পারফিউম এর জনপ্রিয়তা বরাবরাই আকাশচুম্বী। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে পারফিউম এর চাহিদা যেমন বেশি তেমনি বৈচিত্র্যময়। পারফিউম পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়াই যাবে না। বাইরে বেরোলেই শরীর ঘেমে দুর্গন্ধ হয়ে যায় তাই প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার সময় পারফিউম দেওয়া যেন বাধ্যবাধকতা। বাজারে এত ভিন্নতর পারফিউম রয়েছে যে সঠিকটি কিনতে বেগ পেতে হয়। তবে ভালো পারফিউম চেনার উপায় আমাদের কাছেই রয়েছে আর তা হলো আমাদের নাক। আমারা নাকের মাধ্যমে বুঝতে পারি পারফিউমের সুঘ্রাণ এবং কোনটি ব্যক্তিত্বের সাথে উপযোগী।
ভালো পারফিউম চেনার কয়েকটি উপায়
ভালো পারফিউম চেনার উপায় কয়েকটি নিচে বর্ণনা করা হলো:-
- আসল সুঘ্রাণঃ একটু সুগন্ধি গায়ে লাগালে যেন মনটা তরতাজা হয়ে যায়। তাই পারফিউম কেনার আগে সুগন্ধি দেখে কিনা জরুরী। পারফিউমের ভিন্নতা হয় সুগন্ধি অনুযায়ী এবং সেই অনুযায়ী নাম ও আলাদা হয়। একেকজনের একেকরকম সুগন্ধি পছন্দ তাই পারফিউমের দাম একটু বেশি হলেও সুগন্ধির মানসম্মত দোকান থেকে কেনা উত্তম এতে করে নকল পারফিউম থেকে রক্ষা পাবেন।
- ঘণত্ব পরীক্ষা করেঃ পারফিউমের ঘনত্বের চারটি ভিন্ন মাত্রা আছে। ঘনত্ব বেশি হলে দাম বেশি হয়। উচ্চ ঘনত্বের পারফিউমগুলির ঘ্রাণ অনেক শক্তিশালী হয় ও দীর্ঘসময় ধরে থাকে। এই পারফিউমগুলির দাম তুলনামূলক বেশি হয় তবে অনেকেই ভাবেন অতিরিক্ত মূল্য তেমনটি নয়।
- মোড়ক নির্বাচনঃ ভালো ব্র্যান্ডের মোড়ক সব সময় আকর্ষণীয় এবং সুন্দর হয়। মোড়কের কাগজে প্লাস্টিকের বক্সটি যদি একটু বাঁকা হয় অথবা লেখা অস্পষ্ট থাকে বা মোড়কের গায়ে আইনি জিগ্রিন পয়েন্টটি থাকে সেটি যদি না থাকে তবে বুঝতে হবে এই পারফিউমটি নকল।
- সঠিক উপকরন দেখেঃ ভালো সুগন্ধি হলেই যে পারফিউম অনেক ভালো হবে বিষয়টি তা নয় বরং পারফিউমের উপকরণ দেখে বিচার করতে হবে ভালো কিনা। এক ধরনের বিশেষ তেল পারফিউম এ ব্যবহৃত হয় যদি নিজের পছন্দনীয় পারফিউম এ এই তেলের পরিমাণ বেশি থাকে তবে সামান্য একটু স্প্রেতেই শরীরে সারাদিন সুগন্ধ থাকবে। পারফিউম এ অ্যালকোহল ও জলের মাত্রা যদি অত্যাধিক বেশি থাকে তবে সুগন্ধ অল্প সময় পরেই চলে যাবে। ভালো পারফিউম চেনার উপায় হলো পারফিউমের গায়ে ‘eau de parfum’ লিখা থাকে তাহলে কিনে ফেলুন আর যদি পারফিউমের গায়ে ‘eau de toilette’ লিখা থাকে তবে এড়িয়ে চলুন।
- পারফিউমের বোতলঃ পারফিউম আসল কি নকল এটা বুঝতে হলে দেখতে হবে পারফিউমের বোতলের নিচে সমান কিনা? আসল বোতলের নিচের গ্লাস নকল বোতলের নিচের গ্লাস থেকে মোটা হয় এবং নকল বোতলের ঢাকনা অনেকটা সস্তা হয় তেমনি স্ত্রীর মাথাটিও হয় নড়বড়ে।
- সিরিয়াল নম্বরঃ মোড়কের গায়ে ব্র্যান্ডের যে সিরিয়াল নাম্বার লেখা থাকে সেটি আছে কিনা দেখুন। যদি নম্বরটি না থাকে অথবা স্টিকার লাগানো থাকে তবে বুঝতে হবে এই পারফিউমটি আসল নয়।
পারফিউম এর সঠিক ব্যবহার
পারফিউম লাগানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানলে এর সুঘ্রাণ অনেকসময় ধরে স্থায়ী হবে। শরীর থেকে অন্তত ৫ ইঞ্চি দূর থেকে স্প্রে করতে হবে। ঘাড়ে এবং হাতের কবজিতে পারফিউম স্প্রে করা যেতে পারে এতে করে সুগন্ধ দীর্ঘসময় থাকবে। তবে সরাসরি পোশাকের উপর স্প্রে না করাই ভালো কারণে এতে দাগ বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় গোসল করার পর ফ্রেশ হয়ে পারফিউম লাগালে এতে সতেজ লাগবে পাশাপাশি গন্ধ কিছুক্ষণ স্থায়ী হবে। পারফিউম দেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে এটি দিয়ে যেন সে জায়গায় না ঘষাঘষি করি। এইসব বিষয় মেনে চললে দীর্ঘসময় আপনার শরীর সুগন্ধ থাকবে।
পারফিউম রাখার সঠিক জায়গা
ভালো পারফিউম চেনার উপায় জানলেও এটি সঠিক জায়গায় রাখতে জানি না। পারফিউম লাগানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানলে এর সুঘ্রাণ অনেকসময় ধরে স্থায়ী হবে। শরীর থেকে অন্তত ৫ ইঞ্চি দূর থেকে স্প্রে করতে হবে। ঘাড়ে এবং হাতের কবজিতে পারফিউম স্প্রে করা যেতে পারে এতে করে সুগন্ধ দীর্ঘসময় থাকবে। তবে সরাসরি পোশাকের উপর স্প্রে না করাই ভালো কারণে এতে দাগ বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সবচেয়ে ভালো হয় গোসল করার পর ফ্রেশ হয়ে পারফিউম লাগালে এতে সতেজ লাগবে পাশাপাশি গন্ধ কিছুক্ষণ স্থায়ী হবে। পারফিউম দেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে এটি দিয়ে যেন সে জায়গায় না ঘষাঘষি করি। অতিরিক্ত সুগন্ধি শরীরে না লাগানোই উত্তম এছাড়া গয়নাতে পারফিউম স্প্রে করা উচিত না। মেয়েদের জন্য সবচেয়ে ভালো পারফিউম হল গোল্ডেন লাইট উড, ভেলভেট ফরেস্ট উড, ক্রিস্টাল ক্রিকউড ইত্যাদি আর ছেলেদের জন্য ইনটেন্স, ব্লু-পাওয়ারফুল, এনার্জেটিক টিজার এইসব ব্রান্ডের পারফিউমগুলি বেশি জনপ্রিয়।
পারফিউম এর উপকারিতা
শরীরে যেসব জায়গায় আর পারফিউম লাগালে উপকার পাওয়া যায় সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
নাভির নিচে: গোলাম বা চন্দনের সুগন্ধি যুক্ত পারফিউম নাভির নিচে লাগালে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কমে যায় যেমন মাথা ব্যথা বাবা মাইগ্রেন ইনসোমনিয়া দূর হয় সঙ্গে মন মানসিকতা হয় প্রাণবন্ত।
প্রেসার পয়েন্টে: অ্যারোমাথেরাপির কাজে সুগন্ধি আদিমকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। ফুলের সুগন্ধিযুক্ত পারফিউম শরীরের স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। শরীরের প্রেসার পয়েন্ট গুলোতে এই সুগন্ধি লাগালে আপনার রক্তচাপ কমানোর সাথে সাথে শরীরের ক্লান্তি ও দূর করে।
স্বাস্থ ভালো রাখে: স্বাস্থের উন্নতিতে সুগন্ধি যেন নীরব অবদান রাখে। যদিও এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই কিন্তু সুগন্ধি যুক্ত পারফিউম ব্যবহার করলে শরীর ও মন দুটোই ফুরফুরে থাকে। ফলে শরীর খারাপ লাগলেও সুগন্ধির ঘ্রানে অল্প সময়ের জন্য হলেও শরীরটা ভালো লাগে।
হাতের নখে: নিয়মিত হাতের নখে পারফিউম লাগালে পেটের নানা সমস্যা দূরীভূত হয়। এছাড়াও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তবে খেয়াল রাখতে হবে নখে পারফিউম লাগানোর পর যেন মুখে না লাগে।
অনিদ্রা দূর করে: ঘুম ভালো হতেও পারফিউম সাহায্য করে। বিভিন্ন ফুলের পারফিউম নিয়ে কানের লতির নিচে লাগালে অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়। পারফিউম লাগানোর জন্য আ্যাংজাইটি কমে যায় সঙ্গে টেনশনও কমে ফলে ঘুম ভালো হয়।
পারফিউমের উপরিউক্ত উপকার পেতে হলে আগে ভালো পারফিউম চেনার উপায় জানতে হবে।
নকল পারফিউম চেনার উপায়
যেভাবে নকল পারফিউম চেনা যায় নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
- নকল পারফিউম বুঝতে হলে বোতলটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। আসল পারফিউম হলে বোতলটির মুখ খুব শক্তভাবে আটকানো থাকে কিন্তু নকলের ক্ষেত্রে বোতলটি দুর্বল হয়ে থাকে। আসল পারফিউম হলে ঢাকনা ঠিকমত লাগানো থাকে কিন্তু নকলের ক্ষেত্রে ভালোভাবে আটকায় না।
- গন্ধ শুঁকে আসল-নকল বিচার করা যায়। নকল পারফিউমের ক্ষেত্রে গন্ধ খুব ঝাঁঝালো হয়ে থাকে। ঢাকনা খুললে সুন্দর সুগন্ধ পাওয়া যায় কিন্তু নকল পারফিউমের ক্ষেত্রে স্প্রে করা ছাড়া কোন গন্ধই আপনি পাবেন না।
- আসল পারফিউম হলে সঠিক উপকরণ থাকার কারণে ত্বকের ক্ষতি কম হয় কিন্তু নকল পারফিউম হলে ত্বকের ক্ষতি অনেক বেশি হয়। আপনার যদি সেনসিটিভ ত্বক হয় আর নকল পারফিউম লাগান তবে র্যাস বা ফুসকুড়ি হতে পারে।
- প্রাকৃতিক ও সিন্থেটিক উপাদান দিয়ে আসল পারফিউম তৈরি হয় কিন্তু নকলের ক্ষেত্রে এসব কোন উপাদান দিয়ে তৈরি হয় না ফলে স্প্রে থেকে উৎকট গন্ধ বেরোয় যা একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে পাওয়া যায়।
- মোড়কের গায়ে সঠিক ব্রান্ড এর সিরিয়াল নম্বর আছে কিনা দেখে নিতে হবে। এছাড়াও আসল পারফিউমের বক্স উন্নত মানের হয় কিন্তু নকল পারফিউমের বক্স নিম্নমানের হয় সাথে লেখাগুলো অস্পষ্ট হয়। ভালো পারফিউম চেনার উপায় হলো মোড়কটি নকল কিনা যাচাই করা।
ছেলেদের জন্য যে পারফিউমগুলি ভালো
ছেলেদের ভালো কিছু কোয়ালিটি বা কোলন পারফিউমের নাম দেয়া হলো:
- LACOSTE Eau de lacoste L.12.12 yellow: ১০০ মিলের দাম ৪ হাজার টাকা এবং এটি স্কিনে ছয় ঘন্টা এবং কাপড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা স্থায়ী থাকে। দিনে ব্যবহারের জন্য ভালো এবং ২০ থেকে ৩৫ বছরের বয়সে যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারেন।
- LACOSTE Eau de lacoste L.12.12 white: ১০০ মিলির দাম ৪ হাজার টাকা এবং কিনে ছয় ঘন্টা থাকে। ২৫ থেকে ৪০ বয়সের যে কারো ইউজ এর জন্য এটি বেস্ট।
- DAVIDOFF COOL WATER For Men: ১০০ মিলের প্রাইস ৩৫০০ টাকার মতো। বাংলাদেশে এই পারফিউমটি খুব বেশি জনপ্রিয়। এটি কাপড়ে থাকে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা এবং স্কিনে চার থেকে পাঁচ ঘন্টার মএটি প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য খুব ভালো একটি পারফিউম।
পারফিউম নাকি বডি স্প্রে কোনটি বেশি ভালো
পারফিউম ও বডি স্প্রে দুইটি শরীরে সুগন্ধি লাগানোর মাধ্যম। তবে এ দুইটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। পারফিউম এ অধিক মাত্রার সুগন্ধি তেল ও নির্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে কিন্তু বডি স্প্রে তুলনামূলক কম মাত্রার নির্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই পারফিউম বেশি সময় ধরে সুগন্ধ ধরে রাখি বডি স্প্রের চেয়ে। পারফিউম দিনে একবার লাগালে সারাদিনই শরীরে সৌরভ লেগে থাকে কিন্তু বডি স্প্রে দিলে সর্বোচ্চ চার থেকে ছয় ঘন্টা শরীরে সৌরভ থাকে।
আরো জানতে পড়ুন – পারফিউম এবং বডি-স্প্রে এর মধ্যে পার্থক্য
উপসংহার
শীতকাল বা গরমকাল বলে নয় পুরো বছরই মানুষ পারফিউম ব্যবহার করে তবে গরমে এর ব্যবহার যেন বেড়ে যায়। ঘামের গন্ধ আটকে রাখতে পারফিউম এর ব্যবহার করতেই হয় কারণ কেউই চায় না শরীরে উটকো গন্ধ অন্য কেউ বুঝতে পারুক। এছাড়াও পারফিউম এর মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিত্ব ও ও রুচিশীলতা প্রকাশ পায়। অতিরিক্ত মাত্রার সুগন্ধিময় পারফিউম না কিনে সুন্দর ও সহনশীল মাত্রার পারফিউম কিনা উচিত এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে সুন্দর করে তুলবে। তবে পারফিউম কেনার ক্ষেত্রে ভালো পারফিউম চেনার উপায় হচ্ছে পারফিউমের প্যাকেটটি বিচার করা এতে করে আসল ও নকল সহজেই পার্থক্য করা যায়।
আরো পড়ুন –