিয়ের দেন মোহরের টাকা এক লাখ এক টাকা দিয়ে ৩ একর জায়গার উপর এই অপূর্ব সুন্দর জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটি নির্মাণ করতে ৩ বছর সময় লেগেছিলো। বাড়ীটিতে একটি প্রবেশদ্বার, বসবাসের জন্য দুই তলা বিশিষ্ট একটি ভবন, একটি বাগান বাড়ি,একটি কাছারি ঘর, একটি মসজিদ ও একটি কবর আছে।

জমিদার কন্যা বেশি শিক্ষিত ছিলেন না ঠিকই কিন্তু বিচক্ষণতার দিক থেকে তিনি ছিলেন অসাধারণ গুণের অধিকারিনী। তার পিতা জমিদার আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি জমিদারীত্ব লাভ করেন এবং তার মায়ের মৃত্যুর পর তিনি মাতুল সম্পত্তিরও উত্তরাধিকারীনী হন।তার জ্ঞানের প্রসার বাড়াতে তিনি সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন।

তার সাহিত্য সাধনার উদ্বুদ্ধ বেগম রোকেয়া জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত হন। নারী শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অপাদানের  স্বীকৃতি  স্বরূপ বাংলার প্রথম মহিলা নবাব হিসেবে বৃটেনের রাণী ভিক্টোরিয়া কতৃক তিনি নবাব উপাধি লাভ করেন। তিনি ছিলেন জনকল্যাণপ্রান জমিদার।তার অধীনস্থ ১৪ টি মৌজার সব কয়টিতে একটি করে দিঘী খনন করেন।

 তার তৈরিকৃত অনেকগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ এবং দাতব্য চিকিৎসালয় আজও মানুষকে সেবা প্রদান করে আসছে। নারী মুক্তি আন্দোলনের হোথা প্রথম মুসলিম পথ প্রদর্শক হিসেবে আজও উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন সবার হৃদয়ে। তিনি শুধু বাংলাদেশের নন, ইন্ডিয়াতেও নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য সেখানেও বিদ্যালয়ের স্থাপন করেন।

তার তৈরিকৃত জমিদার বাড়িটি আজও সকলের মনে শ্রদ্ধার আসন করে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লার লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ে। এখনো হাজার হাজার দর্শনার্থীরা  দুর দুরান্ত থেকে বাড়িটির পরিদর্শন করতে আসে। কুমিল্লাতে ভ্রমণ করতে এলে নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর জমিদার বাড়িটি দেখতে ভুল করবেন না।

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ে নবাব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। কুমিল্লা শহর থেকে সিএনজি, অটো বা রিক্সাতে করে অনায়াসে আপনি জমিদার বাড়িতে যেতে পারবেন।

৭.লালমাই লেক ল্যান্ড পার্ক 

ঘোরাঘুরি করতে কে না পছন্দ করে বলেন। ছোট বড় সবারই পছন্দ হবে এমনই একটি জায়গার নাম হলো লেক লান্ড পার্ক। প্রবেশ দ্বারের গেটটি ঈগল পাখির ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো।দেখে মনে হবে উড়ন্ত ঈগল পাখি।প্রবেশদ্বারের দুটি খুঁটি যা ঈগল পাখিটির পা সেখানে দুটি বিশাধর সাপ ফণা তুলে পেঁচিয়ে ধরে আছে, দেখতে সত্যি কারের মনে হলেও  এগুলো কৃত্রিম।

প্রবেশদ্বারের দেওয়ালটি কিছুটা গাছের আকৃতি সাদৃশ্য  করে তৈরি করেছে যার ভিতর থেকে তিনটি গর্ত যেখান থেকে তিনটি বাঘের ভাস্কর্য আছে যেগুলো উঁকি দিচ্ছে গর্ত থেকে। এতো আকর্ষনীয় করে তৈরি করা হয়েছে শুধু দর্শকদের কথা মাথায় রেখে। প্রবেশের পরে প্রথমে টিকিট কাউন্টার । টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশের পালা। তারপরে এই নান্দনিক পার্কটি একে একে আপনাকে তার নিজের সৌন্দর্যের রূপ দেখাবে। 

লালমাই লেক ল্যান্ড পার্ক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এখানে দেখতে পাবেন বাচ্চাদের জন্য অনেকগুলো রাইড । এবং অনেক সবুজের সমারোহ । যেগুলো পার্কের কর্মকর্তারা যত্ন সহকারে সাজিয়ে রেখেছে দর্শনার্থীদের ভিন্ন আমেজ দিতে।  দেওয়াল গুলো সাজানো হয়েছে গাছের আদলে। দেওয়ালে অঙ্কিত রয়েছে অনেক ধরনের রংবেরঙের নানা ছবি । যেগুলো দেওয়ালে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। 

পার্কের ভেতরে বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য। পানির একটি কৃত্রিম জলাশয় বানিয়েছে যার মাঝখানে আছে একটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য, সবকিছু মাথায় রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে যদিও এটি ছোট কিন্তু আকর্ষণীয়।

টয় ট্রেন আছে যা হুইসেল বাজিয়ে ঝিক ঝিক করে চলে বাচ্চাদের আনন্দ উপহার দেয়ার জন্য , বিশাল আকৃতির নাগরদোলা, আছে ওয়াটার জোন যেখানে শুধু বাচ্চারাই নয় বড়রাও উঠে মনের আনন্দ ছোটদের মতো উল্লাশ  করে, হর্স রাইট, ঘূর্ণি চেয়ার, টি কাপ রাইড, এনিমেল রাইড ইত্যাদি সহ নানা ধরনের রাইড।পার্কের ভিতরে একটি শপ রয়েছে যেখান থেকে আপনারা চাইলে বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনা বা হালকা নাস্তার জন্য কিছু খাবার কিনতে পারবেন।

পার্কটিতে দুইটি বড় স্টেজ রয়েছে। আরো একটি বড় কৃত্রিম জলাশয় রয়েছে যার ভিতর ফুটন্ত পদ্মফুল এবং বকের নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্য শোভা বর্ধন করছে। পার্কটিতে প্রাকৃতিক পরিবেশে সৌন্দর্যে ভরা মুখরিত চারিদিক পর্যটকদের এক মিনিটে মন জয় করবে। আসুন দেখুন উপভোগ করুন কুমিল্লার লেক ল্যান্ড পার্কে।

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লার লেক ল্যান্ড পার্ক টি লালমাই বাজারের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। লালমাই কলেজের প্রধান গেটের সামনে দিয়ে লেকল্যান্ড পার্ক যেতে হয়। কুমিল্লা মহাসড়ক থেকে সিএনজিতে করে লালমাই বাজার আসতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি কিংবা রিকশাতে লেকল্যান্ড পার্কে যাওয়া যাবে যাবে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতির ৬০ টাকা।
রুপসাগর পার্ক 
রুপসাগর পার্ক

 ৮.রুপসাগর পার্ক 

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা রুপসাগর পার্ক। সৌন্দর্য মন্ডিত মনোরম পরিবেশে এর অবস্থান। গেট থেকে প্রবেশের পরে একটু হাঁটলেই একটি ক্যান্টিন দেখতে পাবেন যেখানে ক্ষুধা নিবারণের জন্য হালকা নাস্তা করে পর্যটকরা।

চারিদিকে সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সোভায় সুশোভিত উঁচু টিলার মতো উঁচু স্থান, সঙ্গে স্বচ্ছ পানির বড় দিঘী, দিঘির পাড়ে পর্যটকদের বসার জন্য বিভিন্ন বেঞ্চ, হরেক রকমের ফুলের বাগান যেগুলো হালকা মিষ্টি হাওয়ায় দোল খাচ্ছে এগুলো দেখলে যে কারণে মন জুড়িয়ে যায়।

দিঘির মাঝখানে একটি দৃষ্টি নন্দন ভাস্কর্য আছে। যা মুক্ত চিন্তা ও দুরন্ত গতিকে ফুটিয়ে তুলেছে। নিরিবিলিও প্রাকৃতিক পরিবেশের ছোঁয়ায় অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে আছে রুপসাগর পার্ক। দিঘির পাড়ে পরিকল্পিত বাগান, ছোট টিলার উপরে বসার জন্য সুন্দর বেঞ্চ, বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের ফুল গাছ, পাখিদের কলকাকলি পর্যটকদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। 

দর্শনের থেকে যেন কোন অসুবিধা না হয় তারা যেন আরাম করে বসে রূপ সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে তার জন্য দিঘির পাড়ে তৈরি করা আছে গ্যালারি যা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। এই পর্যটন কেন্দ্রের এক কোণে রয়েছে বাগান যা প্রকৃতিক পরিবেশকে আরো মাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে। 

রুপ সাগরে অপরূপ সৌন্দর্যে নয়ানভিরাম  পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে রুপ সাগরে অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে জাহাজের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ক্যাফেট এরিয়া। যেখানে আপনি আপনার মনের মত সাশ্রয়ী মূল্যের সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার পাবেন। 

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য কিংবা পরিবারের সঙ্গে একটু ভালো সময় কাটানোর জন্য রূপসাগর আপনার জন্য হতে পারে সঠিক স্থান। আনন্দ ও বিনোদনের জন্য হতে পারে এটি একটা আনন্দ স্পর্ট। 

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ার নাজিরাবাজার এলাকায় এর অবস্থান। কুমিল্লা যে কোন স্থান থেকে সিএনজি অথবা টমটমে করে নাজিরাবাজার এলাকায় রূপসাগর পার্কটির সামনে আসতে পারবেন। সাধারণ মানুষের জন্য টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।

সেনাবাহিনীর পরিবারের কেউ হলে টিকিটের মূল্য ২০ টাকা।সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত রুপসাগর পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। 

৯.ময়নামতী ওয়ার্ল্ড ওয়ার সিমেট্রি

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি একটি রন কবরস্থান। যেটি কুমিল্লা সেনানি দ্বারা সংরক্ষিত এলাকা। এটা কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ৭৩৭ জন যুদ্ধ সেনা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।এই যুদ্ধে নিহত সেনাদের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন জাপানি যুদ্ধবন্দী এবং একজন সাধারন বেসামরিক ব্যক্তি।

সাড়ে ৪ একর জায়গার ওপর তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ী ভূমির বাংলাদেশ দ্বিতীয় কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র ময়নামতি ওয়ার্ল্ড ওয়ার সিমেট্রি। কুমিল্লার সকলের কাছে এটা “ইংরেজ কবরস্থান” নামে পরিচিত। সবাই এটাকে ইংরেজ কবরস্থান মনে করলেও এখানে মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদী,হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলীর সেনাদের সমাধি দেয়া হয়েছে।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে গেলে দেখতে পাবেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ও যুদ্ধে আহত মারা যাওয়া সৈন্যদের ব্রিগেডিয়ার পদ মর্যাদায় ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি তে সমাহিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাদশা মিয়া চৌধুরী রোডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ৭৫৫ জন  সৈনিকের সমাহিত করা হয়েছিল। এটাকে দ্বিতীয় সমাধিক্ষেত্র বলা হয়।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কবরস্থানটি তিনটি স্তরে ভাগে বিভক্ত। প্রথম স্তরে রয়েছে ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের সমাধিস্থল। দ্বিতীয় স্তরে আছে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের সমাধিস্থল। এবং পাহাড়ের সর্বোচ্চ ভূমিতে রয়েছে মুসলমান সেনাদের সমাধি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত সিমট্রি সাজানো গোছানো পরিপাটি।

 মূল ফটো দিয়ে ঢুকলে ডানে এবং বামে যে সমাধি স্থানগুলো দেখা যায় সেগুলো ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের সমাধি ভূমি। পাশের মেটো পথ দিয়ে আরেকটু উপরের দিকে উঠলে আরো কিছু সমাধী চোখে পড়বে এগুলো হিন্দু এবং বৌদ্ধ সেনাদের সমাধিস্থল। এর পাশ দিয়ে চলা পাকা রাস্তা ধরে আরো উপরের দিকে উঠলে দেখা যাবে যত মুসলিম সেনা যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তাদের সমাধিস্থল।

 সাজানো গোছানো পরিপাটি সেমিট্রিতে ঢুকলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে, বের হতে ইচ্ছে করবে না। কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি দেখতে আসবেন একবার হলেও।

 

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের টিপরা বাজার ও ময়নামতি সাহেব বাজারের মধ্যস্থলে কুমিল্লা ময়নামতি ওয়্যার সিমেট্রি অবস্থিত। কুমিল্লা সদর থেকে সিএনজি বাসে করে অনায়াসে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি তে চলে আসা যায়। ঈদের দিন ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে।

ময়নামতি ও আর সিমেট্রি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

১০.অপূর্ব ইকো ট্যুরিজম 

ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির শরীর ও মনে একটু প্রশান্তি আনতে ঘুরে বেড়ান এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সেই মানুষদের  জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আসছে সৌন্দর্য‌ মন্ডিত কুমিল্লার অপূর্ব ইকো ট্যুরিজম। সাদা বক পাখির আনাগোনা,  চারপাশে বাতাসের মন মাতানো গর্জন সব কিছু মিলিয়ে প্রকৃতির মায়াভরা দৃশ্য এখানে ফুটে উঠেছে।

আপনারা এখানে এলে পাবেন সৌখিন বোট যেগুলো এক একটা দেখতে এক এক রকমের সৌন্দর্য, নানা ধরনের খাবারের  রেস্টুরেন্ট এবং বিশাল জলরাশি। কুমিল্লা জেলার প্রথম নির্মিত হয়েছে প্লাবন ভূমি কেন্দ্রিক অপূর্ব ইকো ট্যুরিজম রিসোর্টটি। মনে হবে আপনার পছন্দের সবকিছু যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে প্রতিনিয়ত।

খালের উপর তৈরি কাঠ দ্বারা নির্মিত পার্কটিতে পর্যটককে আকর্ষণ বাড়াবে আরো বহুগুণ পরিসরে। শহরের গণ্ডির মধ্যে থাকতে থাকতে সবারই জীবনটা একঘেয়ে হয়ে যায়। তাই নিজেকে একটু ছুটি দিতে মানুষ ছুটে আসে দূর দুরন্ত থেকে একটু আনন্দের আশায়।

অপূর্ব ইকো ট্যুরিজমে এলে আপনার মনের কোনো ক্ষোভ রাখবেনা। পার্কটি নিজের সবটুকু দিয়ে আপনার মন ভরিয়ে তুলবে। এখানে এলে ফুচকা, চটপটি ,ফার্স্টফুড সহ বিভিন্ন লোভনীয় খাবার খেতে পারবেন। অপূর্ব ইকো ট্যুরিজম এর রাতের ভিউটি না দেখলে আপনি এর সৌন্দর্য সম্পর্কে বুঝতে পারবেন না। রংবেরঙের লাইট দিয়ে দর্শকদের আকর্ষণীয় একটা সময় উপহার দিতে এর জুড়ি নেই। যা দেখলে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।

এই ন্যাচারাল রিসোর্টটি রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স মিটিং, পিকনিক স্পট সহ বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড নিয়ে এটি নির্মিত হয়েছে। এখানে বাচ্চাদের জন্য নাগরদোলা ও হর্স রাইড রয়েছে। আর প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য রয়েছে সৌখিন বোট, রেযেখানে উঠে তারা আনন্দ উপভোগ করে।তাই দেরি না করে চলে আসুন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে কিংবা বন্ধুদের সাথে অপূর্ব ইকো ট্যুরিজম পার্কে।

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর পুটিয়ার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণে এর অবস্থান। কুমিল্লার যে কোন স্থান থেকে গাড়িতে খুব সহজেই আপনার প্রিয় অপূর্ব ইকু ট্যুরিজম পার্কে যেতে পারবেন। 

 ১১.ব্লু ওয়াটার পার্ক

পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে একটু বিনোদনের জন্য তৈরি হয়েছে কুমিল্লা শহরে ব্লু ওয়াটার পার্ক। পার্কের গেটটি স্বল্পীত পরিকল্পিত নকশা যা সবারই নজর কাড়ে। প্রবেশের পরেই দেখতে পাবেন মাটির ওপরে রয়েছে একটি ড্রাগন মূর্তি যেটি দেখলে মনে হবে ড্রাগনটি মাটির ভিতর থেকে চলে যাচ্ছে। পার্কটির চারপাশে লালমাইয়ের ছোট বড় টিলা অবস্থিত যা দেখতে অনেক চমৎকার। 

 ব্লু ওয়াটার পার্কে মানুষ আসে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে একটু প্রশান্তি দিতে। পাহাড় জঙ্গল আর অসংখ্য ছোট ছোট কিলায় বেষ্টিত এই ওয়াটার পার্কটি। এখানে রয়েছে অনেক কৃত্তিম ভাস্কর্য যা ভ্রমণার্থীদের দিবে অন্যরকম মজা। পরিকল্পিতভাবে গাছগুলো রাস্তার দুপাশে এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যা পার্কটিতে অন্যরকম শোভা ছড়াচ্ছে।

পার্কের ভিতর সব কিছুই সাজানো হয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। পার্কের ভিতর একটি কৃত্রিম ঝর্ণা রয়েছে। কৃত্রিমভাবে সাজানো পাথরের উপর দিয়ে ঝরনার পানি গুলো  গড়িয়ে পড়ছে । পানি যেখানে পড়ছে সেখানে কিছু রঙিন মাছ ছাড়া আছে।

দৃশ্যটা কিছুটা স্বপ্নের মতো মনে হবে। ঝরনার পাশেই একটি মৎস্যকন্যা রুপি ভাস্কর্য বসে আছে। পার্কটির সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক ভাস্কর্য সিংহের গান করার, হাতি, ক্যাঙ্গারু, জিরাফ , খরগোশ,মুরগি  সহ নানা নান্দনিক ভাস্কর্য সেখানে প্রদর্শিত করছে। 

নানা ফুলের গাছে মুখরিত চারিদিক। পার্কের সিড়িগুলো অনেক সুন্দর রং করা দেখতে বেশ চমৎকার। দেওয়ার গুলো তে রয়েছে বিভিন্ন জীবজন্তুর ছবি অঙ্কন করা । সব বয়সী মানুষের এটি একটি বিনোদনের জায়গা। পার্কটিতে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে অনেকগুলো রাইডস।

বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে পিকনিকের জন্য এসে থাকে। পার্কের এক সাইডে রয়েছে একটি সিঁড়ি যে সিঁড়ি ধরে উঠলে আপনি পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যেতে পারবেন। ওয়াটার সাইডের গেট থেকে প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন একটি বড় সুইমিং পুল যেখানে নীল জলরাশির দ্বারা বিস্তৃত।

 সুইমিংপুলে সুইম করা ব্যক্তিদের আনন্দিত করার জন্য গান বাজানো হয়। সুইমিং পুলের ধারে ধারে ব্যাঙের ছাতার মত কিছু ছাতা দেখতে পাবেন যা দেখতে বেশ চমৎকার হবে। সুইমিং পুলের সুইমিং করা লোকেদের জন্য রয়েছে একটি চেঞ্জিং রুম। সব মিলিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যে সজ্জিত হয়েছে ব্লু ওয়াটার পার্কটি। কুমিল্লা জেলা আসলে অবশ্যই ব্লু ওয়াটার পার্কে ঘুরতে ভুলবেন না। 

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
ব্লু ওয়াটার পার্কটি ৯ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়িতে অবস্থিত।

 

এই পার্ক টি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত।

কুমিল্লা শহর থেকে কোটবাড়িতে এসে অটোতে কিংবা রিক্সা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশে নামলেই আপনার প্রিয় ব্লু ওয়াটার পার্কের গেটটি দেখতে পাবেন। পার্কটির প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা । তবে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে চাইলে আলাদা চার্জ দিতে হবে। 
শালবন বৌদ্ধ বিহার 
শালবন বৌদ্ধ বিহার

১২.শালবন বৌদ্ধ বিহার 

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রধান উপাসনালয় ছিল শালবন বৌদ্ধ বিহারের অবস্থান কুমিল্লার কোটবাড়িতে। রাজা শ্রীভবদেব দেব বংশের চতুর্থ রাজা তিনি এই বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম শালবন বৌদ্ধ বিহার।

বিহারটি ছিল শাল-গজারির ঘন বনে ঘেরা তাই এই বিহারটির নামকরণ করা হয় শালবন বিহার নামে। শালবন বিহার ছয়টি নির্মাণ এবং বেশ কয়েকবার পুনঃনির্মাণ এর কথা জানা যায়। শালবন বিহারটির প্রত্যেক বাহুর দৈঘ্য ১৬৭.৭ মিটার দৈঘ্যে।বিহারের চারপাশের দেয়াল পাঁচ মিটার  পুরু। সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ রয়েছে বিহারে।

প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে রয়েছে তিনটি করে কুলুঙ্গি  যেখানে  দেবদেবী ও তেলের প্রদীপ রাখা হতো। বৌদ্ধ  ভিক্ষুকরা এসব কক্ষে থাকতেন বলে মনে করা হয়। বিহারের মধ্যভাগে মূল মন্দির রয়েছে এবং এর চারপাশে ছোট ছোট আরও ১২টি মন্দির আছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রমের বিভিন্ন সময় শালবন বৌদ্ধ বিহার  থেকে ৮ তাম্রলিপি,প্রায় ৪০০টি স্বর্ন ও রৌপ্য মুদ্রা, সিলমোহর, মাটির মূর্তি এবং অসংখ্য পোরা মাটির ফলক উদ্ধার করা হয়। এই সব নিদর্শন ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
শালবন বৌদ্ধ বিহারের অবস্থান কুমিল্লার কোটবাড়িতে কুমিল্লা নেমে প্রথমে কান্দিপারা যেতে হবে ।  কান্দিপাড়া থেকে কোটবাড়ি যাওয়ার জন্য লোকাল সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে ।  কোটবাড়ি যেতে জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া লাগে ।  শালবন বিহারে প্রবেশের জন্য ২০ টাকার টিকেট কাটতে হয়।

 ১৩.কুমিল্লা ডাইনো পার্ক

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে ১২ একর জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে কুমিল্লার প্রথম থিম পার্ক ডাইনো পার্ক। এই পার্কটিতে দেখা যায় হাজার বছর আগের বিলুপ্ত হওয়া প্রাণি ডাইনোসরের। ডাইনোসর পার্কটি ডাইনো পার্ক নামে সবার কাছে সর্বাধিক পরিচিত।

 সমতল ভূমি থেকে এই পার্কের উচ্চতা ৪৫ ফুট। চীন থেকে আমদানীকৃত ডাইনোসর গুলো এই ডাইনো পার্কের প্রধান আকর্ষণ।  ডাইনোসর গুলোর সুইচ টিপলেই চোখ  ঘুরায়, গর্জন করে এবং লেজ নাড়ে।  সবগুলো ডাইনোসরের নিচে ইতিহাস লিখিত রয়েছে।

এর পাশে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা। বছর জুড়ে এখানে  প্রবেশ ও রাইড এর বিভিন্ন অফার চালু থাকে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত ডাইনো পার্কটি খোলা থাকে। ডাইনো পার্কের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০০ টাকা। এখানে বড়দের এবং ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড রয়েছে।   

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা ডাইনো পার্ক  কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত। ঢাকা  থেকে বাসে কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড যেতে জনপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা ভাড়া লাগে ।  সেখান থেকে লোকালে যেতে ২০ টাকা ভাড়া লাগে এছাড়া সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে সেখানে যেতে পারবেন । 

 ১৪.কুমিল্লা আনন্দ বিহার

বাংলাদেশের অন্যতম একটি  প্রাচীন  প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো আনন্দবিহার। এটি কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। বিহারটি বর্গাকৃতির যার প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৯৮ মিটার। সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকে কোন এক সময়ে আনন্দবিহারটি নির্মান করা হয়েছে।

শ্রী আনন্দ দেব দেব রাজবংশের তৃতীয় শাসক এই বিহারটি  নির্মান করেন। বিহারের কেন্দ্রে রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দির ও সুন্দর একটি দিঘি। মন্দিরের কাঠামোর প্রতিটি বাহুতে সন্ন্যাসীদের কক্ষ রয়েছে। মন্দিরটি বিশাল আঙিনার মাঝে নির্মিত রয়েছে।

বিহারের উত্তর দিকের মধ্যে ভাগে এর  একমাত্র প্রবেশদ্বার রয়েছে। বাইরের প্রাচীর অফসেট ও ছাঁচে তৈরি  নকশা দ্বারা সজ্জিত। বিহারের বিভিন্ন অংশ খনন করে উদ্ধারকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে  তাম্রশাসন,ব্রোঞ্জ মূর্তি,৬৩ টি রৌপ্য মুদ্রা ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য উল্লেখযোগ্য রয়েছে।  

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা আনন্দ বিহার কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত। কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে লোকালে বা সিএনজি রিজার্ভ করে আনন্দ বিহার যেতে পারবেন। 

 ১৫.কুমিল্লা  ময়নামতি জাদুঘর

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে  ময়নামতি জাদুঘর অন্যতমআ। এর অবস্থান কুমিল্লা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে সালমানপুর। এটি ১৯৬৫ সালে কুমিল্লার কোটবাড়িতে এই জাদুঘরটি নির্মান করা হয়।

কুমিল্লার কোটবাড়ি শালবন বিহারের উত্তর-দক্ষিন পাশে এর অবস্থান।  জাদুঘরটিতে ৪২টি সংরক্ষণাগার রয়েছে।  এখানে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর নিদর্শন গুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

জাদুঘরটিতে দেখতে পাওয়া যাবে প্রাচীন ব্রোঞ্জের বিশাল ঘন্টা, পাথরের ছোট ও বড় মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, স্বর্ন ও রৌপ্য মুদ্রা, তামা ও লোহার সামগ্রী, মাটির খেলনা, মৃৎশিল্প নিদর্শন এবং প্রাচীন হস্তলিপির পান্ডুলিপি।

ময়নামতি জাদুঘর সকাল ১০ থেকে  বিকাল ৫টা পর্যন্ত  খোলা থাকে। শুধু সপ্তাহে রবি ও সোমবার এই দুটি দিন বন্ধ থাকে। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য বড়দের ২০ টাকা টিকিট মূল্য দিতে হয়। এছাড়া ৫ বছরের ছোট বাচ্চারা বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে পারে।  

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা ময়নামতি জাদুঘর কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত। কুমিল্লা যেকোনো স্থান থেকে লোকাল বা সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে  হবে কোটবাড়িতে। কোটবাড়ি আসলে একসঙ্গে তিনটি দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবেন।

এখানে নব শালবন, ময়নামতি জাদুঘর,  শালবন বৌদ্ধ বিহার এই কুমিল্লার কোটবাড়িতেই অবস্থিত । 

১৬.কুমিল্লার ফান টাউন পার্ক

বেসরকারি উদ্যোগে ২০১৬ সালে কুমিল্লা জেলার ঢুলিপাড়াতে গড়ে তোলা হয়েছে থীম পার্ক টাউন। বিনোদনের নতুন কেন্দ্র হয়েছে ভার্চুয়াল থীম পার্ক টাউন। এটি ছোট বড় সকল বয়সী মানুষের জন্য একটি বিনোদনের জায়গা। এই পার্কের মনোরম দৃশ্য সকল মানুষের মনকে ভালো করে দেয়।

এই পার্কে আরও বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় রাইডস রয়েছে যা ছোট বাচ্চাদের কাছে অতি প্রিয়। এখানে রয়েছে বাচ্চাদের ট্রেন, ১৫ ডি সিনেমা, ইনডোর গেমস, সুইং চেয়ার, মেরিগো রাউন্ড, বাম্পার কার,নাগরদোলা, প্যাডেল বোট ও সেল্ফ কন্ট্রোল এরোপ্লেন।

 এখানে বিশেষ দিন গুলোতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ফান টাউন পার্কে প্রবেশের জন্য ৫০ টাকা টিকিট মূল্য দিতে হয়। পার্ক প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে রাত ৮ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে।

লোকেশন  ভ্রমণ গাইড/কিভাবে যাবেন
কুমিল্লা জেলার ঢুলিপাড়াতে অবস্থিত ফান টাউন পার্ক। কুমিল্লার টমটম ব্রিজ থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় কুমিল্লা এয়ারপোর্টে রোড থেকে খুব সহজে ফান টাউন যেতে পারবেন। এছাড়া কুমিল্লার ইপিজেড হয়ে ঢুলিপাড়া চৌমুহনি থেকে সামান্য  দক্ষিণে এগোলেই ফান টাউন দেখতে পাওয়া যাবে।  

ঢাকা টু কুমিল্লা বাস পরিবহন 

ঢাকা- কুমিল্লা এসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি-২০২৩

বাসের নাম বাসের ব্র্যান্ড সিটের ধরণ ভাড়া
এশিয়া এয়ারকন হিনো,আনকাই,ইসুজু (Hino.Ankai. Isuzu) ইকোনমি ক্লাস ৩৫০
রয়েল কোচ ইসুজু (Isuzu) ইকোনমি ক্লাস ৩৫০
মিয়ামি এয়ারকন আশোক লিল্যান্ড (Ashok Leylend) ইকোনমি ক্লাস ৩৫০

ঢাকা-কুমিল্লা ননএসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি-২০২৩

বাসের নাম বাসের ব্র্যান্ড সিটের ধরণ ভাড়া
তিশা টাটা (TaTa) ইকোনমি ক্লাস ৩০০

পরিশেষে, কুমিল্লা ভ্রমণ করে আর দর্শনীয় স্থান গুলো পরিদর্শন করে  পেতে পারেন এক আনন্দ ভ্রমণের আমেজ। শহরের ক্লান্তময়, কোলাহল আর দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা ছেড়ে আসুন না পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। কিংবা প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ঘুরে যান বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থান কুমিল্লা জেলা থেকে এবং কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের বিখ্যাত রসমালাই খেয়ে যান আর সঙ্গে করে নিয়ে যান আপনার প্রিয় মানুষগুলোর জন্য। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন –

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents